খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি ও প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ের প্রভাবে কমতে শুরু করেছে পণ্যের দাম। পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানায় খুলনার জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা নিজস্ব আয়োজনে স্বল্পমুল্যে পণ্য বিক্রি চালু করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে খুলনা নগরীর বাজারে দেখা যায়, রোজা শুরুর ২-৩ দিন আগে থেকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে জানানো হয়, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। এদিকে খুলনা নগরীতে পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান খুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম। এই আয়োজন জনগণের মধ্যে বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আরও পড়ুন: রোজার দ্বিতীয় দিনেও বাজারে নেই সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে বলে জানান তারা।
টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন।
সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তারা এ দোকান চালু করেছেন বলে জানান হৃদয়।
আরও পড়ুন: রোজার শুরুতেই খুলনার বাজারে আকাশছোঁয়া দাম
তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
হৃদয় বলেন, ‘পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন।’
বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত তাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো অনুদান না নিয়ে নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের এই দোকান থেকে পণ্য কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারতো।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ।’
শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন বলে অভিমত দেন তিনি।