ফিলিস্তিন
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবে না হামাস
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ ঘোষণার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইসরায়েলের একটি প্রধান দাবি প্রত্যাখ্যান করল সংগঠনটি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২ আগস্ট) এ ঘোষণা দেয় হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে উইটকফ বলেছিলেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে তা সত্য নয় বলে দাবি হামাসের।
এদিকে, ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান ওই আলোচনায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা ছিল।
বিবিসি বলেছে, হামাস অস্ত্রত্যাগ না করলে কোনো চুক্তিতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস বলছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন, পুরোপুরি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার ত্যাগ করা হবে না।
গত কয়েকদিনে বেশ কিছু আরব সরকারও হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়াল জামির সতর্ক করে বলেন, দ্রুত জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় যুদ্ধের কোনো বিরতি থাকবে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দেওয়ার দাবি হামাসের
এদিকে, ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ইসরায়েল সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করে, তবে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
বর্তমানে গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৯৩টি শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিব সফরে রয়েছেন উইটকফ। হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
উইটকফ বলেন, সংঘাতের অবসান ও সব জিম্মিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনাকে কেন্দ্র করেই শান্তি প্রচেষ্টা হওয়া উচিত।
সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শুক্রবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বহুল সমালোচিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের থেকে এ পর্যন্ত খাবার নিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের অধিকাংশই ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তবে ইসরায়েলে দাবি, এসব বিতরণকেন্দ্রের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে হামাস। ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় না।
১২৪ দিন আগে
‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকায় খাবার না পেয়ে আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে মধ্য গাজা থেকে সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেছেন, ‘এখানে ক্ষুধা বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে দাড়িঁয়েছে। বাসিন্দারা এখন পর্যাপ্ত খাবারের আশা করেন না। তারা যেকোনো খাদ্যবস্তুর জন্যই আশায় বুক বাঁধছেন।’
কাতারভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এই প্রতিবেদক বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ফলে এখানকার মানুষ ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক পাশবিক মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১১১ জন ফিলিস্তিনি খাদ্য সংকটে মারা গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৩ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২১টি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি। এর ফলেই অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। সংস্থাটি জানায়, গাজায় খাদ্য সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপত্যকায় ‘গণঅনাহার’ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ হাজার হাজার টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী গাজা সীমান্তের কাছেই ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পড়ুন: ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২৬ মে থেকে ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
গাজায় চলমান চরম মানবিক সংকটের মধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় খাদ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও তা বিতরণের সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ‘মে মাস থেকে ত্রাণ সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে গুলিতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ডব্লিউএইচওর ফিলিস্তিন প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের ওপর বারবার হামলার ফলে গাজায় অবশিষ্ট কয়েকটি হাসপাতাল ‘বৃহৎ ট্রমা ওয়ার্ডে’ পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, খাদ্যাভাব এতটাই প্রকট যে শিক্ষক, সাংবাদিক, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরাও স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক নূর শরাফ বলেন, ‘মানুষ কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে পায়নি। অনেক সময় ডাক্তাররাও না খেয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।’
এদিকে গাজা সিটিসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলা অব্যাহত। সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক— ফটোজার্নালিস্ট তামের আল-জা’আনিন ও সম্পাদক ওয়ালা আল-জাবারিকে হত্যা করা হয়েছে।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২৩১-এ দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে আল-জা’আনিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফটোজার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং ওয়ালা আল-জাবারি বিভিন্ন সংবাদপত্রে সম্পাদকীয়র দায়িত্বে ছিলেন।
পড়ুন: খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
এমন পরিস্থিতিতে, গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপের পথে রওনা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও বন্দিমুক্তি আলোচনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তত ৫০ বন্দির মুক্তি নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। তবে মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
১৩৩ দিন আগে
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দেওয়ার দাবি হামাসের
ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তবে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে দাবি করেছে তারা। শুক্রবার (৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে হামাস এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে কি না, হামাসের সর্বশেষ বিবৃতি থেকে তা স্পষ্ট নয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তবে, হামাস বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে, ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধের নিশ্চয়তা ছাড়া সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয় তারা।
আরও পড়ুন: গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা
যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টা চলছে
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) এক বিবৃতিতে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।’
তিনি হামাসকে দ্রুত সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের। এরপর, গতকাল (শুক্রবার) রাতে হামাস এক বিবৃতি দেয়, তারা মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘ইতিবাচক সাড়া’ দিয়েছে।
গোষ্ঠিটি আরও জানায়, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের কাঠামো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনা সফল হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে। তবে কতজন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কী পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করবে, তা ঠিক করতে আলোচনা দরকার।
তিনি বলেন, হামাস জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে একই সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনাও শুরু হবে। এ জন্য যুদ্ধবিরতির সময়সীমার ‘বেশি সময়’ প্রয়োজন হলেও ট্রাম্প তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগের আলোচনাগুলো যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মতবিরোধে ভেস্তে গেয়েছিল। নেতানিয়াহু যুদ্ধের প্রথম থেকেই বলে আসছে, ‘হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে যুদ্ধ থামানো হবে না।’
আরও পড়ুন: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: দাবি ট্রাম্পের
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাস ইতিবাচক মনোভাব’ দেখিয়েছে, এটি খুবই ভালো বিষয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তি হতে পারে।
১৮ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও ইসরায়েলি আগ্রাসন থামেনি। দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত ও যুদ্ধপীড়িত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বরাতে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদিনে ত্রাণ নিতে গিয়ে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৬১৩ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২৬ মে থেকে ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মুসলমানদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছেন মামদানি
বিতর্কিত এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি দেখেছি যে আমার সহকর্মীরা একাধিকবার নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এমনকি মেশিনগানের ব্যবহারও করতে দেখেছি। অথচ, তারা কোনো ধরনের হুমকি ছিলেন না।’
তিনি জানান, ‘একবার একটি নিরাপত্তা টাওয়ার থেকে একজন নিরাপত্তাকর্মী কয়েকজন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়। যার কারণ তারা কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় ধীরগতিতে হাঁটছিলেন!’
১৫৩ দিন আগে
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলি ও বিমান হামলায় অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন জরুরি মানবিক সহায়তা পাওয়ার আশায় অপেক্ষমাণ ছিলেন।
নিহতের এই সংখ্যা বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে গণনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রাতের বেলা দক্ষিণ গাজায় একটি তাঁবু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলা চালানো হলে বহু পরিবারের সদস্য নিহত হয়। এতে একটি পরিবারেরই ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে, যাদের মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী ছয় শিশুও ছিল।
ওই ঘটনার পর সরেজমিনে নিহত সন্তান ও নাতি-নাতনিদের লাশের পাশে বসে বিলাপ করতে দেখা যায় ইন্তেসার আবু আসসি নামের এক নারীকে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘আমার সন্তান, আমার সন্তান... আমার প্রিয়জন।’
খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের মর্গের মেঝেতে চাদরে মোড়ানো এক শিশুকন্যার কপালে চুমু খেতে দেখা যায় আরেক নারীকে।
গাজা মধ্যাঞ্চলে আল-আকসা শহিদ হাসপাতালের মর্গে ছয় বছর বয়সী বোনের লাশের পাশে বসে ছিল তার ছোট ভাই। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় একটি খাবারের দোকানের পাশে হামলায় তার পরিবারের আরও একজনসহ মোট আটজন নিহত হন।
অন্যদিকে, গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া একটি স্কুলে চালানো আরেকটি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন।
এই সব হামলার পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন।
গাজা মানবাধিকার সংস্থা (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে যাওয়ার সময় পথে গুলিতে পাঁচজন নিহত হন।
বার্তা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সাংবাদিকদের তথ্য অনুসারে, এই সংস্থাটি (জিএইচএফ) একটি নতুন ও গোপনীয় মার্কিন সংস্থা, যারা ইসরায়েলের সমর্থনে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য সরবরাহ করছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: দাবি ট্রাম্পের
এ ছাড়াও জাতিসংঘের ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় গাজাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে আরও ৪০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এপি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা প্রায়ই ত্রাণ নিতে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের ট্রাক আসার অপেক্ষায় থাকা লোকদের দিকেও গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মে মাসে বিতরণকেন্দ্র খোলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
বিতরণকেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়ার পথে মোতায়েন থাকা ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, তারা কেবল ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে অথবা যারা তাদের খুব কাছাকাছি আসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সশস্ত্র মার্কিন ঠিকাদাররাও নিয়োজিত রয়েছে জানিয়েছে তারা।
ক্ষুধাকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল!
