তাদের মধ্যে শহিদুল ও ফাতেমা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের চলাচলের জন্য নেই হুইল চেয়ার। তাই আরেক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে হুইল চেয়ার এনে কোনোরকমে দিন চলছে। বিনিময়ে ৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় তাদের।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৫ যুবক গ্রেপ্তার
শহিদুল ইসলাম সম্পর্কে আনোয়ারা বেগমের চাচা শ্বশুর। আর ফাতেমা আক্তার আনোয়ারার মেয়ে। তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কানিপাড়া গ্রামে। কিছুদিন আগে বরিশালে এসেছেন চরমোনাইয়ের মাহফিল উপলক্ষে। ভেবেছিলেন এখানে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে একটি হুইল চেয়ার কিনবেন। কিন্তু সে আশা পূরন হয়নি।
এদিকে আনোয়ারা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে অস্ত্রোপচার করতে হয়। এতে তার যতটুকু জমি ছিল, তা বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন প্রতিবন্ধী চাচা শ্বশুর ও নিজ মেয়েকে নিয়ে মানুষের সাহায্যে চলছেন।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরায় প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ, ধর্ষক পলাতক
সংশ্লিষ্টরা জানান, হুইল চেয়ারের মালিক দুর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েছেন। তার কাছ থেকে দিনে ৫০ টাকা ভাড়ায় হুইল চেয়ার এনেছেন আনোয়ারা। বরিশালের নদী বন্দর-সংলগ্ন স্টিমারঘাট এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বেঞ্চের পাশে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে বসবাস করছে পরিবারটি।
আনোয়ারা বেগম জানান, চলাচলে সম্পূর্ণ অক্ষম দুজন প্রতিবন্ধীকে দেখাশোনা করতে হয়। এর মধ্যে তার ১৯ বছরের মেয়ে ফাতেমা আক্তার উঠে দাঁড়াতে পারে না। চোখে দেখে না। এমনকি কানেও শোনেন না। ওদিকে চাচা শ্বশুর শহিদুল ইসলামের সারা শরীরে ছোট ছোট টিউমার। জন্ম থেকে কুঁজো হওয়ায় বসে বসেই সবকিছু করেন তিনি। তাই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে অর্বণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আনু (আনোয়ারা) একজনকে কোলে নিয়ে চলাচল করতে পারেন হয়তো। কিন্তু আমাদের দুজনকে কোলে নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট করতে হয়।’
দুজনই প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের দুজনকেই ভাতা কার্ড করে দিয়েছে। এখন অভাব একটা হুইল চেয়ারের।
আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেনে প্রতিবন্ধীকে ‘ধর্ষণ’, রেল কর্মচারী আটক
শহিদুল বলেন, ‘আমরা দোয়া করি আল্লাহ শেখ হাসিনার ওপর আরও সদয় হোক। আমাদের বাকি জীবনটা যেন চলতে পারি।’
বরিশাল জেলা প্রশাসনের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। হুইল চেয়ার ভাড়ায় এনে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। এ পরিবারটি অর্থনৈতিক অসচ্ছলতায় ঘর ছেড়েছেন বহু আগে।’
তিনি বলেন, ‘মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য খাবার দিতে এসে তাদের অর্বণনীয় দুর্দশার চিত্রটি চোখে পড়ে। আমি জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক স্যারের সাথে কথা বলে আগামী বুধবারের মধ্যে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করব।’