প্লাবিত
সিরাজগঞ্জে ফের যমুনার পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে নদী তীরবর্তী আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত মাসের শেষ দিকে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে বিশেষ করে যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, কাজিপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব উপজেলার অনেক স্থানে তীব্র নদীভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে যমুনার পানি কমতে থাকে এবং অনেক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় পাউবো কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনার পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় কাজিপুর পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও ৪/৫ দিন যমুনার পানি বাড়তে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: ফের তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
ফের তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
উজানের পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমি বর্ষার বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিকাল ৪টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৬ মিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে ১৪ আগস্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও একদিন পরে তা নিচে নেমে আসে। বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার বন্যার শঙ্কায় চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষ।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা বরাবরে প্রবাহিত হয়। ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে ৩ ঘণ্টা পরে দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উজানে ভারী বর্ষণ ও ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।
ব্যারাজ ও নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আবাদ করা ফসলের খেতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চর গোবর্দ্ধন এলাকার আজিজুল ইসলাম জানান, রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত রাস্তাঘাট ও পুকুর। চরাঞ্চলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হলদিবাড়ি চরের আব্দুল মতিন বলেন, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। রাত থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। ক্রমেই বাড়ছে পানি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাচাংয়ের ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষদের। এসব এলাকার বাসিন্দারা শিশু-বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে চরম বিপদে রয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে
কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপরে
বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
দুই দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ইতোমধ্যে শহরের হাফেজঘোনা, বাসষ্টেশন, আর্মি পাড়া ও ইসলাম পুর এলাকার নিচু স্থান ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পৌর সভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
জেলা প্রশাসক মো. মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বান্দরবানে ১৯২ টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এছাড়া লামা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী ৮টি পরিবারের ৩৬ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, দুপুর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে সাংগু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে বইছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, বিপদ মোকাবিলায় প্রসাশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন। ত্রাণ সমগ্রীর কোন অভাব নেই। প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
শহরের মৃত্তিকা ও পানি বিভাজিকা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় বান্দরবানে ১৬৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ক্যান্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের কেজি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
সুনামগঞ্জে বন্যায় ১০ গ্রাম প্লাবিত, বৃষ্টি অব্যাহত
সুনামগঞ্জে বন্যায় ১০ গ্রাম প্লাবিত, বৃষ্টি অব্যাহত
পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ সময়ে দোয়ারাবাজারের সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারাসহ বিভিন্ন নদীনালার উপচেপড়া পানিতে হাওর, খাল-বিল, মাঠঘাট ভরে গিয়ে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষজন।
এদিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার চিলাই নদীর রাবারড্যাম সংলগ্ন ক্যাম্পের ঘাট এলাকার আবুল কালামের বাড়ির পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে বগুলাবাজার ইউনিয়নের ক্যাম্পের ঘাট, আন্দাইরগাঁও, বগুলা, চান্দের ঘাট, সোনাচড়া, নোয়াগাঁও, রামনগর, তেরাকুড়ি ও কান্দাগাঁওসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ভারি বর্ষণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা
এদিকে, সুরমা নদীর উপচেপড়া ঢলের তোড়ে দোয়ারাবাজার-টেংরাটিলা-মহব্বতপুর সড়কের শরিফপুর সাইডিংঘাট এলাকায় রাস্তায় হাটু সমান পানির স্রোতে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সঙ্গে নরসিংপুর, বাংলাবাজার, বগুলাবাজার, লক্ষীপুর ও সুরমা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ।
তলিয়ে গেছে রবিশস্যসহ শত শত হেক্টর আমনের বীজতলা।
দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকটি মাছের পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় শঙ্কিত রয়েছেন শতাধিক মৎস্যচাষী, খামার মালিক।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে অচিরেই জেলার সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
