ঈদ আনন্দ
ঈদ পর্যটন: ঢাকায় সংকীর্ণতা, বাইরে একঘেয়ে
ঈদ মানে এখন কেবল নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার গল্পই না। সময়ের ব্যবধানে ঈদের ছুটিতে মানুষের ঘোরাঘুরি নিজ গ্রামের পাশাপাশি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। রূপ নিয়েছে রীতিমতো পর্যটনে। কিন্তু বৈচিত্র্যহীন আয়োজনে ঢাকার পর্যটন হয়ে পড়েছে সংকীর্ণ। আর সবকিছুতে গতানুগতিক ও একঘেয়েমির কারণে ঢাকার বাইরে ঘুরতে যেতেও স্বস্তিবোধ করছেন না পর্যটকরা।
ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকালে রাজধানীর বাড্ডায় বসে সেই অভিজ্ঞতার কথাই বলছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম (৫৫)। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ আর যাচ্ছেন না। দেশেই থেকে যাচ্ছেন তিনি।
আবার দেশে থাকলেও কোথাও ঘুরতে যাবেন না বলে ঠিক করেছেন নজরুল। এমনকি ঢাকা শহরেও ঈদের দিন বিকাল বেলা বের হবেন না। পুরো সময়টা কাটাবেন পরিবারের সঙ্গে।
কেন এমন চিন্তা, জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ‘খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি উৎসবের রঙ একই রকম। ঈদের দিন সকাল বেলা নামাজ শেষে বাসায় ফিরে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করার পর বের হয়ে ঢাকায় সর্বোচ্চ কোথায় যাওয়া যায়; হয় কোনো আত্মীয়ের বাসায়, আর না হয় পার্কে, না হলে সবাই মিলে ভালো কোনো রেস্তোরাঁয়।’
‘এই যে প্রি-স্ক্রিপ্টেড ঈদ। ঘুরে ফিরে প্রতিবছর একই রকম আনন্দ নেয়ার চেষ্টা। এটা বিশ্বের ভালো কোনো দেশের শহরে নেই। ঢাকার বাইরে গিয়েও কোনো লাভ নেই। আধাবেলা ঘুরে একঘেয়েমি জিনিসপত্র দেখে ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়,’ বলেন তিনি।
এক সময় ঈদে ঢাকার প্রতিটি এলাকায় ছোট-বড় মেলা বসতো। সেই স্মৃতিচারণ করে রাজধানী গোপীবাগের বাসিন্দা মোসাব্বের হোসেন (৭২) বলেন, ‘মেলার পাশাপাশি পুরান ঢাকায় নৌকা বাইচের আয়োজন করা হতো। বড় বড় মাঠে ঘোড়দৌড়ের ব্যবস্থা থাকতো। কিন্তু এখন ঈদ হয়ে গেছে পার্কে ঘোরা আর রেস্টুরেন্টে খাওয়ার মধ্যের সীমাবদ্ধ।’
এ জন্য রাজধানীর অতি বাণিজ্যিকীকরণকে দায়ী করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান। তার ভাষ্য, ‘এখন আর এই শহরে বাণিজ্যিক বড় লাভের বাইরে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুযোগ নেই। আগে ঢাকার যেসব মাঠে মেলা বসতো, এখন সেসব মাঠের অনেকগুলোর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
‘নৌকা করে ঘুরে বেড়ানোর খাল দখল হয়ে গেছে। জলাশয় ভরাট করে বড় বড় বাণিজ্যিক অট্টালিকা উঠেছে ঢাকার বুকে। আর এসব অট্টালিকা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠেছে ঈদ আনন্দের খোরাক।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার পার্কগুলোও দখল হয়ে গেছে। ধানমণ্ডি লেক এলাকা ঘুরলে এখন মনে হয় এখানে লেক মুখ্য না, মুখ্য হয়ে উঠেছে লেকের পাশে গড়ে উঠা ডজনখানেক রেস্টুরেন্ট। ঢাকাকে নিয়ে কোনো ধরনের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা কারও মধ্যে দেখা যায় না। ঈদের দিন যারা ঢাকায় থাকেন, তারা প্রতিবছরই একমুখী সংকীর্ণ ঈদ পালন করতে করতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছেন।’
