ইউরোপ
মার্কিন বিজ্ঞানীদের টানতে প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইউরোপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত বিজ্ঞানীদের ইউরোপে নিয়ে যেতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় কমিশন (ইইউ)। তাদের ইউরোপে থিতু করতে প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাঁখো ও ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দার লিয়েন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৫ মে) সকালে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ ও গবেষকদের সঙ্গে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল কাঁটছাটসহ মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত বেশ কিছু নীতির ফলে নিজেদের কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত দেশটির অনেক গবেষক। সেসব মার্কিন গবেষকদেরই ইউরোপে আমন্ত্রণ জানাতেই ইউরোপীয় কমিশনার ও একাডেমিকদের মিলিত উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, একাডেমিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপকে একটি আকর্ষণীয় মহাদেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিবৃতিতে।
দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউরোপ এমন একটি জায়গা, যেখানে গবেষণার স্বাধীনতা রয়েছে, কোনো বিষয়ই এখানে নিষিদ্ধ নয়।’
ফ্রান্স ও ইউরোপের এই উদ্যোগ গবেষণার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেবে বলে মনে করেন তিনি। সোমবারে আয়োজিত ‘চুজ ইউরোপ ফর সায়েন্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটিতে স্বাস্থ্য (সংক্রামক রোগ), জলবায়ু গবেষণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করতে ফ্রান্স বিশেষভাবে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: গবেষণায় ট্রাম্পের তহবিল বন্ধের প্রতিবাদে বিজ্ঞানীদের বিক্ষোভ এর আগে, এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় ১৩টি ইউরোপীয় দেশ। পরে এপ্রিল মাসে ফ্রান্স নিজস্ব উদ্যোগে চুজ ফ্রান্স ফর সায়েন্স চালু করা হয়। এই উদ্যোগের আওতায় আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য আবেদন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়।
ফরাসি গবেষণা মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু বিদেশি গবেষক ইতোমধ্যেই ফ্রান্সে এসে দেশটির অবকাঠামোর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন এবং তারা তহবিল ও প্ল্যাটফর্মের অপেক্ষায় আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে হুমকির মুখে রয়েছেন এমন ও বিদেশে ফরাসি গবেষকদের আকৃষ্ট করতে নতুন একটি কর্মসূচি চালু করেছে ফ্রান্সের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস)।
সিএনআরএসের প্রেসিডেন্ট আঁতোয়ান পেতি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমেরিকায় যেসব গবেষকরা নিজেদের সন্তানদের বড় করতে চান না, তাদের ফিরিয়ে আনতে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।’
এদিকে, মার্চে চালু হওয়া এক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেইফ প্লেস ফর সায়েন্স’ কর্মসূচির অধীনে জুন মাসে প্রথম বিদেশি গবেষকরা সেখানে যোগ দেবেন।
মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লেখা এক চিঠিতে ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামন্ত্রী ফিলিপ বাতিস্তে বলেন, ‘অনেক নামকরা গবেষক এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে স্বাগত জানাতে চাই।’
তবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় বিনিয়োগ বহু বছর ধরেই ইউরোপের চেয়ে বেশি। দশকের পর দশক ধরে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রগুলো বিনিয়োগের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে।
তাছাড়া তুলনামূলকভাবে কম বেতন ও অনিরাপদ চুক্তির মতো সমস্যাগুলো নিয়ে প্রায়শই অভিযোগ জানিয়ে আসছে ফরাসি গবেষকরা। গড় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের চেয়ে কম বেতন পান ফরাসি গবেষকরা।
আরও পড়ুন: চাঁদের দূরবর্তী অংশের অজানা তথ্য দিলেন বিজ্ঞানীরা
গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভালো চুক্তি, উন্নত বেতন কাঠামো ও সার্বিকভাবে আরও বেশি অর্থায়নের দাবি জানিয়ে আসছে ফ্রান্সের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন।
জার্মানির আসন্ন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎসে গত মাসে বলেন, ‘আমেরিকান সরকার বর্তমানে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর বলপ্রয়োগ করছে, যার ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ।’
২১৩ দিন আগে
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: ম্যাঁখো
রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তাবিত নিজস্ব সেনাবাহিনী মোতায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ। কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে এই সেনা মোতায়েন করা হতে পারে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। বাহিনীতে থাকতে পারে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) প্যারিসে ৩১টি দেশের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সেনা মোতায়ন নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ম্যাঁখো। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বৃহস্পতিবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ৩০টি দেশের নেতাদের অংশগ্রহণে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ম্যাঁখো বলেন, ‘ইউক্রেনের মাটিতে যারাই হামলা চালাবে, তাদেরও পাল্টা হামলার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের রণকৌশল অনুযায়ী সেনারা শত্রুদের মোকাবিলা করবে।’
ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনে যেসব দেশ সহায়তা করতে আগ্রহী; তাদের নিয়ে একটি জোট গঠন করতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন বলে জানান ম্যাঁখো।
