শিল্পী
পুরো কমিটি নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির যাত্রা শুরু
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে কম জল ঘোলা হলো না। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তারের লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সকল কিছুর অবসান হলো।
বর্তমানে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিপুণ পালন করবেন।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) রাতে এফডিসির চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসে শপথবাক্য পাঠ করান সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।
নিপুণের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি শুরুতে জায়েদ খানের প্যানেলের বিজয়ীরা মেনে নিতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত সেই অভিমানের অবসান হলো।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি: নিপুণ-জায়েদের বিষয়ে শুনানি ২২ ফেব্রুয়ারি
রবিবার এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে শপথ গ্রহণ করেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী।
তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শপথ গ্রহণ শেষে মৌসুমী গণমাধ্যমে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে। আমাদের সবকিছুর অবসান হলো। এত কিছুর পর আমরা আবার এক হয়ে গেলাম।’ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে সবাইকে একসঙ্গে পেলাম। আমি এটাই চেয়েছিলাম। আমি একটা দায়িত্ব নিলে সেটা সঠিকভাবে পালন না করা পর্যন্ত শান্তি পাই না। দীর্ঘ ৯ মাস আমি একটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। সেই যন্ত্রণা রবিবার লাঘব হলো। সমিতির সকল সদস্যরা এসেছেন। সবাই কথা দিয়েছেন আমরা শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করব।’
সকল দ্বন্দ্ব ভুলে সমিতিতে আসা প্রসঙ্গে ডিপজল গণমাধ্যমে বলেন, ‘শিল্পীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কখনোই চাই না। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দ্বন্দ্বটি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শুরু থেকেই আমরা বলেছি, আদালত যে রায় দেবেন আমরা মেনে নেব। আদালতের তরফ থেকে জানা গেছে, নিপুণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিটিংয়ে অংশ নিয়ে সমিতির কার্যক্রমের সঙ্গে থাকব।’
শিল্পী সমিতিতে রবিবার আরও আসেন একই প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত ডিপজল ও রুবেল।
এছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচিত কমিটির রিয়াজ, সাইমন, ইমন, জয় চৌধুরী, অঞ্জনা, কেয়া, জাদু আজাদ, আরমান, জেসমিন, নাদির খান, শাহনূরসহ অনেকেই।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: চেম্বার কোর্টের আদেশ কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ
বন্যার্তদের পাশে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি
সমরজিৎ রায়ের সৎকার সম্পন্ন
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরীর সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাজধানীর সবুজবাগ কালিবাড়ি শশ্মানে তার শেষ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী।
শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তার মরদেহ রাখার পর সবুজবাগের কালীবাড়ি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়ের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়, যেখানে একুশে পদক বিজয়ী শিল্পীর শেষ দেখা দেখতে আসেন অনেক বিশিষ্ট শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
অভিনেতা ও নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান, গোলাম মোস্তফা, কামাল পাশা চৌধুরীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন।
আরও পড়ুন: ‘বান্ধবী’র সঙ্গে দেখা করতে বরিশালে ভারতীয় নৃত্যশিল্পী, হতাশ হয়ে দেশে ফিরলেন
সমরজিৎ রায়ের ছেলে সুরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, ‘তিনি শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, একজন বাবাও ছিলেন। আমার বাবা আমার বন্ধু ছিলেন। আমার প্রতিটি সমস্যার সমাধান ছিলেন বাবা। আমার বাবা শেষবারের মতো আমার জন্য দোয়াও করেছিলেন।’
রায়ের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার আগে তার প্রায় ছয় দশকের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সহকর্মী, ছাত্র এবং বন্ধুদের শ্রদ্ধা জানাতে সকাল ১০টার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও চারুকলা অনুষদের ডিন, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অধ্যাপক সমরজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যান।
