দুর্বৃত্ত
খুলনায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবক নিহত
খুলনার রূপসায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে সাগর শেখ (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা এলাকার চৌরাস্তার পূর্ব পাশে এ ঘটনা ঘটে।
সাগর শেখ গ্রীন বাংলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তিনি পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাগর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে কয়েকজন তার গতিরোধ করে তাকে গুলি করতে থাকে। একটি গুলি তার মাথায় ও অপরটি হাঁটুতে লাগে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন।
রূপসা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গৌতম জানান, গোলাগুলির শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান রাত ১১টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানান।
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌরভ দাশ বলেন, রাতে জাপুসা এলাকায় ডিউটিতে ছিলাম। থানা থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তি ওই এলাকায় জমি কিনে নতুন বাড়ি করেছেন। তবে কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মীর বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে।
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নয়ন আলী (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বাবুপুর মোড়ে ঘটে এ ঘটনা। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নয়ন উপজেলার নয়ালাভাঙা ইউনিয়নের মোড়লটোলার আব্দুল করিমের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বাবুপুর মোড়ে নয়নকে চাপাতি দিয়ে হাত-পায়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে সেখানে উপস্থিত লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, নয়নকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হতে পারে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন জানান, ঘাতকদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
৮ দিন আগে
মানিকগঞ্জে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে আগুন
মানিকগঞ্জে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
জেলা শহরের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানরা সেতুর দক্ষিণ পাশে পশ্চিম সেওতা এলাকায় অবস্থিত ওই স্মৃতিস্তম্ভে রবিবার (৩০ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে।
মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে একটি কালো রঙের প্রাইভেট কারে করে তিন ব্যক্তি স্মৃতিস্তম্ভের কাছে নামে। স্মৃতিস্তম্ভের আশপাশে থাকা গাড়ির চাকার টায়ার জড়ো করে তারা। এরপর টায়ারে পেট্রোল ঢেলে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নেভায়।
আজ (সোমবার) সকাল ৮টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভটি ধাতুর তৈরি হওয়ায় আগুনে এর নিচের কিছু অংশ পুড়ে কালো রং ধারণ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মানিকগঞ্জের সমন্বয়ক ওমর ফারুকের অভিযোগ, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়া পরিকল্পিত নাশকতা। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগ করে আসছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিশ। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে মানিকগঞ্জের পাঁচজন শহিদ হন। তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মানরা সেতুর দক্ষিণ পাশে পশ্চিম সেওতা এলাকায় জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।
১৬ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর পাহারাদাকে চোখ উপড়ে হত্যা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর পাহারাদারকে দুই চোখ উপড়ে দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুসলিমপুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তোজাম্মেল হক (৬৫) শাহবাজপুর ইউনিয়নের পারদিলালপুর এলাকার মৃত জোনাব আলীর সন্তান।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, অন্যান্য দিনের মতো শনিবার রাতেও তোজাম্মেল হক ওই এলাকায় একটি পুকুর পাহারায় ছিলেন। রাতের কোন এক সময়ে কে বা কারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তোজাম্মেলের দুই চোখ উপড়ে ফেলেছে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। হত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
রবিবার সকালে স্থানীয়রা লাশটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ সকালে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠায় বলে জানান ওসি।
১৭ দিন আগে
খুলনায় দুর্বৃত্তের ছুরিতে প্রাণ গেল যুবকের
খুলনায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
সোমবার (২ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন ময়লাপোতা হরিজন কলোনীতে ঘটনা ঘটে।
নিহত সবুজ (৩০) সাচিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা হেমায়েতের ছেলে। তিনি ওয়াসার শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সোমবার সবুজ হরিজন কলোনিতে তার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে সেখান থেকে বের হওয়ার পর চার থেকে পাঁচজন যুবক তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীদের মধ্যে একজন ধারালো ছুরি দিয়ে সবুজের পেটের নিচে আঘাত করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’
আরও পড়ুন: মাদক নিয়ে বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপপরিদর্শক বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে স্থানীয়রা আর কোনো কথা বলছে না। অপরাধীদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ফুটেজগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
তবে ঘটনাটি মাদককেন্দ্রিক বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
১৯৭ দিন আগে