আরও পড়ুন: ‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ থাকা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত ও রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করতে এই উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিমত দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তবে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার জবাবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে; সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।
ম্যাঁখো জানান, প্রস্তাবিত সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা শুরুতেই ফ্রন্টলাইনে (সম্মুখযুদ্ধে) রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। এমনকি এই বাহিনী ফ্রন্টলাইনে অবস্থানও করবে না। ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তায় থাকবে তারা।
ম্যাঁখো বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জোটগুলো এই উদ্যোগ নিয়েছে। যু্দ্ধ জড়াতে নয় বরং ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে এটি একটি শান্তি প্রস্তাব বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া সংঘাত একমাত্রই রাশিয়াই চায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ৩১টি দেশের নেতার উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা সম্মেলন আয়োজন করে প্যারিস। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোসহ ৭টি দেশের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেয়।
এই সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে প্রকাশ্যে কোনো আগ্রহ দেখায়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
অবশ্য ইউরোপীয় নেতাদের এই পরিকল্পনায় অনাগ্রহ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর
তবে ইউরোপের নেতারা জানান, রুশ প্রেসিডেন্টের অতীত কার্যকলাপের ফলে তার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না তারা।
এ সময় ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল ও ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে হামলা চালানোর ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, শান্তিচুক্তি হওয়ার পরও পুনরায় হামলা চালাতে পারে পুতিন। সম্ভাব্য এই হামলা প্রতিহত করতেই ইউক্রেনে সেনা মোতায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফরাসী কর্মকতা জানান, ইউরোপীয় জোটের সেনাবাহিনী ফ্রন্টলাইন থেকে কিছুটা দূরে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, দিনিপার নদীর তীরে মোতায়ন করা হতে পারে।
আবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল বা প্রতিবেশী কোনো দেশেও সেনা মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ওই বাহিনীতে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা থাকতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের পর সেনা সংকুচিত করা ইউরোপের দেশগুলোর সেনাবাহিনী গঠনের এই উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২৫২ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নির্দেশিকা কঠোর করল ইউরোপ
জার্মান নাগরিকসহ বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নাগরিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটকের ঘটনায় দেশটিতে ভ্রমণ নির্দেশিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভ্রমণকারী জার্মান নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
একজন মুখপাত্র সরকারি গণমাধ্যম এআরডির তাগেসচাউকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমতি পেতে শুধু ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইএসটিএ) অনুমোদন বা মার্কিন ভিসাই যথেষ্ট নয়। এসব অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে।’
আরও পড়ুন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় তিনজন জার্মান নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গ্রিন কার্ডধারীও ছিল। পরে তাদের দুইজনকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যও তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে আটক বা নির্বাসিত করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় নাগরিকদের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।’
রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর চলতি মাসের শুরুতে নিশ্চিত করেছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটক এক ব্রিটিশ নাগরিককে সহায়তা করেছে।
এছাড়াও ফিনল্যান্ডও শুক্রবার একই ধরণের ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনে বলেছে, যথাযথ বৈধ ভ্রমণ নথি বর্তমান মার্কিন নীতির অধীনে প্রবেশের নিশ্চয়তা নাও দিতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ভিসা বা ইস্তা আবেদনকারীকে তার লিঙ্গ ও জন্মের সময়ের লিঙ্গ বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে বলেছে। এক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি পেলে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়।
এছাড়া, ফিনিশ কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে জনসমাগম এড়িয়ে চলে। কারণ, ওইসব স্থানে রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কর্তৃপক্ষ।
ফিনল্যান্ডের সম্প্রচারমাধ্যম ইয়েলের মতে, এই কঠোর নীতিমালা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ক্রমবর্ধমান রূপকে তুলে ধরে।
২৫৬ দিন আগে
‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ থাকা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডার পর এবার ইউক্রেনের সমর্থনে ইউরোপকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এ সময় ইউরোপের দেশগুলোতে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারসহ ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই উচিত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা। যার কাছে যা আছে, তা নিয়েই অবদান রাখতে হবে। সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এই বোঝা ভাগ করে নিতে হবে।’