দোয়ারাবাজারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ মোর্শেদ মিশু বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে দূর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, ত্রাণ বিতরণসহ সর্বক্ষেত্রে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা অটল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
টানা চার দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। এছাড়া উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হাওড় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে অসময়ে যমুনায় পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও কোনও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।
এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা পাউবো। এসময়ে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল।
এদিকে সুনামগঞ্জ শহরেরে সাহেববাড়ি ঘাট, কাজির পয়েন্ট, নবীনগর, হাছননগর, নতুনপাড়ায় পানি ঢুকে পড়েছে। সাধারণ জনগণের চলাচলের সড়ক ডুবে হু-হু করে ঢলের পানি ডুকছে হাওর ও নদ-নদীতে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে হবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। রবিবার মধ্যরাতে দৌলতপুর গ্রামের দুইটি স্থানে বাঁধ ভেঙে উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাঠের ফসল, পুকুরের মাছ, ঘরবাড়ি আর এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফেনী-পরশুরাম সড়কের ফুলগাজী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এক ফুট পরিমাণ পানি উঠেছে। ফুলগাজী ব্রিজের উত্তর পাশ্বে দারুল উলুম মাদরাসার ওপর দিয়ে ফেনী-পরশুরাম সড়ক পানিতে থইথই করছে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা: আবহাওয়া অফিস
উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার রাতে ভারতের উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর অংশের দুইটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ওই ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, ঘনিয়ামোড়া ও বৈরাগপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফুলগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, পানির তোড়ে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে আমার ইউনিয়নের চারটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ড্রেনের মুখ খোলা থাকায় মুহুরী নদীর পানির সঙ্গে বাজারের ময়লা-আবর্জনাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। প্রতিবছর এভাবে বন্যার পানি এসে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর আলীম বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুইটি স্থানে ভাঙনের ফলে সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। মাঠের ফসল, পুকুরের মাছ, ঘরবাড়ি আর এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, রাতে পানির প্রবাহ বেশি ছিল। সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।
তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে মেরামতের ব্যবস্থা নেবে। পানি একটু কমলেই মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা
দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৩১তম
সিরাজগঞ্জে টানা বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিরাজগঞ্জে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা প্রবল বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অসময়ে যমুনা ও তার শাখা নদীসহ খাল বিলের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এতে বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে যমুনার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে। টানা এ বর্ষণে জনজীবন এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়াটার) রনজিত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেলেও সোমবার পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে ওইদিন মধ্যেরাত থেকে আবারও টানা বর্ষণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চতুর্থ দফায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এতে মৌসুমী রোপা আমন, মাসকলাই ও সবজির খেতসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। তবে এখন বড় ধরনের বন্যার কোন আশংকা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনভর ভারী বর্ষণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের বড় বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেছেন, টানা বর্ষণে শহরের প্রধান সড়কসহ কয়েকটি সড়কে পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ ড্রেন ময়লা আবর্জনা জমে যাওয়ার কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
নিম্নচাপে প্লাবিত সুন্দরবন, বন্যপ্রাণী নিয়ে শঙ্কায় বনবিভাগ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপের পরিণত হওয়ায় মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে,টানা বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে পশুর চ্যানেল ও বনের নদ-নদীতে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিন যাবত প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবনের সরকারি বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যটক স্পট এবং গোটা সুন্দরবন। করমজলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সুন্দরবনে ভ্রমনে আসা দর্শনার্থীদের।
বন বিভাগ বলছে, রক্ষিত সকল প্রাণীই নিরাপদে রয়েছে, তবে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে কেন্দ্রে রাখা প্রাণীসহ বনের গহিনের বন্যপ্রাণীর ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জানা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে নদী ও খাল পাড়ি দিয়ে চলাচল করছে কর্মজীবী সাধারণ মানুষ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে।
জানা গেছে,বনের করমজলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের জন্য ১২টি আধা পাকা সেড রয়েছে। যার মধ্যে বাচ্চাসহ ৩৬ টি হরিণ, ৯১ টি ছোট বড় কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির ৪৩৬টি বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপ রযেছে। এছাড়াও এর আশপাশে উম্মুক্তভাবে রয়েছে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও আজগর সাপ, তক্ষকসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও হরেক রকমের পাখি রয়েছে। এদিকে নদীতে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে আর জোয়ারের পানিতে বন্যপ্রাণী সম্ভাব্য চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন বিভাগ।
বনবিভাগ বলছে, গত শনিবার থেকে এবারের পূর্ণিমার গ্রহণের কারণে সুন্দরবনে এবার বেশি পানি হয়েছে। গত তিন দিন প্রায় চার ফুট পানিতে তলিয়েছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ পুরো বন। এতে যে সকল বন্যপ্রাণী গাছে উঠে বসবাস করতে পারেনা এবং মাটিতে ডিম পাড়ে সে সকল বন্যপ্রাণী বা তাদের বাচ্চাগুলো মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে জানান তারা।
তারা আরও বলেন, বনে পানি ঢুকে যাওয়ায় উম্মুক্ত ভাবে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীকে বনের মধ্যে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। করমজলেও এসে আশ্রয় নিয়েছে বনের হরিণ, বানর, শুকরসহ অন্যান্য প্রাণী। তবে এখন পর্যন্ত বনের কোথাও তেমন কোন প্রাণীর মৃত্যু বা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনে পর্যটক আসতে পারছেনা। ফলে গত তিন দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা-কচিখালী, দুবলা, নিলকমলসহ অন্যান্য পর্যটক স্পটগুলো।
তবে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীদের আসার আগ্রহ রয়েছে বলে জানায় কমরজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার হওলাদার আজাদ কবির।
অপরদিকে, বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন পণ্য বোঝাই দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। জাহাজের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চললেও সার ও খাদ্যবাহী জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ বৃষ্টির সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বন্দরকেন্দ্রিক চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান ও সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। মোংলা বন্দরের ও পশুর নদীর দুই পাড়ে কয়েকশ’ পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ ও ট্যুরিস্ট বোর্ডও নিরাপদে ও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া বন্দর সংলগ্ন আশপাশের বিভিন্ন খালেও নৌযানগুলো নিরাপদে নোঙ্গর করে রয়েছে।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বাগেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলা, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাটে গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।
সোমবার বিকালে ভৈরব, বলেশ্বর, পানগুছি ও পশুর নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেড়েছে এবং সুন্দরবনে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ স্থানের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
সুন্দরবনের সব পুকুর উপচে উঠেছে এবং এ অবস্থা আরও কয়েক দিন চলতে থাকলে বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকার মাছের ঘেরগুলো যে কোনো সময় ভেসে যেতে পারে।
এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেসহ বেশ কিছু মাছ ধরার ট্রলার সুন্দরবনের দুবলারচর, নারিকেলবাড়িয়া ও কটকায় আশ্রয় নিয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশে ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরও পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পূর্ণিমা ও স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সমূহের নিম্নাঞ্চল এক থেকে দুই ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীর জোয়ারে ভোলার নিম্নাঞ্চল দুই থেকে তিন ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলসহ বেড়িবাঁধের বাইরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে।
এছাড়াও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশা ফেরিঘাটের গ্যাঙওয়ে ডুবে গিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতি জোয়ারে ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ সকাল ও বিকাল পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
এছাড়াও ভোলা দৌলতখানের মদনপুরা, তজুমদ্দিনের চরজহিরউদ্দিন, চরফ্যাশনের ঢালচর, চর কুকরিমুকরি, মনপুরার কলাতলির চরসহ প্রায় ১০ থেকে ১২টি চরের বাসিন্দারা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
জোয়ারেরর পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিনফুট প্লাবিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: চার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢালচরের চেয়ারম্যান মো. আবদুস ছালাম জানান, তার চরে প্রায় ১২ হাজার লোকের বসবাস। বেড়িবাঁধ না থাকায় এ চরের মানুষ জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয়। জোয়ারে তার ইউনিয়নে প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানি নেমে যাওয়ায় মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে আছে।
ভোলা আবাহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, রবিবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোলায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাধেঁর বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধঁ ভেঙে ২০০ বিঘা মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে গেছে। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুরে নদীর ৬-৭ হাত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এ প্লাবনের ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি সংস্কার করা হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, তার ইউনিয়নের গদাইপুর এলাকার আব্দুল মান্নান মাস্টারের মাছের ঘের সংলগ্ন এলাকায় ৭/২ নং পোল্ডারে সোমবার খোলপেটুয়া নদীর ৬-৭ হাত জরাজীর্ণ বেড়িবাধঁ ভেঙে যায়। এতে প্রায় ২০০ বিঘা মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে দুপুরের মধ্যে তিনি স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে তা সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
