নদী ভাঙন
অসময়ে ভাঙন, গড়াইয়ের পাড়জুড়ে আতঙ্ক
তোমারে চাচা চলে গেছে (মারা গেছেন) সেই মেলা দিন। এহেনে (এখানে) ৩০ বছর ধরে বাস করতেছি। তয় আগে কোনোদিন এ্যাম্বা (এভাবে) ভাঙা দেখিনি। কিছুক্ষণ পরপরই পাড় ভাঙে ঢপ্পাস করে পড়ছে। কখন জানি ঘরখানায় ভাঙে যায়—এই ভয়ে আছি।
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় তেবাড়িয়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর স্ত্রী মদিনা খাতুন (৬২)। তার ভাষ্য, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ বছর চর জেগেছে নদীর মাঝে। কিনারা দিয়ে স্রোত গড়াচ্ছে, আর পাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গড়াই নদীর কূলঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভা ও উপজেলা শহর অবস্থিত। ১৮৬৯ সালে গঠিত প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়ার শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রাকুণ্ডা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নেই। এরই মধ্যে সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ফসলসহ প্রায় ৩০ বিঘা কৃষিজমি ও নদীপাড় ভেঙে চলে গেছে নদীগর্ভে।
ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে হুমকিতে পড়েছে আরও প্রায় ৫০ বিঘা কৃষিজমি এবং অন্তত ৩০০টি পরিবার।
২ ঘণ্টা আগে
উপকূলে অশনিসংকেত: কয়রায় অসময়েও ভাঙছে বাঁধ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নদী ভাঙনে প্রতি বছর প্লাবিত হওয়া খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে কয়রার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার-ভাটার তীব্রতা এবং নদীর গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা উপকূলীয় এই অঞ্চলের প্লাবন-ঝুঁকিও বাড়ছে।
এদিকে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন আশার আলো জাগালেও কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্পে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার পরও অবৈধভাবে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে নদী চরের সবুজ বনায়ন। যার ফলে বাঁধের স্থায়িত্ব কমছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, গেল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দোশহালিয়া থেকে হোগলার মধ্যকার একটি অংশের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করেন। এ ছাড়া নদীতে পানির চাপ ও কোনো প্রকার ঝড়ো বাতাস ছাড়াই গত ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বাঁধটির বিশাল অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে প্লাবিত হয় সংলগ্ন এলাকা। পরের দিন ভাটার সময় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হলেও তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার পর থেকেই নদীর পাড়ের মাটি সরে যাওয়ার অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, বাঁধের বড় বড় খণ্ড নদীতে ধসে পড়ে ২০০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের স্থায়ী সংস্কার এবং নদী খননে অবহেলার কারণে এই অঞ্চলে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ধানচর, শামুকপোতা, কুতুবেরচর, গাবতলা ও খোলপেটুয়া পাড়ের বেশ কয়েকটি এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাটিয়াভাঙ্গার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ সেদিন রাতের ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনে দিয়ে বাঁধটা নদীতে চইলে গেল। মনে হচ্ছিল, আজই বুঝি সব শেষ; বাড়িঘর সবকিছুই বুঝি তলাই যাবেনে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ‘প্রতিদিনই নদী এগিয়ে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে জরার্জীণ থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
মাটিয়াভাঙ্গা বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুই বছর যাবৎ বিভিন্ন প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও তাতে রয়েছে চরম ধীরগতি। মাটিয়াডাঙ্গার ওই অংশটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় থাকলেও সংস্কারে গুরুত্ব দেননি ঠিকাদার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৪/১ ও ১৩–১৪/২) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চরবনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙনকবলিত এলাকাটিও এই প্রকল্পের অংশ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘সুন্দরবনঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনার পাশে থাকা এ বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তার ভাষ্যে, ‘অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। তাই গতরাতে আগের ফাটলটা হঠাৎ বড় রূপ নিয়ে ধসে গেছে।’
রাতে গ্রামবাসী ও পাউবো মিলে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নদীর ভাঙন ঠেকাতে রিং বাঁধ কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, রিং বাঁধের স্থায়িত্ব খুব স্বল্প। যেকোনো মূহুর্তে সেটি ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত যদি মূল বাঁধ সংস্কার করা না হয়, তাহলে ধ্বসের পরিধি আরও বাড়তে পারে।