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এই মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—মূল হত্যাকারী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে পুলিশের দুই পক্ষ।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাবি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও যে ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হন, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর সহপাঠীসহ অন্যান্য ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
রহস্য উদঘাটন করেই পুরস্কৃত পুলিশ
এদিকে, দ্রুততম সময়ে সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শাহবাগ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিমকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ থানার তদন্ত টিমের দ্রুত তৎপরতার কারণে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরুপ ও সামনে আরও ভালো কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্যই এ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।’
পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই (শুক্রবার) সাম্য হত্যায় জড়িত মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—সাম্য হত্যার যিনি মূলহোতা, অর্থাৎ যিনি ছুরিকাঘাত করেছেন, সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা সেই ব্যক্তি ও তার সব সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ অভিযোগ তুলে রবিবার (১৮ মে) আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। পরে খাওয়া শেষে একটি শিশুর হাতে থাকা ‘টিজার গান’ কাড়তে গিয়ে অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, ‘সেদিন আমাদের ইনস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে উদ্যানের গেটের দোকানগুলোতে যাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই এই বিপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালনোর চেষ্টা করে।’
‘এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। তাদের দিকে আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ তাদের একটি বাইকের সঙ্গে আমাদের (বাইকের) ধাক্কা লাগে। এরপরই ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’
আরও পড়ুন: ঢাবির সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৬ দিনের রিমান্ডে তিনজন
ওই ঘটনায় আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে কথা কাটাকাটি হয়, পরে তারা প্রভাব দেখাতে চাইলে আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে।’
‘১-২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার আকস্মিকতা সামলে দেখি, সাম্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তারপর চোখ যায় তার পায়ের দিকে। দেখি, তার ডান পা রক্তাক্ত। তার পরপরই ধুপ করে পড়ে যায় সে।’কথা বলতে গিয়ে এ সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে বায়েজিদের।
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য চাই, কিন্তু কেউ সে সময় এগিয়ে আসেনি। পরে একটি ছোট বাচ্চার সাহায্য নিয়ে ওকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
মূলত তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বড় ছুরি জাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর পায়ে আঘাত করেন। এর পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে করে তাদের ১০-১২ জনের একটি দল দ্রুত পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের আঘাতে সাম্যর ডান পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত হয়। কাটা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই মারা যায় সে।’
পরে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘উরুর পেছনে শরীরের একটি অন্যতম প্রধান রক্তনালী থাকে, যাকে বলা হয় ফিমোরাল আর্টারি। এটিকে বলতে পারেন দেহের প্রধান রক্তনালীর একটি শাখা রক্তনালী, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নিজের ধারণার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন (বুধবার) সকালে রাজধানীর পৃথক তিনটি স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদারকে (২৮) আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাদের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিদের তিনজনই। তারা আদালতকে বলেন, হয়রানি করার জন্য আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারদের অপরাধের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বায়েজিদের দাবি, তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন আমাদের আক্রমণ করে মারধর করেছেন। তবে মূল হত্যাকারীকে ধরা হয়নি, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইইআর-এর আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম রাফি হত্যাকারীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্ত তারা মূল হত্যাকারী নন। সাদা জামা কিংবা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাম্যকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই ব্যাক্তির গায়ের রঙ ফর্সা; তাকে দেখতে মোটেও উদ্বাস্তুর মতো নয়।’
একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘হত্যার দিন রাতে আমাদের ইনিস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা সাম্য ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
তার দাবি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাত এবং সোয়া ১২টার দিকে সাম্যকে মৃত ঘোষণা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থল অরক্ষিত ছিল। ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থলটি রক্ষা করে প্রমাণাদি বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিকে ধরতে পারল না, অথচ শাহবাগ থানার তদন্ত টিমকে পুরস্কৃত করা হলো। পুলিশের এই ধরনের প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’
পুলিশ কী বলছে
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের ধরতে আমরা শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তল্লাশি অভিযান শুরু করি। পরে শমরিতা হাসপাতাল থেকে একজন ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তৃতীয়জনকে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব!
