ফসল
জলবায়ুসহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, জমি হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে হলে জলবায়ুসহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে কৃষিতে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারনেট অব থিংস, ড্রোন প্রভৃতির ব্যবহার এবং প্রিসিসন ও ভার্টিকাল এগ্রিকালচারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এছাড়া, দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের গ্রাজুয়েটদেরকে এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
রবিবার সকালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আগামীতে টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করতে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেজন্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কারিকুলামকেও উন্নত ও আধুনিক করতে হবে।
এছাড়া নবীন কৃষিবিদদের সেভাবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে শিক্ষকমণ্ডলীদের এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধবনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে চাল, গম, ভুট্টা, ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে আছে।
তিনি জানান, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন চার কোটি চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: জনগণই আওয়ামী লীগের পাহারাদার: কৃষিমন্ত্রী
এছাড়া বিগত ১৪ বছরে চালের উৎপাদন ২৯ শতাংশ, গম ৩৭ শতাংশ, ভুট্টা শতাংশ, আলু ১১০ শতাংশ, ডাল ৩২৮ শতাংশ, সবজি ৬৪৫ শতাংশ, পেঁয়াজ ৩৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদনে অর্জিত বিস্ময়কর সাফল্যের ফলেই দেশের মানুষ এখন পেট ভরে খেতে পায়। করোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধসহ শত দুর্যোগের মাঝেও কেউ না খেয়ে থাকে না।
এছাড়া বিগত ১৪ বছরে কোন খাদ্য সংকট হয় নি।
ড. রাজ্জাক বলেন, কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্র্যাজুয়েটরা।
এর আগে কৃষিমন্ত্রী চ্যান্সেলরের পক্ষে সমাবর্তন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এবং সমাবর্তনের উদ্বোধন করেন।
সমাবর্তনে জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
এদের মধ্যে ২২৪ জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের পক্ষে কৃষিমন্ত্রী এই সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন ও ডিগ্রি প্রদান করেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান।
আরও পড়ুন: কানাডা পটাশিয়াম সার বিক্রি অব্যাহত রাখবে: কৃষিমন্ত্রী
সার ও বীজের দাম বাড়বে না: কৃষিমন্ত্রী
তিন ফসলি জমি ধ্বংস করা যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
যেসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল রোপণ করা হয় সেসব জমি ধ্বংস না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে তিন ফসলি জমি ধ্বংস করা যাবে না। তিন ফসলি জমিতে কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না। বরং এই জমিগুলোকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, সরকার এখন নিয়মিত তিন ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সোলার ইনস্টলেশন ও ভবন নির্মাণের মতো উন্নয়নমূলক কাজে তিন ফসলি জমি ব্যবহারের জন্য কিছু প্রস্তাব পাওয়ার পর এই নির্দেশনা আসে।
আরও পড়ুন: জনগণকে হয়রানি না করে কর দিতে উৎসাহিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
পাতাল মেট্রোরেল বাংলাদেশের অগ্রগতির আরেকটি মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
‘হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ’ উৎপাদনের বিকল্প খতিয়ে দেখা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বন্যায় কুড়িগ্রামে কৃষি খাতে ক্ষতি ১২৭.৫৪ কোটি টাকা
কুড়িগ্রামে সাম্প্রতিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জেলার কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার কারণে কুড়িগ্রামে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বন্যায় জেলার মোট ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা
চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকরা ৩৪ হাজার ৩১০ হেক্টর কৃষি জমি আবাদ করেছেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে প্রায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ দিনের বন্যায় ৭ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া বন্যার পানিতে প্রায় ৮ হাজার ৪২৭ হেক্টর ফসলি জমির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে মোট ৩৫ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা মোট ফসলের ২৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান ও পাট চাষে। এরপরই রয়েছে সবজি।
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে পাটের ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৯ হাজার ৫২১ হেক্টর; আউশ ধানের ৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং সবজির ৪ হাজার ৩৪ হেক্টর জমির মধ্যে এক হাজার ১৬১ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠনের সুপারিশ
এছাড়া জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন বীজতলা, পাট, আউশ ধান, তিল, সবজি, চিনাবাদাম, কলা, ভুট্টা, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, আখ ও মসুর ডাল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ছড়ারপাড় গ্রামের সবজি চাষি শামসুল আলম বলেন, ‘আমি আট বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছি। আমার ক্যাশ ছিল ৫০ হাজার টাকা, এনজিও থেকে (ঋণ) নিছি ৩০ হাজার টাকা এবং সুদের পর নিছি ২০ হাজার টাকা। এবার আমি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’
