মালয়েশিয়া প্রবাসী কাদের হোসেন ও রেক্সোনা হেসেনের মেয়ে জ্যোতি এবার ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৯২ নম্বর পেয়ে (জিপিএ-৫) উত্তীর্ণ হয়েছে। মেধাবী এ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে আবহাওয়াবিদ হতে চায়।
জ্যোতি ছোটবেলায় মায়ের সাথে নানিবাড়ি থেকে ফেরার পথে ভ্যান থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। এরপর চলাচলের শক্তি হারায়। স্পাইনাল ইনজুরির কারণে তার এ অবস্থা।
জ্যোতির মা রেক্সোনা বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে জ্যোতি বড়। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে নার্সারিতে পড়ার সময় (সাড়ে ৪ বছর বয়সে) দুর্ঘটনায় জ্যোতির পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সে বাম হাত দিয়ে লেখালেখি করত। চিকিৎসার পর এক পর্যায়ে ডান হাতে লিখতে শুরু করে। কিন্তু দ্রুত লিখতে না পারায় এসএসসিতে ছোট বোন জেবাকে শ্রুতিলেখক হিসেবে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় তাকে।
মায়ের অভিযোগ, বাড়ির পাশে পারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় শিক্ষকদের অসহযোগিতায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় জ্যোতি। পরে সে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মা তাকে প্রতিদিন হুইলচেয়ারে করে স্কুলে আনা-নেয়া করতেন।
রেক্সোনা আরও বলেন, ‘তার খাওয়া-দাওয়া, চলাচল সবকিছুই আমাকে করে দিতে হয়। ঢাকার সিআরপিতে নিয়ে গেছি। তারা বছরে দুইবার তাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ডাক্তাররা আশ্বস্ত করেছেন, ঠিকমতো চিকিৎসা-থেরাপি চললে এক সময় সে নিজেই হাঁটাচলা করতে পারবে। কিন্তু ঢাকায় গেলে প্রতিবার কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের সহায় সম্পত্তি তেমন নেই। চিকিৎসা আর উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ টাকা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে মেয়েটি ভালো রেজাল্ট করবে বলে বিশ্বাস করি।’
ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নূরুল আমিন মুকুল বলেন, ‘জ্যোতি খুবই মেধাবী মেয়ে। স্কুলে পড়াকালে তার কাছ থেকে কোনো প্রকার অর্থ নেয়া হয়নি। নিয়মিত তার বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তার জন্যে দোতলা বাদ দিয়ে নিচতলায় ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। সে বসতে পারত না। তার জন্যে আলাদা টেবিলও তৈরি করে দেয়া হয়। সুযোগ পেলে সে অনেক দূর যেতে পারবে।’
নিজের সফলতা নিয়ে জ্যোতি বলে, ‘এ সাফল্য আমার মা, বোন ও শিক্ষকদের। তাদের কাছে আমি চিরঋণী। ভালো করে লেখাপড়া শিখতে চাই, যেন কারও বোঝা হয়ে না থাকতে হয়। আমার খুব ইচ্ছা আবহাওয়াবিদ হওয়ার। না হলে আইনজীবী। শারীরিকভাবে অক্ষম, তাই ভাষা আর বুদ্ধি দিয়ে যা করা যাবে ভবিষ্যতে সেটিই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই।’