চট্টগ্রামের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার সৈয়দ মহিউদ্দিন (মহি আল ভাণ্ডারী) আর নেই।
রবিবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
তার নামাজের জানাজা বাদ জোহর নগরীর কাতালগঞ্জ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ২টায় নেওয়া হয় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।
সংগীতশিল্পী ও তার ছাত্র আলাউদ্দিন তাহের জানান, শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাকে ফটিকছড়ির সুয়াবিল গ্রামে দাফন করা হবে।
সৈয়দ মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের একজন খ্যাতনামা গীতিকার ও সুরকার ছিলেন। তিনি মহি আল ভান্ডারী নামেও পরিচিত ছিলেন।
২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিসি হলে এক অনুষ্ঠানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেদিন তিনি ক্রেস্ট ও সনদ নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলেন। কাতালগঞ্জে আনিকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন ভাড়া করা একটি সেমিপাকা গৃহে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করতেন।
সৈয়দ মহিউদ্দিন ফটিকছড়ির সুয়াবিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আমির হোসেন এবং মা সৈয়দা আনোয়ারা বেগম। গানের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন।
তিনি গ্রামে বসবাসকালীন অধ্যক্ষ হেম মজুমদারের কাছে সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কুমিল্লায় ওস্তাদ সুরেন দাশের কাছে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত তালিম নেন। দেশ হানাদারমুক্ত হলে গান রচনা ও সুর চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আধুনিক গান রচনার পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গান রচনায় হাত দেন।
সৈয়দ মহিউদ্দিন ১৯৭৮ সালে দৈনিক আমার বাংলা পত্রিকায় কাজ করার জন্য ঢাকায় চলে যান। তিনি দৈনিক আমার বাংলায় ঢাকায় ১ বছর কাজ করেন। এরপর ঢাকায় দেশের প্রথম সংগীত পত্রিকা মাসিক সংগীতের সঙ্গে জড়িত হন। পত্রিকাটির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ৩ বছর।
তার রচিত ও সুরারোপিত জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য চাটগাঁইয়া গান-‘মেজ্যান দিয়ে মেজ্যান দিয়ে ঐতারত’, ‘সাম্পান মাঝি সাম্পান বায় আগর মতো পেসিঞ্জার ন পায়’, ‘অউডা ক অছে ভাইপুত ক্যেনে বলে ম্যাট্টিক পাশ গল্লি’, ‘আঁরা এই সংসারত মিলিমিশি আছি দুয়া জাল’, ‘গর্কি তুয়ান বন্যা খরা মহামারি ঘূর্ণিঝড়’, ‘তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে’, ‘আইচ কাইল ঢেঁইর ঘরত কম দেখা যায় ধান’, ‘আঁই কারে কইলাম কি তুঁই কি হুনিলা কি’ প্রভৃতি।