২১ আগস্টের জঘন্য গ্রেনেড হামলার মুহূর্ত স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও তার সাবেক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী নাজিব আহমেদ বলেছেন, খুনিরা আসলে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে যা করতে পারিন, তাই করতে চেয়েছিল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, “এটি রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র ছিল (খুনিদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য)। তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে এই মামলার রায় কার্যকর করা উচিত।
নাজিব বলেন, ‘আদালতের রায় কার্যকর হলে যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। প্রধান টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভয়াবহ হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার জন আহত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও বারবার গ্রেনেড বিস্ফোরণে তার শ্রবণশক্তি বিঘ্নিত হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চান মাহাবুবুর রশিদের মা-বাবা
তিনি বলেন, তাদের একটি একক লক্ষ্য ছিল যে তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া। ‘আমরা সেটা করতে পেরেছিলাম। আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম এবং তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ছিল। আমরা তাকে একা রেখে পালিয়ে যাইনি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য যে আমরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে খুনিদের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি।’
নাজিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জীবিত দেখে তিনি আজ সন্তুষ্ট। ‘আমি তাকে সুরক্ষিত রাখতে যেকোনো যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। এখনো আমার সেই শক্তি ও সাহস আছে।’ সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন।
নাজিব বলেন, ওই হামলার দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে না থাকলে এটা তার জন্য সারাজীবসের কষ্ট হয়ে থাকত।
আরও পড়ুন: আর যেন ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি না হয়: আইইবি নেতারা
তিনি বলেন, ‘ আমি অনুভব করতে পারি আমার শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হাঁটতে থাকে। আমরা যারা স্প্লিন্টার সহ্য করছি কেবল ব্যথা বুঝতে পারি। আমরা, যারা আমাদের শরীরে স্প্লিন্টার বহন করছি, এমনকি এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) করতে পারি না, এই কষ্ট অন্য কাউকে বোঝানো যাবে না।’
প্রথমবার যখন বিস্ফোরণ হয়, সেই সময়ের কথা মনে করে নাজিব বলেন, ‘একপর্যায়ে সব নেতা তাদের বক্তৃতা শেষ করেন। বক্তব্যের শেষ অংশে ছিলেন নেত্রী হাসিনা। তিনি জয় বাংলা উচ্চারণ করেন এবং জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করতে থাকেন। ঠিক সেই মুহূর্তে, আমি লক্ষ্য করলাম সিটি হোটেলের সামনে থেকে একটি কালো বস্তু আমাদের দিকে উড়ে আসছে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে।’
সব সময় তার নিরাপত্তার জন্য যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের মধ্যে তিনি নিজেকে সবচেয়ে সিনিয়র বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পুলিশ ও আয়ামী লীগ নেতারা একত্রিত হয়, কিন্তু সেই নির্দিষ্ট দিনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাদে থাকতে দেওয়া হয়নি। ছাদে কোনো পুলিশ মোতায়েন ছিল না। আমরা সেই সময় এটিকে খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নিইনি তবে এটি আমাদের নজরে এসেছিল।’
তিনি বলেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যখন বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটল, তখনই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা-কর্মীরা তিন দিক থেকে শেখ হাসিনাকে ঘিরে ফেলেন। সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাকে ছিলাম। হানিফ ভাই, মায়া ভাই ও স্কোয়াড্রন লিডার মামুন তিন দিক থেকে আপাকে (হাসিনা) রক্ষা করেছেন।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘তার সামনের দিকে একটি টেবিলের মতো কিছু ছিল।এ কারণে তার শরীরের অর্ধেক অংশ ঢাকা থাকলেও অর্ধেক অংশ ফাঁকা ছিল। আমি সামনের দিকটি অবরুদ্ধ করেছিলাম। যে কোনো মূল্যে তাকে রক্ষা করার জন্য আমরা একটি মানবঢাল তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে স্মরণ করতে বলেন। ‘শুধু আল্লাহই আমাদের রক্ষা করতে পারেন।তখন আমরা একত্রে দোয়া ইউনুস পাঠ করছিলাম। আমাদের উপর আবার হামলা হয় এবং স্প্লিন্টারটি আমাকে এবং অন্যদের আঘাত করে।’
তারা ট্রাক থেকে নেমে হাসিনাকে এসইউভিতে নিয়ে যেতে সক্ষম হযন। মেজর মামুন দৌড়ে গিয়ে গাড়ির বাম দরজা খুলে দেন। শেখ হাসিনা তার ভেতর ঢুকে পড়েন। নাজিব, তারেক, শোয়েব, মামুন ও মায়া তাকে অনুসরণ করেন।
তারা ভীতিকর দৃশ্য দেখেছে এবং আহতদের মধ্যে কয়েকজন রাস্তায় পড়ে আছে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কেউ জমাট রক্তের উপর বসে কাঁদছে এবং কিছু স্থির দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম আইভি চাচি (আইভি রহমান) রক্তাক্ত নিথর অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি আমার চাচাতো ভাই বাহাউদ্দিন নাসিম রক্তাক্ত অবস্থায় উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে।’
গাড়ি থেকে নেমে হাসিনা তার দলের লোকদের কিছু টাকা দেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (২১ আগস্ট) গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই ২১ আগস্ট দিনের বেলায় আইভি রহমানসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিচার হয়েছে। এর (ট্রায়াল কোর্ট) রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায় শিগগিরই কার্যকর করা উচিত।’
ঢাকার একটি আদালত এর মধ্যে ৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং তাদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ ১৮ দণ্ডিত আসামি পলাতক রয়েছেন।
বর্তমানে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। আজকের আলোচনায় সভাপতিত্ব করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার কিছু সাজাপ্রাপ্ত আসামি এখন কারাগারে থাকলেও মূল হোতা দেশের বাইরে থাকেন।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী আজ