গতবার ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন হুমায়ুন রশিদ (৩২)। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ঘুরে দেখতে আপনার দুই দিনের বেশি সময় লাগবে না। এরপরই যে কারো একঘেয়েমি ধরে যাবে। এখানে সমুদ্র দেখার বাইরে আর যেসব বিনোদনের ব্যবস্থা আছে, তা একরকমের ধাপ্পাবাজি। বেশি টাকা নিয়ে বোট রাইডিং, প্যারা সাইকেলিং, হর্স রাইডিং, বাইক রেসিং এর নামে বিনোদনের খোলসে যা কিছু হয় তা এক রকমের লোক ঠকানো।’
হুমায়ুন বলেন, ‘যখন একটি দেশের পর্যটক বুঝতে পারেন তাকে পদে পদে ঠকানো হচ্ছে, তখন সে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেন। গত ঈদে কক্সবাজারে প্রায় ৮ লাখ পর্যটক এসেছিল। সি-বিচে যারপরনাই ভিড় দেখে মনে হচ্ছিল রাজধানীর কোনো মাছের বাজারে দাঁড়িয়ে আছি। হোটেলে রুম ভাড়া ছিল কয়েকগুণ বেশি। ২০ টাকার আলুভর্তা মানুষ বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকায় কিনে খেয়েছে। এই যদি পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনার অবস্থা তাহলে মানুষ কেন আসবে!’
গতবারের মতো এবার ঈদেও দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সেজেছে নানা সাজে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের ৮০ শতাংশ হোটেল বুক হয়ে গেছে। বাকিটাও দুই একদিনের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও হোটেল বুকিংয়ে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।
ঈদের একদিন পর কক্সবাজারে সি-বিচ মুখোমুখি যেকোনো হোটেলের ভালো মানের এসি রুম বুক করতে গিয়ে ফয়সাল দেখেন প্রতিটি কাপল রুমের ভাড়া ৮-৯ হাজার টাকা। ফয়সাল বলেন, ‘থ্রি স্টার হোটেলের এসব রুমের ভাড়া আগে ছিল ৪-৫ হাজার টাকা। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়।’
দীর্ঘদিন কক্সবাজারের একটি হোটেলে ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মুরশিদ হোসেন। বর্তমানে ঢাকার একটি তিন তারকা হোটেলের মহাব্যবস্থাপক পদে আছেন তিনি।
কেন পর্যটন মৌসুমে হোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া নেয়া হয় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মৌসুম ছাড়া বেশিরভাগ সময়েই হোটেল ব্যবসা মন্দা যায়। তখন ৫০ শতাংশের উপরে রুম বুকিংয়ে ছাড় দিয়েও পর্যটক পাওয়া যায় না। হোটেলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে, কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে বাধ্য হয়ে পর্যটন মৌসুমি পর্যটকদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করতে হয়।’
সিলেট, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং কুয়াকাটা অঞ্চলের হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এপ্রিলের ১-৫ তারিখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রুম বুকিং দিয়েছেন পর্যটকরা। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত হচ্ছে পর্যটন স্পটগুলো।
এ প্রস্তুতি আদৌ যথেষ্ট কিনা সে প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ শোয়েব-উর-রহমান বলেন, ‘কীভাবে পর্যটক টানতে হয়, তার নূন্যতম কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’
‘প্রতি বছর ঈদ শেষে শোনা যায় ১৫ লাখ পর্যটক দেশের নানা স্পট ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু এই সংখ্যাটির অফিসিয়াল কোনো ভিত্তি নেই। যতদিন না পর্যটকদের সংখ্যার নিরিখে পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হবে, যতদিন না পর্যটন স্পটে বিনোদনের নতুন সংজ্ঞা সেট করা হবে, ততদিন পর্যন্ত আশু সমাধান আশা করা যায় না।’
