পানিবন্দি
নওগাঁয় পানিবন্দি ২ হাজার পরিবার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে করে জেলার ৪টি উপজেলার ৭টি পয়েন্ট ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
এলাকাবাসীর থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান খেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এছাড়া রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দুইদিন থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
পানিবন্দি এসব মানুষদের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চাল, ডালসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বৃহষ্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্য কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহৃত থাকায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় এখনো ৭০০০ পরিবার পানিবন্দি
নওগাঁয় বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫০০ পরিবার পানিবন্দি
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের ৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে ১ হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত।
এরই মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পাড়ের মানুষ।
এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে আটকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নদের পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদের পাড়ের মানুষ।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মেরামতের একটানা কাজ করছে শ্রমিকেরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রশাসন।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার সকাল থেকে আত্রাই নদী পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার পর্যন্ত এ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে।
নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় এখনো ৭০০০ পরিবার পানিবন্দি
কক্সবাজারে ২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি
কুড়িগ্রামে বন্যায় এখনো ৭০০০ পরিবার পানিবন্দি
কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর পানি টানা সাতদিন বিপৎসীমার উপরে থাকার পর শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে সরেনি পানি। ফলে বিশুদ্ধ পানি আর রান্না করা খাবারের সংকটে রয়েছেন ৫ উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবারের পানিবন্দি মানুষজন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
চিলমারীর নয়ারহাট ও শাখাহাতির চরে তীব্র ভাঙনে দুই দিনে ৬০-৮০টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার লোকজন বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
জেলার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাটের নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, গোচারণ ভূমি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। তিস্তার পাড়ে নদী ভাঙন কিছুটা কমলেও, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বানভাসি এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, লোকজন বাঁচার তাগিদে ঘরের মধ্যে মাচা করে, কেউবা গোয়ালঘরে আবার কেউ কেউ নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন এসব বানভাসিরা।
রান্না করার চাল-সবজি থাকলেও রান্নার জ্বালানির অভাবে রান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কোন কোন জায়গায় ৪-৫ পরিবার একসঙ্গে রান্না করছে, যাতে এক চুলোতে একই জ্বালানি দিয়ে ভাত-তরকারি রান্না হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় তৃতীয় ধাপের বন্যায় ১৮ হাজার ৬২৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে ৭৯৮টি, ৫ হাজার ৬৮৩ হেক্টর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার, দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
টানা চার দিনের বৃষ্টিতে বান্দরবানে বন্যার পানি বেড়ে শহরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের বাইতুল ইজ্জত এলাকায় সড়কের উপর পানি উঠায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
এদিকে শহরের জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙ্গামাটির সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়াও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানছি সড়কে রবিবার থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জিপ-কার-মাইক্রেবাস শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন জানান।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শহরের বালাঘাটা, ফজর আলী পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পুলিশ লাইন এলাকা, ছাইগ্যা মহাজন পাড়া, হট্টিকালচার এলাকা, লালমিয়া চর এলাকা, বাস স্টেশন, হাফেজঘোনা, আর্মিপাড়া, কাশেম পাড়া, স্টেডিয়াম ও কেচিং পাড়া এলাকার জনগণ দুই দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় দুর্গতদের সহায়তায় ১৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। ২০ টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪৩টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমেন শর্মা জানান, এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে ৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে বান্দরবান শহরের বীর বাহাদুর নগর ও স্টেডিয়াম এলাকায় পাহাড় ধসে আহত দুইজনকে রবিবার রাতে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এদিকে নাইক্ষংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নে খাল পার হতে গিয়ে রবিবার বিকালে মেমপই ম্রো (৩০) নামে এক ব্যক্তি স্রোতে ভেসে গেছে। নিখোঁজ এ ব্যক্তির এখনো সন্ধান মিলেনি।
বন্যার সংবাদ সংগ্রহের জন্য একটি ওয়েব পেইজ খুলেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে ৭১৮টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের ফলে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বন্দি মানুষকে উদ্ধারে বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন এবং স্থানীয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণ নৌযান নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের ২ উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
বান্দরবানে কেএনএফ’র আইইডি বিস্ফোরণে সেনাসদস্য নিহত, আহত ১
