মহাকাশযান
এবার সূর্য গবেষণায় মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করল ভারত
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের কাছে সফলভাবে অবতরণের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্য নিয়ে গবেষণা করতে প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে ভারত।
আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটি দক্ষিণ ভারতের শ্রীহরিকোটা স্পেস সেন্টার থেকে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যানের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে একটি পয়েন্ট থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য উড্ডয়ন করে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) বলেছে, মহাকাশযানটি সূর্যের করোনা, ক্রোমোস্ফিয়ার, ফটোস্ফিয়ার এবং সৌর বায়ু পর্যালোচনার জন্য ৭টি পেলোড (স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের যন্ত্র) দিয়ে সজ্জিত।
২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের মহাকাশযান অবতরণ করে। ফলে এই অংশে প্রথম অবতরণের স্বীকৃতি পেল দেশটি।
আরও পড়ুন: অবিচল নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত কী করতে পারে তার উজ্জ্বল প্রমাণ চন্দ্রযান-৩: ভারতীয় মন্ত্রিসভা
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চাঁদে ভারতীয় মহাকাশযান অবতরণের অঞ্চলে পানির মজুদ থাকতে পারে।
২০১৯ সালে চাঁদে অবতরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে এই মাইলফলক অর্জন করল ভারত।
ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী মনীশ পুরোহিত বলেন, ভারতের সফল চাঁদে অবতরণ এবং সূর্য অধ্যয়নের মিশন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসরোর ভাবমূর্তি পরিবর্তন করবে।
ইসরো বলেছে, আদিত্য-এল১ পৃথিবী-সূর্য সিস্টেমের এল১ পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হয়েছে। এই পয়েন্ট থেকে সূর্যের অবাধ গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে সৌর ক্রিয়াকলাপ এবং মহাকাশের আবহাওয়ার ওপর এগুলোর প্রভাব পর্যবেক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চন্দ্রযান-৩: ইসরো
টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় এক নিবন্ধে মহাকাশ বিজ্ঞানী বি আর গুরুপ্রসাদ বলেন, একবার নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে পারলে স্যাটেলাইটটি উচ্চতর সৌর ক্রিয়াকলাপ থেকে পৃথিবীতে পাওয়ার গ্রিড ধ্বংস করার সম্ভাবনা রাখা কণা ও বিকিরণের আক্রমণের নির্ভরযোগ্য পূর্বসতর্কতা সরবরাহ করতে পারবে। উন্নত সতর্কতা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কাঠামোর মেরুদণ্ড ও মহাকাশ স্টেশনে বসবাসকারীদের রক্ষা করতে পারে।
মনীশ পুরোহিত বলেন, ‘এই সাতটি পেলোড আমাদের দৃশ্যমান সম্ভাব্য সমস্ত বর্ণালী (স্পেকট্রাম), অতিবেগুনী ও এক্স-রে রশ্মি আছে এমন অবস্থানে থেকে সূর্যকে একটি নক্ষত্র হিসেবে পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছে।… পুরো বিষয়টি এমন যে আমরা একটি কালো ও সাদা ছবি থেকে সূর্যের রঙিন, হাই-ডেফিনিশন ৪কে রেজ্যুলেশনের ছবি পেতে যাচ্ছি। ফলে সূর্যে যা ঘটছে তা আমাদের কাছে আর অজানা থাকবে না।’
আরও পড়ুন: ইসরো চন্দ্রযান-৩: ভারতের চন্দ্র বিজয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
১ বছর আগে
চাঁদে ভারতীয় মহাকাশযানের সফল অবতরণ
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ভারতের একটি মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করেছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি অজানা অঞ্চল। তবে তারা বিশ্বাস করেন এখানে হিমায়িত পানি এবং মূল্যবান উপাদানের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মজুদ থাকতে পারে। এই সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে দেশটি মহাকাশ এবং প্রযুক্তিতে তার ক্রমবর্ধমান দক্ষতাকে প্রদর্শন করেছে।
বুধবার স্থানীয় সময় ৬টা ৪ মিনিটে ল্যান্ডারের অভ্যন্তরে একটি রোভারসহ চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করে। এসময় দক্ষিণ ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা উল্লাস প্রকাশ করে করতালি দিতে থাকে। প্রায় চার বছর আগে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর প্রায় অজানা দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের কাছে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। চাঁদে অবতরণকারী দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সঙ্গে একই তালিকায় ভারত নিজেদের যুক্ত করল।