শোয়েব বলেন, ‘দেশের মানুষ এক-দুবার কক্সবাজার-বান্দরবান গেলে পরে আর যেতে চায় না। কিন্তু বালি বা ব্যাংককের মতো শহরে মানুষ বারবার যেতে চায়। এর সবচেয়ে বড় কারণ বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলোর বিনোদন নিতান্তই একমুখী। কিন্তু দেশের বাইরে শুধু প্রকৃতি না, প্রকৃতি আর মানুষের সৃষ্টিকর্মের মিথস্ক্রিয়ায় এক একটি পর্যটন কেন্দ্রকে একেক রূপে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পর্যটক জানেন, চাইলেই দুই দিনে পুরো ব্যাংকক ঘুরে দেখা সম্ভব না। কিন্তু আপনি সকালে শুরু করলে সন্ধ্যার মধ্যে কক্সবাজারের মূল মূল স্পটগুলো ঘোরা শেষ হয়ে যাবে ‘
আরও পড়ুন: ধনীদের আস্থা ব্র্যান্ডে, ফেনীতে ফুটপাতেই ভরসা গরিবের
‘আবার পর্যটনকে কেন্দ্র করে স্পটগুলোতে যেসব সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে, তাতে করে পর্যটকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এক ধরনের অদ্ভুত মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। পর্যটকদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ পর্যটকদের ওপর তাদের একরকমের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের এই বৈরিতা পর্যটকদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি করে। এতে করে আইন-শৃঙ্খলারও অবনতি হওয়ার শঙ্কা থাকে,’ যোগ করেন শোয়েব।
এবারের ঈদ পর্যটনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলায় বিগত কয়েক মাসের বিভিন্ন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে বিরাজ করছে এক ধরণের চাপা শঙ্কা।
বিয়ের পর এবারের ঈদের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবারের মতো সাজেক ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেও বাদ দিয়েছেন এনজিও কর্মী আহমেদ পিয়াস (২৮)। বলেন, ‘দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দুজন মিলে কোথাও যেতে সাহস হচ্ছে না। পরিবার এবং বন্ধু পরিজনদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে গেলে দল বেধে যেতে। যাতে করে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হলে মোকাবেলা করা যায়।’
৩৪ দিন আগে
তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গাবাসীর ঈদ আনন্দে ভাটা
ঈদের তৃতীয় দিন আজ। এখনো মানুষের মধ্যে ঈদ আনন্দ বিরাজ করছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গাবাসীর ঈদ আনন্দে বাধ সেধেছে তীব্র গরম।
চুয়াডাঙ্গায় শনিবার বিকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এপ্রিলের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। যদিও মাঝে দুদিন তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নেমে আসে।
আরও পড়ুন: দেশের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি
টানা এই তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দাবদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন।
একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে সব শ্রেণির মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এত তাপ সহ্য করা কঠিন। ঈদে একটু ঘোরাঘুরি করব, এত রোদে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’
একই গ্রামের আকরাম আলী বলেন, ‘ঈদের দুদিন হয়ে গেল। এখন দোকান খুলব, কিন্তু এত তাপে দোকানে বসা অসম্ভব ব্যাপার। শিগগিরই বৃষ্টি হলে আবহাওয়া সহনীয় হতো।’