ঢাবি উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অধ্যাপক সমরজিৎ রায়ের মৃত্যুতে জাতি একজন বরেণ্য শিল্পীকে হারালো। তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত শিল্পী।’
আরও পড়ুন: চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী মারা গেছেন
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক সমরজিৎ রায় তার পুরো জীবন এই অনুষদেই কাটিয়েছেন বলেই আমরা তাকে অনুষদ থেকে অবসর নেয়ার পর সম্মানসূচক অধ্যাপক হিসেবে পেতে পেরেছি। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। তার মৃত্যুতে শুধু চারুকলা অনুষদ নয়, দেশ একটি অপূরণীয় সম্পদ হারালো।’
সমরজিৎ রায় চৌধুরী ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে গ্রাফিক ডিজাইন ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তারপরে একজন অনুষদ সদস্য হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
আরও পড়ুন: চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
সাংস্কৃতিকভাবে টেকসই বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, সংস্কৃতিকভাবে টেকসই বাংলাদেশ অর্জন করতে তারা কাজ করছে এবং তারা ইউনেস্কো ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতো বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে কাজ করছে।
স্কটিশ পার্লামেন্টে সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী খালিদ বলেন, আমরা সত্যিই বিশ্বাস করি সাংস্কৃতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণে এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আমাদের কাজের হৃদপিণ্ড।
এডিনবার্গের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্কটিশ পার্লামেন্টে ২৬-২৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি সম্মেলনে ব্রিট্রিশ কাউন্সিল অংশগ্রহণ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ‘হোল অব সোসাইটি’ অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন ‘আমরা বিশ্বাস করি একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অগ্রসর ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের এই চেষ্টায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না।’
এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য সাংস্কৃতিক নীতি এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবকে অনুপ্রাণিত করার জন্য একটি অনন্য এবং বৈশ্বিক সুযোগ দেয়া।
আয়োজনটিতে আমাদের সময়ের সংস্কৃতি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের প্রধান উদ্বেগের ধারণা উঠে আসে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল, এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল, স্কটিশ পার্লামেন্ট এবং স্কটিশ ও যুক্তরাজ্য সরকারসহ ইভেন্টটির আয়োজকরা সারা বিশ্ব থেকে আসা শিল্পী, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এই ৬ষ্ঠ এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি সম্মেলনে স্বাগত জানিয়েছে।
সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সাংস্কৃতিক বিনিময় বিভাগ) কাজী নুরুল ইসলাম ও ব্রিট্রিশ কাউন্সিলের হেড অব আর্টস নাহিন ইদ্রিসসহ একটি প্রতিনিধি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন খালিদ।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কৃতির অবস্থান এবং অনুশীলনের উদাহরণগুলি ভাগ করে নেন।
এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলন ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্যার জোনাথন মিলস বলেন, স্কটিশ পার্লামেন্টে এডিনবার্গের বিশ্ব-বিখ্যাত উৎসবের সময় একটি ব্যক্তিগত সাংস্কৃতিক সম্মেলনে ফিরতে পেরে আমরা পুলকিত। কারণ তারা তাদের ৭৫তম বছর উদযাপন করছে।
মিলস বলেন, সম্মেলনের অংশীদাররা –দ্যা ব্রিটিশ কাউন্সিল, এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল, স্কটিশ পার্লামেন্ট এবং স্কটিশ ও যুক্তরাজ্য সরকার এমনকি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও জীবন ও সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য সংস্কৃতির শক্তির পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন করার জন্য আবার একত্রিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে: কে এম খালিদ
‘হাওয়া’ ও ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে শিল্পীদের প্রতিবাদ
একদিকে বাংলা সিনেমায় যেমন সুদিন চলছে,অন্যদিকে সিনেমাকে মামলার বেড়াজালে আটকে দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেই ‘হাওয়া’ সিনেমাটি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মোস্তফার সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’কে সেন্সস বোর্ডে আটকে আছে গত তিন বছর।
