শুক্রবার সকালে মার্জিয়ার স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুকের টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্ত্রীর গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে মাথার চুল কেটে দেয় স্বামী মানিক খাঁন, শাশুড়ি ও ননদ।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খাঁনের মেয়ে মার্জিয়াকে বরগুনা সদর উপজেলার দুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খাঁনের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খাঁন জামাতা মানিককে বাড়ি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুর বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। মানিক দম্পতির দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তিন বছর আগে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই স্বামী মানিক স্ত্রী মার্জিয়া ও দুই কন্যার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুর বাড়িতে আসেন এবং স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
ওইদিন রাত ১১টার দিকে স্বামী মানিক ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়ার বাবার কাছ থেকে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। এ টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয় মানিক। পরে মানিক স্ত্রী মার্জিয়াকে বেধরক মারধর শুরু করলে এক পর্যায়ে স্বামী মানিক, ননদ জাকিয়া ও শাশুড়ি আলেয়া মিলে মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং চুল কেটে দেয়। তার চিৎকারে প্বার্শবর্তী লোকজন ছুটে এসে মার্জিয়াকে উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা নিয়ে হাসপাতাল বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মার্জিয়া। তার শরীরের পোড়া স্থানগুলোতে ফোসকা পড়ে কালো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। মাথার পিছনের চুল কাটা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূর্যভানু বলেন, ‘রাতে মানিক খানের বাড়িতে চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছে। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিচ্ছে।’
‘আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়,’ বলেন তিনি।
মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে জামাতা মানিক। তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে জামাতা, তার বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করেছে। গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। প্বার্শবর্তী লোক না এলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলত। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
গুরুতর আহত মার্জিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাকে কৌশলে ওই (স্বামী) তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এ বিষয়ে স্বামী মানিক খাঁন যৌতুক চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘সামান্য ঝগড়াঝাটি হয়েছে কিন্তু খুন্তির ছ্যাঁকা দেইনি।’
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র জানান, মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে আগুনে পোড়ানোর চিহৃ রয়েছে। তার মাথায় পিছনের চুল কাটা রয়েছে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়া অমানবিক। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’