স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের দাবি মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বিধি মোতাবেক বিষয়টি মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনায় তিনি জেলা প্রশাসকসহ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তার লোকজন দিয়ে প্রশাসনিক কাজে নজরুল ইসলামকে চাপ দিয়ে আসছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে ১টার দিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তার দপ্তরে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে মো. পিন্টু, আমির হামজা, মো. আজম ও মো. শুভসহ অজ্ঞাত সাত-আটজন মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
তারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে যেতে বলেছেন। কাজ শেষ করে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করবেন বলে জানান। এর পর পরই তারা তাকে জোর করে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যান। এ সময় উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগে গণনাকারী (সুপারভাইজার) নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে তাকে বদলিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে, যা সার্বিকভাবে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমকে বাস্তবায়নের অচলাবস্থার সৃষ্টি ও জনস্বার্থ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশংকাসহ অন্যান্য উপজেলা পরিষদে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে এনে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ এর ১৩ (ঘ) ধারা অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানকে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করল। সেই সাথে উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হলো।
মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ফৌজিয়া খান বলেন, প্রজ্ঞাপনের এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
বরখাস্ত হওয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি মৎস্য কর্মকর্তাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পরিসংখ্যান বিভাগের গণনাকারি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। তাকে কোনো ধরনের হুমকি দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। অভিযোগ প্রমাণ না করেই একতরফাভাবে সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দেওয়ান সাইদুর রহমান চেয়ারমান নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।