একই গ্রামের আরেক কৃষক জব্বার আলী বলেন, ‘এ বছর আমরা মোটা অঙ্কের লাভ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় আমাদের স্বপ্ন ভেসে গেছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সাত হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য একটি বরাদ্দ পেয়েছি যা তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’
ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বাড়ছে, ডুবছে ফসল
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ যমুনার পানি বৃদ্ধিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এতে পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদীর নিম্নাঞ্চলের (চরাঞ্চলের) বিভিন্ন ফসলের খেত তলাতে শুরু করেছে। এছাড়াও ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতে।
গত এক সপ্তাহ যাবত ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই নদীতে ছয় দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিনই বাড়ছে পানি।
আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে এই পানি চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান খেতে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অপরিপক্ব ফসল ঘরে তুলছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর বিভিন্ন জমির ফসল। এর মধ্যে বেশিরভাগই বাদাম। এছাড়া তিল ও ধানও রয়েছে।
সরেজমিনে রবিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন। এছাড়া ধান ও তিলও তুলতে দেখা যায়। নদীর অপরপ্রান্তেও তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের খেত।
পালডাঙ্গি এলাকার কৃষক রমজান আলী ভূঁইয়া জানান, আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। ৪/৫ দিন পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেতো। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম এখনও পরিপক্ব হয়নি। তুলে নিয়ে গরু, ছাগলকে খাওয়াবো। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।
আরেক কৃষকের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের সারা বছরের সংসার খরচ চলে, কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেলো। গত কয়েকদিন যাবত পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
নতুন ফসল উঠলেও ভুল নীতির কারণে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকারের ভুল নীতি ও ক্ষমতাসীন দলের নোংরা খেলায় ভরা বোরো ধান কাটার মৌসুমেও ধানের দাম বাড়ছে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ফখরুল বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কথা নয়। বোরো কাটা শুরু হওয়ায় দাম কমার সময় এসেছে। তবে বেড়েছে প্রতিটি জাতের চালের দাম। তার মানে পুরো পরিকল্পনায় কিছু সমস্যা আছে।’
তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিদের কাছে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। ‘খাদ্য বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, মানুষের সেবা করার চেয়ে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া: মোশাররফ
এই বিএনপি নেতা বলেন, বড় কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করে কয়েকদিন পর বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ আগামী দিনে ধানের দাম বাড়বে এবং তাদের লাভও বাড়বে। এটা তাদের (ক্ষমতাসীন দলের) কৌশল।’
বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ফখরুল বলেন, আ.লীগ সরকারের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন,‘প্রান্তিক কৃষকেরা এখন রিকশা ও ভ্যান চালায়, অনেক মধ্যম চাষি কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে; কারণ কৃষি এখন একটি অলাভজনক পেশা। তাই খাদ্যশস্যের চাষ কমছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার শুধু সেসব কাজ করে যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা ও কোটি কোটি টাকা কমিশন থাকে। তাই তারা হাওর এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে না।
হাওর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উজান থেকে আসা পানির কারণে বন্যা হওয়া অনেক পুরনো সমস্যা। ‘বাঁধ নির্মাণ বা জলাধার নির্মাণ করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এটি কৃষকদের বছরে দুই-তিনবার ফসল ফলাতেও সাহায্য করবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।’
হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের নামে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, হাওর এলাকায় কিছু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো এতই নাজুক ও দুর্বল যে ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ ধরে রাখতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিশাল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
কৃষকদলের পক্ষ থেকে তিনি হাওরে সিমেন্ট ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, ঋণের সুদ প্রত্যাহার এবং স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিত করাসহ আট দফা দাবি জানান। হাওর এলাকায় বীমা এবং বাঁধ নির্মাণ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
আরও পড়ুন: তীব্র সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ: বিএনপি
এরকম কতজন পি কে হালদার আছে, জানতে চাই: ফখরুল
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সবচেয়ে বড় ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে রবিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে হাওরের সব জমির পাকা ধান ডুবে যায়। একই সঙ্গে কেটে রাখা ধানের বোঝা ও খড়কুটোও তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় হাজারো কৃষকের কান্নায় পুরো হাওর ভারি হয়ে উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। কিন্তু কৃষকদের দাবি, ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কাটা ধান আবার জমিতেই রয়ে গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, শাল্লার মাউতির বাঁধ (৮১ নম্বর পিআইসি) ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু হতে থাকলে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কৃষকরা কাটা ধান, নাকি জমির পাকা ধান, না খড় তুলে আনবেন এই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার কাটা ধানের স্তুপের পাশে বসে কাঁদতে আছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
