পেঁয়াজ
পেঁয়াজের সংকট দূর হবে, পেঁয়াজ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হবে: কৃষিমন্ত্রী
পেঁয়াজ সংরক্ষণের দেশিয় মডেল ঘর উদ্বোধন করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সফলভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা ও সংকট থাকবে না। এ পণ্য নিয়ে রাজনীতিও বন্ধ হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে চাহিদার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এ পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে দাম অস্বাভাবিক হয়, নানা রকম রাজনীতি শুরু হয়।
মঙ্গলবার (২৩ মে) পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পূর্ব বনগ্রামে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্মিত পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের দেশীয় মডেল ঘর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে ২-৩ দিনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
তিনি বলেন, এছাড়া ভারত থেকেই আমদানি করতে হয় বেশি। ভারত অনেক সময় রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। এতে চরম সংকট দেখা দেয়। সেজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল ফসল। এটি রাখা যায় না, শুকিয়ে যায়, পচে যায়। এর ফলে কৃষকরা মৌসুমে কম দামে দ্রুত তা বিক্রি করে দেয়। মৌসুম শেষ হলে বাজার আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়। সেজন্য আমরা পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই পরীক্ষামূলক ঘর তৈরি করেছি। যেখানে চার-পাঁচ মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এটিতে সফল হলে দেশে পেঁয়াজের সংকট হবে না। আমদানিও করতে হবে না, বরং রপ্তানি করা যাবে।
পেঁয়াজ আমদানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চাষি, উৎপাদক, ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করে কয়েক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘরে ব্যবহৃত বিদ্যুৎকে ভর্তুকি বা কৃষি খাতে বিবেচনার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
পেঁয়াজ রসুন সংরক্ষণাগার (মডেল ঘর)-
প্রতিটি ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ছয়টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা সংযুক্ত রয়েছে। মূলত ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকার কারণেই সংরক্ষিত পেয়াজ-রসুন পঁচবে না।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে।
প্রতিটি ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে ২৫০-৩০০ মণ (১০-১২ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।
এছাড়া তিনটি স্তরের এই সংরক্ষণ ঘরের স্থায়িত্ব কমপক্ষে ১৫-২০ বছর।
কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২১ হতে জুন ২০২৬, মোট বাজেট ২৫ কোটি টাকা।
ঢাকা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও পাবনা এই সাতটি জেলার ১২টি উপজেলায় ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হবে।
এ বছর ২০২২-২৩ সালে মোট ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২৫০-৩০০ মণ পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: হাওরে ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
জাপানে ইয়ানমারের কারখানা পরিদর্শন কৃষিমন্ত্রীর, বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় ফের পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা
দেশি পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ কমাতে ভারত থেকে আমদানি করা হবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের এমন ঘোষণায় স্বস্তিতে ছিলেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা।
আবার দামও কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বেশ কয়েকদিন হলেও এখনও পর্যন্ত আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হয়নি। ফলে এই সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ক্রেতারা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকেরা জানান, দুই মাসের বেশি সময় ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় গেল ঈদের পর থেকে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম একটু একটু করে বাড়ছে। প্রতিদিন দুই থেকে এক টাকা করে দাম বেড়ে মঙ্গলবার ঠেকেছে ৭০ টাকায়।
আরও পড়ুন: হিলিতে আমদানি বন্ধের অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের
অর্থাৎ, গত ২৪-২৫ দিনে কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা বেড়েছে। অথচ ঈদের দুই-একদিন আগেও এই পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
হিলি বাজারের খুচরা ব্যাবসায়ী শাহাবুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দামের এই অস্থিরতা তিন সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। বাজারে ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনতে আসলে দাম নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রায়সময় কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতে গরমে কাহিল অবস্থা। তারপর পেঁয়াজের দাম শুনে ক্রেতারা চটে উঠছেন। আমরা যে দামে কিনি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা রেখে বিক্রি করি। বর্তমানে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা মাহফুজ আলম জানান, সব মানুষই দাম শুনে উচ্চবাচ্য করছে। আজ বাজারে আসলে বলে এক দাম, আবার দুইদিন পরে আসলে আরেক দাম।
তিনি বলেন, আমরাও তো খেটে খাওয়া মানুষ। রোজগার কমেছে, আয় তো বাড়েনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত জিনিসপত্র বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ফেরদৌস রহমান জানান, আমরা পাবনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনে আনি। সব খরচ বাদ দিয়ে কেজিতে দুই টাকা লাভে বিক্রি করছি। মঙ্গলবার সকাল ও দুপুরে ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি করেছি।