চুয়াডাঙ্গা শহরে ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান চালান কুদ্দুস মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঈদের ঘোরাঘুরি থাকলেও মানুষজন বাইরে আসছে না। তাই ভাড়াও হচ্ছে না, দুপুর হয়ে গেছে এখনো তেমন ভাড়া হয়নি। ভাড়া পেতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, ‘এপ্রিলের শুরু থেকেই মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ চলেছে। মাঝে কয়েক দিন আবহাওয়া সহনীয় পর্যায়ে আসলেও আবার মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। আজ চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা পূর্বাভাসে নেই।’
আরও পড়ুন: ৭ জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ
৩৮৬ দিন আগে
ঈদুল আযহার বাংলা সিনেমা ২০২২: সিনেমাপ্রেমিদের ঈদ আনন্দ
ঈদে বিনোদন জগত মানেই নতুন চমকের বিচিত্র পসরা সাজিয়ে উৎসবমুখরতা। তাই প্রতিবারের মত এবারো ঈদুল আযহার বাংলা সিনেমাগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য পর্দার জন্য সারিবদ্ধ হচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহ থেকে ওটিটি(ওভার দ্যা টপ) প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত দর্শকদের প্রতীক্ষার দৃষ্টি নতুন চিত্রনাট্য, অ্যাকশন ও ক্লাইম্যাক্সের অসামান্য মেলবন্ধনের দিকে। সিনেমা নির্মাতারাও তাদের বিগত বছরগুলোর শ্রমের ফসল হিসেবে ছবি মুক্তির সুসংবাদ দিচ্ছেন আসন্ন ঈদকে ঘিরে। তেমনি কিছু বহু প্রতীক্ষিত বাংলা সিনেমার খবর নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বিনোদনমূলক ফিচারটি।
২০২২ এর কোরবানি ঈদে যে বাংলা সিনেমাগুলো দর্শকদের নজর কাড়বে
অন্তরাত্মা / শাকিব-দর্শনা
ঢালিউড কিং শাকিব খান কোন ঈদেই তার ভক্তদের চাহিদা পুরণের কথা ভোলেন না। এবারো তার দুই থেকে তিনটি ছবি প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নানান ঝামেলায় পড়ে শেষমেষ শুধুমাত্র অন্তরাত্মাই সিনেমা হল পর্যন্ত যেতে পারে। সোহানী হোসেন-এর তরঙ্গ এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি নির্দেশনা দিয়েছেন ওয়াজেদ আলী সুমন।
শাকিবের নায়িকা হিসেবে থাকছেন উদীয়মান তারকা দর্শনা বণিক। সোহানী হোসেন-এর গল্প নিয়ে রোমান্টিক-অ্যাকশন ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন ফেরারী ফরহাদ। প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেও ভালবাসার কাঙাল এক তরুণ জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতে। বৃত্তের বাইরে ছিটকে পড়ে তার জীবনে শুরু হয় আলোড়ন।
পড়ুন: ‘মিশন এক্সট্রিম-২’র ফার্স্টলুক প্রকাশ
এমনি কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিনেমাটির সঙ্গীত আয়োজন করেছেন লিংকন রায় চৌধুরী ও ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। এখানে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে শাহেদ শরীফ খান, অরুণা বিশ্বাস, ও ঝুনা চৌধুরীকে।
দিন দ্যা ডে / অনন্ত-বর্ষা
শত কোটি টাকা বাজেটে বহু আলোচিত ও সমালোচিত অনন্ত-বর্ষা জুটির দিন দ্যা ডে অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আসন্ন ঈদুল আযহায়। গত ৫ জুন সিনেমাটির আনকাট সেন্সর সনদও চলে এসছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে যাবার সময় বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন। এই পটভূমিতে নির্মিত সিনেমাটিতে অনন্তকে দেখা যাবে আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন দুর্ধর্ষ পুলিশ অফিসার হিসেবে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী দমনমুলক অভিযানের সময় এই পুলিশ অফিসারের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা।
পড়ুন: ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেল ১৯ চলচ্চিত্র
