চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে হাতির তাণ্ডব নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তীব্র যানজট এবং চরম ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে কর্ণফুলী উপজেলার কেইপিজেড দৌলতপুর স্কুল এলাকায় পিএবি সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ’ গ্রামবাসী।
সড়ক অবরোধের কারণে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। আটকা পড়ে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছেন, চারদিনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন হাতি দমনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, বন্য হাতির তাণ্ডব থেকে রেহাই দিতে স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিক্ষোভকারীরা কর্ণফুলীর দৌলতপুর স্কুল এলাকা ছাড়াও আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের জাইল্লাঘাটা এলাকায়ও সড়ক অবরোধ করেছেন, ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে সেনাবাহিনীর দুটি টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে কর্ণফুলী থানার কোনো পুলিশ টিম সেখানে উপস্থিত হয়নি বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত শনিবার (২২ মার্চ) হাতির আক্রমণে দুই মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হলে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং সড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার আন্দোলনের পর প্রশাসন চারদিনের সময় নিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন করে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্য হাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা আমাদের কাছে এসে বা ফোনে স্পষ্ট আশ্বাস দিতে হবে, কতদিনের মধ্যে হাতির সমস্যা সমাধান হবে। তবেই আমরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব। অথচ কেইপিজেড (কর্ণফুলী ইপিজেড) এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।’
এ বিষয়ে কেইপিজেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কেইপিজেড একটি বৃহৎ শিল্প এলাকা, এখানে আগে কখনো হাতির সমস্যা ছিল না। আমরাও চাই হাতির সমস্যা দ্রুত সরানো হোক। বনবিভাগকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাইনি। তবে হাতি সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।’
কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘হাতির তাণ্ডব নিরসনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের আওতাধীন। তবে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
সড়ক অবরোধের বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
হাতির সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে বনবিভাগের নিষ্ক্রিয়তা এবং কেইপিজেডের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধান না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।