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, গাজার সাধারণ নাগরিকদের অনাহারে রাখাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল, যা চলমান গণহত্যারই অংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জিএইচএফের বিতরণব্যবস্থা আন্তর্জাতিক উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা মাত্র। কারণ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ওই ত্রাণ বিতরণব্যবস্থা ছাড়া জাতিসংঘের পাঠানো ত্রাণ খুবই সীমিত পরিমাণে গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে ইসরায়েল।
বিবৃতি অনুসারে, ‘প্রাণঘাতী, অমানবিক ও ব্যর্থ একটি সামরিক সহায়তা কাঠামো বজায় রেখে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ খাদ্যান্বেষণে থাকা নিঃস্ব ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু-ফাঁদে ফেলছে।’
অবশ্য অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই সংস্থাটি হামাসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সব ধরনের অপপ্রচার অনুসরণ করছে।
ইসরায়েল চায়, জাতিসংঘের বিদ্যমান মানবিক সহায়তা নেটওয়ার্কের পরিবর্তে জিএইচএফ-ই হোক ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রধান ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থা।
তাদের দাবি, জাতিসংঘের সহায়তার বড় অংশ হামাস ছিনিয়ে নেয়, যদিও ইসরায়েলের এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সহায়তা সংস্থা।
জিএইচএফ-কে প্রত্যাখ্যান করে সংস্থাগুলো বলছে, এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহে ব্যর্থ। এটি ফিলিস্তিনিদের বিপন্ন করে ইসরায়েলের লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার মাত্র।
আরও পড়ুন: ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছে গাজাবাসী
চলতি বছর ইসরায়েল আড়াই মাসের বেশি সময় গাজায় খাদ্যসহ সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। আগে থেকেই ভুগতে থাকা গাজাবাসীকে আরও বেশি অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে এই কর্মকাণ্ড। ইসরায়েলের দাবি, এতে হামাসকে চাপ দিয়ে বন্দিমুক্তির আলোচনায় ছাড় দিতে বাধ্য করা সহজ হবে।
মার্চে অবরোধ কিছুটা শিথিল করে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গাজায় ত্রাণ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষা সংস্থা সিওজিএটি বুধবার জানায়, ১৯ মে থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
এই হিসাব অনুযায়ী, দিনে গড়ে মাত্র ২৮টি ট্রাক সেখানে পাঠানো হয়েছে, যেখানে সহায়তাকর্মীরা দিনে কয়েকশ’ ট্রাক প্রয়োজন বলে দাবি করে আসছেন।
তবে নিজেদের কার্যক্রমের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে জিএইচএফ বলেছে, তারা ৫ কোটি ২০ লাখের বেশি খাবারের সমতুল্য সহায়তা দিয়েছে। প্রতিটি খাবারের প্যাকেটে ডাল, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থাকে, যা একজনের ৫০ বেলার খাবারের সমান।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। লোকজন হুড়োহুড়ি করে খাবারের বক্স ছিনিয়ে নেয়। কেউ একাধিক নেয়, আবার অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে। পরে এসব বক্স বাজারেও মেলে। সেখানে থেকে কিনতে গেলে হাঁকা হয় আকাশছোঁয়া দাম।
১৫৪ দিন আগে
এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা জানান ট্রাম্প। তার দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপের পর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা মনে করি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি হতে পারে।’ তবে তিনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ সময় তা প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দপ্তর অবশ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছে না।
বাইডেন সরকারের সময় গাজায় যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছিল, সেটির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন উইটকফ। তবে, মার্চে ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে আকস্মিক বিমান হামলা শুরু করলে সেই চুক্তি ভেঙে যায়।
এদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদক নুর ওদ শুনিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, ট্রাম্পের এই মন্তব্য গাজার ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত জনগণের জন্য আশার বাণী হতে পারে। তবে, বাস্তবে এই মুহূর্তে কোথাও কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর এই আলোচনা কিছুটা বেড়েছে। তবে ইসরায়েল এখনই গাজায় যুদ্ধ থামানোর কথা আলোচনা করতে চায় না।’
এই বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির কথা বললে উল্টো তিনিই রাজনৈতিকভাবে বড়সড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ওদ আরও বলেন, ‘আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে নেতানিয়াহুকে কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিতে হতে পারে। এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টা মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই এগিয়ে নিচ্ছে।’
অন্যদিকে হামাস বলছে, ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং তারা মার্চ থেকে যেসব অঞ্চল দখল করেছে, তা ছেড়ে দিতে হবে। এরপরই তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে।
হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ইসরায়েল যেন পুনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে না পারে, তারও নিশ্চয়তা চেয়েছে এই সংগঠনটি।
