অর্থনীতিবিদ
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা
বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ব্যবস্থাপনার পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশেষ করে এই খাতের আর্থিক দুর্দশার আরও কার্যকর সমাধান হিসেবে অতিরিক্ত ও বিতর্কিত ব্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করছেন।
তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, বর্তমানে ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের চুক্তিকেই এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির বোর্ডের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে বড় আকারের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পর্যন্ত- ব্যাপক অযৌক্তিক খরচ রয়েছে। এছাড়া দাম বৃদ্ধির উপর আর্থিক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজেন।’
আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ, উৎপাদন খরচ ও বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মোকাবিলায় মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও জাতীয় অর্থনীতির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খুচরা ভোক্তাদের ওপর এ প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন খরচ মেটাতে খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সমন্বয় করা যেতে পারে।’
দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথাগত শুনানি পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে পাইকারি বিদ্যুতের দামে ৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকারের অভ্যন্তরের সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৭ পয়সা। এ সময় প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, কারণ বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অতি উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে সরকার। একই সময় নিজস্ব কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, সেখানে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বা আইপিপির (বেসরকারি খাত) বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা। এ ছাড়া রেন্টাল প্ল্যান্টে প্রতি ইউনিটে খরচ হয়েছে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
বিপিডিবি সূত্র জানায়, গত দেড় দশকে ১১ বার পাইকারি পর্যায়ে এবং ১৩ বার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় হারের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে এবং এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রায় ১২ টাকা এবং প্রতি ইউনিট বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৭ পয়সায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে অন্যায্য ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইউএনবিকে বলেন, ‘কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এসব সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে তা অকার্যকর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কি আসন্ন?
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্যায্য ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের অনীহা দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সরকারকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেটরদের বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে, ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও শীতকালেও দেশে ব্যাপক লোডশেডিং হয়।’
তিনি বলেন, এত উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও সরকার বিদেশ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, এটা 'হাস্যকর'।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সম্প্রতি এক সেমিনারে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অতি উৎপাদিত বিদ্যুৎ সক্ষমতা হ্রাসের বিষয়টি অনুপস্থিত।
সার্বিক ব্যয় কমাতে ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবিলম্বে বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম তামিম বলেন, খরচ না কমিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ানোর দায় ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকারি ভর্তুকি কমানো যেতে পারে। কিন্তু এতে ডলার সংকটেরও সমাধান হবে না, জ্বালানি আমদানি সমস্যারও সমাধান হবে না। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লোডশেডিং ঠেকানো যাবে না।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
৮ মাস আগে
বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিকাশ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি ও সুযোগ নিয়ে আসে: অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন
ক্রমবিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থা এবং পরিবর্তিত ভূ-অর্থনৈতিক দৃশ্যপট উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দুটোই নিয়ে আসে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনে ‘ইভলভিং গ্লোবাল অর্ডার অ্যান্ড জিও-ইকোনমিক্স: ইমপ্লিকেশন ফর লেস ডেভেলপড কান্ট্রিজ’- শীর্ষক পাবলিক লেকচারে এসব কথা বলেন তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার সঞ্চালিত অধিবেশনে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আলোচনা করেন।
মাহমুদ রাজনৈতিক ও বিদেশি অর্থনৈতিক স্বার্থ কার্যকরভাবে হাসিল করার জন্য সরকারগুলোর প্রতি শক্তিশালী জনসমর্থনের তাৎপর্যের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শোষণ মোকাবিলায় এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আয় বৈষম্য বেড়েছে: ড. বিনায়ক সেন
তিনি শীতল যুদ্ধের যুগের তুলনায় পরাশক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার স্বতন্ত্র প্রকৃতিও উল্লেখ করেছেন।
ভিয়েতনাম ও চীনের অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করে মাহমুদ তুলে ধরেন, কীভাবে বেসরকারি খাতে সরকারের সম্পৃক্ততা সুফল পেতে পারে।
জাইদি সাত্তার বিশ্বায়ন থেকে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদে পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এমনকি বিশ্বায়নের সমর্থকরাও সুরক্ষাবাদী নীতি গ্রহণ করছে।
তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়নে গভীরভাবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন।
সেলিম রায়হান ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অ-সম্পৃক্ততা এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে এর উদীয়মান ভূমিকা সম্পর্কে বক্তব্য দেন।
