শরণার্থী
ব্যাংককে রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আঞ্চলিক বৈঠক ১৭ অক্টোবর
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি আগামী ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর থাইল্যান্ড সফর করবেন।
সফরের অংশ হিসেবে হাইকমিশনার গ্র্যান্ডি ১৭ অক্টোবর ব্যাংককে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আঞ্চলিক বৈঠকের উদ্বোধন করবেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য আবারও কমলো, বাংলাদেশে জরুরি অর্থায়নে জাতিসংঘের আহ্বান
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জেনেভায় গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামের (জিআরএফ) আগে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাওয়া হবে। একই সঙ্গে তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্যও সমর্থন চাওয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার অব স্টেট ফর ইন্দো-প্যাসিফি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: তহবিল কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে নতুন সংকটের মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা: জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাবে জরুরি সেবার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ
রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য নতুন করে আরও ৩০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ৪২ কোটি টাকা) সহায়তা ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের এই নতুন সহায়তা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মাধ্যমে দেওয়া হবে।
স্যার ফিলিপ বার্টন পঞ্চম যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার, এই কৌশলগত সংলাপ তাকেই প্রতিফলিত করে।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন বলেন, ‘আমি ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারের আরও তিন লাখ পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে সোমবার ঢাকা আসছেন
তিনি বলেন, ‘নতুন এই সহায়তা কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন পরিষেবা এবং রান্না করার জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার পর তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এর পর ছয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ও এই সংকটদ্বারা আক্রান্ত সকলের পাশে আছে।’
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছি। যাতে করে শরণার্থীরা নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে; যখন সেখানকার অবস্থা তাদের জন্য অনুকূলে থাকে। যতদিন তা না হয়, যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশের স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা করার জন্য ৩৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড (৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) অর্থ প্রদান করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয়, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থাসেবা ও সুরক্ষা পরিষেবা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ৫ম কৌশলগত সংলাপ মঙ্গলবার
জাতিসংঘের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ সফরে আসছেন ৯ সেপ্টেম্বর
রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সমর্থন বাড়ান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাপানে তার চার দিনের সরকারি সফরের সময় বৃহস্পতিবার টোকিওতে জাপানের পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই আহ্বান জানান।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান থেকে বাঁচতে অনেক সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতির পেছনে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য শরণার্থী শিবির পরিচালনার খরচ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যেই শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওর সঙ্গে দেখা করেন এবং উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে সম্মত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে জাপানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পন্ন করতে চান।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা ও কিশিদার আলোচনা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে মিয়ানমারে ‘নিরাপদ সুরক্ষা অঞ্চল’ তৈরির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায় থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্য ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাসমূহের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও।
মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি এই আহ্বান জানান ।
রোহিঙ্গা সংকট এর ষষ্ঠ বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশি স্থানীয় জনগণের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কর্মকান্ডের যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য মোট ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবে মোট ১১৬টি সংস্থা। এর প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে বাংলাদেশি।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: পুড়ে গেছে ২ হাজার ঘর
আজকের প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে ও ভাসান চরে আশ্রিত ৯ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী চার লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশি জনগণকে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, সুরক্ষা, শিক্ষা, জীবিকার সুযোগ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা।
মিয়ানমারের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের প্রতিটি দিন কাটে অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায়। তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদগ্রীব, কিন্তু সে ক্ষমতা তাদের নেই। অগত্যা তাদের বাস করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে; যেখানকার পরিবেশ কখনও কখনও বিপজ্জনক, আর বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রায় সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