স্থানীয় সময় রবিবার (২ মার্চ) ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে রাজধানী লন্ডনে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্টারমার। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
সম্মেলনে ইউরোপের দেশগুলোকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে পরামর্শ দেন স্টারমার। স্টারমার বলেন, ‘ইউরোপ বর্তমানে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শুধু আলোচনা নয়; এবার সময় এসেছে পদক্ষেপ নেওয়ার।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা ও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন জেলেনস্কি
এর আগে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যে বার্ষিক প্রতিরক্ষা খরচ জিডিপির ২.৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেন কিয়ার স্টারমার। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ইউক্রেন ইস্যুতে সহাবস্থানে ছিল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে হোয়াইট ইউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে এলো নাটকীয় পরিবর্তন।
গত তিন বছর ধরে একযোগেই ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তবে সেই নীতির পরিবর্তন করে ইউক্রেন ও ইউরোপকে এক প্রকার পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসলেন ট্রাম্প প্রশাসন।
এখানেই মতানৈক্য তৈরি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর যুক্তরাষ্ট্রকে যে আর আগের মতো ইউক্রেনের পাশে পাওয়া যাবে না; তা আরও নিশ্চিত করে দিয়েছে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসের ঘটনা।
ওই ঘটনার পর আয়োজিত এই সম্মেলনকে স্টারমার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব দূর করাসহ শুক্রবারের আলোচনার আগে শান্তি আলোচনা যে অবস্থানে ছিলো সেখানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের পাশে থাকার আশ্বাস ইউরোপীয়দের
এছাড়া ইউক্রেন ইস্যুতে এবার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন স্টারমার। তিনি বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সম্মেলনের আলোচনায় ৪টি বিষয়ে ইউরোপীয়দের এক হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তি আলোচনায় কিয়েভকে রাখা, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করবে ইউরোপ এবং সর্বোপরি ইউক্রেনের নিরাপত্তায় জোট গঠন ও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলো একমত হয়েছেন। এ লক্ষ্যেই তারা কাজ করবে বলে জানান।
এর পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। এই অর্থে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে।
তবে ইউক্রেনের সমর্থনে নেওয়া যেকোনো পরিকল্পনায় বাধ সাধতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্টারমার বলেন, এক্ষেত্রে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সম্মেলনের আগে সংবাদ সংস্থা বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ব্যাপারে তীব্র আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: শূন্যহাতে ফিরলেও প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
পরবর্তীতে একটি আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আরও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। স্টারমার জানান, তিনি পুতিনকে বিশ্বাস করেন না কিন্তু ট্রাম্পের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনে জল, আকাশ ও স্থলপথে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেন কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। এ সমযের মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে ইউক্রেনে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চিতের বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
২৭৬ দিন আগে
মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন, চলছে প্রস্তুতি
ফোনালাপ পর্ব শেষে এবার মুখোমুখি বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ায় তার সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের আলোচিত এই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। পুতিন-ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়; বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
সের্গেই রিয়াবকভ জানান, ‘এই বৈঠক দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। তবে বৈঠক আয়োজন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-ট্রুডোর ফোনালাপ
এ সময় বৈঠকের প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশ দুটির রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানান ট্রাম্প। তাদের দীর্ঘ ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় তখন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’
ওভাল অফিসের বৈঠকের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট একমত হয়েছেন, তাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক দল অবিলম্বে আলোচনা শুরু করবে এবং আলোচনার জন্য একে অপরকে নিজেদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবে।’
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদির দিরিয়াহ প্রাসাদে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
তবে সেই বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইউক্রেনের প্রসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
এছাড়াও আলোচনায় ইউরোপকে অর্ন্তভুক্ত না করায় তাদের পাশ কাটিয়ে শান্তি চুক্তির আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউরোপীয় নেতারা।
