বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকারের ভুল নীতি ও ক্ষমতাসীন দলের নোংরা খেলায় ভরা বোরো ধান কাটার মৌসুমেও ধানের দাম বাড়ছে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ফখরুল বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কথা নয়। বোরো কাটা শুরু হওয়ায় দাম কমার সময় এসেছে। তবে বেড়েছে প্রতিটি জাতের চালের দাম। তার মানে পুরো পরিকল্পনায় কিছু সমস্যা আছে।’
তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিদের কাছে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। ‘খাদ্য বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, মানুষের সেবা করার চেয়ে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া: মোশাররফ
এই বিএনপি নেতা বলেন, বড় কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করে কয়েকদিন পর বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ আগামী দিনে ধানের দাম বাড়বে এবং তাদের লাভও বাড়বে। এটা তাদের (ক্ষমতাসীন দলের) কৌশল।’
বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ফখরুল বলেন, আ.লীগ সরকারের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন,‘প্রান্তিক কৃষকেরা এখন রিকশা ও ভ্যান চালায়, অনেক মধ্যম চাষি কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে; কারণ কৃষি এখন একটি অলাভজনক পেশা। তাই খাদ্যশস্যের চাষ কমছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার শুধু সেসব কাজ করে যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা ও কোটি কোটি টাকা কমিশন থাকে। তাই তারা হাওর এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে না।
হাওর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উজান থেকে আসা পানির কারণে বন্যা হওয়া অনেক পুরনো সমস্যা। ‘বাঁধ নির্মাণ বা জলাধার নির্মাণ করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এটি কৃষকদের বছরে দুই-তিনবার ফসল ফলাতেও সাহায্য করবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।’
হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের নামে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, হাওর এলাকায় কিছু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো এতই নাজুক ও দুর্বল যে ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ ধরে রাখতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিশাল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
কৃষকদলের পক্ষ থেকে তিনি হাওরে সিমেন্ট ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, ঋণের সুদ প্রত্যাহার এবং স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিত করাসহ আট দফা দাবি জানান। হাওর এলাকায় বীমা এবং বাঁধ নির্মাণ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
আরও পড়ুন: তীব্র সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ: বিএনপি