ভারতের সফল অবতরণের কিছু দিন আগে রাশিয়ার লুনা-২৫ একই চন্দ্র অঞ্চলের দিকে অবতরণের চেষ্টা করেছিল। যেটি কয়েকদিন আগে একটি অনিয়ন্ত্রিত কক্ষপথে ঘুরতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। এটি ৪৭ বছর পর প্রথম সফল রাশিয়ান চন্দ্র অবতরণ হতে পারত। রাশিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত মহাকাশ কর্পোরেশনের প্রধান রোসকসমস ১৯৭৬ সালে চাঁদে শেষ সোভিয়েত মিশন চালান। চন্দ্র গবেষণায় দীর্ঘ বিরতির কারণে দক্ষতার অভাবকে এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতের উদ্বিগ্ন ও আগ্রহী জনতা সারাদেশের অফিস, দোকান, রেস্তোরাঁ এবং বাড়িতে টেলিভিশনের চারপাশে ভিড় করে। উত্তর ভারতের পবিত্র শহরখ্যাত বারাণসীসহ মন্দির ও ধর্মীয় স্থানগুলোতে ও নদীর তীরে তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে মিশনের সাফল্যের জন্য মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষ প্রার্থনা করেছিল।
ভারতের চন্দ্রযান-৩ ১৪ জুলাই দক্ষিণ ভারতের শ্রীহরিকোটার একটি লঞ্চপ্যাড থেকে যাত্রা করেছিল।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণা আসন্ন চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে একটি অসাধারণ মাইলফলক ছুঁয়েছে। যা চন্দ্র পৃষ্ঠে একটি নিরাপদ অবতরণ করার জন্য প্রস্তুত। এই কৃতিত্ব ভারতীয় বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে চিহ্নিত করে। যা মহাকাশ অনুসন্ধানে আমাদের দেশের অগ্রগতির প্রতীক।’
তারা বলেছে, চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণ কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে এবং যুবকদের মধ্যে অন্বেষণের আবেগ জাগিয়ে তুলবে।
সংস্থাটি বলেছে, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরাক্রম উদযাপন করার সঙ্গে সঙ্গে এটি গর্ব এবং একতার গভীর অনুভূতি তৈরি করে। এটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং উদ্ভাবনের পরিবেশ গড়ে তুলতে অবদান রাখবে।’
অনেক দেশ এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে আগ্রহী। কারণ স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত গর্তগুলোতে হিমায়িত পানি ধরে রাখতে পারে যা ভবিষ্যতের মহাকাশচারী মিশনে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতের চন্দ্রযান-২ অভিযান ব্যর্থ
চন্দ্রযান-৩ এর ছয় চাকার ল্যান্ডার এবং রোভার মডিউলটি পেলোডের সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে যা রাসায়নিক এবং উপাদানগুলোর বিন্যাসসহ চন্দ্রের মাটি এবং শিলার বৈশিষ্ট্যগুলোর বিষয়ে বিজ্ঞানীদের তথ্য সরবরাহ করবে।
এর আগে ২০১৯ সালে দক্ষিণ মেরুর কাছে চাঁদে প্রায় আজানা স্থানে ভারতের একটি রোবোটিক মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এটি চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল কিন্তু তার ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। যা পানির চিহ্নগুলো অনুসন্ধান করতে একটি রোভার স্থাপন করতে চূড়ান্ত অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছিল। ইসরোতে জমা দেওয়া একটি ব্যর্থতা বিশ্লেষণ প্রতিবেদন অনুসারে, একটি সফ্টওয়্যার ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল।
২০১৯ সালে ১৪০ মিলিয়ন ডলারের মিশনটির উদ্দেশ্য ছিল স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত চাঁদের গর্তগুলো অনুসন্ধান করা যেগুলোতে পানি জমা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যা ২০০৮ সালে ভারতের চন্দ্রযান-১ অরবিটার মিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ভারত গত বছর বিশ্বের পঞ্চম-বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রযুক্তি এবং মহাকাশ শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেদের ক্রমবর্ধমান অবস্থান প্রদর্শন করতে আগ্রহী।
একটি সফল চন্দ্র মিশন মোদি ও ভারতের ইমেজকে বৃদ্ধি করে, যা বিশ্বব্যাপী অভিজাতদের মধ্যে তার স্থান নিশ্চিত করে। আগামী বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনের আগে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এটি।
আরও পড়ুন: ভারতীয় চন্দ্রযানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে নাসা
রাশিয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা এবং ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন মহাকাশে নতুন মাইলফলক ছুঁয়ে যাওয়ার পরে ভারতের সফল অবতরণের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। মে মাসে চীন তার প্রদক্ষিণকারী মহাকাশ স্টেশনের জন্য তিন ব্যক্তির ক্রু চালু করেছে। একই সঙ্গে দশকের শেষের আগে চাঁদে মহাকাশচারীদের রাখার আশা করছে। ২০২০ সালে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে।
অনেক দেশ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো সফলভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি মহাকাশযান অবতরণ করার জন্য চেষ্টা করছে। এপ্রিলে জাপানি একটি কোম্পানির মহাকাশযান দৃশ্যত চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। ২০১৯ সালে অনুরূপ অলাভজনক একটি ইসরাইলি মহাকাশযান কৃতিত্ব অর্জন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এর মহাকাশযানটি আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
জাপান একটি এক্স-রে টেলিস্কোপ মিশনের অংশ হিসেবে সপ্তাহের শেষে চাঁদে একটি লুনার ল্যান্ডার চালু করার পরিকল্পনা করেছে এবং দুটি মার্কিন সংস্থাও বছরের শেষ নাগাদ লুনার ল্যান্ডার স্থাপনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাদের মধ্যে একটি দক্ষিণ মেরুতে। আগামী বছরগুলোতে নাসা গর্তে জমা হিমায়িত পানির সুবিধা নিতে নভোচারীদের চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার পরিকল্পনা করেছে।
আরও পড়ুন: আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চন্দ্রযান-৩: ইসরো
১ বছর আগে
মহাকাশযান গ্রহাণুর কক্ষপথ পরিবর্তন করতে সফল হয়েছে: নাসা
পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত ছোট এক গ্রহাণুকে এর নিজ কক্ষপথ থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থার (নাসা) মহাকাশযান। শুধু সরিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ছোট ছোট টুকরায় ধ্বংসও করেছে। ‘সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা পৃথিবীকে রক্ষার এই পরীক্ষামূলক অভিযান থেকে কী ফল পাওয়া গেছে তা মঙ্গলবার নাসা জানিয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে চালানো অভিযানটিতে মূলত দেখা হয়েছে যে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে গ্রহাণু বা মহাকাশীয় বস্তু ধেয়ে আসলে তা মোকাবিলায় কী করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মহাকাশ সংস্থার সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘এই অভিযানটি প্রমাণ করে যে মহাবিশ্ব পৃথিবীর দিকে যাই ছুঁড়ে দিক না কেন তা প্রতিহতে নাসা প্রস্তুত হচ্ছে।’
ডার্ট (ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট) মহাকাশযানটি ২৬ সেপ্টেম্বর ডিমরফোস নামের গ্রহাণুতে ধাক্কা খেলে সেখানে গর্ত তৈরি হয়। এতে ধুলা ও ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখতে অনেকটা ধূমকেতুর মতো। যার থেকে আলোর ঝলকানিও দেখা গেছে।
৫২৫ ফুটের গ্রহাণুতে কী প্রভাব পড়ল তা পর্যবেক্ষণ করতে চিলি ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে বেশ সময় নিয়ে দেখতে হয়েছে নাসাকে।
ঘটনাটির আগে ছোট এই গ্রহাণু এর প্রধান গ্রহাণুকে প্রদক্ষিণ করতে ১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন গ্রহাণুটির প্রদক্ষিণ সময় ১০ মিনিট কমিয়ে আনতে, কিন্তু নেলসন বলছেন গ্রহাণুটির কক্ষপথ প্রায় ৩২ মিনিট কমে গেছে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীকে রক্ষা: স্পেস টেলিস্কোপে ডার্টের কর্মযজ্ঞের ঝকঝকে ছবি
নাসার গ্রহ বিজ্ঞানের পরিচালক লরি গ্লেজ বলেন, ‘আমরা পুরা বিষয়টি হজম করতে কিছুটা সময় নেই… কারণ এই প্রথমবারের মতো মানুষ কোনো গ্রহাণুর কক্ষপথে পরিবর্তন আনতে পেরেছে।’
অলাভজনক বি৬১২ ফাউন্ডেশনের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা, গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য নিবেদিত অ্যাপোলো মহাকাশচারী রাস্টি শোয়েইকার্ট বলেন যে তিনি স্পষ্টতই আনন্দিত। ফলাফল ও মিশনটির মাধ্যমে যে এই ক্ষেত্রে মনোযোগ এনেছে তা নিয়ে তার কোনো প্রশ্ন নেই।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর সুরক্ষায় নাসার মহাকাশযান ধ্বংস করেছে গ্রহাণু!