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেখানে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, তার আশপাশ থেকেই বালু উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া নদীর চর থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে নদীর চরের গাছ কেটে বনায়ন নষ্ট করা হচ্ছে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাগরিক সমাজের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালের ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রত্যেক বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো না কোনো এলাকা ভেঙে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এলাকা প্লাবিত হাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেও শীত মৌসুমে প্লাবিত হলো। শীতকালে এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখিনি।
‘আমাদের প্রাণের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে সরকার বরাদ্দ দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু বরাদ্দের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিষয়টি কি শুধুই প্রকৃতির তাণ্ডব, নাকি বাঁধের কাঠামোগত দুর্বলতাও—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর মাটিয়াডাঙ্গা এলাকার মেগা প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে পাউবোর সাতক্ষীরা–২ বিভাগ। ওই বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, ‘কাজ চলমান অবস্থায়ই বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি। সকাল থেকে জোরেসোরে আমাদের বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’
১২ দিন আগে
ফেনীতে নদীর করাল গ্রাসে বিদ্যালয় ভবন
ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার কাটাখালী নদীর ভাঙনে মাতুভূঞা ইউনিয়নের করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত ও নদীর তীব্র স্রোতে ধুয়ে গেছে ভবনের নিচের মাটি। এতে ভবনের উত্তর পাশের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনটি।
এমনকি ভাঙন অব্যাহত থাকায় যেকোনো সময় পুরো ভবনটি নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের অংশ ভেঙে নদীর দিকে ঝুলছে এবং ভবনের পাশে লাগোয়া শহীদ মিনারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রহিম উল্যাহ চৌধুরীর দুই ছেলে তারেক মাহতাব রহিম ও জাবেদ সালাম রহিম তাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২০১৬ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করেন। ভবনটিতে সপ্তম শ্রেণির পাঠদান ছাড়াও নবম ও দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান, বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও ছাত্রীদের জন্য নামাজ স্থান রয়েছে।
আরও পড়ুন: কাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপুরে নদী তীর রক্ষা বাঁধে ধস
দশম শ্রেণির ছাত্র আদনান বিন আলম বলে, ওই ভবনে আমাদের দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান চলে। কখন পুরো ভবন নদীতে তলিয়ে যায়, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
১১৭ দিন আগে
অবৈধ ড্রেজিং চলছেই, ভাঙন ঝুঁকিতে পদ্মাপাড়ের ৭ গ্রাম
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত ৭টি গ্রামের বাসিন্দারা।
নদী যেভাবে ভাঙছে, তাতে ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামগুলোর অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে; আর ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি বাঁধ নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে পদ্মা পাড়ের এসব গ্রামের মানুষের।
জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের টিলারচর, ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী, সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী, হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরাসহ অন্তত সাতটি গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সবুল্যা শিকদার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরা খালের মাথা থেকে গাজিরটেক ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এবং উপজেলা সদরের সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সুপারির বাগান এলাকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এসব এলাকা-সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। যার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা না হলে নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না।
আব্দুর রশিদ নামের ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বলেন, এইখানে নদী থেকে গত সরকারের সময় যেভাবে মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু কাটা হয়েছে, এখন লোক পরিবর্তন হয়ে সেই একইভাবে চলছে বালু কাটা। সরকার বদলালেও এই অবৈধ কাজ থেমে নেই। তাদের কাছে (অবৈধ বালু উত্তেলনকারী) আমরা নদী পাড়ের মানুষ অসহায়।
পাউবোর আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চরভদ্রাসন উপজেলার জাকেরেরশুরা বাজারে প্রস্তাবিত নদীর পাড় রক্ষার প্রকল্পের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। পরে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা।
ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রকল্পের গুরুত্বের বিষয়ে স্থানীয় জনমত ও নদীপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। প্রকল্পটি হওয়া জরুরি, তবে তার আগে দরকার বালু লুটেরাদের তাড়ানো।’
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘সোয়া তিন কিলোমিটার নদীতীর অরক্ষিত অবস্থায় আছে এবং এটাকে প্রোটেকশনের (নিরাপত্তা) মধ্যে নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এছাড়া বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে যে, প্রকল্পের সুবিধাভোগী এলাকাবাসীর মতামত নিতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গণশুনানি করা হয়েছে এবং মতামত অনুযায়ী দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
ফরিদপুর পাউবো সূত্রে জানা যায়, প্রায় সোয়া ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪’শ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে চলতি বছরে কাজ শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা শেষ হবে। আর এতে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদীপাড়ের হাজারো মানুষ।
২৯৬ দিন আগে
নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে: পানিসম্পদ উপদেষ্টা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে। ধানী জমি সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সমস্যাগুলো সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালীর প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন্যা ও ভাঙন নিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সাইবার সিকিউরিটি এখন বর্ডার সিকিউরিটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ: তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা
রিজওয়ানা হাসান জানান, বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা লাঘবে কাজ চলছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের সহায়তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভাঙন ও লোনাপানি ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।
এর আগে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কোম্পানিগঞ্জের মুছাপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেগুলেটর ও জনতার বাজারের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এছাড়া মুছাপুর রেগুলেটরটি কেন এত দ্রুত ভেঙে পড়ল, তা তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট অফিসের দুর্নাম দূর করতে কর্মকর্তাদের প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
নিরাপদ খাদ্য পেতে প্রাণীর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
৪৫৪ দিন আগে
রূপসায় নদী ভাঙন, ৫২৫ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, নৈহাটি, নিহালপুর, কিসমত খুলনাসহ কয়কটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক চর শ্রীরামপুর বেড়িবাঁধ নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় দুশ্চিন্তা ও শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
চর শ্রীরামপুর বিলে প্রায় ৫২৫ হেক্টর জমি আছে। পাঁচ শতাধিক কৃষক এ সকল জমি আবাদ করে নানারকম ফসল ফলিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করে থাকে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে
এই বিলের যে জমি, জানা যায় তা অত্যন্ত উর্বর। এ সকল জমিতে বছরে তিনবার ফসল হয়। এ অঞ্চলের কৃষকরা সুখে শান্তিতে জমিগুলো আবাদ করে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল ও ধান চাষাবাদ করে হাসিমুখে দিন কাটাচ্ছিল।
কিন্তু তিন বছর আগে রূপসা নদীর ভাঙনে শ্রীরামপুর পালপাড়া থেকে ইদ্রিস জমাদ্দারের ইটের ভাটা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে পড়ে, ফলে ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়ে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেও কিছু জটিলতার কারণে বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ ও কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীরামপুর চরে জমি আছে এমন উপজেলার কৃষক এএইচএম কামাল বলেন, প্রজন্ম ধরে আমরা এই জমি চাষ করে আসছি। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ফসল রপ্তানি করা হয়। তিন বছর আগে শুরু হওয়া নদী ভাঙনের কারণে আমরা চরম উদ্বেগের মধ্যে আছি।
তিনি আরও বলেন, নদীর পানি ফসলি জমিতে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করতে পারে বলে আমরা সব সময় আশঙ্কা করি। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীর কাছে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এলাকার কৃষকদের বাঁচানোর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুল বলেন, এই এলাকার কৃষকদের জীবনে এই বাঁধের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ভাঙনের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফসল জমি ধ্বংস হবে এবং খাদ্যের অভাব হবে। তাই এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা খুবই জরুরি বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
৮৩৯ দিন আগে
দাকোপের ঝুলন্ত পাড়ায় ৪০০ পরিবারের মানবেতর জীবন!