এদিকে, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে জানালেও রমনা কালী মন্দির ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ নাকি তাদের কাছে আছে। অথচ শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমাকে পার্সোনালি (ব্যক্তিগতভাবে) ডেকে বলেছেন, পুলিশ মন্দিরের গেট ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি।’
আক্ষেপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমনা কালী মন্দির একটি ধর্মীয় সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ না পাওয়া ও বাংলা একাডেমির ফুটেজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি আছে।’
বায়েজিদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি কী পাওয়া যায়নি, সেটা এখন বলা যাবে না। আর এটি তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। আমি তো এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বায়েজিদ) সঙ্গে কথা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর দু-তিন দিন চলে গেছে। আমরা বসেছিলাম না, কাজ করেছি। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা করছি।’
পরে এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট হওয়ার যে দাবি, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আমরা অন্তত ১১টি আলামত জব্দ করেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যার বিচার
সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শনিবার (১৭ মে) ঢাবি প্রশাসন ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে উপাচার্যও সংহতি প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধীদের আগামীকাল (রবিবার) থেকে রিমান্ড শুরু হবে। দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে।’
উদ্যানের বর্তমান হালচাল
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটি স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তর করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাম্য হত্যার এক সপ্তাহও এখনও পেরোয়নি, অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণচাঞ্চল্য কমেনি একটুও। আঁধার নামলেও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অনেককে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ একান্তে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
এসবের মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চোখে পড়ে। টহলদল দেখলেই লোকজনকে সরে যেতে দেখা যায়, কিন্তু তারা চলে গেলে আবারও উদ্যানে ঢুকছিল মানুষ।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর টিএসসি-সংলগ্ন গেটে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন গেট গলে উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায় অনেককে। অনেককে আবার ছবির হাটের গেট এবং টিএসসি-সংলগ্ন গেটের দেওয়াল টপকেও উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত এক আনসার সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় রাতের শিফটে আমরা মাত্র ৬ জন। এই ছয়জনের পক্ষে এতো বড় উদ্যানে টহল দিয়ে এসব বিষয়ের সমাধান করা কষ্টসাধ্য।’
২১২ দিন আগে
দুর্বৃত্তের হাতে ঢাবি শিক্ষার্থী খুন: ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগত!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তবে, ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশে বহিরাগতদের অংশগ্রহণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিকদের হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৪ মে) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে, সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী ছাড়াও নিউমার্কেট থানা, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দুইজন সদস্যকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী এক সাংবাদিক জানান, ‘ভিসি চত্বরে অবস্থানকালে তিনি বন্ধুর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকউল্লাহ এসে তাকে মারধরের হুমকি দেন। তাৎক্ষণিক আরেক সাংবাদিক প্রতিবাদস্বরূপ রফিকউল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠিক সম্পাদক আবু সাইদ তার পথরোধ করেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ওই প্রতিবেদককে ধাক্কাধাক্কি ও গালিগালাজ করেন সাইদ।
এদিকে, বহিরাগত দুর্বৃত্তদের হাতে ঢাবি ছাত্র নিহতের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগতের অংশগ্রহণ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এ নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে বহিরাগতদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারালেন, সেই বহিরাগতকেই আবার এই প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হলো কেন? আপনারা বুঝতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্নিহিত স্পন্দন—এই ক্যাম্পাসের হৃদয়ের স্ফুলিঙ্গকে ধরতে আপনাদের ব্যর্থতা পরিষ্কার।’
আরও পড়ুন: দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
আরেক শিক্ষার্থী হুসাইন আহম্মেদ লিখেছেন, ‘যে বহিরাগতদের কারণে সাম্য ভাই খুন হলো, সেই বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এনে ছাত্রদল সাম্য হত্যার প্রতিবাদ করছে—বাহ!’