ইসরায়েলের কৌশল-বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সফরে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা, ইরান ও নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আলোচনা করবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
১৫৯ দিন আগে
বোমার ভয়ের চেয়েও ক্ষুধায় কাতর ফিলিস্তিনিরা
‘আমার নিজের সামান্য খাবার থেকে প্রায়ই আমার ছেলেকে ভাগ দিতে হয়, এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাবো—ধীরে ধীরে আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ বলছিলেন ৪৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি।
উপত্যকাটির শিশুরা গড়ে দিনে একবারেরও কম খাবার পাচ্ছে। দেখা যায়, বাবা-মা নিজের খাবারটুকু তুলে দিচ্ছেন সন্তানের মুখে। নিজেরা থাকছেন অভুক্ত। অনেক সময় সন্তানের মুখে তুলে দেওয়ার খাবারটুকুও পান না তারা। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।ইসরায়েলের বোমার চেয়ে যেন ক্ষুধায় বেশি কাতর ফিলিস্তিনিরা। গত সাত সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় খাদ্যসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গাজাবাসীর দুর্ভোগ চরম সীমায় পৌঁছেছে। হিকমাত বলেন, ‘আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।’
গত ২ মার্চ গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এতে গাজাবাসীর জীবন অবর্ণনীয় কষ্ট ও হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা, চিকিৎসাকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত
একদিকে ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে গাজার মানুষের কাছে না আছে খাবার, না পানি, না বিদ্যুৎ—জেনারেটরও শেষের পথে। অন্ধকারের অতলে পতিত হতে যাচ্ছে লাখ লাখ অসহায় মানুষ।
মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এবারের সংকট সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।
এরই মধ্যে অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে হচ্ছে এখান থেকে সেখানে। যদিও কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালের মতো বেসামরিক স্থাপনায় আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনারা। এদিকে খাদ্য, জেনারেটরের জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম সবই শেষের পথে। নতুন করে কিছু প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার ওপর পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বারবার জানিয়ে আসছে ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গাজায় এই অবরোধ দিয়েছেন তারা, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছেনা। যেটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
আরও পড়ুন: গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
আট সপ্তাহ হতে চলেছে গাজায় এই অবরোধ জারি রেখেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় তেমন কোনো আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়াই এই অবরোধ বহাল রাখতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী নেতানিয়াহু।
এদিকে গাজায় দীর্ঘমেয়াদে সেনাদের উপস্থিতি বজায় রাখা এবং ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে তাদের নিজভূমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে।
গাজায় নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরির নামে মূলত ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে উপত্যকাটির ভূমি দখল করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল— এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যাপারটিও সেনাবাহিনী ও বেসরকারি ঠিকাদারদের হাতে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের।
এতে গাজায় সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা এখন ইসরায়েলের বিমান হামলার চেয়ে বেশি দুর্ভিক্ষকে ভয় পাচ্ছেন।
যু্দ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তা প্রায় শেষ। উদভ্রান্তের মতো ত্রাণ দেওয়া তাঁবুগুলোতে খালি হাঁড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এক হাজার ৪০০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: গাজায় ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা
অক্সফামের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে এক বেলারও কম খাবার পায়। যদিও নতুন করে ইসরায়েলের আদেশে পায় ৪ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা সরে যেতে হচ্ছে অন্য আশ্রয়ের খোঁজে তাই সঠিক পাওয়াটা মুশকিল ছিল।
গাজার দেইর আল বালাহর চিকিৎসাকর্মী আমান্দে বাজেরোল জানান, উত্তর গাজা থেকে ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে ফিলিস্তিনিরা এই শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ রাস্তায়, কেউবা ভাঙা বাড়িগুলোর মধ্যে তাঁবু টানিয়ে থাকছেন; যা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।তিনি বলেন, ‘এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা আমাদের নেই। বার্ন ক্লিনিকগুলোতে ১০টার মধ্যেই রোগীর ভর্তি নেওয়া বন্ধ করতে হয়। কারণ আমরা ঔষধের মজুত যত বেশিদিন সম্ভব টিকিয়ে রাখতে চাইছি।’
উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজা রাফায় ব্যাপকভাবে অভিযান চালিয়ে বর্তমানে উপত্যকাটিতে পার্শ্ববর্তী মিসর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ফিলিস্তিনের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমিই এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