২৮৪ দিন আগে
ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর
ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বার্থরক্ষায় সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। এ সময় ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের ওপরও গুরুত্ব দিন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই বক্তব্য দেন মিতসোতাকিস।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) গ্রিসের থেসলানোকির একটি বাণিজ্যিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মিতসোতাকিস।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; বিতর্কিত মন্তব্যও করে যাচ্ছেন অনবরত। ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন রাশিয়ার দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্মকান্ড খোদ দেশটিরই বহুদিনের পররাষ্ট্রনীতির বড়সড় পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ইউরোপের নেতারাও।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
মঙ্গলবারে সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন বৈঠক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা তখন ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দ্বন্দ্ব ইউরোপের নেতাদের চিন্তা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে’ পড়েছেন। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
তার বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুতই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপে যে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিতে হবে তাদের।
এ সময় মিতসোতাকিস বলেন, ইউরোপের নিজস্ব একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার দাবি বেশ পুরনো। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে; তা ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠনের যে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
এর আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
মূলত, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উপরই নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলো। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমাগত ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় বেশি বিনিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প ।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই আরও বেশি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোর নতুন করে নিজেদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বৈশ্বিক কূটনৈতিকবৃন্দ।
২৮৭ দিন আগে
ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দেবে ইউরোপ
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্কারোপ করেছে, সেটার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান ভন ডের লিয়ন। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘তারাও কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন।’
আগের দিন বিদেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ করারোপ করে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদেও এমনই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের।
এই শুল্কারোপের কারণে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন মার্কিন ধাতব ব্যবসায়ীরা। কারণ এতে তারা অনেক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সোমবার দেশটির ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ারের দামও বেড়ে গেছে।
ভন ডের লিয়ন বলেন, ‘ইউরোপের স্বার্থ সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যবসায় শুল্ক খারাপ, কিন্তু ভোক্তাদের জন্য সেটা আরও খারাপ। ইউরোপের ওপর অন্যায়ভাবে কর চাপিয়ে দেওয়া হলে জবাব দেওয়া হবে—অনেক কঠোর ও সমানুপাতিক পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাভ শলজ পার্লামেন্টে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের জন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা না রাখে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব দেবে।’
বাণিজ্য যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষকেই খেসারত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ইউরোপ কী ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেবে, তা স্পষ্ট করেনি। এরআগে ২০১৮ সালে ইস্পাতের ওপর শুল্কারোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত মোটরসাইকেল, বোরবন হুইস্কি, পিনাট বাটারসহ বিভিন্ন পণ্যে পাল্টা করারোপ করেছিল ইইউ।
আরও পড়ুন: চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ: জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে না হামাস
এভাবে রাজস্ব আরোপ করা হলে তাতে দুপক্ষের জন্যই হীতে বিপরীত ফল আসবে বলে মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মারকোস সেফকোভিক। তিনি বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার ব্যাপক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কের কারণে যে গভীর ও সমন্বিত উৎপাদন চেইন তৈরি হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিলে এই শুল্কারোপ ভালো ফল দেবে না।
মারকোস সেফকোভিক বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক, ব্যবসা ও ভোক্তাদের আমরা রক্ষা করবো। যদিও এটা আমাদের পছন্দনীয় পথ না, আমরা গঠনমূলক আলোচনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিশীল থাকব। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কাজেই দুপক্ষের স্বার্থরক্ষা করে একটি সমাধানের পথ বের করতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাবে, দুপক্ষের বাণিজ্যের আকার হবে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের, যা বিশ্ব বাণিজ্যের ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। মারকোস সেফকোভিক বলেন, ‘এই করারোপে দুপক্ষের জন্যই ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।’
