গ্রাম বাংলায় নানা উৎসব-পার্বণসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে মেজমানি খাওয়াতে কলাপাতার ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
কিন্তু প্লাস্টিকের তৈজসপত্র যেমন, প্লেট, বাটি ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কলাপাতার ব্যবহার বিলীন হতে চলেছে। গ্রামীণ জনপদে আবহমান কাল ধরে চর্চিত হয়ে আসছে বিভিন্ন আচার, রীতি-রেওয়াজ। সেসব ঐতিহ্যবাহী চিরচেনা কৃষ্টি-কালচারগুলোর অন্যতম হলো অতিথি পরায়ণতা।
গ্রামীণ সমাজের জিয়াফত-মেজবানি, চেহলাম, আকিকা, মুসলমানি, পংক্তিভোজ, বিয়ে-শাদী, হরিবাসর, পূজা, হালখাতা, বনভোজন, মেলা, উৎসব-পার্বণ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানাদি হতো। এইসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিরনি, তবারক, খাবার বিতরণ করা হতো কলাপাতায়।
আরও পড়ুন: যশোরে ৫৯টি বিষধর গোখরা সাপের ডিম উদ্ধার
এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত লোকজনদেরকে লম্বা লাইন করে মাটিতে বা টেবিলে আসন পেতে বসিয়ে কলাপাতার মধ্যে খাবার পরিবেশন করার রীতি ছিল।
মাগুরা শহরের পুরনো অধীবাসিরা জানান, একসময় কলাপাতার পাশাপাশি পদ্মপাতা বা শালপাতাতেও খাবার পরিবেশন করা হতো। কিন্তু পদ্মপাতা বা শালপাতা এখন আর মোটেও চোখে পড়েনা। পদ্মপাতা বা শালপাতায় খাবার পরিবেশনের রেওয়াজ কয়েক যুগ আগেই হারিয়ে গেছে। কলাপাতায় খাওয়া শুধু বাঙালি সমাজের রীতিই নয়, দক্ষিণ ভারতেও কলাপাতায় খাওয়ার প্রচলন আছে। এখনও অনেক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় কলাপাতা।
আরও পড়ুন: মনপুরায় জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা দুটি হরিণ শাবক অবমুক্ত
মাগুরায় উৎসব-পার্বণ পাগল বাঙালি তার আচার-অনুষ্ঠানাদিতে বাড়ির আঙিনা, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, মন্দির বা খোলা কোনও প্রাঙ্গণে আমন্ত্রিত লোকজনদের কলাপাতায় খাবার পরিবেশন ছিলো কৃষিজীবী সমাজের চিরায়ত ঐতিহ্য। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক, মেলামাইন, কাঁচ ও স্টিলের প্লেট-গ্লাসে পানি ও খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
তবে এ ব্যবস্থাও এখন পুরনো হয়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন চলছে ওয়ানটাইম গ্লাস-প্লেটে খাবার পরিবেশন। তাই চিরায়ত ঐতিহ্য ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে সাধারণ মানুষ কলাপাতা ব্যবহারে উৎসাহিত হবে আশাব্যক্ত করেন মাগুরার সচেতন সমাজ।