মানবাধিকার ও ত্রাণকর্মীরা বলছেন, তাদের কাজ করার পরিধি ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে চলেছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে খান ইউনিসের আল নাসের হাসপাতাল ও গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হাসপাতালে ওই হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ত্রাণকর্মী বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা আমাদের আশেপাশে থাকতে চায়। তাদের ধারণা, আমরা সঙ্গে থাকলে আইডিএফ কম হামলা চালাবে তাদের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে আমাদের দুই কিলোমিটার দূরত্বে হামলা চালানো হতো। ফলে আমরা সরে যেতে পারতাম। ধীরে ধীরে সেটি ৩০০ মিটারে নেমে আসে, এখন তো ৩০ মিটারে চলে এসেছে। একদম পাশেই হামলা চালানো হয়।’
ওই ত্রাণকর্মী আরও বলেন, ‘কখনো কখনো সরে যাওয়ার জন্য ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়, যা অসুস্থ রোগীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোটেই পর্যাপ্ত নয়। আমাদের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।’
এ প্রসঙ্গে আইডিএফ জানায়, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিজেদের কার্যক্রম চালায়। আর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েই তারা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যেটি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করা হয়।
তাদের অভিযোগ, গাজাতে যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছায় তার বড় একটি অংশ আত্মসাৎ করে হামাস। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পাশাপাশি বেসামরিক বাসিন্দাদের কাছে চড়াদামে এগুলো বিক্রি করতে তারা এই কাজ করে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলকে এআই সরবরাহের প্রতিবাদ: মাইক্রোসফটের ২ প্রকৌশলী বরখাস্ত
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সরিয়ে বেসরকারি ঠিকাদারদের দিয়ে গাজায় ত্রান পাঠাবে ইসরায়েল। তবে কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে তার কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে, শিগগিররই গাজায় মানবিক সহায়তা না পাঠানো হলে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে।
এরই মধ্যে আরেকটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মধ্যস্ততাকারী দেশগুলো। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ কিংবা ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের মতো মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। তাই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠেছে।
২২৮ দিন আগে
বাংলাদেশের মানুষ সবসময় নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশের মানুষ সবসময় নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবিকে বাংলাদেশ সবসময় সমর্থন করে আসছে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে; ন্যায় ও মানবতার পক্ষে।’
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান সাক্ষাৎ করতে এলে এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌদি আরবে বৈঠক
বৈঠকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশ, ফিলিস্তিন টিভির প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর, আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্মারক পাসপোর্ট ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিলিস্তিন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরব বিশ্বসহ অন্য মুসলিম দেশগুলো যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করিয়ে দেখিয়েছে।
ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ভাইবোনরা জানতে চায় নিশ্চয়ই এমন কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ ইসরাইলের বর্বর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এত বড় প্রতিবাদ সমাবেশ করে দেখিয়েছে।’
এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশের মুসলিমদের সত্যিকারের ধর্মপরায়ণ হিসেবে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সংহতি ও সহমর্মিতা সম্পর্কে ফিলিস্তিনের জনগণকে আরও সচেতন করতে আগামী ১৭ মে ‘ফিলিস্তিন টিভির’ একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহপূর্বক একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করবে, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিন টিভিতে প্রচারিত হবে।’
আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি স্মারক পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত। উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্মারক পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে মর্মে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মাহাবুবুর রহমান ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) শামীম খানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২৩৩ দিন আগে
ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বসহ নানা দাবি জানিয়ে শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির এক অনন্য নজির স্থাপন করল বাংলাদেশ। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে ছুটে আসে লাখো মানুষ। তাদের পদধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উপচে তার আশপাশেও জমে জনতার জট।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত ও বাইরের জেলাগুলো থেকে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে এসে তারা জড়ো হতে থাকেন রাজধানীতে। পরে পায়ে হেঁটে রওনা দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা, ইসারয়েলবিরোধী প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেন হাজারো মানুষ। কেউ কেউ মাথায় বাঁধেন কালেমা খচিত ফিতা। ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’সহ নানা স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান তারা।
২৩৬ দিন আগে
ফিলিস্তিনে আর এক ফোঁটা রক্ত দেখতে চাই না: কাদের গনি চৌধুরী
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, শুধু ইসরায়েলের পণ্যই নয় ইসরায়েলকেই বয়কট করতে হবে। তিনি বলেন, ইসরায়েল মানবতার দুশমন। সারা বিশ্বের উচিত এদের বয়কট করা।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকালে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে পেশাজীবীদের মানববন্ধনে তিনি এসব বলেন। পরে বিপুল সংখ্যক পেশাজীবী নয়াপল্টনে বিএনপির মানববন্ধন ও প্রতিবাদ র্যালিতে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে।
এসময় অন্যদের মধ্যে পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ড. এমতাজ আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম লাবু, ডা. রফিকুল ইসলাম, কৃষিবিদ ড. শফিকুর রহমাম, রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাসিন আহমেদ, জাহানারা সিদ্দিকী, ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান চুন্নু, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন আকন্দ, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক সাঈদ খান, রিয়েল রোমান, ইঞ্জিনিয়ার হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সত্য প্রকাশই হোক গণমাধ্যমের একমাত্র অঙ্গীকার: কাদের গনি চৌধুরী
পেশাজীবী এই নেতা বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এর ফলে গাজা ও রাফায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে, যা মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্পষ্টত ইসরায়েল বারবার আন্তর্জাতিক আহ্বানের তোয়াক্কা করেনি বরং ক্রমবর্ধমান ভয়ংর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনে আর এক ফোঁটা রক্ত ঝরুক সেটা দেখতে চাই না।
বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর নীরবতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে অথচ বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো নীরব। এ কেমন মানবতা! নাকি মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই? তিনি বলেন ফিলিস্তিন মুসলিম কান্ট্রি বলেই বিশ্ব মোড়লরা চুপ করে আছে। এদের মুখে মানবাধিকারের কথা শোভা পায় না।
পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও অবরুদ্ধ গাজা ও রাফায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৩৮ দিন আগে
ফিলিস্তিনের জন্য বিশেষ আয়োজন বাংলা নববর্ষে
এবারের বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে ফিলিস্তিনের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের উদ্যোগে বুধবার (৯ এপ্রিল) আয়োজিত এক সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
এ বছর পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবে। ব্যান্ড মিউজিশিয়ানরা পৃথিবীর শান্তি কামনায়, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য সব শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে একটি গান গাইবে।
এই শোভাযাত্রায় ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের সব মিউজিশিয়ানদেরও অংশগ্রহণের আহ্বান জানান ফারুকী।
তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা যদি নববর্ষে শুধু আমাদের দেশের জন্য শুভকামনা করি, এরচেয়ে স্বার্থপর আর কিছু হতে পারে না। ফলে এই নববর্ষে আমাদেরকে ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদ করে ফিলিস্তিনিদের যেন শান্তি ফিরে আসে এই কামনা করতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের উদার সংস্কৃতি প্রকাশ পাবে।’
এতবড় আয়োজনের উদ্দেশ্য আলোচিত হওয়ার জন্য না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্যে সাংস্কৃতিক বিভাজন এবং ফ্যাসিবাদের ফলে জাতির অন্তরে যে গভীর ক্ষত হয়েছে তা উতরানো।’
‘৫৪ বছরের ইতিহাসে শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদরাতে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, এবার হয়েছে। আগামী বছর সারাদেশে সবগুলো শিল্পকলায় এই অনুষ্ঠান হবে। আবার চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে এরপূর্বে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেটা এবার করা হয়েছে। কারণ উৎসবটা বাংলাদেশের, তাই সবার অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: নববর্ষ উদ্যাপনে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে আগামী ১৩ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হবে ব্যান্ড শো। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলগুলো। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আগামী ১৪ এপ্রিল শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিকেলে মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ড্রোন শো। ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু, বিভিন্ন ব্যান্ড দলের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা।
২৩৯ দিন আগে