সিনেমার এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছছেন অনেক তারকা। এমনকি অভিনয় শিল্পী ‘হোক প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি লিখিত প্রতিবাদ করেছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে চিলচ্চিত্রের শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের ‘গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’- শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা ও শিল্পী কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা উপস্থাপনা করেন পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
এই সংবাদ সম্মেলনের আরও উপস্থিত ছিলেন- মোরশেদুল ইসলাম, মেজবাউর রহমান সুমন, কামার আহমেদ সাইমন, অমিতাভ রেজা, পিপলু আর খান, নুরুল আলম আতিক, তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, শম্পা রেজা, আফসানা মিমি, জয়া আহসান, আফরান নিশো, ইরেশ যাকের, আজমেরী হক বাঁধন ছাড়াও অনেকে।
চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, “বাংলা চলচ্চিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এমন সময় ‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হলো। ‘শনিবার বিকেলে’ মুক্তি পাচ্ছে না দুই বছর ধরে। তরুণরা নতুন সহস্রাব্দের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে।”
আরও পড়ুন: হাওয়ার প্রদর্শনী বন্ধে আইনি নোটিশ
সংবাদ সম্মেলনে জয়া আহসান বলেন, “প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে আমার নিজের একটা খাঁটি আবেগ আছে। সেই জায়গা থেকে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে আমি আরও বেশি কথা বলবো। তাই বলে কি চলচ্চিত্র বন্ধ করতে হবে! বন উজাড় হচ্ছে, দিনের পর দিন পশুপাখির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে এগুলোর বেলায় বনবিভাগ বা প্রশাসন কোথায়! চলচ্চিত্রের বেলায় প্রশাসনের এই চাপ কেনো? চলচ্চিত্রের উপর অদৃশ্য চাপ বন্ধ করতে হবে। সব চরিত্র যদি নিয়ম মেনে চলতে থাকে তাহলে তো কোনো ফিকশনই তৈরি হবে না। আমরা কি তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব না।”
দাবি আদায়ে প্রাথমিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে।
জানানো হয়, আগামী সেপ্টেম্বরে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে স্মারকলিপি দেয়া হবে।
পাঁচ দফা দাবি হলো-
১. ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. ‘শনিবার বিকেলে’ চলচ্চিত্র কেন সেন্সর ছাড়পত্র পেল না তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।
৩. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে ও প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৪. প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. চলচ্চিত্র বা কনটেন্টবিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (যেমন- খসড়া ওটিটি নীতিমালায় প্ল্যাটফর্মগুলোতে আলাদা কমিশন বোর্ড তৈরির প্রস্তাব আছে এ জাতীয় কোনো কর্তৃপক্ষের) সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ফিল্মমেকিংয়ের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তো আর নাই: ফারুকী
‘হাওয়া’ এপিঠ ওপিঠে এরফান মৃধা শিবলু
কণ্ঠশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় কি বাংলার মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন?
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ভারতের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নবগঠিত মন্ত্রীসভায় মন্ত্রিত্ব পেতে চলেছেন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করবেন।
শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন পর বৃহস্পতিবার মমতা ব্যানার্জি তার অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা পার্থ চ্যাটার্জিকে তার মন্ত্রিসভা থেকে এবং তার ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দলের সমস্ত পদ থেকে বরখাস্ত করেছেন।
পার্থ চ্যাটার্জি রাজ্য মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা, শিল্প পুনর্গঠন ও পরিষদীয় বিভাগের মন্ত্রী। এছাড়াও তিনি ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো ইউএনবিকে জানিয়েছে, ‘বাবুল সুপ্রিয় এবং আরও দুজন নতুন মুখকে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এমনকি কয়েকজন মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদও দেয়া হতে পারে।’
বাবুল সুপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফেডারেল মন্ত্রী হিসেবে বাদ পড়ার দুই মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
৫০ বছর বয়সী বাবুল সুপ্রিয় প্রায় আট বছর আগে ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দিয়ে তার রাজনীতির ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি বিজেপি সরকারের প্রথম মেয়াদে জুনিয়র নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি জুনিয়র পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ছিলেন।
বাবুল সুপ্রিয় নামে অধিক পরিচিত সুপ্রিয় বড়াল নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে একজন প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে বলিউডে পা রাখেন এবং তারপর থেকে অনেক ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি। তার সঙ্গীতজীবনে তিনি ১১টি ভারতীয় ভাষায় প্লেব্যাক করেছেন।
আরও পড়ুন: মন্ত্রীসভা থেকে বাদের পর দল থেকেও বহিষ্কার হলেন পার্থ চ্যাটার্জি
ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’র শপথ গ্রহণ
শিল্পীদের শিডিউল হাতে থাকাই যেন নির্মাতাদের যোগ্যতা: সাগর জাহান
ক্যারিয়ারের সতেরো বছর টিভি নাটকে সময় দিয়েছেন নির্মাতা সাগর জাহান। যেখানে তার কাজের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন বহুবার। এই ঈদে প্রচার তার একটি সাত পর্বের ধারাবাহিক ও দুটি একক নাটক।
সাত পর্বের ধারাবাহিক ‘উড়াল দেব আকাশে’। এতে অভিনয় করেছেন- মারজুক রাসেল, চাষী আলম, তানজিক প্রমুখ।
বাংলাভিশনের পর্দায় ঈদের আগের দিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে প্রচার হবে। একক নাটক দুটি হলো ‘হাঙর’ ও ‘ভাই ভাই’। বাংলা টিভির ঈদের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা ৬টায় প্রচারিত হবে ‘হাঙর’। এতে অভিনয় করেছেন- ফারহান আহমেদ জোভান, তানজিন তিশা ও পাভেল।
এছাড়া বাংলাভিশনের পর্দায় ঈদের চতুর্থ দিন রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রচারিত হবে ‘ভাই ভাই’। এতে অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল, চাষী আলম, পাভেল, ফারিয়া শাহরিন, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল ও অনেকে।
আরও পড়ুন: তাহসান-তিশা জুটির ওয়েবফিল্ম ‘মানি মেশিন’
সময়ের সঙ্গে কাজের সংখ্যা অনেকটা কমিয়েছেন সাগর জাহান। ইন্ডাস্ট্রির পাল্টে যাওয়াটা অনেক ইতিবাচকের পাশাপাশি অনেক নেতিবাচক বিষয় এর কারণ বলে জানান নির্মাতা।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘বাজেট নিয়ে একটা সমস্যা সবসময় ছিল, এখনও আছে। এছাড়া এখন শিল্পীদের নিয়ে যে কাড়াকাড়ি সেটা ভালো লাগে না। শিল্পীদের শিডিউল হাতে থাকাই যেন নির্মাতাদের যোগ্যতা! এমনটাই দাঁড়িয়েছে।’
নাটকের নির্মাতাদের অনেকেই এখন ব্যস্ত ওয়েবের কাজ নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে সাগর জাহান বলেন, ‘আমি সবসময় চেয়েছিলাম নাটকটা আঁকড়ে ধরে থাকতে। এখনও চাই। এতে হয়তো কাজের পরিমাণটা কমছে। তবে ওয়েবে কাজ শুরু করতে হচ্ছে। ঈদের পরে হয়তো এ নিয়ে পরিকল্পনা করব।’
আরও পড়ুন: এবার ঈদে আফরান নিশোর যে নাটকগুলো আসছে
৪ বছর পর ঈদে সালাউদ্দিন লাভলু ও মাসুম রেজার নাটক
শিল্পী সমিতির নির্বাচন শেষে ভোট গণনা চলছে
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বি-বার্ষিকী নির্বাচন বিএফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, এখন চলছে ভোট গণনার কার্যক্রম।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএফডিসি প্রাঙ্গণ তারকাদের মিলমেলায় পরিণত হয়। এবারে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ইলিয়াস কাঞ্চন—নিপুণ ও মিশা—জায়েদ প্যানেল। দুই প্যানেলে যোগ দিয়েছেন অনেক নতুন তারকা। ২১টি পদে লড়ছেন ৪৮ জন প্রার্থী। আর ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন।
অসচ্ছল শিল্পীদের প্রদত্ত অনুদানের শতকরা ৫ ভাগ প্রতিবন্ধীদের: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ অনুদান খাত হতে অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য যে অনুদান প্রদান করা হয়, তার শতকরা পাঁচ ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।
শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের যৌথ আয়োজনে ও 'সুন্দরম' প্রতিবন্ধী নাট্যপ্রয়াসের সহযোগিতায় 'প্রতিবন্ধী নাট্যকর্মশালার সমাপনী' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথি বলেন,‘প্রতিবন্ধী শিল্পীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মশালায় অভিনয় ও পারফরম্যান্স দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ ও অভিভূত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যে সত্যিই মেধাবী ও সৃজনশীল এটি তার স্বাক্ষর বহন করে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও সঠিক বিকাশে বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ও রোল মডেলের ভূমিকা পালন করছেন।
আরও পড়ুন: পরীক্ষামূলকভাবে ১০০টি সেলুন লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল চাইলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রোগ্রামে অংশীদার হতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও ব্রিটিশ কাউন্সিল, ঢাকার হেড অভ্ আর্টস নাহিন ইদ্রিস।এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের ক্রিয়েটিভ ডাইরেক্টর সামিউন জাহান দোলা।