তবে পরবর্তী জোয়ারে কি হবে তা বলা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, রবিবার থেকেই থেমে থেমে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারি বর্ষণের কারণে শতাধিক ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া গাবুরা, নাপিতখালি, জেলেখালি, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতায় মোট ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাধেঁর মধ্যে জরাজীর্ণ ৩৫ টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে, অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার চলমান।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গপোসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আগামী ২-১ দিন আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকবে তারপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ৫৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আরও পড়ুন: জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
ঝালকাঠির বিষখালী ও হলতা নদীর পানি ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কাঠালিয়া উপজেলার অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৭টি গ্রাম ও শতাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে কাঠালিয়া গ্রামের বিষখালী নদীর তীরবর্তী রাস্তা ও চিংড়াখালী খালের বাঁধ।
গ্রামীণ কাঁচা পাকা ১০টি রাস্তা ডেবে গর্ত হয়ে সংযোগ বিচিছন্ন রয়েছে এ সকল গ্রামের। ফলে হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ ও আতংকের মধ্যে দিন কাটছে।
রবিবার থেকে মুশলধারে বৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়া, বিষখালী ও হলতা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ২৭টি গ্রাম।
জোয়ারের পানিতে উপজেলার আউড়া, শৌলজালিয়া ও আওরাবুনিয়া আশ্রায়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর পানিতে ভাসছে। ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে এ সব ঘর।
উপজেলা পরিষদের সবগুলো অফিস ভবন, নির্বাহী অফিসারের বাস ভবন, কাঠালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিকল্যাণ কেন্দ্র, ছৈলার চর পর্যটন কেন্দ্র, কাঠালিয়া লঞ্চ ঘাট, সিকদার পাড়া, পশ্চিম আউরা জেলে পাড়া, আমুয়া হাসপাতাল ও আমুয়া বন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থান ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, দুই/এক দিনের ভিতর পানি না কমলে রোপা আমন ধান পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, তাদের ৪০ শতাংশ মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। ফলে এ সকল খামারিদে অর্ধকোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, কাঠালিয়া উপজেলাকে সরকারের পক্ষ থেকে কোস্টাল এরিয়া ঘোষণা করা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগের সমাধান সম্ভব নয়।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড জানান, বিষখালী ও হলতা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের সব কয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সদরের নিচু এলাকা রবিবার জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ধসে প্লাবিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু চত্বর, কাঁচাবাজার এলাকাসহ কয়েকটি নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে নবনির্মিত শহর রক্ষা বাঁধের সামনের অংশটি ধসে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পাইকগাছা পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পৌরসভাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে অপরিকল্পিতভাবে শিবসা নদীর চরভারতী এলাকায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয় যা চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয়।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বাঁধের ভেতরে শুরু হয়েছে মাছ চাষ।
চরভারতীর বিস্তীর্ণ এলাকার আশেপাশে বাস্তবায়িত বনায়ন প্রকল্পের বেশ কিছু গাছ মরতে শুরু করেছে, কারণ বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে পানি নামতে পারছে না।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম স্থানীয় পৌরসভাকে বাঁধটি অপসারণের নির্দেশ দেন। বাঁধটি অপসারণ না করায় শেষ পর্যন্ত শিবশারে জলোচ্ছ্বাসের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে পারেনি।
তবে পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রাজু হাওলাদার জানান, তারা শিবশারে এমন কোন বাঁধ নির্মাণ করেননি যা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
আরও পড়ুন: শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সাতক্ষীরায় নদীর বেড়িবাধঁ ভেঙে ২০০ বিঘা মাছের ঘের প্লাবিত
সাতক্ষীরার আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধঁ ভেঙে ২০০ বিঘা মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে গেছে। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুরে নদীর ৬-৭ হাত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এ প্লাবনের ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি সংস্কার করা হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, তার ইউনিয়নের গদাইপুর এলাকার আব্দুল মান্নান মাস্টারের মাছের ঘের সংলগ্ন এলাকায় ৭/২ নং পোল্ডারে সোমবার খোলপেটুয়া নদীর ৬-৭ হাত জরাজীর্ণ বেড়িবাধঁ ভেঙে যায়। এতে প্রায় ২০০ বিঘা মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে দুপুরের মধ্যে তিনি স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে তা সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
তবে পরবর্তী জোয়ারে কি হবে তা বলা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত