প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করেছেন।
বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখন ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠার অপেক্ষায় বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
এর মধ্য দিয়ে বিচারিক আদালতের রায়ের মাত্র চার মাসের মধ্যে হাইকোর্টে এ মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত হলো।
এ মামলায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যা ১৪০/১৯ নম্বর ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনও করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদন একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। তবে ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করতে হয়।
জানা যায়, চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে নুসরাত হত্যা মামলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখা টাইপের কাজ শেষে পেপারবুক ছাপানোর জন্য গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস) পাঠায়। ছাপা পেপারবুক জানুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। ছয়টি খণ্ডে পৃষ্ঠাসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পরে ছাপানো পেপারবুক যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। এ প্রক্রিয়া শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে প্রধান বিচারপতি ওই বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
গত বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় সোনাগাজী থানায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের করা মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। গত বছরের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল। আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। ইতোমধ্যে সব আসামি হাইকোর্টে আপিল করেছেন।