এমনি কাহিনীর মারকুটে ও উচ্চ ভিজুয়াল ইফেক্ট্স সম্পন্ন মুভিটি বাংলাদেশ ও ইরান যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিলো অনন্ত জলিলের মনসুন ফিল্ম্স আর ইরানের পক্ষ থেকে ছিলো ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশন।
ইতোমধ্যে এর টিজার ও ট্রেলার দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। সিনেমাটির পরিচালনায় আছেন ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম আর চিত্রনাট্যকার হিসেবে আছেন বাংলাদেশের ছটকু আহমেদ।
শুক্লপক্ষ / সুনেরাহ-রোশান
মুভির শুরুটা দেখে শেষটা বোঝার উপায় থাকে না। রহস্যজট খোলার আগমুহুর্ত পর্যন্ত দৃশ্যের প্রতি পরতে পরতে সাসপেন্সের মোড়। নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে, এখানে ভিকি জাহেদের পরিচালনার কথা বলা হচ্ছে। আসন্ন ঈদুল আযহাতেও ভক্তদেরকে ভিন্নধর্মী গল্পের উপহার দিতে চলেছেন উদীয়মান তরুণ নির্মাতা।
পড়ুন: নতুন ছবি ‘এই মুহূর্তে’: এক সিনেমা, তিন পরিচালক
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান এবং ন-ডরাই খ্যাত সুনেরাহ বিনতে কামাল। এছাড়াও চরকিতে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ওয়েব ফিল্মটির অভিনয় দলের সাথে যুক্ত আছেন খায়রুল বাশার এবং ফারুক আহমেদসহ আরো অনেকে।
আইকন ম্যান / অপূর্ব-ফারিহা
শিহাব শাহীনের যদি কিন্তু তবুও-এর পর বড় পর্দার তারকা নুসরাত ফারিয়ার সাথে আবারো জুটি বাঁধতে যাচ্ছেন ছোট পর্দার সেরা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। টেলিভিশন ফিচার ফিল্মটি নির্মাণ করেছেন সঞ্জয় সোমাদ্দার। প্রেক্ষাপটে থাকবে সমসাময়িক প্রতিযোগিতা ও নানান অসঙ্গতি।
তবে এবার আগের মত রোমান্টিক-কমেডি নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন গোছের একটি সিরিয়াস ছায়াছবি যেখানে পাওয়া যাবে সাসপেন্স আর থ্রিলের সংমিশ্রণ। ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই। গত ২২ জুনে শেষ হয়েছে শ্যুটিং-এর কাজ।
পড়ুন: ৫০ প্রেক্ষাগৃহে আসছে বুবলি-আদর জুটির ‘তালাশ’
প্রেম-প্রীতির বন্ধন / অপু-জয়
চিত্রনায়িকা অপু বিঃশ্বাস এবার জুটি বাঁধতে যাচ্ছেন এ প্রজন্মের অভিনেতা জয় চৌধুরীর সাথে। এর আগেও তারা একসাথে কাজ করেছেন। কিন্তু প্রধান নায়ক-নায়িকা হিসেবে পূর্ণদৈর্ঘ্য পর্দায় এই প্রথম। চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা ও পরিচালনায় আছেন সোলাইমান লেবু।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিলো উপমা কথাচিত্র প্রযোজিত এই মুভিটির শ্যুটিং শুরু হয়েছিলো গত বছরের মে মাসে। চলচ্চিত্রটির অভিনয় শিল্পীরা হলেন মিশা সওদাগর, আশিক চৌধুরী, আমান রেজা, তাহমিনা মৌ, রেজমিন সেতু, এল আর খান সীমান্ত, হায়দার আলী, হারুন কিনিঞ্জার, এবং জাদু আজাদ।
সাইকো / পূজা-রোশান
এ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকা পূজা চেরীর সপ্তম ছবি হিসেবে আসতে যাচ্ছে সাইকো। এখানে তাকে দেখা যাবে একজন মন্ত্রীর মেয়ের চরিত্রে, যাকে কিডন্যাপ করা হবে। তার বিপরীতে অভিনয় করবেন নায়ক জিয়াউল রোশান। রোশানকে পুলিশ অফিসার ও সাইকো এই দুই ভূমিকায় দেখা যাবে এই সিনেমাটিতে।
পড়ুন: সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল মান্নান রানার কারাদণ্ড
নতুন অভিনেতা হিসেবে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে চরিত্রটি রোশানের জন্য। ক্রাইম জনরার মুভিটি পরিচালনা করেছেন অনন্য মামুন। ছবিটির প্রযোজনায় আছে দুটি সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান- আরবিএস এন্টারটেইনমেন্ট এবং সেলেব্রেটি প্রোডাকশন।
