সংস্কার শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সেতুর দুই পার দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সেতু দিয়ে ৮ ফুট উচ্চতার বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
শুরুতে এই সেতু দিয়ে টোল ছাড়াই যানবাহন চলাচল করলেও পরে টোল যুক্ত করা হবে। এছাড়া, ভারী যানবাহন চলাচল রোধে সেতুর প্রবেশমুখে উচ্চতা প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছে। এদিকে সেতুতে যান চলাচলের পাশপাশি পথচারীদের জন্য নতুন করে ওয়াকওয়ে যুক্ত করা হয়েছে। তবে এর ফলে যান চলাচলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর চার লেন সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতি, ভোগান্তি চরমে
জানা গেছে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীতে একটি আপদকালীন সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৭০০ গজের সেতুটি তৈরি করে। দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মোটরযান চলাচলের জন্য সেতুতে ডেক বসানো হয়। ১৯৫৮ সালে এই এক লেনের সেতুটিই সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
উদ্বোধনের ৩১ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়। ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিগত সরকার প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেতুটি গেল সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।
এরপর প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থ ছাড়ে জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সেতুর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। অবশেষে কারিগরি সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রবিবার সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কালুরঘাট রেল সেতু সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেল সচিব আবদুল বাকী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, সংস্কার শেষ হলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। রবিবারে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।