চারিদিকে শুধু কাদা আর কাদা। নদী ভাঙনের পর জেগে ওঠে কর্দমাক্ত চরের মাঝে বাঁশের খুঁটি আর বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে টংঘর। এই টংঘরের কারণে এই পাড়ার নাম হয়েছে ঝুলন্ত পাড়া।
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী এলাকার এ ঝুলন্ত পাড়ায় প্রায় চারশ’ পরিবারের গৃহহীন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
সুতারখালী ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে কালবগী ঝুলন্ত পাড়ায় সহায় সম্বলহীন অসহায় মানুষগুলো খরস্রোতা শিবসা নদীর তীরে টংঘর বেঁধে নিয়ে জীবন যাপন করে আসছে। তাদের নেই কোন যাতায়াতের রাস্তা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা করার সুব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এখানে বসবাসকারী মানুষ নদী ও জঙ্গলে মাছ, কাকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
কথা হয় ৮ নং ওয়ার্ড এ বসবাসকারী আবদুর রউফ সরদার (৬০)-এর সঙ্গে।
আরও পড়ুন: দাকোপে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে নদী-খাল খননের দাবি
তিনি বলেন, আমার বাব দাদারা এখানে বসবাস করত। তখন আমি আমার বাবার সঙ্গে জমিতে ধান রোপন করতে গেছি। এখন তা শুধুই স্মৃতি। শিবসা নদীর খরস্রোতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই জমি। এ পর্যন্ত ১০/১২ বার ভাঙনের কারণে ঘর সরাতে হয়েছে। এখন আর জায়গায় জমি কিছুই নেই।
বিধবা সকিনা বেগম (৫৫) বলেন, পাগল ছেলেকে নিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তবে জায়গা জমি না থাকার কারণে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য দাবি করছি।
৯ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য নিমাই রায় বলেন, আমার ওয়ার্ডে বেশকিছু মানুষের জায়গা জমি আছে। যাহা ৩২ নং পোল্ডারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চায়না কোম্পানি তাদেরকে বেড়ি বাঁধের বাইরে রেখে রাস্তা করার জন্য প্রায় ৪০০ বিঘার ওপরে জমিতে ধান রোপন করতে পারছে না।
শিবসা নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন হাবুডুবু খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দাকোপে ফসলি জমি ৫ বছরে কমেছে দেড় হাজার হেক্টর
বাব-দাদার ভিটা বাড়ি কিছুই নেই। জমি থাকতেও ফসল উৎপাদন করতে পারছে না তারা।
এছাড়াও নদী ভাঙনের কারণে ওয়ার্ডে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে নৌকায় চড়ে। সরকারি স্কুল, মন্দির, মসজিদ, ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
এলাকার মানুষ কোন মতে টংঘর বেঁধে ছেলে সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
তিনি আরও বলেন, ঝুলন্ত পাড়ায় বসবাসকারী মানুষের জন্য মৌলিক অধিকারের কোনটাই সঠিক নেই। এলাকায় কোন মানুষ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে নিয়ে যেতে হয় প্রায়ই ৩০ কিলোমিটার দূরে দাকোপ হাসপাতালে।
তবে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে এলাকার অসহায় ছিন্নমূল ভুক্তভোগীরা।
আরও পড়ুন: দাকোপে বাঁধ ভাঙা পানিতে আমন হারানোর শঙ্কায় কৃষকরা
১০৯৮ দিন আগে
পাইকগাছায় ফের নদী ভাঙন
কপোতাক্ষ নদের পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফের ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলীর মালোপাড়া, কপিলমুনির আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, সোনাতনকাটি, মাহমুদকাটি, গোলাবাটি, কাশিমনগরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ হেক্টর জমির ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তা, কবরস্থান, ফসলি জমির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলে পল্লীর বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পেশাবদল করে অন্যত্র বসবাস করছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে কাশিমনগর হাট-বাজার, গোলাবাটি আশ্রয়ণ প্রকল্প, মাহমুদকাটি ও রামনাথপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় সেখানকার ভূমি ধ্বসে বিলীন হতে পারে নদী গর্ভে।
এদিকে কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙনের খবরে উপজেলা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যসহকারী মো. আবু তাহের গাজী মাহমুদ কাটি, গোলাবাটি ও কাশিমনগর বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জরুরি ভিত্তিতে রিংবাঁধের জন্য মাহমুদকাটির ৩৭৫ মিটার, গোলাবাটির ৩০০ ও কাশিমনগর বাজারসহ জেলেপল্লীর ২০০ মিটার এলাকা চিহ্নিত করেন। এসময় ভাঙনরোধে বিষয়টি পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও জানান।