ভাঙা বাঁধের পাশে কাটা ধানের স্তুপের কাছে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আভা রানী দাস। স্বামী কানন দাসের মাথায় ধানের বোঝা তুলে দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘তারা খালি নিজের চিন্তা করে, বাঁধে লাখ লাখ টেকা দুর্নীতি করে। আমি ২৫ কেয়ার (আট একর) ধান করছিলাম। ৫ কেয়ার (আধ একরের কম) কাটছিলাম, অখন নিতাম পাররাম না, নিতে নিতে ইগুন নষ্ট অই যাইবো।’
আভা রানীর মতো তলিয়ে যাওয়া ফসলের চিন্তায় হাওরে বসেই কাঁদছেন আফাজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, মনির মিয়াসহ হাজারো কৃষক।
ফসল হারানোর সংশয় নিয়ে তারা বললেন, ‘এই বাঁধ ভাঙতে পারে না, তদারকি ও অবহেলায় বাঁধটি ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাজারো পরিবার পানিবন্দি
কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজে গাফলতি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
তলিয়ে যাওয়া বাঁধের কাছে দাঁড়ানো আঙ্গাউড়ার হিমেল সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁধের নিচে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি যাচ্ছে দেখে হাওরে থাকা কয়েকজন কৃষককে জানাই। তারা বাঁশ বস্তা ছাড়াই খড় দিয়ে একঘণ্টা পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যায়। পরে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসেন, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুন কান্তি দাস বললেন, হাওরে ৭০ ভাগ ধানকাটা হয়েছে তবে ২০ ভাগ কাটা ধান খেতেই আছে। ৪৮ ঘণ্টায় পুরো হাওর ডুবে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজে মনোযোগী ছিল না,তাই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই মন্তব্য করেন শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাউতির বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ভালো করে বাঁধের কাজ করেছি। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি শনিবার রাতেও বাঁধের ওখানে ছিলাম।’
আরও পড়ুন: আগাম প্রস্তুতির কারণে এবার হাওরে ক্ষতি কম হয়েছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে দায়িত্বশীলদের বাঁধ ঠেকানোর কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না। কেন করলেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাঁধ নির্মাণে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাওরের ফসলের ঝুঁকি কমাতে কাজ চলছে: কৃষিমন্ত্রী
হাওরে বোরো ধানের ঝুঁকি কমাতে স্বল্পজীবনকালীন আগামজাতের ধান চাষ, টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। এছাড়া ধান পাকার পর তা দ্রুত কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার প্রদানেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।শনিবার সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ও বোরো ধানখেত পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, হাওরে ১২-১৪ লাখ টন ধান হয়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কোনো কোনো বছর আগাম বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে ১৫-২০ দিন আগে পাকে এমন জাতের ধানচাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব জাত চাষে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।ব্লাস্ট রোগ হওয়ায় ব্রি২৮ ও দেরিতে পাকার কারণে ব্রি২৯ ধান হাওরে চাষ না করার জন্য কৃষকদেরকে এসময় আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, সেজন্য উচ্চফলনশীল জাতের ধান যেমন ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২ এবং বিনাধান-১৭ চাষ করতে হবে। আমরা আপনাদেরকে এসব উন্নত জাতের ধানের বীজ দেব। আপনার এগুলো চাষে এগিয়ে আসবেন।বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগামী বোরোতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে। এছাড়া, সারা বছর ধরে ভিজিএফসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে, যাতে খাদ্যের জন্য কেউ কষ্ট না করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বিরোধীদের সরকার হবে বিএনপির জাতীয় সরকার: কৃষিমন্ত্রী
ফসল রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাঁধগুলো অনেকক্ষেত্রে সময়মতো সংস্কার হয় না। এক্ষেত্রে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যমান নীতিমালার প্রয়োজনে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া, পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদী খননে উদ্যোগ নেয়া হবে।শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে ও দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দেয়া হচ্ছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের দিচ্ছে।ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মন্ত্রী আরও বলেন, কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আগাম বন্যা বা আকস্মিক ঢলের কারণে হাওরে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকি। বৃষ্টি আর নাহলে এ বছরের অবশিষ্ট ধানগুলো কৃষকের ঘরে তোলার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, দেশের অন্য অঞ্চল থেকেও যন্ত্র আনা হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজনীতিবিদরা কৃষকের পাশে রয়েছে।পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিএমডিএর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সুইট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।পরে কৃষিমন্ত্রী সদর উপজেলার জাওয়ার হাওরে স্বল্পজীবনকালীন আগামজাত বিনাধান-১৭ এবং উচ্চফলনশীল ব্রিধান ৮৯ কর্তন ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তিনি ধান কাটার উদ্বোধন করেন ও ধান কাটার যন্ত্র ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার’ কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন: দেশে এই মুহূর্তে সারের কোনো সংকট নেই: কৃষিমন্ত্রী
হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
টাঙ্গুয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানির নিচে ১০০ একর ফসল
সুনামগঞ্জে সুরমাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে একের পর এক বাঁধ ভাঙছে। আর এতে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরপাড়ের কৃষকদের বোরো ফসল।
সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের আরও একটি বাঁধ ভেঙে প্রায় ১০০ একর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিন উপজেলার এরাইল্লা কোনা মনদিয়াতা বাঁধটি ভেঙে এ ফসলহানির ঘটনা ঘটে।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ওই অঞ্চলের কৃষকদের।
বাঁধ ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবীর বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের যে বাঁধটি ভেঙেছে, সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। পরে বিস্তারিত বলতে পারবো।
স্থানীয় কৃষক বিলাল মিয়া বলেন, ‘বাঁধ দিয়া কিতা (কি) লাভ হইলো, আমরা ত ফসল ঘরে তুলতে পারলাম না। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়া সারাবছর কীভাবে কাটামু।’
কৃষক নানু মিয়া বলেন, ‘সরকার শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য। কিন্তু সে টাকা দিয়ে পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সদস্যরা ঠিকমতো কাজ করেন না। ঠিকমতো কাজ করলে এতো অল্প পানিতে বাঁধ ভাঙতো না।’
আরও পড়ুন: কোমর পানিতে বোরো ধান কাটছে চরাঞ্চলের চাষিরা
অপর কৃষক দিলোয়ার মিয়া বলেন, ‘তাহিরপুরের এরাইল্লা কোনা মনদিয়াতা বাঁধ ভেঙে পানি এতে তলিয়ে গেছে একশো একর বোরো ফসল। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। গত এক সপ্তাহে জেলার তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা ও দিরাই এই চার উপজেলায় নয়টি বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সেসব অঞ্চলের কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও নতুন একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বোরো ফসলের ক্ষতি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে।
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জেলার ১১টি উপজেলায় ফাটল দেখা দেয়া বাঁধগুলো দিনরাত পাহারায় রেখেছে হাওর পাড়ের মানুষেরা।
গত ১ এপ্রিল তাহিরপুরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে ১২০ হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এরপর একে একে আরও আটটি বাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়াও জেলার ছোট-বড় সব হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: হাওরে পানি বাড়ছে, আতঙ্কে কাঁচা ধান কাটছে কৃষক
সিলেটে ৪০০ বিঘা বোরো খেত প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’: চাঁদপুরে ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র কারণে চাঁদপুরে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালালউদ্দীন।
দুর্যোগপূর্ণ উত্তর কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায় জরিপে দেখা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় আলু, সরিষা, গম, বোরো বীজতলা, পেঁয়াজ, মরিচ ও আগাম শীতকালীন শাক সবজি ও অন্যান্য ফসলসহ ক্ষতি হয়েছে চার হাজার ৫৫৫ হেক্টর ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আগাম শীতকালীন শাক-সবজির। এতে কৃষকদের প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত
সরিষায় সাত কোটি আড়াই লাখ টাকা, আলু ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৪১ লাখ টাকার। অন্যান্য বিভিন্ন জাতের ফলের ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৪২ লাখ টাকার। পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ টাকার। বোরো বীজতলার চার লাখ ১৫ হাজার টাকার, মরিচের এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার ও গমের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার।
জেলায় সবর্মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্যে শাকসবজির চাষির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৬৩০ জন। সবচেয়ে কম গম চাষি ১৯৫ জন।
ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহে মেতেছে রাণীশংকৈলের শিশুরা
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝরে পড়া ও ইঁদুরের গর্তে জমানো ধান সংগ্রহে মেতে উঠেছে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা।
সকালের রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দল বেঁধে সবাই সদ্য কেটে নেয়া আমনের মাঠে নেমে পড়ে। মাটি খুঁড়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করে তারা। এছাড়া আমন ধান কেটে নেয়ার পর খেতে অবশিষ্ট পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুরা। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করে, কেউ আবার সে ধান মজুদ করে রাখে নিজেদের জন্য।
এক দলের শিশুরা বলে, মালিকরা ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে, সেগুলো আমরা কুড়িয়ে নিই। এছাড়াও ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে অনেক ধান পাওয়া যায়। এসব ধান আমরা বাড়িতে জমা করে রাখি। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করি।
আরও পড়ুন: ইঁদুরের গর্তে শিশুদের হানা