সামগ্রিকভাবে, বিআইডিএস সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাহ্যিক ভূ-রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতির ভারসাম্য বজায় রেখে, নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রা আমানতের ওপর ব্যাংকগুলো ৭ শতাংশ সুদ দেবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যক্তিগত আয় বিবেচনায় করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছাতে হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
১১ মাস আগে
আঞ্চলিক শিল্প মূল্য শৃঙ্খল তৈরির উপর জোর অর্থনীতিবিদদের
বাংলাদেশ-জাপান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে সংযুক্ত করে একটি আঞ্চলিক শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল (ভ্যালু চেইন) তৈরি করতে সরকারি সংস্থা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম গঠনের উপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনায় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এই পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে এই অঞ্চলটি একটি বড় প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তারা বলেন, এই অঞ্চলে শিল্প, অবকাঠামো ও জ্বালানি সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ, বাণিজ্য নীতি ও কর সংস্কার, পণ্য সমন্বয় এবং শুল্ক ব্যতীত অন্য বাধা অপসারণ প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
তিনি বলেন,‘এখন সময় এসেছে আঞ্চলিক শিল্প ও উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার।’
মঙ্গলবার(২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জাপান দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বঙ্গোপসাগরে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়ন এবং শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠার সেমিনারে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমও বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশে একটি প্রধান বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকারী হলো জাপান। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে দেশটি।
জাপান ২০১৪ সাল থেকে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) উদ্যোগের অধীনে ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে এবং এর বাইরে শিল্প ও অবকাঠামো ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।
এ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিকাঠামো ও শিল্প নির্মাণে ভারতকে সহায়তা করছে জাপান।
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের অধ্যাপক ড. প্রবীর দে বলেন, 'এই অঞ্চলে একটি শিল্প মূল্য শৃঙ্খল এখন খুবই প্রয়োজন।’
যেহেতু এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকগুলো উপাদান জড়িত থাকবে, তাই আঞ্চলিক শিল্প মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানকে একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামোগত সহযোগিতা চুক্তির আওতায় আসার পরামর্শ দেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যদিও এটি একটি সম্ভাব্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কিন্তু এটি এমন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'প্রকল্পের ব্যয় বেশি হচ্ছে কি না তাও মাথায় রাখতে হবে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বন্দরের চাহিদা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি বন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্গো আসে তবেই এর সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। সেই চাহিদা তৈরির জন্য এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, নেপাল ও ভুটানকে কীভাবে মূল্য শৃঙ্খলে সংযুক্ত করা যায় তাও ভাবতে হবে।
আরও পড়ুন: পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূলে বৈশ্বিক অঙ্গীকার আরও জোরদারের আহ্বান মোমেনের
তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানের সংযোগ ছাড়া মাতারবাড়ী কার্যকর হতে পারে না।
দেবপ্রিয় বলেন, প্রায়শই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুরা মাধ্যমে তৈরি হয়। ভারত একটি ফেডারেল ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক দিল্লির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়। এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘জাপান তার শিল্প চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে কি না সেটিও একটি বিষয় হবে।’
ভারতভিত্তিক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের নির্বাহী পরিচালক সব্যসাচী দত্ত অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, জাপান ইতোমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে অনেক সংযোগ পরিকাঠামো তৈরি করেছে, তবে আরও অনেক কিছু করা দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাতারবাড়ী ও চট্টগ্রাম থেকে ত্রিপুরার সাব্রুম ও আগরতলা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক ও রেলপথের মধ্যে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির উন্নয়নে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মোমেন
বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি জাপানের মধ্যে বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতাগুলোও দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি, সীমান্তের ওপারে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচল এবং তৃতীয় দেশের বাণিজ্যকে সহজতর করার কিছু অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করেননি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র
১ বছর আগে
ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল নয়: হাইকোর্ট
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মামলা বাতিল চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার (২৩ জুলাই) এই রুল জারি করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
গত ৬ জুন এই মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক।
আরও পড়ুন: আপনি ভুল করেননি, ক্রাইম করেছেন: জেলা জজকে হাইকোর্ট
অন্য যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় তারা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা নিয়ে ও মামলার পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে গত মাসে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। এই আবেদনের ওপর ১৭ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সময়ের আরজি জানালে আদালত রবিবার শুনানির দিন ঠিক করেন। শুনানি নিয়ে আজ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আজ আদালতে ড. ইউনূসসহ আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির সৌন্দর্য রক্ষায় হাইকোর্টের ৩ নির্দেশনা
অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে ড. ইউনূসের আবেদন
১ বছর আগে
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন: পিআরআই
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধুমাত্র শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মৌলিক সংস্কারই বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতকে উন্নত করতে পারে। রবিবার প্রাক-বাজেট প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধ, পেনশন সুবিধা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ব্যয় হয়েছে।
মনসুর বলেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান রাজস্ব ও কর নীতির ব্যর্থতার কারণে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান প্রতি অর্থবছরে বাড়ছে।
এই অর্থনীতিবিদ জানান, ব্যাংক, এনবিআর এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রকদের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া এই খাতে আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ৯ মাসে প্রায় ৩৩ শতাংশ আমদানি কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
১ বছর আগে
ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন: সিপিডি আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ব্যাংকগুলোতে আস্থা ও সুশাসনের অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরও বলেছেন যে এতে প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।
রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী আবদুল মান্নান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ; অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনুর; বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন; অধ্যাপক আবু আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: উচ্চ মূল্যের সরকারি ঋণ অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে: সিপিডি
সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়সহ নীতি বাস্তবায়ন কঠোরভাবে পরিচালনা করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে সঠিক নীতি নিতে হবে, কারো মুখের দিকে তাকাতে হবে না, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এটি দাবি করে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছরে মোট নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি রিপোর্ট অনুসারে এনপিএলগুলো ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থেকে ২০১২ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এক দশমিক ৩৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সঠিক সংস্কার করতে হবে অথবা এর পতন দেখতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ২৭ শতাংশ বেড়েছে। কারণ মানুষ তাদের অর্থের নিরাপত্তার জন্য ভালো ব্যাংক খুঁজছে। ‘সুতরাং, আস্থা এবং সুশাসন একটি ব্যাংককে বাঁচাতে পারে।’
তিনি বলেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন, পর্যবেক্ষক নিয়োগই যথেষ্ট নয়।
ড. জাহিদ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাহ্যিক প্রভাবে তৈরি হয় না, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জিডিপি বাড়ছে, অর্থনীতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা: সিপিডির নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশেষ উল্লেখ অ্যাকাউন্টে ঋণ, আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ ঋণ এবং পুনঃনির্ধারিত ঋণ অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রকৃত এনপিএল অনেক বেশি হবে।’
সিপিডি উল্লেখ করেছে যে রাজনৈতিক সংযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালকদের নিয়োগ, রাজনৈতিক কারণে মঞ্জুর করা ঋণ, ঋণ পরিশোধের রেকর্ড খারাপ থাকা সত্ত্বেও ঋণের পুনঃতফসিল করা এবং করের বোঝা কমাতে ঋণ বাতিল করা এবং ব্যাংকের ক্লিন ব্যালেন্স শীট দেশে উচ্চহারের এনপিএল এর পরিমাণও কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে।
এনপিএলগুলো বলছে, ব্যাংকগুলোর দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক খেলাপিদের দেয়া নমনীয়তাও এই উচ্চ পরিমাণের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন: বিপিসির দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির দরকার হতো না: সিপিডি
বাজেটে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই: সিপিডি
১ বছর আগে
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইয়ের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ফিলিপ ডিবভিগের বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। তবে, অভিযুক্ত অর্থনীতিবিদ ডিবভিগ বিষয়টিকে ‘পেশাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ বলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ডিবভিগ আরেক মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডগলাস ডায়মন্ডের সঙ্গে ব্যাংক থেকে আকস্মিক টাকা তোলার হিড়িক (ব্যাংক রান) ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে পরিচিতি লাভ করেন। ‘ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলোর ওপরে গবেষণা’র জন্য তিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে যৌথভাবে ডায়মন্ড ও বেন বারন্যাংকির সঙ্গে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
তার আইনজীবী অ্যান্ড্রু মিলটেনবার্গ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, সেন্ট লুইয়ের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ অফিসে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিবভিগ দীর্ঘদিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাঙ্কিং ও ফিনান্সের অধ্যাপক।
মিল্টেনবার্গ বলেছেন যে অভিযোগগুলো ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল।’
তার মন্তব্যের জন্য ইমেইলে তার সঙ্গে এপি থেকে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন: 'আমি তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলব': রোমে কফি শপে ঢুকে ৩ জনকে হত্যা
ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে যে তারা এই ইমেলগুলো পর্যালোচনা করেছে। যে ইমেইলগুলোতে ডিবভিগের বিরুদ্ধে চতুর্থ অফিস ক্যাম্পাসের যৌন হয়রানির অভিযোগগুলো পরিচালনা করছে।
ব্লুমবার্গ অক্টোবর থেকে অন্তত তিনজন সাবেক ছাত্রকে ডিবভিগ-এর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তাদের সাতজন সাবেক শিক্ষার্থীর একটি দল ডিবিভিগের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাত্কারে বেশিরভাগ নারীই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