সংকটটি বর্তমানে দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও শরণার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করা এখনও অতি জরুরি। এই শরণার্থীদের ৭৫ ভাগেরও বেশি নারী ও শিশু; যারা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্যাম্পে অর্ধেকেরও বেশি শরণার্থীর বয়স ১৮ -এর নিচে, আর তাদের ভবিষ্যৎ আজ স্থবির।
২০১৭ সালে এই মানবিক সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে থাকা এই মানুষগুলোর সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তথাপি, বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
তহবিল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি, বাসস্থানের উপকরণ, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও জীবিকার সুযোগ কমার মত অনেক চ্যালেঞ্জ এখন প্রতিদিনই এই শরণার্থীদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পে সকল রোহিঙ্গার জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার সুষম খাবার খেতে পারছে না, আর অপুষ্টির হারও ব্যাপক। খাদ্যের বরাদ্দ কমানোর ফলস্বরুপ খুব স্বাভাবিকভাবেই সামনে দেখা যেতে পারে আরও অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা, পড়ালেখা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহের নতুন নতুন ঘটনা, শিশুশ্রম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
এ কারণে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন ধারণকারী সহায়তাগুলো চালু রাখতে আর্থিক সহায়তা জারি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও জীবিকার সুযোগ; যেন শরণার্থীরা তাদের কিছু মৌলিক প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারে। ভাসান চরে স্থানান্তরিত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জীবিকামূলক কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, যা চরের এই প্রকল্পকে টেকসই করার একটি পূর্বশর্ত।
দীর্ঘ শরণার্থী জীবন ও ক্যাম্পের পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোহিঙ্গারা একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় ক্রমবর্ধমান হারে বিপদজনক উপায়ে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। শুধু গত বছরেই সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে, এবং তাদের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে আমরা শুনি প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ার আকূলতা। কিন্তু নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। সে জন্যেই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে দ্রুত সাহায্য করা, এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাওয়া। ঠিক একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে তাদের কার্যকরী সুরক্ষা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশেপাশের স্থানীয় জনগণ প্রতি বছর ভারী মৌসুমী বৃষ্টি ও সাইক্লোনের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে থাকে। এই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা, এবং পুনঃবনায়ন, পুনঃব্যবহার্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উত্তরোত্তর প্রচারণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা। শরণার্থীদের রান্নার জন্য গ্যাস- যা স্থানীয় পরিবেশের উপর চাপ কমিয়েছে দারুণভাবে চালু রাখতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখছে সরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শরণার্থী, অভিবাসন সমস্যা আলোচনায় বাংলাদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী সচিব নয়েস
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক ব্যুরো’র সহকারী সচিব জুলিয়েটা ভালস নয়েস পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরে (৩-৭ ডিসেম্বর) এসেছেন।
শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে সহকারী সচিব নয়েস মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন।
এই বিষয়ে মার্কিন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে তিনি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করবেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীন, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র: রাষ্ট্রদূত হাস
বাংলাদেশ সফরের পর তিনি ৭ থেকে ১০ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে অবস্থান করবেন। সেখানে সহকারী সচিব নয়েস থাইল্যান্ডের ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার জন্য উদ্বাস্তু সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা এবং মানবিক অংশীদারদের জন্য অব্যাহত সমর্থন নিয়ে আলোচনা করতে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করবেন।
জুলিয়েটা ভালস নয়েস সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের একজন ক্যারিয়ার সদস্য। যিনি ২০২২ সালের ৩১ মার্চ জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট হন।
এর আগে, তিনি ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন: ১৮ মিলিয়নের শিক্ষা উদ্যোগ চালু করল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে, কে জিতবে তা নয়: রাষ্ট্রদূত হাস
গাজায় শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ২১ জনের মৃত্যু
ফিলিস্তিনের উত্তর গাজা উপত্যকার একটি শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক ভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন লেগে ২১ জন নিহত হয়েছে।
এ অঞ্চলটির হামাস শাসকরা বলেছেন, ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের সহিংসতার বাইরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।
হামাস জানিয়েছে, জনাকীর্ণ জাবালিয়া ক্যাম্পের তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। বাড়ির ভিতরে কেউ বেঁচে নেই।
হামাস দ্বারা পরিচালিত গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগুনের কারণ ভবনে মজুত করা পেট্রল।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যু, ২ বাংলাদেশি থাকার আশঙ্কা
তবে পেট্রলে কিভাবে আগুন লাগল তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে।
গাজা হামাস শাসিত। ইসরায়েল-মিশরীয় অবরোধের কারণে তীব্র জ্বালানি সংকটের মুখে রয়েছে এখানকার অধিবাসীরা। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার নাগরিকেরা বাড়িতে রান্নার গ্যাস, ডিজেল ও পেট্রল সংরক্ষণ করে। এর আগেও কয়েকবার মোমবাতি ও গ্যাস লিকেজের কারণে বাড়িতে আগুন লেগেছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং শুক্রবারকে শোক দিবস ঘোষণা করেছেন।