আরও পড়ুন: শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে: কৃষি সচিব
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন জানান, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আমদানিকারকরা সরকারের কৃষি, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা ১০ থেকে ১২ দিন আগে আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।এখন অনুমতির অপেক্ষায় আছি।
পেঁয়াজের আরেক আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী এবং কৃষি সচিব ইঙ্গিত বা ঘোষণা দিয়েছিলেন এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ঠিক তখনই বাজারে দাম কমছিল।
যখন এই অসাধু ব্যবসায়ীরা দেখল আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, আবার তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আমদানি করা না হলে বাজার সামাল দেওয়া সম্ভব না।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দিয়েছিল। এরপর ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন: হিলিতে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম
শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে: কৃষি সচিব
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার জানিয়েছেন, শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় সাময়িকভাবে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করছে। দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকলে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
রবিবার (১৫ মে) দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় কৃষিসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।
কৃষি সচিব বলেন, উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। অথচ বাজারে দাম কিছুটা বেশি।
আরও পড়ুন: হিলিতে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম
জানান হয়, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এবছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫% পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬- থেকে ২৮ লাখ টন।
সভায় আরও জানান হয়, বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা। গতবছর ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে আমদানি বেশি হয়েছিল।
দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, ৩০-৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল।
সেজন্য, পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবছর পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সভায় পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: হিলিতে আমদানি বন্ধের অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের
হিলিতে আমদানি বন্ধের অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। গত দুইদিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা করে বেড়েছে। রমজান মাস শুরু হলে আরও দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।
সরকার কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করে। ফলে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে বন্দরের মোকাম ও বাংলাহিলি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে,গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, শুক্রবার সেই পেঁয়াজ ২৬ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে আসন্ন রমজানে আরও দাম বাড়তে পারে।
শুক্রবার সকালে বাংলাহিলি বাজারে কথা হয় ক্রেতা নুর ইসলামের সঙ্গে।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাজারে আসলে মাথা ঠিক থাকে না। দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়না। যে যার মতো দাম বাড়িয়ে দেয়। আর আমাদের কিনতে কষ্ট হয়। রমজানে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কোন পর্যায়ে যাবে এখন থেকে বলা মুশকিল।
আরও পড়ুন: ১৫ মার্চের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ
আরেক ক্রেতা শামসুল আলম জানান, গত বুধবার পেঁয়াজ কিনেছি ২২ টাকায়। আজ সকালে এসে একই পেঁয়াজ ২৬ টাকায় কিনতে হলো। এখনই বাজারে মনিটরিং করা দরকার।
বাজারের খুচরা বিক্রেতা ময়নুল হোসেন জানান, হিলি বন্দর দিয়ে ভারতে থেকে পেঁয়াজ আসছে না। শুনেছি গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা করে বেড়েছে। রমজানে আরও দাম বাড়বে এটাই এখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতি রমজানে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সরকার গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দিয়েছিল। এরপর ১৬ মার্চ থেকে নতুন করে আইপি ইস্যু না করায় বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বন্দরের প্রসিদ্ধ পেঁয়াজ আমদানিকারক ও সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এবার রমজানকে সামনে রেখে আমরা আগে থেকেই পেঁয়াজের আমদানি শুরু করি, যাতে রমজানে দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। বাজারে যেন কোনও অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু সরকার পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় দাম বাড়ছে। রমজানে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে,সেজন্য আমদানির অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের ভারতে ৮-১০ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজের এলসি করা আছে। এই পেঁয়াজ দেশে আমদানির অনুমতি দেয়া না হলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এদিকে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দেয়া বন্ধ রেখেছে। ১৫ মার্চ পর্যন্ত আইপি দেয়া ছিল। এখন দেশে পেঁয়াজের ভরামৌসুম। তাই নতুন করে আইপি ইস্যু না করায় বৃহস্পতিবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: হিলিতে ট্রেনে কাটা পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পেঁয়াজ সংরক্ষণে আলোর মুখ দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’