আরও পড়ুন: মমেক হাসপাতালে ১৩৪২ সিলিন্ডার অক্সিজেন দিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও ভারতের নোম্যান্সল্যান্ডে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল উদ্বোধন
বাংলাদেশ ও ভারতের বেনাপোল- পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় উদ্বোধন করা হয়েছে নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল। দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য শুক্রবার দুপুরে টার্মিনালটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মোহাম্মদ চৌধুরী ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যনন্দ রায়।
ভারতের ল্যান্ডপোর্ট চেয়ারম্যান আদিত্যমিশ্র চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, পুলিশের নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান, ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান, বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, ও বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন।
আরও পড়ুন: গোমতী নদীপথে বাণিজ্য ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধি করবে: হাইকমিশনার
এক হাজার ৩০৫ একর জমির ওপর নির্মিত সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এই নতুন টার্মিনালে ৩২টি প্যাসেঞ্জার কাউন্টার, চারটি কাস্টম কাউন্টার ও আটটি সিকিউরিটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব রক্ত দিয়ে লেখা, এ সম্পর্ক মুছে ফেলা যাবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত এক লাখ বাংলাদেশিকে আশ্রয় দিয়ে রক্তের সম্পর্ক তৈরি করেছে। বাংলাদেশ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে ভারতকে।
নিত্যনন্দ রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আজ জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে পেট্রাপোলে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল উদ্বোধন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিমানবন্দরের মতো সুবিধা ভোগ করবে যাত্রীরা। বাংলাদেশের সাথে আরও নতুন নতুন বন্দর স্থাপন করে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন: ভারতের উপহার লাইফসাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স’ বেনাপোল বন্দরে
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে সন্মানিত করা হয়। পরে কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার ওপর নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮ জন শিল্পী কলাকুশলীর জন্য ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তা বিতরণ তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার ও একজন সহ সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই তালিকা তৈরি করা হয়।
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজ পরিবারের ১৪ জনসহ অন্তত ৫০ জনের নাম দিয়ে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা কেউ দুঃস্থও নন, শিল্পীও নন।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা: আর্থিক প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
একইভাবে শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায়ের বিরুদ্ধে একই পরিবারের ৬ জনের নাম দিয়ে ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়াসহ শিল্প সংস্কৃতির সাথে নূন্যতম সংযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের নাম দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি জেলা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ও ২টি বাড়িসহ অন্তত ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীর প্রণোদনা। এর ফলে অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী সহায়তা পাননি। এতে সরকারের এ মহতি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জেলার শিল্পী সমাজের মধ্যে।
আরও পড়ুন: প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে সিরিজ মতবিনিময় সভা করবে অর্থ বিভাগ
লিখিত এক অভিযোগে জেলার কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী ওই তালিকায় শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে নূন্যতম যোগাযোগ না থাকা একাধিক ব্যক্তির নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন।
তারা জানান, তালিকার ২২৯ নং সিরিয়ালে পবিত্র কুমার চক্রবর্তী নামে স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানের সেলসম্যানকে নাট্যশিল্পী হিসেবে দেখানো হলেও তিনি জীবনে কোনদিন স্টেজে উঠেছেন বলে শহরের কেউই জানেন না। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি।