বর্ডার / সাঞ্জু-অধরা
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের ঘটনাবহুল জীবনের গল্প বর্ডার। সামাজিক জীবনের পাশাপাশি এখানে উঠে এসেছে রাজনীতি, চোরাকারবারি, মাদকের আগ্রাসন সহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অনুষঙ্গ। কাহিনির মূল ভাবনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী লেখক ও সাংবাদিক সুদীপ্ত সাইদ খান-এর। গল্পটির উপর নির্ভর করে আসাদ জামান মুভির চিত্রনাট্য ও সংলাপ নির্মাণ করেন। তার সাথে সহচিত্রনাট্যকারের দায়িত্ব পালন করেন মুভিটির পরিচালক সৈকত নাসির।
বর্ডার-এর প্রোডাকশ হাউস ম্যাক্সিমাম এন্টারটেইনমেন্ট। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র দুটিতে কাজ করেছেন অধরা খান। তিনি এখানে গ্রামের প্রভাবশালী ও সৎ একজন নেতার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে নিজেও গ্রামবাসীর সাহায্যে এগিয়ে আসে। তার সহশিল্প হিসেবে আছেন সাঞ্জু জন, আশীষ খন্দকার, রাশেদ মামুন অপু, সুমন ফারুক, রুমান রুনি, মৌমিতা মৌ, বিলাস খান এবং হারুন রশিদ।
পড়ুন: ‘রিক্সা গার্ল’ নাটকে তানজিন তিশা
পরাণ / মিম-রাজ
এবারের ঈদের বেশ কিছু ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ারের মধ্যে দর্শকদের অধীর আগ্রহের খোরাক যোগাচ্ছে রায়হান রাফির এই সিনেমাটি। ২০২০ সালের ভালবাসা দিবসে মুক্তি অপেক্ষায় থাকা চলচ্চিত্রটি অবশেষে দুই বছর পিছিয়ে সামনের কোরবানির ঈদের প্রেক্ষাগৃহে আসতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের রিফাত-মিন্নি-নয়ন-এর চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় ত্রিভুজ প্রেমের ছবিটি।
রাফির সাথে সিনেমার চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন শাহজাহান সৌরভ। ছবির মুল চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে দেখা যাবে বিদ্যা সিনহা মিম, ইয়াশ রোহন, শরিফুল রাজ এবং রাশেদ মামুন অপুকে। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন ইমন চৌধুরী এবং নাভেদ পারভেজ। গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় মুভির একটি গানের টিজার দর্শক মহলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে লাইভ টেকনোলজিস-এর ব্যানারে।
পাপ-পুণ্য - ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার
মনপুরা, স্বপ্নজাল ও গুণিনের মত গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পাপ-পুণ্যও মুক্তির সাথে সাথেই বেশ সুনাম অর্জন করে। এটি মুলত সেলিমের লাভ ট্রিলজির শেষ পর্ব, যার প্রথম দুটি ছিলো মনপুরা ও স্বপ্নজাল। চলতি বছরে গত ২০ মে একযোগে ২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
পড়ুন: রুমি ও পূজার কণ্ঠে জাহিদ আকবরের ‘সাত জনমের ভালোবাসা’
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ও পরিবেশিত এই তারকাবহুল ছবিটি এবার টিভির পর্দায় দেখতে পারবেন দর্শকরা। ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিট থেকে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখানো হবে চলচ্চিত্রটি।
বর্তমান সময়ের ব্যস্ত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও সিয়াম আহমেদ দুজনেই সিনেমাটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রে কাজ করেছেন। এছাড়াও আছেন ফজলুর রহমান বাবু, আফসানা মিমি, মামুনুর রশিদ, মনির খান শিমুল, গাউসুল আলম শাওন, ফারজানা চুমকি, এবং শাহনাজ সুমি।
লাইভ / সাইমন-মাহী
