সবজির বাজার
রমজানের শুরুতেই সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতি, ক্রেতাদের অসন্তোষ
করোনা মহামারির মাঝেও সারা বিশ্বজুড়েই মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আনন্দের মহিমায় উজ্জীবিত। কিন্তু মঙ্গলবার ঢাকার সবজির বাজারগুলোতে প্রায় সকল সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীবাসীর রমজানের আনন্দে ভাটা ফেলেছে।
করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতির প্রভাব রাজধানীবাসীর মধ্যেও পড়েছে। নগরবাসীর অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যেই গত সপ্তাহে বেড়েছে বেগুন, শসা, করলা, ঢেড়স, ধুন্দুল, গাজর, পটল, মরিচসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল সবজির দাম।
আরও পড়ুন: রমজানে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: শিল্পমন্ত্রী
বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও রমজানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকেই দায়ী করছেন ঢাকার বাসিন্দারা।
এদিকে বিক্রেতাদের দাবি, করোনার কারণে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহের অভাব এবং রমজানের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাজাগুলো সরেজমিনে ঘুরে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান, বেগুন প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দুল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা এবং বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহের সোমবার বাজারে আলু ১০.৫৩ শতাংশ, পেয়াজ ৪ শতাংশ, রসুন ১৪.২৯ শতাংশ, শুকনা মরিচ দেশি ১১.১১ শতাংশ ও আমদানিকৃত ৩.৮৫ শতাংশ, আদা ২৯.১১ শতাংশ ও এক হালি ডিম ৬.৯০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি হয়েছে।
আরও পড়ুন: রমজানে অফিসের সময়সীমা নির্ধারণ
আবার গতকাল রাজধানী বাজারগুলোতে উন্নতমানের চাল কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল কেজি প্রতি ৫২-৬০ টাকা এবং মোটা চাল কেজি প্রতি ৪৬-৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর পাশাপাশি, আটা কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন কেজি প্রতি ১২২-১২৫ টাকা দের বিক্রি হয় রাজধানীর বাজারগুলোতে।
উল্লেখ্য যে, রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রী একটি অনলাইন সভায় জানান, রমজান উপলক্ষে দেশে প্রতি কেজি চিনিতে ৩ টাকা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে পুনঃনির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত এবং খোলা চিনি বিক্রি হবে যথাক্রমে ৬৮ টাকা এবং ৬৩ টাকা দরে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাজারগুলোতে আসা ক্রেতারা ইউএনবি প্রতিনিধিকে জানান, গতকালের (সোমবার) তুলনায় আজ প্রায় প্রতিটি সবজিতেই কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এ সময় ক্রেতারা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে দোষারোপ করেন।
রাজধানীর ডেমরার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় বাজারে আজ প্রতিটি সবজির দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে তিনি অবাক হয়েছেন।
তিনি জানান, সোমবার তিনি বেগুন ও শসা কিনেছেন কেজি প্রতি ৫০ টাকা করে। কিন্তু একদিনের ব্যবধানেই দুটি সবজিরই দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা।
আরও পড়ুন: রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে
এ সময় তিনি, সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য সরবরাহের দাবি জানান।
এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সারুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মুন্সি দাবি করেন, গতকালের তুলনায় আজ তাদের অতিরিক্ত দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সবজি কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতিরি সভাপতি গোলাম মাওলা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে তিনি মনে করেন, কখনো কখনো খুচরা বিক্রেতারাও ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি করে থাকে। তেলের দাম বৃদ্ধি নিরসনে তিনি দুর্নীতি রোধ এবং খুচরা বাজারে সরকারকে তেলের দাম নির্ধারণ করার ব্যাপারে মত দেন।
এদিকে প্রতি বছরই রমজানে নিত্যপণ্যে দাম বৃদ্ধি কারণ হিসেবে বাজার ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি এবং বাজারে মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করেন বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির (ক্যাব) সহ সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রমজানে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, আর বাজারে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
তিনি মনে করেন, এখনই বাজারে সমন্বিত মনিটরিং ব্যবস্থা শুরু করা দরকার।
আরও পড়ুন: রমজানে দরিদ্র ও দুস্থতের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিাআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান সাম্প্রতিক সানেম পরিচালিত পরিসংখ্যানের বরাতে বলেন, করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, রমজান মাসে সাধারণ মানুষের কষ্ট চরমে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, ‘দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য খালাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমাদের পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আমাদের এগুলো কার্যকর করা দরকার।’
৩ বছর আগে
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মাগুরায় সবজি বাজারে অরাজকতা
করোনাভাইরাস সংকটের পাশাপাশি রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মাগুরা জেলায় সবজি বাজারে চলছে চরম অরাজকতা। এখানকার পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে।
৪ বছর আগে