নোবেল ইকোনমিক সায়েন্সেস প্রাইজ কমিটির চেয়ারম্যান টোরে এলিংসেন ব্লুমবার্গকে বলেছেন যে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস যারা পুরস্কারের তত্ত্বাবধান করে। এ ধরনের অভিযোগগুলো তদন্ত পরিচালনা করার জন্য তারা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে, তা নিশ্চিত করার জন্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এলিংসেন ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘যতক্ষণ না ইউনিভার্সিটি প্রমাণ করতে পারবে না যে ডিবভিগ কোনো অপরাধ করেছে, আমি মনে করি আমরা ততক্ষণ তাকে তার মহান বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের একই রকম সম্মান করবো।
নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ফাউন্ডেশনও এপি থেকে পাঠানো ইমেল বার্তাগুলোর প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
শুক্রবার এপি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইল ও ফোনে পাঠানো বার্তারও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জুলি ফ্লোরি ব্লুমবার্গকে বলেছেন যে তারা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মন্তব্য করে না, তবে যৌন অসদাচরণকে গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং যে কোনও অভিযোগ তদন্ত করবে।
মিল্টেনবার্গ বলেছেন যে তিনি অভিযোগের সময় সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন।
উল্লেখ্য যে ডিবভিগের নামে পুরস্কার ঘোষণার পরে কিন্তু নির্ধারিত পুরস্কার অনুষ্ঠানের আগে অভিযোগগুলো করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এটি পেশাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ চলার সময় মার্কিন সাংবাদিকের মৃত্যু
ইউক্রেনে পদক্ষেপের সমালোচনাকারী রাশিয়ানের ৮২ বছরের কারাদণ্ড
১ বছর আগে
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আকবর আলী খান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খানকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শুক্রবার বিকালে দাফন করা হয়েছে।
জুমার নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের (জিকে) প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: আকবর আলী খানের মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
আগের দিন আকবর আলি খানের মরদেহ গুলশানে তার বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার আত্মীয়স্বজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান।
আকবর আলী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল রাতে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
তার মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) ও বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আকবর আলী খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সের উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন এবং অর্থনীতিতে এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আরও পড়ুন: আকবর আলী খানের মৃত্যুতে জিএম কাদেরের শোক প্রকাশ
কর্মজীবনে ড. আকবর আলী খান টানা তিন সরকারের মেয়াদে সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় অর্থ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিযুক্ত হয়ে ২০০২ সালে এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, ডাক, টেলিগ্রাফ এবং টেলিফোন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ব্যর্থতার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সময়কালে তিনি রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ইতিহাসে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১০ সালে বাংলা একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ: আকবর আলী খান
২ বছর আগে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান মারা গেছেন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান রাজধানী ঢাকায় মারা গেছেন।
অসুস্থতাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
ড. আকবর আলী খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এরপর তিনি কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন।
তিনি ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ: আকবর আলী খান
করোনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা কাজেমীর মৃত্যু
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হায়দার আলী আর নেই
২ বছর আগে
২০টি মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন: দেবপ্রিয়
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের শীর্ষ মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধের জন্য একটি রোডম্যাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এসব মেগা প্রকল্প ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে শুরু হবে।
তিনি পরামর্শ দেন, ‘এই মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনীতির জন্য উদ্বেগ সৃষ্টিকারী। এগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ২০২৪ ও ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা আসছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’-শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র স্পেশাল ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিদেশি ঋণের সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত ১ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।
বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে সে সময় দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি কেমন, অর্থনীতি কতটা চাঙ্গা থাকে তার ওপর নির্ভর করবে।
আরও পড়ুন: বাজেটে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই: সিপিডি
দেবপ্রিয় আরও বলেন, বড় প্রকল্পের জন্য রাশিয়া, চীন ও জাপানকে বেশি টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়কাল বেশ কম।
তিনি পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর রেল সংযোগসহ ২০টি মেগা প্রকল্প বিশ্লেষণ করেন।
এসব প্রকল্পে প্রায় পাঁচ দশমিক ৫৭ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর প্রায় ৬২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার বিষয়ে এক ধরনের জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে।
তিনি বলেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায় বলে রাজনীতিবিদরা এতে আগ্রহ দেখান।
দেবপ্রিয় বলেন, যদিও ২০টি প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বর্তমান দশকে সেগুলি সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: উচ্চ মূল্যের সরকারি ঋণ অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে: সিপিডি
বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে খাদ্যের দাম অনেক বেশি: সিপিডি
২ বছর আগে