বিপর্যয়
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়: গুজরাটে ২ জন নিহত
পশ্চিম ভারতের গুজরাট উপকূলে বৃহস্পতিবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের তাণ্ডবে দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি নিয়ে পাকিস্তানে আঘাত হানে ঝড়টি।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতাস্বরূপ দুই দেশের উপকূলবর্তী ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পশ্চিম গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং এসময় ১০৫ কিলোমিটার (৬৫ মাইল) পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা উপকূলবর্তী ৮২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে।
পশ্চিম ভারতে ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুজনের মৃত্যু ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দ্বারকা জেলায় তিনজন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিম ভারতে প্রায় ১ লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঝড়ে এ অঞ্চলের গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়াসহ স্থলভাগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপকূলীয় শহর মান্ডভির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারী বাতাসে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা বন্দরের কিছু শিপিং কন্টেইনার সমুদ্রে ভেসে গেছে।
শুক্রবারের পরে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে দক্ষিণ পাকিস্তানে আঘাত হানার পর প্রতিবেশি ভারতীয় রাজ্য রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান এখনও গত বছরের মারাত্মক বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
দেশটির অনেক মানুষ দাতব্য সংস্থা, সাহায্য সংস্থা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দান করা খাবার গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বন্যা কবলিত সিন্ধু প্রদেশের বন্দর কেটি বন্দরের ১২৫ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ‘ঝড়টি প্রথমে একটি ঘূর্ণিঝড়ে এবং তারপরে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: কক্সবাজারে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আরব সাগরে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দীর্ঘতম আয়ুষ্কালের রেকর্ড তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে ‘ঘূর্ণিঝড় কিয়ার’ ৯ দিনের জীবন নিয়ে এই রেকর্ড ধরে রেখেছিল।
গুজরাট সরকার বলেছে, তারা প্রায় ৭০০টি এশিয়াটিক সিংহের আবাসস্থল গির ন্যাশনাল পার্কে বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং ভেড়ে পড়া গাছগুলো সরানোর জন্য ১৮৪টি ইমার্জেন্সি অ্যাকশন স্কোয়াড মোতায়েন করেছে।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জন্য পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহরগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ গত গ্রীষ্মে দেশটির সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা হয়েছিল, যাতে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৩৯ জন নিহত এবং ৩৩ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। পাকিস্তানের সরকার এবং স্থানীয় সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বাস্তুচ্যুত লোকদের বিনামূল্যে খাবার এবং পানীয় জল সরবরাহ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, তার সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ সতর্ক করেছে যে পাকিস্তান ও ভারতে ৬ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক নোয়ালা স্কিনার বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় সিন্ধুর শিশু এবং পরিবারগুলোর জন্য একটি নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই এই প্রদেশটি গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি আরও জরুরি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
১ বছর আগে
তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’: মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান
আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সপ্তাহের শেষের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের উপকূলে আঘাত হানবে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। এটি এ অঞ্চলের জন্য এই বছরের প্রথম তীব্র ঘূর্ণিঝড়। তাই কর্তৃপক্ষ সব ধরনের মাছ ধরার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে।
আরব সাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলরেখা বরাবর ধেয়ে আসছে।
আগামী বৃহস্পতিবার এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যানুসারে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ঝড়ের গতিপথে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং শহরগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সম্ভবত পাকিস্তানের করাচির পাশাপাশি গুজরাট রাজ্যের ভারতের দুটি বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা ও কাণ্ডলাকে প্রভাবিত করবে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষীরাও প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে।
প্যাটেল বলেন, প্রয়োজনে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্যোগের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর
পাকিস্তানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সমন্বয় মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেছেন, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বিমান ও পণ্যসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা যাওয়ার এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হওয়ার পর থেকে বিপর্যয়ই প্রথম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় যা পাকিস্তানে আঘাত হানার শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরব সাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের আর্থ সিস্টেম সায়েন্টিস্ট রঘু মুর্তুগুড্ডে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র ইতোমধ্যেই উষ্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরের তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। এই বছরের মার্চ থেকেই তীব্র ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে উষ্ণ জলবায়ুতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়বে।
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ১৯৫০ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন কাউন্সিলের সদস্য এবং ইসলামাবাদভিত্তিক সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবিদ কাইয়ুম সুলেরি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল বাড়বে এবং এড়ানো যাবে না। বিশেষ করে করাচি, মুম্বাই, ঢাকা ও কলম্বোর মতো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ উপকূলীয় শহরগুলোর জন্য আরও ভাল প্রস্তুতি এবং উন্নত নীতিমালা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে; যা জীবন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।’
২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় তাকতাই ছিল সর্বশেষ মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়, যা একই অঞ্চলের স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ে ১৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে উপকূলের ৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
১ বছর আগে
সন্ধ্যা ৭টায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ চালু হতে পারে: নসরুল হামিদ
জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিকল হওয়ার পর আজ বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু হতে পারে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গভবন ও গণভবন এবং মিরপুর ও ঢাকার অন্যান্য এলাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুণরায় চালু করেছি।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ঢাকা শহরের জন্য আমি স্থিরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি যাতে আর কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘তারা তাড়াহুড়ো করলে তা আরও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।’
দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড ব্যর্থ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া সারা বাংলাদেশে ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করে।
২ বছর আগে
বিশ্ব ‘পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে: জাতিসংঘ মহাসচিব
ইউক্রেনের যুদ্ধ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক হুমকি এবং অন্যান্য অনেকগুলো কারণের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, ‘মানব জাতি পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে।’
আন্তোনিও গুতেরেস পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং একটি পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘ বিলম্বিত এনপিটি রিভিউ’ সম্মেলনের উদ্বোধনী ব্ক্তব্যে এই ভয়ানক সতর্কবাণী দিয়েছেন।
পাঁচ বছর অন্তর ‘পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা অ-প্রফ্লফ্রেশন চুক্তি (এনপিটি) রিভিউ’ সম্মেলনে ঐতিহাসিক এই চুক্তির অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়। পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধের পাশাপাশি এই চুক্তির আওতায় পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও তরান্বিত করা হয়। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নির্ধারিত সময়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। বাধ্য হয়ে সম্মেলনের দিনক্ষণ ২০২২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হয়েছিল।
ক্রমবর্ধমান পরমাণু হুমকি ও পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রধান এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতারা এনপিটি সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে এ চুক্তির অগ্রগতি ও বাস্তবায়নের জন্য নেয়া ভবিষ্যতের পদক্ষেপ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার সপ্তম পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে; ইরান তার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিটি গ্রহণ করতে ‘হয় অনিচ্ছুক বা অক্ষম’ এবং রাশিয়া ‘ইউক্রেনে বেপরোয়া ও বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র দেখিয়ে আস্ফালন করছে।’
আরও পড়ুন: কাউকে পেছনে না ফেলে ন্যায়সঙ্গত ও বর্ধনশীল কর্মী তৈরির আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের
তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বলা সতর্কবাণীর কথা উল্লেখ করেন। যেখানে পুতিন বলেন, ‘আপনারা কখনও চিন্তাও করেননি এমন পরিণতি’ ঘটবে।’
পুতিন জোর দিয়ে বলেন,তার দেশ ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু শক্তিগুলোর মধ্যে একটি।’
ব্লিঙ্কেন বলেন, পুতিনের এই ধরনের কথা ১৯৯৪ সালে সোভিয়েত যুগের পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করার সময় ইউক্রেনকে দেয়া তার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার আশ্বাসের পরিপন্থী।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ২০১৫ সালে শেষ এনপিটি সম্মেলনের পর থেকে বিশ্বে বিভক্তি আরও বেড়েছে।
কিশিদা আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ‘বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রাশিয়াকে ১৯৯৪ সালে ইউক্রেনকে দেয়া আশ্বাস ‘নিষ্ঠুরভাবে লঙ্ঘন’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, দুর্বল প্রতিবেশিকে আক্রমণের পর থেকে মস্কোর ‘বেপরোয়া পরমাণু হুমকি ’ ‘এনপিটির পাঁচ দশকে অর্জন করা সমস্ত কিছুকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’
সোমবার এনপিটি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে এর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা শুভেচ্ছা বার্তায় পুতিনকেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে সতর্কতার কথা বলতে দেখা যায়।
পুতিন বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে পারমাণবিক যুদ্ধে কোনোদিন জয়লাভ করা যায় না এবং কখনই এই লড়াই করা উচিত নয় এবং আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের জন্য সমান ও অবিচ্ছেদ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাবো।
আরও পড়ুন: লিসবনে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে যোগ দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পুতিন বলেন, তার দেশ এনপিটি’র ‘প্রতিটি অক্ষর ও চেতনা মেনে চলে’ এবং তিনি আশা করেন যে সব পক্ষই তাদের প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে মেনে চলবে। এবং বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এই সম্মেলনে ‘গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গিকার’ করবে।
সম্প্রতি ব্লিঙ্কেন বলেন, রাশিয়া জাপোরিঝিয়ায় ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে এবং এটিকে ইউক্রেনীয়দের ওপর আক্রমণের জন্য একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে।
ব্লিঙ্কেন আরও বলেন,‘তারা (রাশিয়া) জেনেশুনেই এটা করছে। তারা জানে ইউক্রেন এখানে পাল্টা গুলি ছুঁড়তে পারবে না, কারণ তাদের (ইউক্রেনের সেনারা) আঘাত দুর্ঘটনাক্রমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকা পারমাণবিক চুল্লিতে আঘাত করতে পারে।’
যদিও এনপিটি-তে রাশিয়ার প্রতিনিধিদল সোমবার রাতে একটি বিবৃতি জারি করে ব্লিঙ্কেনের এই যুক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে তারা জানায়, রাশিয়া জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টকে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে না এবং শুধুমাত্র ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে সীমিত সংখ্যক সার্ভিসম্যান আছে।’
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ইউক্রেনের সংঘাত ‘এত গুরুতর যে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনার ভীতি আবার ভয়ঙ্কর করে জাগিয়ে তুলেছে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক প্ল্যান্টে ‘পরিস্থিতি দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে’।
এছাড়াও তিনি আইএইএ’র সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিয়ে ওই প্ল্যান্টে তাকে পরিদর্শনে যেতে সাহায্য করার জন্য সব দেশকে অনুরোধ করেন।
গুতেরেস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের হলে জড়ো হওয়া অনেক মন্ত্রী, কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের বলেন, ‘কোল্ড ওয়ারের পর থেকে সর্বোচ্চ পরমাণু সংকটের সময়ে মাসব্যাপী পর্যালোচনা এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, সম্মেলনটি ‘কিছু নির্দিষ্ট বিপর্যয় এড়াতে ও মানবতাকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি দারুণ সুযোগ।’
গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।’ বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং ‘মিথ্যা নিরাপত্তা’ চাওয়ার অজুহাতে অস্ত্রধারী এসব দেশ ‘ধ্বংসকারী এসব অস্ত্রের’ জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ, জলবায়ু বিপর্যয় বহুমুখী খাদ্য সংকট সৃষ্টি করছে: জাতিসংঘ
২ বছর আগে
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এক মাসের মাথায় আবারও পানিতে ভাসছে সিলেট। জেলার নদীগুলোর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর তীর উপচে নতুন করে হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উদ্ধার তৎপরতা না থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ ও ছাতকের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা তবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে সিলেটের কোনো জায়গাই শুকনা থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে কখনো দেখিনি। এক দিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেল।’
শুধু ঝালোপাড়াই নয়, পুরো সিলেটেই দ্রুত বাড়ছে পানি। জেলার বেশির ভাগ এলাকাই ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
গত বুধবার থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অথচ বৃহস্পতিবারই তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকাল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝিতে আরেক দফা বন্যা হয় সিলেটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষদের।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার কয়সর আহমদ বলেন, ‘গত মাসের বন্যায় এতো পানি হয়নি। মে মাসের বন্যায় উপ-শহরের মোড়ে পানি উঠেনি। এবার উপশহরের মোড়ও তলিয়ে গেছে। আর এবার পানি বাড়ছে দ্রুত। একদিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাসার ভেতরে এখন কোমর সমান পানি। বাসার চৌকিও পানিতে তলিয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: বন্যায় সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
২ বছর আগে
বাগেরহাটে ভাইরাসের কারণে চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়
বাগেরহাট, ২১ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- বাগেরহাটে ভাইরাসের কারণে সাদা সোনাখ্যাত বাগদা চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ ঘেরের চিংড়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে উজার হয়ে গেছে। এর প্রভাবে বাজারে চিংড়ির দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।
৫ বছর আগে