পাহাড়ি ঢল
কাপ্তাই লেকে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের নৌযান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার (৫ আগস্ট) ভোর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জরুরি সরকারি কাজে নিয়োজিত নৌযানসমূহ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
এদিকে, গত চার দিন ধরে রাঙ্গামাটিতে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার এবং সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা জারি করেছেন।
মাইকিং করে রাঙ্গামাটি শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, লোকনাথ মন্দির এবং ভেদভেদি মুসলিম পাড়ার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এ ছাড়া পাহড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জন্য রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের ৯ ওয়ার্ডে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে ২০ এপ্রিল থেকে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানায় নৌ চলাচল ব্যাহত: সীমাহীন দুর্ভোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় কমছে নদ-নদীর পানি
সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘন্টা দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পানি কমা অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে, পানি কমায় এবং জেলায় বন্যার আশঙ্কা না থাকায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হাওরে ডুবে ৩ ভাইবোনের মৃত্যু
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, গত কয়েকটা দিন গরু, বাছুর, ধান নিয়ে বিপদেই পড়েছিলাম। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলে পানি নেমে যাবে।
বংশীকুন্ডা বাজরের ব্যবসায়ী এবিএম জুয়েল তালুকদার বলেন, বাজারে বন্যার পানি না উঠলেও ব্যবসায়ীদের মনে আতঙ্ক ছিলো। যদিও বর্ষা মৌসুমে এরকম অবস্থা আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে বন্যা হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের নদীগুলো খনন করতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতকে পানি কমে বিপদ সীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি।
সুনামগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে সুরমা নদীর প্রবাহিত হচ্ছে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) শীতেষ চন্দ্র সরকার জানান, পানি কমা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। তবে বন্যা পরিস্থিতি হলে তা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে বন্যার আশংকা নেই। গেল ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ও মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে খুবই কম বৃষ্টি হয়েছে।
এতে নদীর পানি কমছে। বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে কমছে নদীর পানি, স্বস্তিতে হাওরবাসী
সুনামগঞ্জে বন্যায় ১০ গ্রাম প্লাবিত, বৃষ্টি অব্যাহত
পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর নিয়ন্ত্রণের দুটি স্থানের বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বন্যায় মাঠের ফসল, পুকুরের মাছ, ঘরবাড়িসহ এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর অংশের একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ওই ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, ঘনিয়ামোড়া ও বৈরাগপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান তারকাদের
ফুলগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, পানির তোড়ে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আমার ইউনিয়নের চারটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুর নাহার বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভাঙনের ফলে সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।
পাউবোর ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, রাতে পানির প্রবাহ বেশি ছিল। সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করেছে শাবিপ্রবিতে বন্যার পানি
তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্তি বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি একটু কমলেই মেরামত শুরু হবে।
টানা বর্ষণ: কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙ্গামাটির কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের সঙ্গে রবিবার সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, রবিবার ৮টা পর্যন্ত কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিটে মোট ৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তৎমধ্যে ২নং ইউনিটে ৩৯ মেগাওয়াট, ৩নং ইউনিটে ২৯ মেগাওয়াট এবং ৫নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে।
এছাড়া পুর্নবাসনের জন্য ১নং ইউনিট বন্ধ থাকলেও হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে ৪নং ইউনিটটি চালু করা হবে বলে তিনি জানান।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ৮৯.৭৬ এমএসএল পানি থাকার কথা থাকলেও রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৭.০৪ এমএসএল পানি রয়েছে।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আরও জানান, এখন বর্ষা মৌসুম প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যার ফলে ধীরে ধীরে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি, কিশোরগঞ্জের ১৫ গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
সিলেট নগরীর আংশিক এলাকায় সচল বিদ্যুৎ সরবরাহ
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, এক লাখ মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে প্রধান প্রধান নদীর পানির বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৬টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানিও অনেক জায়গায় বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ
কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেরশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলার নিচু এলাকা ও চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বন্যায় প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলার ৩০টি পয়েন্টে নদীভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে এবং ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে বন্যা কবলিত এলাকার হাজারো মানুষ খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এক মাসের মাথায় আবারও পানিতে ভাসছে সিলেট। জেলার নদীগুলোর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর তীর উপচে নতুন করে হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উদ্ধার তৎপরতা না থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ ও ছাতকের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা তবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে সিলেটের কোনো জায়গাই শুকনা থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে কখনো দেখিনি। এক দিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেল।’
শুধু ঝালোপাড়াই নয়, পুরো সিলেটেই দ্রুত বাড়ছে পানি। জেলার বেশির ভাগ এলাকাই ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
গত বুধবার থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অথচ বৃহস্পতিবারই তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকাল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝিতে আরেক দফা বন্যা হয় সিলেটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষদের।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার কয়সর আহমদ বলেন, ‘গত মাসের বন্যায় এতো পানি হয়নি। মে মাসের বন্যায় উপ-শহরের মোড়ে পানি উঠেনি। এবার উপশহরের মোড়ও তলিয়ে গেছে। আর এবার পানি বাড়ছে দ্রুত। একদিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাসার ভেতরে এখন কোমর সমান পানি। বাসার চৌকিও পানিতে তলিয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: বন্যায় সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ছাতকে বন্যায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বন্যায় তলিয়ে গেছে বহু পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজারও ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার।
গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।
প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যায় ছাতকে ১৩টি ইউপি ও একটি পৌরসভাসহ মোট তিন শতাধিক গ্রাম, দুইশতাধিক প্রাথমিক ও শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় বন্যার পানি ঢুকেছে।
বুধবার দুপুর থেকে ছাতক উপজেলার সঙ্গে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ অবস্থান নিয়েছেন।
বেরাজপুর, নোয়াপাড়া, আলমপুর, বিলপার, দশঘর, কৃঞ্চনগর, আনন্দনগর, বাগইন, লক্ষীপুর, গোবিন্দনগর, মোহনপুর, তকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ ও ছাতক তিন কিলোমিটার সড়ক এলাকায় তিন ফুট ও চার ফুট পর্যন্ত বন্যার পানি জমেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ইসলামপুর, চরমহল্লা, ভাতগাও, সিংচাপইড়, উত্তরখুরমা, গোবিন্দগঞ্জ, সৈদেরগাও, ছৈলাআফজলাবাদ, কালারুকা, নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, দোলারবাজারসহ ১৩টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
কুড়িগ্রামে পাহাড়ি ঢলে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমন বীজতলা বিআর, ৪২, ৮২ জাতের বোরো ধান, সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর, ছাটকড়াইবাড়ি, খেতারচর, গাছবাড়ি, ইটালুকান্দা, কাউনিযার চর, কাজাইকাটা, শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া, বোয়ালমারী, বেগুলারচর, চৎলাকান্দা, টালুয়ারচর, ঝুনকিরচর, রৌমারী ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া, নটানপাড়া (আমবাড়ী), চান্দারচর, ইজলামারি, চরইজলামারী, মাদারটিলা, চর ইছাকুড়ি, বড়াইবাড়ী, চুলিয়ারচর, ঝাউবাড়ি, পাটাধোয়া পাড়া,বাওয়ার গ্রাম, ধুবলাবাড়ি, বন্দবেড় ইউনিয়নের বাইসপাড়া, ফলুয়ারচর, বাঘমারা, বলদমারা, যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর, খেওয়ারচর, নামাবকবান্দা, দক্ষিণ আলগারচর, চর লাঠিয়াল ডাঙ্গা, পাখিউড়া ধনারচর নতুন গ্রাম, চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর ঘুঘুমারী, খাউরিয়া, সুখের বাতিসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মাদার টিলা গ্রামের আবু ছাইদ বলেন, বোরো ধান কাটা শেষ না হতেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চল। আমি সরিষা তুলে যে ধান রোপণ করেছিলাম সে ধানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ধান তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাঁচা ধান কাটতে বাধ্য হয়েছি। বৃষ্টির মধ্যে কোন রকম ধান কাটতে পারলেও খড়গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন গরুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে আছি।
পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ভারী বর্ষণ ও বন্যায় আমার এক বিঘা জমির সবজি বাগান নষ্ট হয়েছে। এতে আমার বড় মাপে ক্ষতি হলো। এর প্রভাব পড়বে কাঁচা বাজারে।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ভারী বর্ষণে অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেলেও কৃষকের তেমন ক্ষতি হয়নি। বেশির ভাগ কৃষক আগেই ধান কেটে ফেলেছে। তবে অনেক কৃষকের কোমল জাতের কিছু ধান ও গরুখাদ্য, আমন বীজতলা, ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তবে এ বন্যায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি মানুষের।
তিনি বলেন, আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তেমন কিছু হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যায় ৫৫২ কিলোমিটার রাস্তা ও ৮টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত
বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
পাহাড়ি ঢল: ঝিনাইগাতীতে নতুন এলাকা প্লাবিত, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলের পানি উজান থেকে নেমে গেলেও ভাটি অঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢলের পানিতে ডুবে শুক্রবার বেলা ২টার দিকে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সারি কালিনগর (বালুর চর) এলাকায় ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত দিয়ামনি ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল হক জানান, দিয়া মনি বাড়ির উঠানে খেলা করার সময় হঠাৎ তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশেই ঢলের পানিতে দিয়ামনিকে ভাসতে দেখা যায়। পরিবারের লোকজন তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
ঢলের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া।
এদিকে, ঢলের পানির তোড়ে অনেক এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ছে পথচারীদের দুর্ভোগ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। মহারশি নদীর দিঘিরপার, খৈলকুড়া, রামেরকুড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। শুক্রবার উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে ভাটি এলাকায় চারটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে শতাধিক পুকুরের কয়েক লাখ টাকা মূল্যের মাছ ভেসে যায় বলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষী ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ধানশাইল-পানবর রাস্তার সূতিপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আহাম্মদনগর-মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদরে মহারশি নদীর পূর্বপাড় থেকে নলকুড়া রাস্তা, ডাকাবর থেকে শালচূড়া রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি। ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় সামান্য কিছু শাক সবজির ক্ষতি সাধিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
বন্যায় সুনামগঞ্জে শত কোটি টাকার ক্ষতি
পানি বাড়ছে তিস্তার, খুলে দেয়া হয়েছে সব গেট
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দেশের সর্ববৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) দুপুরে তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা ব্যারেজে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢল বেড়ে যায়। ফলে তিস্তা ব্যারেজের পানির প্রবাহ বেড়েছে। যদিও এখনও জেলার তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া'র নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বলেন, তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বছর জুন মাসে একটি বন্যা দেখা দেয়। তাই তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক থাকার পাশাপাশি আমরাও প্রস্তুত আছি।
পড়ুন: তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ‘লজ্জাজনক’: মোমেন
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর