বুধবার সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদ সীমার ১০১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমলেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় আগের তুলনায় অধিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মহাসড়কসহ উপজেলা কেন্দ্রিক পাঁচটি জায়গায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর জানিয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়ক, রৌমারী-তুরা সড়ক, সোনাহাট-মাদারগঞ্জ সড়ক, ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট সড়ক ও ভিতরবন্দ-মন্নেয়ারপাড় সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লোকজন পরিবার নিয়ে বাঁধের রাস্তা ও মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম দফায় যারা আক্রান্ত হয়েছিল তারা ১৮দিন ধরে রাস্তার ধারে পলিথিন দিয়ে শেড করে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। রাতভর মুষলধারে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বানভাসিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রাত কাটিয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদরের পাটেশ্বরী মহাসড়কের দুপাশে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
এদের মধ্যে শহিদুল, মেরিনা ও আনোয়ারা বলেন, বন্যার কারণে কাজ কাম বন্ধ। শুধুমাত্র সেনাবাহিনী থেকে ত্রাণ পাওয়া ছাড়া আর কোনো ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেন তারা।
সদরের ধরলা ব্রীজ সংলগ্ন মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। এর মধ্যে স্কয়ার সেমি বাঁধে প্রায় ৫৫টি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ ও একটি লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের জন্য রাখা হয়নি আলাদা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সারাক্ষণ যানচলাচল অব্যাহত থাকায় সন্তানদের নিয়ে ভীষণ আতঙ্কে রয়েছেন বাবা-মায়েরা।
নাগেশ্বরীর হাছনাবাদ ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার মালেক, সোহান ও রহমান বলেন, ‘চারদিকে পানি থাকায় গরু নিয়ে সড়কে এসেছি। জমানো খড় দিয়ে চালাচ্ছি। কিন্তু কতদিন এভাবে কাটবে। গরু-ছাগল নিয়ে ভীষণ বিপদে আছি।’
সদরের ভোগডাঙ্গা পাটেশ্বরী এলাকার কৃষক মজিবর, কাচুদ্দি, শমসের ও জয়নাল বলেন, ‘উঁচুভিটায় বীজতলা লাগিয়েছি। পানি ওঠায় সেগুলোও নষ্টের পথে। এভাবে পানি আটকে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।