এদিকে, একই ভবনের মধ্যে থেকেও সন্তানকে আদর করতে না পেরে একটি কক্ষে নীরবে কাঁদছেন মা! সে মমতাময়ী মা আর কেউ নন তিনি হলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়া।
যিনি এলাকার লকডাউন কার্যক্রম ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে জনসমাগমকে ঠেকাতে হাজীগঞ্জে সাহসিকতার সাথে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছেন একজন নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে। মানুষের কল্যাণে সরকারের দেয়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেই করোনার সাথে লড়ে যাচ্ছেন ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুরু থেকে যে হাজীগঞ্জ উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলে এলাকার মানুষকে সচেতন করে বেড়িয়েছেন তিনি এখন মরণঘাতী করোনায় আক্রান্ত। আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। ফলে তার ৪ বছরের শিশু দ্বিজরাজ মমতাময়ী মায়ের কাছে যেতে পারছে না, বঞ্চিত হচ্ছে মায়ের আদর থেকে।
গত ২৯ এপ্রিল হাজীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এর পর থেকে সরকারি কোয়ার্টারের একটি কক্ষে পরিবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকছেন।
পাশের কক্ষে থাকা ছোট্ট কোমলমতি শিশু পা উঁচু করে, জানালার গ্রিল ধরে উঁকি-ঝুঁকি মেরে মাকে দেখার চেষ্টা করছে, আর মা মা বলে ডাকছে তার চার বছরের শিশু ছেলে। মায়ের সাড়া না পেয়ে কেঁদে পার করছে সারাদিনমান। মায়ের কাছে যেতে চাওয়া ছাড়া আর কারও সাথে কথাও বলে না।
এদিকে, কক্ষে থেকেও ছেলের ডাকে সাড়া দিতে পারছেন না মা। নীরবেই বসে আছেন। ছেলেকে করোনা আক্রান্তের ভয় থেকে বাঁচাতে ছেলের কান্নায় শক্তমনে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। তাকে সেরে উঠতে হবে। সংক্রমণের হাত থেকে তার স্বামী, সন্তান ও পরিবার পরিজনকে বাঁচতে হবে। ঘরে থেকেও সন্তানের ডাকে সাড়া দিতে না পেরে ভবনের একটি কক্ষে বসে নীরবে কাঁদছেন মা।
করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে শিশু সন্তান দ্বিজরাজসহ পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদাই থাকছেন ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া। সরকারি বাসভবনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছে হাজীগঞ্জের এ ইউএনওকে।
করোনা ঠেকাতে, প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে ত্রাণ বিতরণ, কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সম্মুখভাগের যোদ্ধা হয়ে মাঠ প্রশাসনে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সতর্ক থাকলেও করোনার সংক্রমণ এড়াতে পারেন নি প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা। তবে কোনো উপসর্গ না থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন বলে কৌতুহলবশত নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে তার করোনা পজেটিভের বিষয়ে নিশ্চিত হন।