বরিশালে এখনও পানিবন্দি হাজারো মানুষ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা তিনদিন ধরে পানি বন্দি রয়েছে। রবিবার রাত ৯টা থেকে সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে সোমবার থেকে বুধবার তিনদিন এসব এলাকার হাজারো বাসিন্দা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়াও, তাদের দৈনন্দিন আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্টের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব পানিবন্দি বাসিন্দাদের মাঝে বরিশাল জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি, মেরামত হচ্ছে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ
জানা গেছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে রবিবার রাত ৯টা থেকে সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে মৌসুমের রেকর্ড ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে নগরীর অর্ধশত এলাকার নিম্নাঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। ইতোমধ্যে সড়কের পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকার পানি শতভাগ অপসারণ না হওয়ায় পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের আসবাবপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পানিবন্দি থাকায় অনেকের ঘরেই জ্বলছে না উনুন। ফলে বাইরে থেকে খাবার কিনে বা সরকারি সহায়তার খাবারের আশায় বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।
নগরীর শ্রী-নাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন জানান, তিন দিন ধরে ঘরের মধ্যে পানি উঠে আছে। সড়কের পানি নেমে গেলেও ঘরের পানি নামেনি, তাই চরম কষ্টে আছি।
নগরীর বটতলার বাসিন্দা আবদুর রহমান মিয়া জানান, বৃষ্টি শুরুর কয়েক ঘণ্টায় বসতঘরে পানি উঠলেও এখনও নামেনি। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে, এভাবে জীবন চলে না।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, পানিবন্দিদের মাঝে প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি
কুড়িগ্রামে বন্যা: ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের হাহাকার
সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি, মেরামত হচ্ছে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাগেরহাটে দুই গ্রামের দুই হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকায় ভৈরব নদের বাঁধের একাংশ ভেঙে মাঝিডাঙ্গা ও পোলঘাট গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে।
বুধবার সকালে ভৈরব নদের পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, তিনদিন ধরে ওই দুটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি জমে আছে। অনেকের বাড়িতে চুলায় পানি জমে থাকায় রান্না বন্ধ রয়েছে।
বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে ভাঙা বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বাঁধ মেরামত করানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিত্রাং তাণ্ডবে ফরিদপুরে ২ বাসের ওপর ভেঙে পড়ল বিশাল বিলবোর্ড
এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি নামতে শুরু করেছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানি যাতে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বাঁধ মাটি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে।
শিগগিরই টেকসই ভাবে ওই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির হাওলাদার জানান, এক বছরে নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভৈরব নদের ওই একই এলাকায় তিনবার বাঁধ ভেঙে যায়। ওই ভাঙা স্থান থেকে পানি প্রবেশ করে মাঝিডাঙ্গা ও পোলঘাট গ্রামে। ওই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট, ফসল, ধানখেত, মৎস্যঘের ও বাড়িঘর ডুবে থাকে।
মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়েছে আসছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ জানান, জেলায় তাদের মোট ৩৪০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর ১০০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে যা, স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে ওই বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী পাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের জন্য তারা একটি প্রস্তাবনা উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তার সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রæত মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রয়োজনীয় সহয়তা দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুই হাজার ১৪০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২২টি সম্পূর্ণ এবং ১৮১৮টি আংশিক ক্ষতি হয়।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, জেলায় এক হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির ধানসহ ফসল পানিতে আক্রান্ত হয়। এরইমধ্যে অধিকাংশ জমির পানি নেমে গেছে। ফসলের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, জেলায় প্রায় এক হাজার মৎস্যঘের এবং ৮০০ পুকুর ডুবে চিংড়িসহ সাদা মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: সিত্রাং তাণ্ডবে কেরানীগঞ্জে দুটি ভবন হেলে পড়েছে
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সারাদেশে ২৬ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার
পাকিস্তানে ভারী বর্ষণে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার জনে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার দেশটির কর্মকর্তারা বন্যায় এই মৃতের সংখ্যার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার কথা জানায়।
দরিদ্র ইসলামিক জাতিটি মারাত্মক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়ার একদিন পরই নতুন করে মৃত্যুহার বাড়ল।
এই সংকট সরকারকে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য করেছে।
চরসদ্দার একজন উচ্চ কর্মকর্তা সানিয়া সাফি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ খায়বার পাখতুনে বন্যায় সোয়াত নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের প্রধান
গেটটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চরসদ্দা ও নওশেরা জেলা প্লাবিত হয়েছে।
দেশটির তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব বলেন, সিন্ধু, খায়বার পাখতুন ও পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের অনেক জেলায় সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো আক্রান্ত মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসীম ইফতেখার বলেন, শাহবাজ শরীফের সহযোগিতার আহ্বানের পর জাতিসংঘ বন্যার্তদের জন্য ১৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। যা এখন দাঁড়িয়েছে ৯৮২ জনে, আহত হয়েছেন আরও ১৪৫৬ জন।