দেশে বছরে ৩৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে স্থানীয় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। পেঁয়াজ নিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় আশার আলো দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’।
ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পেঁয়াজের এসি খ্যাত এই মেশিন। আর সুফল মেলায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।
পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার জেরে নেয়া পদক্ষেপের সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েকবছর ধরে ক্রমাগত উৎপাদন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ। এরপরও ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বছর পর বছর। আর আমদানি কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। আবার দাম পড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তবে ঘাটতির অন্যতম কারণে হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পেঁয়াজের অপচয় বা নষ্ট হওয়াকে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমদানির কারণে দেশের অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি অভাবে খুলনায় ফসল আবাদে নদীর পানি ব্যবহার
সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ হলেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অধিক তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পে পচন ধরে যায়। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভাবন হলো ‘বায়ু প্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’প্রযুক্তি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের পরামর্শক দলের উদ্ভাবিত ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ব্যবহৃত হচ্ছে ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। এই মেশিন স্থাপনে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের সদর ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষিকে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও ১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি ভার্টিকাল সিলিন্ডার বসানো হয়েছে। এক হর্স পাওয়ারের একটি বৈদ্যুতিক মোটরযুক্ত করে পাখার সাহায্যে উপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে নামিয়ে নেয়ার পর আটকে থাকা বাতাস পেঁয়াজের মধ্যে দিয়ে বের হচ্ছে। ছোট্ট একটি কক্ষে এভাবে বাতাস প্রবাহ করে মজুদকৃত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন
চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছে জেলার চাষিরা। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণে ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। তাই পেঁয়াজ খ্যাত এই জেলায় হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফরিদপুরে মাটি পেঁয়াজ আবাদে উপযোগী, যে কারণে দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এই জেলা। এখানে তিন ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয়; মুড়ি কাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। এছাড়া জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে নাগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা ও সদরপুরে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়।
সরেজমিনে জেলার কানাইপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি পেঁয়াজের বাজার দেখা গেছে, বর্তমানে প্রান্তি পর্যায়ে চাষিরা পাইকারদের (ব্যবসায়ীদের) কাছে মণ প্রতি ১৩শ’ টাকা দরে বিক্রয় করছে। তবে চাষিদের দাবি, মণ প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯শ’ টাকা। এই ক্ষেত্রে মণ প্রতি যদি তারা ১৮শ’ টাকায় দর পেত তাহলে বেশি লাভ হতো।
বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষি আশুতোষ মালো বলেন, এ মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদে খরচ একটু বেশি হয়েছে।
কানাইপুর বাজারের পেঁয়াজ ব্যসায়ী ও চাষি শাহজাহান মিয়া জানান, শুক্র ও মঙ্গলবার এ বাজারের হাট বসে। গত ১৫ দিন হলো মণ প্রতি চাষি পর্যায়ে ১৩শ’ টাকায় বিক্রয় করছে। যা আগে হাজারের নিচে ছিল।
তিনি জানান, জেলার বাইলে বাজার, রামকান্তপুর বাজার, ঠেনঠেনিয়া বাজার, ময়েনদিয়া বাজার, ফকিরের বাজার, নালার মোড় বাজার, কাদিরদী বাজার, সাতৈর বাজারগুলোতে চাষিরা প্রচুর পেঁয়াজ নিয়ে আসে।
পড়ুন: হালদায় আশানুরূপ মাছের ডিম মিলছে না
সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে সিন্ডিকেটকারী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আগামী ২৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
এছাড়াও সিন্ডিকেশন রোধে প্রতিযোগিতা আইনের ২১(১) ধারার আলোকে কেন একটি প্রবিধান করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যগুলোকে কেন ওএমএস নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করে রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি
মঙ্গলবার সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবীর। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ।
আরও পড়ুন: ভোজ্যতেল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
রাজগঞ্জে শীতকালীন পেঁয়াজের চাষে ব্যস্ত কৃষক