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক মিছিল করে ছাত্রদল। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যকে হেনস্তা করছেন–এমন অভিযোগ উঠেছে।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রদলের মিছিলটি পৌঁছালে বাসার ভেতর থেকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বেরিয়ে আসেন। তখন একদল বিক্ষোভকারী তার দিকে তেড়ে আসেন। উত্তপ্ত মুহূর্তে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘মার, আমাকে মার।’
ওই বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ এসেছে।
এ নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলের এক পোস্টে লিখেন, ‘গতকাল রাত ১টা ৪৫ মিনিটে সাম্য ভাইয়ের হত্যার প্রতিবাদে আমরা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করি। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যে পৌঁছালে ছাত্রদলের কয়েকজন এসে আমাদের ভিসির বাসভবনের সামনে যাওয়ার আহ্বান জানায় এবং দাবি করে আমাদের তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করতে হবে। আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা হট্টগোল শুরু করে এবং ‘ফুটেজখোর’ বলে গালাগালি করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গালি শুনতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
এসব অভিযোগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
২১৭ দিন আগে
নওগাঁয় দুর্বৃত্তের হামলায় ছাগল ব্যবসায়ী নিহত
নওগাঁর ধামইরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় উজ্জল হোসেন (৩২) নামে এক ছাগল ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি আড়ানগর ইউনিয়নের বংশিবাটি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলামের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা আনা নগর ইউনিয়নের বড়থা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, উজ্জল বাজার থেকে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় শিমুলতলী এলাকায় দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে জাহিদ হাসান নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পত্নীতলার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ১.৫ কেজি স্বর্ণসহ এক যাত্রী আটক
ধামইরহাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম বলেন, ‘সন্দেহভাজন আরিফ হোসেন ও সাগর হোসেন নামে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধামইরহাট থানায় আনা হয়েছে।’
এদিকে নিহত উজ্জল হোসেনের মা নাসিমা আক্তার ও বড় চাচা জাইদুল ইসলাম ধামইরহাট থানায় হত্যা মামলার দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
২৩৬ দিন আগে
প্রকাশ্যে আসতেই দুর্বৃত্তের অস্ত্রের কোপে প্রাণ গেল আত্মগোপনে থাকা ইউপি সদস্যের
নরসিংদীতে ইউপি সদস্য, সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আমির হোসেন সরকারকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় আলোকবালী উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মো. আমির হোসেন সরকার আলোকবালী উত্তর পাড়া গ্রামের আব্দুল হক সরকারের ছেলে। তিনি ছাত্রজীবনে আলোকবালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তিনি আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আমির। প্রবাসফেরত ভাইকে দেখতে আজ (মঙ্গলবার) তিনি বাড়ি ফেরেন। তার আসার বিষয়টি টের পেয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা তাকে ধারালো অসস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। পরে স্বজনরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: যশোরে ফুচকা খেয়ে অসুস্থ ২ শতাধিক, বিক্রেতা গ্রেপ্তার
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি আমি হাসপাতালের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
২৩৯ দিন আগে
কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের গুলি
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা হাটের ইজারা নেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল ব্যবসায়ী রশিদ এগ্রো ফুড প্রডাক্টসের মালিক আব্দুর রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে দিনে দুপুরে গুলি ছুঁড়েছেন দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে কুষ্টিয়ার শহরের কোর্টপাড়া এলাকার গোসালা গলির বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
আব্দুর রশিদ বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি।
আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের স্থানীয় আইলচারা হাট নিলামে আমার ভাতিজা গোল্ডেন রাইস মিলের মালিক জিহাদুজ্জামান জিকু পেয়েছে। এরপর থেকে সন্ত্রাসীরা আমাদের দুজনকে মুঠো ফোনে হুমকি দিয়ে আসছিল। আজকে গুলি করে গেল।
তিন বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছে।
কি কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আইলচাড়া হাট নিয়ন্ত্রণ করি। আমার বড় ভাই চেয়ারম্যান, ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু এই হাটের জন্য টেন্ডার ড্রপ করেছে। টেন্ডারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা বলে তিনি জানান।
তিনি দাবি করেন তারা টেন্ডার ড্রপ না করলে অল্প টাকায় নেওয়ার জন্য কিছু ব্যক্তি পাঁয়তারা চালাচ্ছিল। ভাতিজা জিকু টেন্ডার ড্রপ করার পর থেকেই বিভিন্নভাবে জিকুকে এবং তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে কিছু ব্যক্তি। সপ্তাহখানেক আগেও তাকে মুঠো ফোনে হুমকি দিয়েছে বলে জানান তিনি।
রশিদ অভিযোগ করে বলেন, কুষ্টিয়া সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব ও মুন্না এই হাট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তার ধারণা।
আরও পড়ুন: মাথায় গুলি নিয়েই জুলাই যোদ্ধা হৃদয় মারা গেলেন
তবে কুষ্টিয়া সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব রশিদের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা তো দূরে থাক, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুজন ব্যক্তি হেলমেট পড়ে এসে বাইক থামিয়ে কোমর থেকে অস্ত্র বের করে রশিদের বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি করে তাৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, মোটরসাইকেলে করে দুজন ব্যক্তি এসে আব্দুর রশিদ সাহেবের নির্মাণাধীন বাড়িতে দুই রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে গিয়েছে। আমরা আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি এবং মোটরসাইকেলটির নাম্বার শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৫২ দিন আগে