২৯৬ দিন আগে
অবশেষে ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ড্র অনুষ্ঠিত
বেশ আগে থেকে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের খেলা শুরু হয়ে গেলেও ইউরোপ অঞ্চলের খেলা তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না। অবেশেষে এই অঞ্চলের বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাই পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০২৬ সালে প্রথমবার আয়োজন করা হবে ৪৮ দলের বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে মোট ১৬টি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে। এই ১৬টি স্পটের জন্য ১২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়বে ৫৩টি দেশ।
১২টি গ্রুপের সব গ্রুপে অবশ্য সমান প্রতিপক্ষ নেই। ছয়টি গ্রুপ সাজানো হয়েছে চারটি করে দল নিয়ে। অন্য ছয়টি গ্রুপে রাখা হয়েছে পাঁচটি করে দল। গ্রুপের প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে একটি করে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপের শীর্ষ ১২টি দল সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পাবে।
আরও পড়ুন: ২০২৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যুতেই হবে ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনাল
বাকি চার দল বাছাই করতে গ্রুপগুলোর দ্বিতীয় সেরা ১২ দলের সঙ্গে যুক্ত হবে উয়েফা নেশন্স লিগ খেলা চার দল। নেশন্স লিগের গ্রুপ বিজয়ীদের মধ্যে সেরা, কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে- এমন চারটি দলসহ মোট ১৬ দলের প্লে-অফ অনুষ্ঠিত হবে।
এই ১৬টি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে নকআউট পদ্ধতিতে প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মাধ্যমে বিশ্বকাপের জন্য একেকটি দল নির্বাচিত করা হবে।
বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ২১-২৫ মার্চ, ৬-১০ জুন, ৪-৯ সেপ্টেম্বর, ৯-১৪ অক্টোবর এবং ১৩-১৮ নভেম্বর। ২০২৬ সালের ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্লে-অফ পর্বের ম্যাচগুলো আয়োজন করা হবে। এরপর ওই বছরের ১১ জুন শুরু হবে বিশ্বকাপের মূল আসর।
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলের এই সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আসরের পর্দা নামবে।
আরও পড়ুন: ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনে ১ বিলিয়ন ইউরো ঋণ নেবে মরক্কো
এক নজরে ইউরোপ অঞ্চলের গ্রুপগুলো
গ্রুপ এ: জার্মানি/ইতালি (নেশন্স লিগের ম্যাচ জয়ী), স্লোভাকিয়া, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ।
গ্রুপ বি: সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্লোভেনিয়া ও কসোভো।
গ্রুপ সি: পর্তুগাল/ডেনমার্ক (পরাজিত), গ্রিস, স্কটল্যান্ড ও বেলারুশ।
গ্রুপ ডি: ফ্রান্স/ক্রোয়েশিয়া (জয়ী), ইউক্রেন, আইসল্যান্ড ও আজারবাইজান।
গ্রুপ ই: স্পেন/নেদারল্যান্ডস (জয়ী), তুরস্ক, জর্জিয়া ও বুলগেরিয়া।
গ্রুপ এফ: পর্তুগাল/ডেনমার্ক (জয়ী), হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড ও আর্মেনিয়া।
গ্রুপ জি: স্পেন/নেদারল্যান্ডস (পরাজিত), পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও মাল্টা।
গ্রুপ এইচ: অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সাইপ্রাস এবং সান মারিনো।
গ্রুপ আই: জার্মানি/ইতালি (পরাজিত), নরওয়ে, ইসরায়েল, এস্তোনিয়া ও মলদোভা।
গ্রুপ জে: বেলজিয়াম, ওয়েলস, নর্থ মেসিডোনিয়া, কাজাখস্তান ও লিখটেনস্টেইন।
গ্রুপ কে: ইংল্যান্ড, সার্বিয়া, আলবেনিয়া, লাটভিয়া ও অ্যান্ডোরা।
গ্রুপ এল: ফ্রান্স/ক্রোয়েশিয়া (পরাজিত), চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনিগ্রো, ফারাও আইল্যান্ড ও জিব্রাল্টার।
৩৫৬ দিন আগে
ইউরোপের দেশ না হয়েও ইসরায়েল কেন উয়েফার প্রতিযোগিতায়
দক্ষিণ ইসরায়েলে গাজার শাসক দল হামাসের গত বছরের অক্টোবরের হামলার জেরে উপত্যকাটিতে অব্যাহত অগ্রাসনের কারণে বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারায় ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।
গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা শঙ্কায় নেশন্স লিগে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনে অস্বীকৃতি জানায় বেলজিয়াম। পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরির একটি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৬ নভেম্বর রাতে প্যারিসের পার্ক দে প্রান্স স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজি-আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচের আগে গ্যালারি থেকে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিশাল ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পরের দিন রাতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ইউরোপা লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচের পর ইসরায়েলি ক্লাব মাকাবি তেল আবিবের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।
একই ঘটনা দেখা গেছে ফ্রান্সে নেশন্স লিগের ম্যাচ আয়োজনের আগেও। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো প্যারিস শহর।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল প্যারিস
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ইউরোপের প্রতিযোগিতায় খেলে ইসরায়েল ও তার ক্লাবগুলো।
এর উত্তর পেতে আমাদের ঢুঁ মারতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৪৮ সালে দেশটির জাতীয় ফুটবল দল গঠন হয়। এর আগে ১৯২৯ সাল থেকেই ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) ব্যানারে ফিফার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছিলেন ইহুদি খেলোয়াড়রা। সে সময় আরব, ইহুদি, এমনকি ব্রিটিশ শাসনামলে ওই অঞ্চলে কর্মরত ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাদের ক্লাবগুলোও পিএফএর অধীনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিত।