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চল জুড়ে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের জন্য শুরু হয়েছে শীতকালীন পেঁয়াজের আবাদ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের চারা। মণিরামপুর উপজেলাসহ উপজেলার বাইরে থেকেও ব্যাপারীরা এ বাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করতে আসছেন।
রাজগঞ্জ বাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করতে আসা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল খালেক (৫০), কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের মিঠু মিয়া (৫২) ও হাসাডাঙ্গা গ্রামের মাহাবুর রহমান (৪৫) জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিজের জমিতে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করি, আবার কিনেও বিক্রি করি। আমরা শুধু রাজগঞ্জ বাজারে না, বিভিন্ন হাট-বাজারে এভাবেই পেঁয়াজের চারা বিক্রি করি।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
এদিকে পেঁয়াজের চারার দাম সহনীয় হওয়ায় অনেক কৃষক খুশি।
রাজগঞ্জের হরিহরনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক সোহেল (৪৫) জানান, এখন শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। রাজগঞ্জ হাটে এসেছি পেঁয়াজের চারা কিনতে। এখান থেকে চারা কিনে খেতে রোপন করবো।
একই ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের আরেক কৃষক মিজান (৪০) জানান, এবার বাজারে পেঁয়াজের চারার দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তাতে অসুবিধা নেই। পেঁয়াজের চারা যে পাওয়া যাচ্ছে, এটায় বড় কথা।
হানুয়ার-খালিয়া গ্রামের কৃষক হারুন (৫০) জানান, ১১ জন শ্রমিক দিয়ে জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপন করছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশের উদ্ধার করা চোরাই পেঁয়াজ নিলামে
স্থানীয় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ভগীরত চন্দ্র বলেন, ‘আমরা মাঠে মাঠে যেয়ে কৃষকের সার্বিক সহযোগীতাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই মৌসুমে সব ধরনের আবাদ ভালো হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে আছে।’
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ৪০ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন। তবে এ মৌসুমে দু’দফা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে পেঁয়াজের চারা সঙ্কট হওয়ায় বাজারে চড়াদামে পেঁয়াজ চারা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা, মাগুরার শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও সদর উপজেলা, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। আর মেহেরপুর জেলায় সুখসাগার নামে একটি ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। এ জাতটির ফলন বেশি হয়।
মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্র গ্রামের শাহাদৎ মোল্লা জানান, তাদের এলাকায় সুখসাগর পেঁয়াজ বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। বোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ পেঁয়াজ বিঘা প্রতি দেড়শো মন ফলন হয়। কোনো কোনো জমিতে ১৮০ মন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা গোবিন্দপুর গ্রামের এবাদত আলী জানান, এবার ২২ কাঠা জমিতে মুড়িকাটি পেঁয়াজ চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ৮০ মন ফলন হবে। দামও ভালো। আর হালি পেঁয়াজের চাষ সবে শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
একই উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, এবার পেঁয়াজের চারার দাম চড়া। প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ চারার অভাব আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন বলেন, পেঁয়াজের চারা রোপণ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় চাষি পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছে। বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। চারার অভাব দেখা দিতে পারে।
ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
শেখ মফিজুর রহমান শিপন
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে সারা বছরের চাহিদা মেটাতে নানা পরামর্শ দিয়েছে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুরের চাষিরা।
তারা মনে করেন, উন্নত জাতের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দাবি, চাষিদের মাঝে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও উন্নত বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর ফরিদপুরের ৯ উপজেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে চার লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের (মুড়িকাটা) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
আরও পড়ুন: হিলিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌসুমে পেঁয়াজ সংগ্রহের পর পরবর্তী ফসল আবাদের অর্থ যোগান দিতে বাধ্য হয়ে কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হয় তাদের। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। একর প্রতি চাষিদের খচর লাখ টাকার বেশি। এ কারণে এই পেঁয়াজ বাজারের তুলার সময়ে কেজি প্রতি কৃষক পর্যায়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হারে দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে তারা।
জেলার সালথার মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষি আকবর মাতুব্বর, সিরাজ মোল্লা, হানিফ ব্যাপারীসহ বেশ কয়েক জন চাষি জানান, মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না এই পেঁয়াজ।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ
চাষিরা বলেন, ‘পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য, বেশি দিন সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজ আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর চাষিরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ করতে পারবে।’