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড ‘দুর্ঘটনায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু, সরকার এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুসেইন আল-শেখ ইসরায়েলকে গাজার সঙ্গে তার সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে আহতদেরকে পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় বাড়ির সবাই মারা গেছে।
গাজা স্ট্রিপের সঙ্গে ইরেজ ক্রসিং নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সংস্থা সিওজিএটি কোনো মন্তব্য করেনি।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার সমবেদনা জানিয়ে এ টুইটে লিখেছেন, ‘আমরা সিওজিএটি -এর মাধ্যমে আহত বেসামরিক নাগরিকদের হাসপাতালে সরিয়ে নিতে আমাদের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছি। ইসরায়েল রাষ্ট্র গাজার বাসিন্দাদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: মনপুরায় অগ্নিকাণ্ডে ১৬ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই
মালদ্বীপে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ২ বাংলাদেশি শনাক্ত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বেইজিংয়ের প্রচেষ্টার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে ঢাকা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার বিষয়ে বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার চীনা পক্ষের কাছ থেকে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি চুক্তি সই করে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে আছে।
বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার ধারণাটি নিয়ে চার বছর আগে নিউইয়র্কে কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পটভূমির পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জিমিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা মিয়ানমারের পক্ষের সঙ্গে যেসব কথা বলেছেন তার ভিত্তিতে তারা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফলাফল’ তুলে ধরতে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন ‘আমি এখনই এটি প্রকাশ করতে যাচ্ছি না।’
মিয়ানমারের আশ্বাস সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে একজনকেও ফেরত নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
১৩ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট দেশের একতরফা প্রচেষ্টা নয় বরং রোহিঙ্গা ইস্যুটির মূল বিষয় হচ্ছে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হওয়ায় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য চীন কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যদিও মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ অবস্থা এখনও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন তবুও ‘চীনের মধ্যস্থতায়’ উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়নি এবং প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।
এমতাবস্থায় তিনি বলেন, চীনের পক্ষ আশা করে যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার একই দিকে কাজ করতে পারে যাতে প্রত্যাবাসন তাড়াতাড়ি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন ...
১৭ অক্টোবর মোমেন বলেছিলেন যে রোহিঙ্গাদের আদিস্থান ‘রাখাইন রাজ্যে’ তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিৎ’।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত। মিয়ানমারের উচিৎ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। তাদের এগিয়ে আসা উচিৎ এবং তাদের কাজ করা উচিৎ।’
একইসঙ্গে মোমেন সেইসব দেশগুলোর সমালোচনা করেন, যারা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বললেও তাদের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক ব্যবসা’ করছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে মানবাধিকারকে মূল্য দেন, তবে আপনাকে এটি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।’
মোমেন বলেন, মিয়ানমার তাদের যাচাই-বাছাই শেষে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে এবং আশ্বস্ত করেছে যে তারা সেখানে শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেবে।
তিনি বলেন, ‘তারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি শর্তারোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।’ কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে পারেনি।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানে ইচ্ছা আছে, সেখানে সমস্যা সত্ত্বেও উপায় আছে।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে পৌঁছেছে আরও ৯৬৩ রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা পাচারে জড়িত মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের বিচার করুন: ফোরটিফাই রাইটস
মানবাধিকার সংস্থা ফোরটিফাই রাইটস মালয়েশিয়াকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওয়াং কেলিয়ানের ‘মৃত্যু শিবিরে’ পাচারের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ও মামলায় পুলিশ তদন্তকে ‘ভুলভাবে পরিচালনার’ জন্য মঙ্গলবার দায়ীদের বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার সরকার ২০১৫ সালে দেশে আবিষ্কৃত গণকবর ও পাচার শিবির সম্পর্কে ২০১৯ সালের রয়্যাল কমিশন অব ইনকোয়ারি (আরসিআই) এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আরসিআই’র চেয়ার এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ বলে অভিহিত করে।
প্রতিবেদনটি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এবং এখন এটি ফোরটিফাই রাইটসের দখলে আছে।
ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘দেশের মূল অংশীজনদের অনানুষ্ঠানিক অনলাইন প্রতিবেদনটির অপ্রীতিকর উপস্থিতি, পাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার চলমান অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।’
যেখানে বলা হয়, ‘আরসিআইয়ের অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং শিকার রোহিঙ্গা ও তাদের পরিবারকে ন্যায়বিচারের একটি ধারণা দিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে এবং ওয়াং কেলিয়ানের জঘন্য অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ফেসবুকে রোহিঙ্গা বিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্য রোধে ব্যর্থ হয়েছে মেটা, অ্যামনেস্টির নিন্দা
আরসিআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পাচারের শিকারদের নির্যাতন ও মৃত্যু রোধ করতে পারতেন এবং সেই সরকারি অবহেলা রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ী মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের শনাক্তকরণ ও সঠিক তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে।
ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার এখনও কোনো কর্মকর্তাকে দায়বদ্ধ না করার সত্যটি দেশের ইতিহাসে একটি দাগ যা অবশ্যই সংশোধন করা উচিত। মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাচার ব্যাপক ও নিয়মতান্ত্রিক ছিল। যা বিচার, জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্থ ও তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবিদার।’
আরও পড়ুন: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অবহিত করলেন মোমেন
রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন: মিয়ানমারের উদ্দেশে মোমেন
রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের জন্য ইইউ’র ৬.২ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা অনুমোদন
কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণের জন্য ছয় দশমিক দুই মিলিয়ন ইউরো সাহায্য পুনরায় অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
ইইউ এর সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশন ডিপার্টমেন্ট ডিজি ও ইকোর মাধ্যমে এই সহায়তা আসছে।
সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য অব্যাহত সুরক্ষা এবং সহায়তায় উদার অবদানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে স্বাগত জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য ডিজি ইকো ইউএসিএইচআর -এর অন্যতম প্রধান দাতা।
আরও পড়ুন: আর সম্ভব নয়, রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ বলেন, ‘ইসিএইচও-এর অবদান আমাদেরকে সমন্বিত এবং জবাবদিহিমূলকভাবে মানসম্পন্ন সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক প্রতিক্রিয়া যখন ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করছে, তখন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং ভাসান চরে ইউএনএইচসিআর-এর কার্যক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেকসই সমর্থন অমূল্য রয়ে গেছে’।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক কর্মসূচির তত্ত্বাবধানকারী আনা অরল্যান্ডিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্রমাগত ভয়ানক পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং আমাদের অটল সমর্থনের প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন এটি সুরক্ষার ক্ষেত্রে আসে।’
আরও পড়ুন: দুর্ভাগ্যবশত শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নেই: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
‘শরণার্থীদের জন্য এই অবদান নিশ্চিত করবে ইউএনএইচসিআর, বিশেষ করে সবচেয়ে ভয়ানক এবং ঝুঁকিপূর্ণ যারা তাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুস্থতা উন্নত করতে পর্যাপ্ত এবং অর্থপূর্ণ সুরক্ষা পরিষেবা সরবরাহ করা হয়েছে’।’
ইউএনএইচসিআর-এর অন্যতম অপরিহার্য অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম দাতা ইকো-এর এই অবদান শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও মঙ্গল এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির উপর নজরদারিতে সহযোগিতা করবে, যেখানে শরণার্থীদের
আইনি সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করবে এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ নিশ্চিত করবে। শিশুদের জন্য সুরক্ষা এবং সহায়তা পরিষেবাগুলোতে সহযোগিতা করবে।
মিয়ানমারে সহিংসতা ও নৃশংসতার কারণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পাঁচ বছর পর বর্তমানে ৯ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজারে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আরও ৩০ হাজার শরণার্থী ভাসানচরে বসবাস করছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
মিয়ানমার থেকে আর কোন শরণার্থী নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আর কোন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
শনিবার চা-শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্সের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে তারা বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে না।’
মোমেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারে দেশটির জান্তা বাহিনী ও বিভিন্ন সশস্ত্র দলের মধ্যে সংঘাত চলছে।
এসব ঘটনার সময় মিয়ানমারের নাগরিকরা নৃশংসতার ভয়ে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে।
মোমেন বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ইতোমধ্যে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
শনিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম ইউনিয়নের রেজু আমতলি বিজিবি বিওপি ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের কাছে মিয়ানমারের দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি বিমানকে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারকে সতর্ক করেছে সরকার: মর্টার শেল ছোড়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্থানীয়রা জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও দুটি মর্টার শেল বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ছোড়া হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে গুলির খবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
শনিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহারিয়ার আলম ইউএনবিকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াউ মো কে ডেকে ওই ঘটনার জন্য কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গেল আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় মিয়ানমারকে দুইবার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় গত সোমবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াউ মো কে ডেকে পাঠায় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টারশেল নিক্ষেপের একদিন পরই কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের মর্টার শেল ছোড়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাল ঢাকা