স্থানীয়রা জানান, কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙনে উপজেলার রাড়ুলী জেলে পল্লী, আগড়ঘাটা, রামনাথপুরসহ আশপাশের কয়েকশ হেক্টর এলাকায় বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর সর্বশেষ কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙন ও তীব্র স্রোতের মুখে মাহমুদকাটি, গোলাবাটি, কাশিমনগর জেলেপাড়াসহ স্থানীয় কাশিমনগর বাজার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনের কবলে যেকোনো সময় এলাকাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে বলেও জানান ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: পাইকগাছায় ভেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
জানা গেছে, গত প্রায় ৩ যুগ ধরে কপোতাক্ষের এসব এলাকায় কখনও করাল গ্রাস আবার কখনও নাব্যতা হ্রাস বিদ্যমান। নাব্যতা হ্রাসের কবলে কপোতাক্ষ নিশ্চিহ্ন হতে থকলে আন্দোলনের মুখে সরকার কপোতাক্ষ খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে ফের স্রোতস্বিনী করে তোলা হয়। তবে কোথাও কোথাও পরিকল্পনাহীনতায় বাঁক (মোড়) সরলীকরণ না হওয়ায় বর্তমানে তার বিপরীত পাশে ভয়াবহ ভাঙন ও বাঁক এলাকায় ব্যাপকহারে পলি ভরাট শুরু হয়েছে।
কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, ইতোপূর্বে তারা স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগড়ঘাটা এলাকায় ভাঙনরোধে বেশ কিছু করলেও তা ভাঙন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নয়। বিষয়টি তারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের পাইকগাছা উপজেলার ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে বাঁধ বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তা নদী ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের মানুষ
১২১১ দিন আগে
তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙনের মুখে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গেল সপ্তাহে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে কেউ কেউ রাস্তার পাশে কিংবা বাঁধের ওপর মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙনের কবলে রয়েছে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীটি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে দেশেটির সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয় এবং বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। তবে বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লালমনিরহাট।
আরও পড়ুন: অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
জন্মলগ্ন থেকে তিস্তা নদী খনন না করায় পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নদী ভাঙনও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রতি বছরই নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। ফলে লালমনিরহাটে বিস্তৃর্ণ জমি বালুময় চরাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খামারটারী ও পূর্ব কালমাটি গ্রামের প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। এছাড়া নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা বিশিষ্ট ভবনসহ শতাধিক বসত বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।
১২৩২ দিন আগে
সন্ধ্যা ৬টার পর বালি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে: প্রতিমন্ত্রী
বালি উত্তোলনের বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, এটি শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আমরা বলেছি, বালি উত্তোলন কোনক্রমেই সন্ধ্যার পরে হবে না। বালি উত্তোলনের সময় হবে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যাতে দিনের বেলা বালি উঠানো হয়, তাহলে জনগণসহ সবাই দেখতে পারবে।
সোমবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ এ তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী ভাঙনের সবচেয়ে বড় কারণ বালি উত্তোলন। বালি উত্তোলনের ব্যবসাটি একটি রমরমা ব্যবসা। এখানে বিনিয়োগ খুবই কম, দেশীয় ছোট ছোট ট্রলার নিয়ে আসে। রাতের অন্ধকারে তারা বালি উঠায়।
আরও পড়ুন: মেঘনায় বালু তুলতে পারবেন না সেলিম চেয়ারম্যান
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বালুমহাল আছে, জেলা প্রশাসন এসব বালুমহাল ইজারা দেয়। জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা আছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বালুমহাল ঘোষণা করতে হবে। তারা সেখান থেকে বালি উঠাতে পারবে। তবে বালি উঠানো আমরা বন্ধ করতে পারবো না। বালি উঠানো বন্ধ করলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে, বালির দাম বেড়ে যাবে।'
জাহিদ ফারুক বলেন, 'আমি মনে করি বালি উত্তোলন যদি সঠিকভাবে হয়, তবে এই নদী ভাঙনের যে প্রবণতা আছে তা অনেকাংশে কমে যাবে। এখন ইঞ্জিনিয়াররা বলা শুরু করেছেন, এভাবে যদি বালু উত্তোলন করা হয় তবে যতই কাজ করি সব দোষ তো এসে আমাদের উপরে এসে পড়বে। তারাও একটা অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করছেন।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
আরও পড়ুন: সুগন্ধা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৬ জনের জরিমানা
১২৮৭ দিন আগে