২০২১-এর জানুয়ারি মাসে ভূইঘর প্রোডাকশন হাউসে দৃশ্যধারণ শুরু হয় এই সিনেমাটির। লাইভ টিম প্রধান শামীম আহমেদ রনির পরিচালনায় এক বছরের মধ্যে শ্যুটিং শেষ করে সম্পাদনার কাজ শুরু করা হয়। শাপলা মিডিয়ার ব্যানারে চলচ্চিত্রটির প্রযোজনায় ছিলেন সেলিম খান। সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী সাইমন সাদিককে এই সিনেমায় দেখা যাবে একজন গায়কের চরিত্রে।
পড়ুন: ফের শাকিব-পূজা জুটি
চলচ্চিত্রের অদ্ভূত পোস্টারটি দর্শকদেরকে বেশ ভিন্ন আমেজ দিয়েছে, যা মাহীর আগের ছবিগুলোর পোস্টারে ছিলো না। সেন্সর ছাড়পত্রও পাওয়ার পর এখন চলছে ছবিটির প্রচারণা। মুভিপ্রেমিদের মন মুভিটি কতটুকু জয় করতে পারছে, সেটাই এখন দেখার পালা।
পরিশিষ্ট
২০২২ ঈদুল আযহার বাংলা সিনেমাগুলো নিঃসন্দেহে সিনেমাপ্রেমিদের ঈদ আনন্দ আরো বহুগুণ করে দিবে। ওটিটি প্লাটফর্ম ও টিভি দর্শকরা অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয় মুভিটি স্ট্রীমিং-এর। তবে আশানুরূপ বিগ বাজেট ও কাঙ্ক্ষিত সুপারস্টারদের সিনেমার অভাবে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষরা অবশ্য অনেক আশঙ্কায় আছেন। গত ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলো। এবারের সিনেমাগুলো সেই অবস্থা বজায় রাখতে পারবে কিনা তা অবলোকন করার জন্য ঈদুল আযহা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পড়ুন: গ্রিসে বিশেষ প্রদর্শনীতে 'হাসিনা: এ ডটারস টেল'
১০৩৭ দিন আগে
মাংস সমিতি: সীমিত আয়ের মানুষের ঈদ আনন্দ
১২ বছর আগে ছোট ছোট দুয়েকটি সমিতি গঠনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলায় মাংস সমিতি উদ্যোগটির উদ্ভাবনা। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সারা বছর ধরে নিজেদের জমানো টাকায় পশু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন এই সমিতির সদস্যরা। গ্রামের কতক সীমিত আয়ের মানুষ একত্রিত হয়ে গঠন করেন এই সমিতি। উদ্দেশ্য- নিজেদের ঈদ উদযাপনে কিছুটা বাড়তি আনন্দ যোগ করা।
বিগত বছরগুলোতে উদ্দেশ্যটি যথাযথ ভাবেই সুনিশ্চিত করে আসছে এই সমিতি।
মাংস সমিতি থেকে সদস্যরা যে সুবিধা পাচ্ছেন
গ্রাম পর্যায়ে এ ধরণের ছোট ছোট সমিতির কারণে গ্রামবাসীদেরকে ঈদের সময় বাজার থেকে মাংস ক্রয় করতে হয় না। কোন কোন সমিতিতে সপ্তাহে আবার কোথাও প্রতি মাসে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সমিতির ভারপ্রাপ্ত একজনের নিকট জমা করেন। অতঃপর বছর শেষে সবার জমানো টাকা থেকে একটি পশু কেনা হয়। তারপর সেই পশু জবাই দিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে বন্টনের মাধ্যমে শেষ হয় এর কার্যক্রম। এ থেকে একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ঠ মাংসের যোগান হয়, যা ঈদের বাজার থেকে কিনতে গেলে অনেক বেশী খরচ হোতো।
আরও পড়ুন: খুলনা বিভাগে ঈদের পরে বেড়েছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত
সাধারণত ঈদের মৌসুমে নতুন জামা-কাপড়, সেমাই সহ নিত্য খাবার কেনার পর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মাংস কেনার অবস্থা থাকে না। মাংস সমিতি করার ফলে তারা প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ঈদের সময় ৬ থেকে ৮ কেজি মাংস পাচ্ছেন। এই পরিমাণের মধ্যে নিজেরা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে খাওয়ার পরেও অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করাতে পারছেন।
প্রতি মাসের রোজগার থেকে কিছু টাকা আলাদা করে সমিতিতে জমা করতে তাদের কষ্ট কম হয়। উপরন্তু ঈদের আগের দিন সবাই মিলে নিজেদের পছন্দ মত পশু কিনতে পারেন।
পুরুষদের পাশাপাশি এ ধরণের সমিতিগুলোতে মহিলারাও অংশ নিচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে ঈদের সময় পরিবারগুলো মুক্তি পাচ্ছে আর্থিক চাপ থেকে। সংসারের খরচে বজায় থাকছে সমতা। আর মাংসের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে আত্মীয়স্বজন নিয়ে ঈদ পালনে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি আনন্দ।
দেশ জুড়ে মাংস সমিতির জনপ্রিয়তা
প্রথম দিকে দুয়েকটি করে শুরু হলেও এখন এ ধরণের সমিতির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কসাই ও পেশাদার মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটলেও এখন সব ধরণের পেশাজীবী মানুষেরা মাংস সমিতি গঠন করছেন। শুধু তাই নয়, স্বল্প আয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে এ ধরণের সমিতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে শহরাঞ্চলের স্বচ্ছল মহলগুলোতেও।
আরও পড়ুন: করোনার চেয়ে শক্তিশালী ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ৩২৩ প্রাণ
রাজশাহীর বাঘা, টাঙ্গাইলের সখীপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভাগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে মাংস সমিতির কার্যক্রম। প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে উঠতো এ ধরণের সমিতি। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। এমনকি এখনো প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সদস্য সংখ্যা।
রাজশাহীর কুশাবাড়িয়া, হামিদকুড়া, জতরঘু, গোচর; শুধু এই চার গ্রামেই মাংস সমিতির সংখ্যা ৫০ এর বেশী। ঈদের আগের দিন এখানে জবাই হয় ৩৮ টি গরু ও দুই শতাধিক ছাগল। টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভায় চলতি বছর মাংস সমিতির সংখ্যা হাজার খানেক ছাড়িয়েছে। নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে ৩১৬ টি গ্রামে সমিতি সংখ্যা দাড়িয়েছে সর্বমোট এক হাজারেরও বেশী।
আরও পড়ুন: ঈদে করোনামুক্তি ও ফিলিস্তিনে শান্তির জন্য তথ্যমন্ত্রীর প্রার্থনা
এলাকাগুলোতে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই এখন এ সমিতির সদস্য। একসাথে অনেক লোকের অংশগ্রহণের দরুণ পশু কেনা থেকে শুরু করে ভাগ বাটোয়ারা সব কিছু সহজতর হয়। তাছাড়া এ ঐক্য ঈদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
পশু ভাগাভাগির পর পশুর চামড়া বিক্রির টাকা জমা হয় সমিতির ফান্ডে, যা পরবর্তীতে ব্যয় হয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনায়।
পরিশেষ
একের চেয়ে সমষ্টিগত প্রচেষ্টার সুফলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই মাংস সমিতি। উদ্দেশ্য শুধু ঈদ আনন্দ হলেও এ কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের একসাথে কাজ করার প্রবণতা, পুরণ হচ্ছে নিম্নবিত্তদের মাংসের চাহিদা এবং সংসারে বজায় থাকছে ভারসাম্য।
১৪৩৭ দিন আগে
বন্যায় ভেসে গেছে গাইবান্ধাবাসীর ঈদ আনন্দ
বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে গাইবান্ধার বন্যা দুর্গতদের ঈদের আনন্দ। দুর্যোগ মোকাবিলাই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। হাতে কাজ নেই, নেই টাকা। বন্যা থমকে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। এমন বাস্তবতায় ঈদের দিন সেমাই, মাংস তো দূরের কথা, পেট ভরে একবেলা ভাত খাওয়া যাবে কি না তা নিয়েই তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
১৭৩৯ দিন আগে