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারের অধ্যাপক ও এই অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ন্যান্সি চ্যাবট বলেন, এধরনের কৌশল প্রয়োগের জন্য আমাদের অবশ্যই উপযুক্ত সময় আসতে হবে যাতে তা কার্যকর হয়।
বলে রাখা ভালো, বিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে কোনো মহাকাশীয় বস্তুর আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখছে না।
মহাকাশযান তৈরি ও অভিযান পরিচালনায় ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে।
আরও পড়ুন: নাসার পরীক্ষামূলক চন্দ্রাভিযান: দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ, পরবর্তী চেষ্টা কয়েক সপ্তাহ পর
২ বছর আগে
পৃথিবীর সুরক্ষায় নাসার মহাকাশযান ধ্বংস করেছে গ্রহাণু!
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ২০২১ সালের 'ডন্ট লুক আপ' সিনেমাটি দেখেছেন? যেখানে দু'জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ধুমকেতুর বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করে!
সিনেমাটি না দেখে থাকলেও সমস্যা নেই। একটু ভাবুনতো, গ্রহাণু বা ধুমকেতু প্রবল বেগে ধেয়ে এসে পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে! ভাবতেই গায়ে কাটা দেয় তাই না! মার্কিন মহাকাশ সংস্থাও (নাসা) বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করেছে এবং অনেক আগে থেকেই তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
মহাকাশে পৃথিবী থেকে ৭০ লাখ মাইল দূরে বহুকাল ধরে ভেসে বেড়াচ্ছিল একটি গ্রহাণু। এটিকে লক্ষ্য করেই নাসার এক মহাকাশযান প্রতি ঘণ্টায় ১৪ হাজার মাইল বেগে তেড়ে যায়। লক্ষ্যবস্তুর সাথে বাঁধে সংঘর্ষ। বলে রাখা ভালো, এই সংঘর্ষ কিন্তু সুপরিকল্পিত।
নাসার ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট (ডার্ট) মহাকাশযান ও ডিমরফোস নামক ৫২৫ ফুট চওড়া গ্রহাণুর মধ্যে সোমবার পূর্ব সময় (ইটি) সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে সংঘর্ষ হয়। এর ফলে প্রথমবারের মতো মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মহাকাশীয় বস্তুর গতিপথ পরিবর্তন করেছে। তাছাড়া এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে যেকোনো মহাকাশীয় বস্তু ধেয়ে আসলে তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলকে কাজে লাগিয়ে ধ্বংস করে সজীব এই গ্রহকে রক্ষা করা যাবে।
তবে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী যে আগামী ১০০ বছরে বড় আকারের কোনো গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করছে না। তাছাড়া অনায়াসে অন্যান্য গ্রহ, গ্রহাণু বা মকাশীয় বস্তুর গতিপথ মানুষ পর্যবেক্ষণ করতে পারে বড় ও শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে। তবে এর অর্থ এই নয় যে ছোটখাটো কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: মহাকাশের প্রথম রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে নাসা
ডার্ট মিশনকে পরিচালনাকারী মেরিল্যান্ডের লরেলে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা পরীক্ষাগারের (এপিএল) একজন হচ্ছেন ন্যান্সি চ্যাবট। তিনি বলেন, ‘গ্রহাণু দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার বিষয়ে আমি সত্যিই ঘুম হারাচ্ছি না, তবে আমি এমন একটি বিশ্বে বাস করার বিষয়ে উত্তেজিত যেখানে আমরা ভবিষ্যতে এটিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র প্রথম পদক্ষেপ, কিন্তু এটা কি উত্তেজনাপূর্ণ নয় যে আমরা কল্পবিজ্ঞান থেকে বাস্তবতায় যাচ্ছি?’
সেই বাস্তবতাকে রূপ দেয়ার অনুশীলন হিসেবেই নাসা ডার্টকে গ্রহাণুটি ধ্বংস করার উদ্দেশে পাঠিয়েছে। এই প্রথম প্রচেষ্টার মিশনটির জন্য খরচ করতে হয়েছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।
আরও পড়ুন: নাসার পরীক্ষামূলক চন্দ্রাভিযান: দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ, পরবর্তী চেষ্টা কয়েক সপ্তাহ পর
নাসা: ইঞ্জিন ত্রুটি সাড়ার পর শনিবার নতুন চন্দ্রযান রকেট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নির্ধারণ
২ বছর আগে
হোপ: আরব বিশ্বের প্রথম মঙ্গল অভিযান শুরু
সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি মহাকাশযান সোমবার সাত মাসের জন্য মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে, যা আরব বিশ্বের প্রথম আন্তগ্রহ অভিযান।
৪ বছর আগে