একই সাথে আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম ।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন তিনি।
মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলার বিচার কাজ শেষ করে আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আসামি আব্দুল মান্নান সরদার (৫০) আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মান্নান বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন গ্রামের আহম্মদ সরদারের ছেলে।
বাংলাদেশে এত অল্প সময়ে আর কোনো ফৌজদারি মামলা বিচার শেষ হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রাষ ঘোষণার পর আসামিকে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে আসামিকে আদালতে আনা হয়।
গত ৩ অক্টোবর বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোরডোন গ্রামে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই শিশুটি মাকোরডোন এলাকায় ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্পে মামার কাছে থাকত। ৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান সরদার বিস্কুট খাওয়ানোর প্রলোভন দিয়ে শিশুটিকে তার বাড়িতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শিশুটির মামা বাদী হয়ে ওইদিন মোংলা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিত মুখার্জ্জী ১১ অক্টোবর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পর দিন ১২ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত। আদালত ১৩ অক্টোবর ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ করে। এরপর ১৪ অক্টোবর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ভিকটিমের পরীক্ষাকারী চিকিৎসক, তদন্ত কর্মকর্তা, মহিলা পুলিশ কনস্টেবলসহ আরও পাঁচজন সাক্ষ্যদেন। ১৫ অক্টোবর আসামি পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। ১৮ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে সোমবার রায় ঘোষণার জন্য নির্ধারণ করে আদালত। ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাগেরহাটের আদালত এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জানিয়েছেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ শেষ করে রায় ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সাথে তারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত সব মামলা এভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার দাবি জানান।