প্রবল বর্ষণ পরবর্তী আকস্মিক বন্যায় সেতু, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় গোটা পাকিস্তানে ফল ও সবজি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ভুল’ করে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ: ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত
পাকিস্তানে মৌসুমী বৃষ্টিতে নিহত ৩৫৭, আহত ৪ শতাধিক
পাকিস্তানে নৌকাডুবিতে ১৯ নারীর মৃত্যু
কুড়িগ্রামে বন্যা: ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের হাহাকার
কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকার দুই লাখের বেশি পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়া বন্যার কারণে ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদরাসা ও একটি কলেজ বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
এদিকে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে বন্যার্তদের দুর্ভোগ তীব্র হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন ও পুরাতনগুলো মেরামতের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বন্যা: কিশোরগঞ্জে পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ সকল নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। মঙ্গলবার জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার ৬২ ইউনিয়নের ৪৭৩টি গ্রাম প্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৪৮ পরিবার।
বন্যার পানি ঢুকছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ইটনা, অষ্টগ্রাম, তাড়াইল, নিকলী, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর ও ভৈরব উপজেলার মানুষ।
অষ্টগ্রামের আটটি, মিঠামইনের সাতটি, করিমগঞ্জের আটটি, নিকলীর ছয়টি, কটিয়াদীর চারটি, বাজিতপুরের আটটি ও ভৈরবের পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল কলেজ, বসতবাড়ি, উপাসনালয় ও হাট-বাজার প্লাবিত। তিন উপজেলার ২০টি গ্রামে নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার নৌকা ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বসতবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে প্রবল বেগে পানি এখনও বাড়ছে। এ অবস্থায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। পানি না কমলে নতুন করে আরও ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে রয়েছে। দুর্গত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা প্লাবিত গ্রামে চাল বরাদ্দ করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন, বাড়ছে দুর্ভোগ
পাউবো সুত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১.৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বিশেষ করে মেঘনা নদীর পানি ভৈরবে বিপদ সীমার ৫.৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, হাওরের পানি কালনী ঘোড়াউত্রা হয়ে মেঘনা নদীতে ভৈরব সেতু দিয়ে নেমে যাবার কথা। মেঘনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিপরীতমুখী প্রচন্ড স্রোতের কারণে পানি নামতে না পেরে কিশোরগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বন্যার সার্বিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় বন্যায় এক হাজার ৫০৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৬২ ইউনিয়নে মোট ১৫৪ আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। মোট ১২ হাজার ৭৪৮ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৪৭ গবাদি পশুকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা আক্তার বলেন, উপজেলার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে।
বানভাসি মানুষের জন্য ইতোমধ্যে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান জানান, ইতোমধ্যে নতুন করে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি আরও বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ গোটা হাওরে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এভাবে বৃষ্টি হলে নিকলী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ হাওরের ওপর প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় এক ফুট বেড়েছে। বিশেষ করে কালনী-কুশিয়ারার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাওর অঞ্চল ঘুরে দেখেছি।
তিনি বলেন, অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সেখানকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। অবস্থা বুঝে এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
আকস্মিক বিপর্যয় সামলে উঠেছে শাবিপ্রবি
উজানের পাহাড়ি ঢল নামায় সিলেট অঞ্চলে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। এতে বিপাকে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের। চারদিকে পানিবন্দি হয়ে আবাসিক হলে আটকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এই আকস্মিক বিপর্যয়ে প্রথম থেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় সামলে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়(শাবিপ্রবি) প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় মেয়েদের দুই আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার পানির সংস্পর্শে থাকায় হলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় গত ১৬ জুন থেকে খাবার পানি সরবরাহ বন্ধসহ অন্যান্য দিকে সমস্যা তৈরি হয়। প্রথম দিন থেকে হল প্রাধ্যক্ষদের তৎপরতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
১৭ জুন সরেজমিনে আবাসিক দুই হলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল এবং ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিনা পারভীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এই সময় মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ছাত্রীদের উদ্ধারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এগিয়ে এসে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টারে আটকে পড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়াসহ খাবার, ওষুধ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও করে প্রক্টরিয়াল টিম। বন্যায় আটকে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের যারা হল ছাড়তে পারিনি তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকৃত হোস্টেল আমির ও ফজল কমপ্লেক্সে রাখা হয়।