তামাক
তামাক ও ই-সিগারেট প্রতিরোধে যা যা করণীয় তা করতে হবে: সায়মা ওয়াজেদ
ক্রমবর্ধমান তামাক সেবন ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ জোরদার করতে দৃঢ়তার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এতে বলা হয়, কয়েক বছরের ধরে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও, এই অঞ্চল এখনও বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারের হারের দিক থেকে উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ই-সিগারেটের ব্যবহারের হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদের মমত্ববোধ
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ।
তিনি বলেছেন, 'এই অঞ্চলে এখনও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে তাদের ক্যান্সার, শ্বাসযন্ত্র ও হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণের জন্যও জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এর আগে ধূমপান বন্ধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা, কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন বাঁচাতে তামাক ও ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।’
জানা গেছে, এ অঞ্চলে ২০০০ সালে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশে।
তবে এ বছর প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, আনুমানিক ৪১ কোটি ১০ লাখ মানুষ এখনও তামাক ব্যবহার করছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য স্থায়ী ঝুঁকি।
এই অঞ্চলে বিস্ময়করভাবে ২৮০ মিলিয়ন ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী রয়েছে; যা বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩-১৫ বছর বয়সী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ কিশোর তামাক ব্যবহারকারী, যা বিশ্বব্যাপী মোট তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি (বিশেষত যুবকদের মধ্যে) একটি নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় সায়মা ওয়াজেদকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন
থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। সেখানে ২০১৫ সালের এর ব্যবহারকারী ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশে।
ক্রমবর্ধমান সংকটের সমাধানে এই অঞ্চলের দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ' এবং ভারত 'টোব্যাকো এন্ডগেম' উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়া, ডিপিআর কোরিয়া, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পূর্ব তিমুরের মতো দেশগুলো ই-সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর মালদ্বীপে এটি নিয়ন্ত্রিত তামাকজাত পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ অঞ্চলজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০০ সালে তামাক ব্যবহারকারী পুরুষের সংখ্যা ছিল ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশে।
একই সময়ে নারী ব্যবহারকারীর হার ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কমেছে এ অঞ্চলে।
অসংক্রামক রোগ (এনসিডি)-২০২৫ অনুযায়ী তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রার পূরণে আফ্রিকা ও এই অঞ্চলের এসব অর্জন সহায়তা করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমপাওয়ার প্যাকেজ এবং অন্যান্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশগুলো চাহিদা কমানোর কৌশল প্রয়োগ করছে। এ অঞ্চলের ২০০ কোটির বেশি মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও নীতিমালার আরও জোরালো প্রয়োগ প্রয়োজন। আর এজন্য তামাক শিল্পসংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপেরও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেলেন সায়মা ওয়াজেদ
৯ মাস আগে
তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ আত্মা’র
রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের দাম ও কর কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এই দাবি জানায় সংগঠনটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এ সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন সম্ভব হবে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ মোট ১১ লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব জানায় আত্মা। প্রতি ১০ শলাকা মধ্যম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা, উচ্চ স্তরের খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়াও ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
প্রাক-বাজেট সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যাডভেলোরেম-এর পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
প্রাক-বাজেট সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা, আত্মা’র প্রতিনিধি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলোক, আত্মা’র আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন ছিলেন।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
৯ মাস আগে
তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধান বাধা
তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে।
‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক ২০২৩’- এ বাংলাদেশের স্কোর ৭২। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ঘিরে সবচেয়ে বেশি হস্তক্ষেপ হয়েছে। তিন বছরেও খসড়া সংশোধনী পাস করতে পারেনি সরকার।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২৩’- বিষয়ক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘আইন শক্তিশালীকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও আইন সংশোধনে এত সময় লাগছে কেন। আমরা বলি স্বাস্থ্যখাতে আমাদের অর্জন অনেক। তাহলে তামাকের কারণে এত মানুষ মারা যায়, আমরা কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনা। জনস্বাস্থ্যকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করতে হবে। তামাক কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা যাবেনা এবং সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। কয়েক বছর ধরেই আমরা এসব বলে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। হয়ত একসময় আমাদের নীতিনির্ধারক ও সরকারি দপ্তরগুলোতে যারা আছেন তারা আমাদের কথা শুনবেন।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় আমরা অনেকটাই অগ্রগতি লাভ করেছি। তবে তামাক কোম্পানিগুলো বার বার বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: সংশোধিত তামাক আইন পাস হলে মৃত্যু কমবে, এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে
গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভার্নেন্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (জিজিটিসি) হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ড. মেরি আসুন্তা বলেন, ‘স্পষ্টতই বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এশিয়া ও বাংলাদেশকে তাদের মুনাফা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে পেতে চায়। কাজেই মুনাফা হুমকিতে পরে এমন যেকোনো সরকারি পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতা করবে তারা। তবে সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে বাধ্য, মৃত্যুবিপণনকারী কোন শিল্পকে নয়। ডব্লিউএইচও এফসিটিসি’র আর্টিক্যাল ৫.৩ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার; যা সরকার জীবন বাঁচাতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবহার করতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবিলা এবং আর্টিক্যাল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতিই হয়নি বাংলাদেশে।
আইন সংশোধন হলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবি)।
তামাক কোম্পনির এধরনের অপব্যাখা আমলে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে চিঠি দেয় এনবিআর।
আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি প্রদান করে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব)।
এছাড়া, তামাক কোম্পানির মদদপুষ্ট বেশকিছু তথাকথিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ না করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠায় এসময়।
স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ, পানি বিশুদ্ধকরণ, সোলার প্যানেল, কোভিড ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন বুথ স্থাপন ইত্যাদি সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে কোম্পানিগুলোকে।
বরাবরের মতোই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে তামাক কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করতে দেখা গেছে।
এভাবে প্রভাবশালী সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও নীতি-নির্ধারকদের সান্নিধ্যে এসে ভবিষ্যত হস্তক্ষেপের পথ সুগম করার সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিগুলো।
তবে, রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের জন্য তামাক কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা, তামাক কোম্পানির আর্থিক সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য কর্মশালা বাতিলসহ বেশ কিছু ইতিবাচক ঘটনা উঠে এসেছে গবেষণায়।
গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে আইন সংশোধনের পাশাপাশি ডব্লিউএইচও এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ প্রতিপালনে সচেতনতা সৃষ্টি, তামাক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনার ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল ৫.৩- এর আলোকে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা, তামাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা, ১৯৫৬ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সিগারেটকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার, এবং একটি সহজ তামাককর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবিতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত
এবছর বিশ্বের ৯০টি দেশে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সরকারসমূহ তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ কিভাবে আমলে নেয় এবং হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ গাইডলাইনের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এই গবেষণার মাধ্যমে। স্কোর যত কম, হস্তক্ষেপ তত কম।
তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচক ২০২৩ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো করেছে ব্রুনাই (স্কোর, ১৪) এবং সবচেয়ে খারাপ করেছে ডোমিনিকান রিপাবলিক (স্কোর, ১০০)। বাংলাদেশের স্কোর ৭২, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।
প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ২০১৮ সাল থেকে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে আসছে।
ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রপিসের সহায়তায় এই গবেষণা কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেছে সাউথইস্ট এশিয়া টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যালায়েন্স (সিটকা) এবং গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভার্নেন্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল (জিজিটিসি)।
অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজর, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ; সৈয়দ মাহবুবুল আলম, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, বাংলাদেশ; নাদিরা কিরণ, কো-কনভেনর, আত্মা এবং এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা।
আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর নাফিউর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার।
গবেষণা ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ তামাকবিরোধী সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
১১ মাস আগে
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবিতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চলতি সংসদ অধিবেশনে পাসের দাবিতে সিগনেচার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) বেসরকারি এনজিও নারী মৈত্রী ও ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালাইডোস্কোপ ক্লাবের যৌথ সহায়তায় দিনব্যাপী এই ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়।