আরও পড়ুন: সময়মতো প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে: প্রধানমন্ত্রী
একইভাবে ২৩০নং সিরিয়ালের ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বিশ্বজিতের ভাইপো, ২৫৫ সিরিয়ালের বরুন চক্রবর্তী বড়ভাই, ২৫৬ ইতি চক্রবর্তী ছোটবোন, ২৬৪ প্রনয় চক্রবর্তী ভাগ্নে, ২৬৫ প্রিয়াংকা চক্রবর্তী ভাগ্নি, ২৬৬ গোপাল চক্রবর্তী চাচাতো ভাই, ২৬৭ বন্দনা চক্রবর্তী ভাইয়ের বৌ, ২৬৮ প্রদীপ চক্রবর্তী চাচাতো ভাই এর ছেলে, ২৭০ কার্তীক চক্রবর্তী চাচাতো ভাই এর ছেলে, ২৭১ সুদীপ্ত চক্রবর্তী ভাতিজা, ২৭২ আনন্দ চক্রবর্তী ভগ্নিপতি, ২৭৪ বিথি চক্রবর্তী ছোট বোন ও ২৫৭ ছবি রানী ভট্টাচার্য ভাইয়ের স্ত্রী। এভাবে শিল্পীদের নাম দিয়ে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও তার সঙ্গীরা।
শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও শহরের সাতদোহা পাড়া এলাকার একটি পরিবারের ৬ নারীর নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা হলেন সন্ধ্যা রানী ঘোষ (৪১৯), প্রিয়া ঘোষ (৪৪), রিয়া ঘোষ (৮৫), ডলি ঘোষ (১০৪), আপন ঘোষ (১০৫) ও লিলি ঘোষ (১৭২)। এদের কারোই শিল্প সংস্কৃতির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ তাদের প্রত্যেকের নামে ১০ হাজার টাকা করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। শহরের কেশব মোড়ের বাসিন্দা বর্তমানে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় অবস্থানরত সিগ্ধা পাল নামে এক সাবেক নৃত্য শিল্পী ও তার মায়ের নামে ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাস্টমস বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তির স্ত্রী সিগ্ধা পালের মাগুরা শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ১টি বাড়ি ও একটি বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে। যার মূল্যমান কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। স্বজনপ্রীতি করে তাকে ও তার মা জোসনা পালকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহ্বান করা হয় তখন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও অজিত রায় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি অসাধুচক্র একত্রে বসে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি। অথবা তাদের আবেদন ফেলে দেয়া হয়েছে। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই বঞ্চিত হলেও মুখচেনা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, অচলা মন্ডল নামে এক নারীর নাম তালিকায় থাকলেও তালিকায় দেয়া ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে ওই নারীর স্থলে সাতক্ষীরা থেকে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরে।
অন্যদিকে শহরের তাতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী কবরী ঘোষের নাম থাকলেও তাকে ফোন করলে তিনি জানান, তিনি কোনো টাকা বা চেক পাননি। অথচ ইতোমধ্যে চেক বিতরণ করা হয়ে গেছে মর্মে জানিয়েছেন শিল্পকলা সংশ্লিষ্টরা।
মাগুরার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সাহিত্যিক এম এ হাকিম, লোক সাংস্কৃতি সংগঠক এ.টি.এম. আনিসুর রহমান, সাহিত্য সংগঠক অ্যাডভোকেট কাজী মিহির, সাহিত্যিক ও গীতিকবি লিটন ঘোষ জয়, কবি রহমান তৈয়বসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে জানান, শিল্প সংস্কৃতিক সঙ্গে যারা জড়িত তারা সাধারণত উদার মানবিক হবেন, এমনটিই ভাবা হয়ে থাকে। প্রকৃত শিল্পীরা যেখানে করোনার কারণে চরম অর্থ সংকটে অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে আছেন। সেখানে শিল্পীদের জন্য দেয়া টাকা নয়-ছয় করে খরচ করা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ব্যানারে একটি অসাধু চক্র যেভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তাতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। এরা শিল্প সংস্কৃতির চরম শত্রু।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরা যদি পাওয়ার উপযোগী হন তাহলে তারা টাকা পেতেই পারেন। আমি কোনো স্বজন প্রীতি বা দুর্নীতি করিনি।’
এ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, শিল্পকলা একাডেমী থেকে নামের তালিকা চেয়ে পাঠানোর পর দ্রুত তালিকা পাঠানো হয়েছে। ফলে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকতেই পারে। তালিকার সবাইকে টাকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে একটি তালিকায় একই পরিবারের ১৪ জনের নাম থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, কয়েকজন শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তালিকা প্রস্তুত করতে। ভবিষ্যতে প্রকৃত শিল্পীরা যেন সকল ধরনের সহায়তা পান সেজন্য প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।