এই ক্যাম্পেইন থেকে সংগ্রহ করা স্বাক্ষরের তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের বিকল্প নেই: শিক্ষামন্ত্রী
এ সময় ক্যাম্পেইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ছয়টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো হলো- উন্মুক্ত স্থানে 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' বাতিল ও গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট-কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমম্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর বিবেচনায় অন্যতম।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ মতে, বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৫ বছর বা বেশি) তামাক ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন গণপরিবহন ও উন্মুক্ত স্থানে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যান।
তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী পাস করার দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছে শিক্ষার্থীরা। যত দ্রুত আইন পাস হবে, তত বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে তারা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে 'ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) -এর অধিকতর সংশোধনের জন্য এফসিটিসি'র আলোকে একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য এখন কেবিনেট ডিভিশনে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
১ বছর আগে
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট গৃহীত হলে, তামাকজাত দ্রব্য আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তুলনায় সস্তা হবে। বৃহস্পতিবার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) বাজেট পেশ পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রজ্ঞা বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেট যুবকদের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করবে, যা প্রকারান্তরে তামাকজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার কারণ হবে এবং এর ফলে সরকারের জনস্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে, প্রজ্ঞা বলে যে এর কারণে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব হারাবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের তামাকমুক্ত বাংলাদেশের বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ পয়সা (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ)। এই স্তরের করহার প্রায় অপরিবর্তিত রেখে কেবল মূল্যস্তর বাড়ানোর কারণে বর্ধিতমূল্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা (৩ দশমিক ০৮ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা থেকে ১১৩ টাকা (১ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা থেকে ১৫০ টাকা (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে প্রতি দশ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৫ টাকা ও ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেশের ৮টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের (৭ মার্চ) তুলনায় ২০২৩ সালে (৭ মার্চ) খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিমের দাম ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম ২১.২ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘নিত্যপণ্যের তুলনায় সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা কমদামি সিগারেটের মূল্যস্তর বা খুচরামূল্য সামান্য পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে এই স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য আমদানির সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে গতবছরের তুলনায় সরকারের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এই বাড়তি রাজস্ব আইএমএফ এর ঋণ শর্ত পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করবৃদ্ধি ও আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ
তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে কারখানায় তদারকি আবশ্যক: গবেষণা
১ বছর আগে
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
ই-সিগারেট ও ভেপিং ব্যবহার উৎসাহিত করতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ভয়েস অব ভেপারস এবং এশিয়া হার্ম রিডাকশন অ্যালায়েন্স একটি সম্মেলন এবং গোলটেবিল বৈঠক করেছে।
তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব আয়োজনের নেপথ্যে ছিল ফিলিপ মরিসের (পিএমআই) অর্থপুষ্ট ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থা এবং প্রতিনিধি।
তবে এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ কিছু মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে, যা হতাশাজনক।
আরও পড়ুন: ক্ষতি কমাতে তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির দাবি
প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং যেখানে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ভয়েস অব ভেপারস দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্যের পক্ষে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, পিএমআই এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’- এর নানা তৎপরতা জনস্বাস্থ্য এবং তামাকবিরোধী কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
এফএসএফডব্লিউ মূলত ই-সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের ভেপিং পণ্যের ব্যবহার ও বাজারজাতকরণকে উৎসাহিত করে থাকে।
এ কারণেই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পরপই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের সুস্পষ্ট স্বার্থ সংঘাত রয়েছে।
এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ফাউন্ডেশনের সব ধরনের সহযোগিতা কিংবা যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাহার করবে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করবৃদ্ধি ও আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ
সরকার এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই নীতি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও ডব্লিউএইচও এফসিটিসি সেক্রেটারিয়েট এক পৃথক বিবৃতিতে বলে, ‘তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যে কোনো সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড হবে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
উদ্বেগের বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও সংগঠনটির তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতসহ বেশকিছু দেশ ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’- এর বিতর্কিত কার্যক্রম প্রতিহত করতে সরকারিভাবে সংগঠনটির সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।
এফসিটিসি এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও উচিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়া এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ভেপিং, ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি) গুলোকে ‘মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে।
দ্রুতততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশেও এসব পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে কারখানায় তদারকি আবশ্যক: গবেষণা
১ বছর আগে
তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে কারখানায় তদারকি আবশ্যক: গবেষণা
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের টোব্যাকো কন্ট্রোল জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় গ্রাফিক স্বাস্থ্য সতর্কতা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ নিরীক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
‘বাংলাদেশে গ্রাফিক স্বাস্থ্য সতর্কীকরণের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নকে দুর্বল করার জন্য তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক গবেষণাটি বাংলাদেশে গ্রাফিক স্বাস্থ্য সতর্কতা (জিএইচডব্লিউ) বাস্তবায়নকে‘বিলম্বিত এবং দুর্বল’ করার জন্য তামাক শিল্পের প্রচেষ্টার ওপর সমীক্ষা চালায়।
প্রজ্ঞার পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) প্রক্রিয়াটিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে কারখানার সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
আরও পড়ুন: ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সমীক্ষা অনুসারে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) সবচেয়ে সক্রিয় ছিল এবং একমাত্র কোম্পানি যেটি জিএইচডব্লিউ বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একা কাজ করেছিল।
গবেষণাটি বাংলাদেশ সরকারকে ডব্লিউএইচও এফসিটিসি আর্টিকেল পাঁচ দশমিক তিন নির্দেশিকা গ্রহণ করার এবং তাদের বাস্তবায়নকে নীতিগত অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক ছিলেন বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা গ্রুপের পরিচালক অধ্যাপক আনা বি গিলমোর; ডা. ব্রিটা কে ম্যাথস, বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা গ্রুপের গবেষণা সহযোগী; এবং বাংলাদেশ ভিত্তিক তামাক বিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা প্রজ্ঞা (নলেজ ফর প্রোগ্রেস) এর চারজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনজীবী – এবিএম জুবায়ের, প্রোগা’র নির্বাহী পরিচালক, মো. হাসান শাহরিয়ার, প্রোগ্রামের প্রধান, মো. শাহেদুল আলম, অ্যাডভোকেসি প্রধান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মিডিয়া ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান।
আরও পড়ুন: তামাক চাষ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে মন্ত্রণালয়: পরিবেশমন্ত্রী
১ বছর আগে
তামাক ব্যাবহারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
তামাকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাক ক্ষতি ছাড়া জীবনে কোনো অবদান রাখেনা। স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সকলেই জানে। তাই তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিহার করা অপরিহার্য। তামাক ব্যাবহারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা আহছানিয়া মিশন কর্তৃক আয়োজিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ব্যবস্থা শীর্ষক আলোচনা সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সময়ের সঙ্গে সব কিছুই পরিবর্তন হয়। আইনও পরিবর্তন হতে পারে। প্রণীত খসড়াটি যেন দ্রুত আইনে রূপান্তরিত হয় সে চেষ্টা করতে হবে। তামাকের জন্য যে কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে বলা হয়, সেটা স্বাস্থ্য ক্ষতির তুলনায় কিছুই না।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু মোকাবিলায় আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
তিনি বলেন, বলা হয় যে তামাক বন্ধ হলে ৮০ লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে এটা সত্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে জন্য গাইডলাইন করা হয়েছে।
মো.তাজুল ইসলাম বলেন, তামাকের চাষাবাদ ও তামাক পণ্য উৎপাদন কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস করে। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এদেশ স্বাধীন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমারা একাত্ম থাকলে আমরা যে কোনো সংকট মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন করবোই। বর্তমান সংকট বৈশ্বিক তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে যেন কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে।
বিশেষ অতিথি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক উল্লেখ করেন তামাকের কোন ভালো দিক নেই। তামাক নিয়ন্ত্রণ করলে দেশের স্বাস্থ্যখাত ভালো থাকবে।
সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত দেশ এবং ২০৪০ সালে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ আন্দোলন মানুষকে অধিক সচেতন করছে।
আইন সংশোধন হলে এ আন্দোলন আরও ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হোসেন আলী খন্দকার, সমন্বয়কারী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের অতিরিক্ত সচিব, উল্লেখ করেন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তামাক বাদে অন্য ফসল উৎপাদন কাজ করতে। উন্মুক্ত আলোচনায় বিশিষ্টজনরা তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করেন। দ্রুত খসড়া আইন পাশ ও তামাক মুক্ত বাংলাদেশ আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর এর পরিচালক জনাব ইকবাল মাসুদ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মো. সেলিম রেজা, প্রধান নির্বাহী (অতিরিক্ত সচিব), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আবদুস সালাম মিয়া, গ্রেন্ডস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল ডা. জুবায়দুর রহমান, বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনাব জালাল আহমেদ এবং দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।।
আরও পড়ুন: জাতির স্বার্থে কাজ করার আহ্বান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু দুই যুগেও হতো না: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
২ বছর আগে
তামাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বাঙালি জাতি খালি হাতে ফিরবেনা: ডেপুটি স্পিকার
ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, বাঙালি জাতি আন্দোলন করে কখনো খালি হাতে ফেরেনি। তাই তামাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও তাঁরা খালি হাতে ফিরবে না।
বুধবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলের চিত্রা হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ’ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুল হক টুকু বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে তামাকের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ মাদকমুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে ডেপুটি স্পিকার বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝেই তামাকমুক্ত করতে পারবো। জাতির ভিতর তামাক-বিরোধী ঝড় উঠেছে, এখন শুধু এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা ২৩ বছর সময় নিয়েছি মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে বিজয় লাভ করেছি ৯ মাসে।
কাজেই ধৈর্য্য ধারণ করে সঠিক কাজটি করে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ বৈধ
এছাড়া তিনি আরও বলেন, শুধু আইন করে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না, এর সঙ্গে পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা ও নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তামাক-বিরোধী আইন পাশ হওয়া সময়ের ব্যাপার।
ডেপুটি স্পিকার আরও বলেন, করোনার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি, অথচ তামাকের চেয়ে ১৬ গুণ অধিক মরণঘাতী ব্যাধি নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা অনেকেই উদাসীন। এটি রোধে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তামাক-বিরোধী অবস্থানে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একবার দলীয় কমিটি গঠনে ডোপ টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ রিপোর্টধারীদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছি।
এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্য করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে কাজ করেছি, বর্তমানে বিধানটি চালু রয়েছে। এভাবে যার যেখানে মাদক-বিরোধী কাজ করার সুযোগ আছে সবারই তা করা উচিৎ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, সংসদ সদস্য শিরীন আখতার ও সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভায় ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং সমাপনী বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান তালুকদার। এছাড়া গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ডেপুটি স্পিকার হলেন শামসুল হক টুকু
সাংবাদিক তোয়াব খানের মৃত্যুতে ডেপুটি স্পিকারের শোক
২ বছর আগে
তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেবে সরকার: মোজাম্মেল হক
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করে সময়োপযোগী করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ফর টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন।’
রবিবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র (ডরপ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগীকরণে নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া কখনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না:মোজাম্মেল হক
এসময় মন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করে সময়োপযোগী করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
আলোচনা সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগীকরণে ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ডরপ’র উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. যোবায়ের হাসান।
উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো-সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার প্যাকেটের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় নূন্যতম পরিমাণ নির্ধারণসহ মোড়কীকরণে কঠোর নিয়ম আরোপ করা তথা প্লেইন প্যাকেজিং বাস্তবায়ন করা।
হাসান আরও উল্লেখ করেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগী করার প্রস্তাবসমূহ আইনে অন্তর্ভুক্ত হলে সাধারণ মানুষ তামাকজনিত রোগের অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ: মোজাম্মেল হক
ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়রের (ডরপ) চেয়ারম্যান মো. আজহার আলী তালুকদার সভাপতিত্ব ও ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সদস্যরা, বিড়ি শ্রমিক ও নেতা এবং যুব ফোরামের সদস্যরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ছয়টি সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন এবং সংসদ সদস্যরা ও নীতি-নির্ধারকদেরকে উক্ত প্রস্তাব সমূহকে সমর্থন ও আইনটি পাশ করার ক্ষেত্রে সংসদ ও সংসদের বাইরে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
২ বছর আগে