জাতীয় দল গঠনের পর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসির একেবারে শুরুর দিকে আয়োজিত কয়েকটি এশিয়ান কাপেও অংশ নেয় ইসরায়েল। ১৯৫৬ সালে এশিয়ান কাপের প্রথম আসরসহ ১৯৬০, ১৯৬৪ ও ১৯৬৮ সালের আসরে অংশ নেয় ইসরায়েল জাতীয় ফুটবল দল। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে এশিয়ান কাপের শিরোপা জেতে দেশটি।
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মিসর ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের ইয়ম কিপুর যুদ্ধের অবসানের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থেকে। আরব দেশগুলোর সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ফুটবলের ময়দানেও ছাপ ফেলে। সে সময় প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে কুয়েতের তদবিরে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে এএফসি থেকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দিলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি।
আরব লিগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দেশের ফুটবল বাঁচাতে বিকল্প খুঁজতে থাকে ইসরায়েল। এশিয়া থেকে বের হয়ে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য ওশেনিক ফুটবল ফেডারেশনে (ওএফসি) যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে দেশটি।
পরে সদস্য দেশ না হয়েও উয়েফার বিশেষ অনুগ্রহে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায় ইসরায়েল। ১৯৮২ সালে উয়েফা এবং তার পরের দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওএফসির অধীনে খেলে তারা।
আরও পড়ুন: নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা
পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি কৌশলগত সমাধানের অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে ইসরায়েলি ক্লাবগুলোকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দেয় উয়েফা। এরপর ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তার পর থেকে স্থায়ীভাবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) ও নেশন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতায় ইসরায়েল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করে চলেছে দেশটির ক্লাবগুলো।
ইউরোপের এলিট ফুটবলে খেললেও গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিভিন্ন ক্লাব ও সমর্থকদের প্রতি ক্ষোভ থেকে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিষয়টি কেবল ক্রীড়া ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষা রাজনীতিসহ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঙ্গনে।
অবশ্য ফুটবলকে কেন্দ্র করে ইহুদিদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে প্রায়ই। সবশেষ গত রাতে অনুষ্ঠিত ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগেও এমন ঘটনার কথা জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ম্যাচের আগে প্যারিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসরায়েলের সমর্থনকারী ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ইহুদিরা। ফ্রান্সে বসবাসকারী ইহুদিদের সংগঠিত করতে মূলত ‘ইসরায়েল ইজ ফরেভার’ নামের একটি ইসরায়েলপন্থি সংগঠন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য তহবিল সংগ্রহও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ছিল বলে খবর পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ফুটবলে ১৯৬৪ সালের এশিয়ান কাপ জয়ই ইসরায়েলের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় অর্জন। উয়েফার কোনো প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেনি তারা।
উয়েফায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ২০০৮ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ১৫তম অবস্থানে উঠেছিল ইসরায়েল। এ র্যাঙ্কিংয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান ৮১তম।
৩৮৪ দিন আগে
লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানাবিধ সুবিধা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পড়াশোনার উদ্দেশ্যে এই দীর্ঘ যাত্রায় সঞ্চিত হয় অমূল্য অভিজ্ঞতা, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর সার্বিকভাবেই উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষত নতুন শিক্ষাব্যবস্থা এবং বহুজাতি সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা এক বিরাট অর্জন। সেই সঙ্গে স্থানীয় নীতিমালা ও আর্থিক দিকগুলো ভারসাম্য দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্বনির্ভরতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়। এই সমুদয় প্রচেষ্টাকে আরও সহজ করে তোলে সেই অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশটির সাশ্রয়ী অবস্থান। এই বিবেচনায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অনেকটা এগিয়ে লিথুয়ানিয়া। জীবনধারণ ও শিক্ষাসেবা খরচ কম হলেও তাতে মানের কোনো ঘাটতি নেই। চলুন, লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের প্রয়োজনীয় খরচ, ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানা দিকগুলো সম্বন্ধে ধারণা নেওয়া যাক।
লিথুয়ানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
শিক্ষাক্ষেত্রে ইইউয়ের (ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন) সদস্য রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ার মূল আকর্ষণ হলো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্বমানের শিক্ষাসেবা। এগুলোতে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা প্রোগ্রামের সংখ্যা ৩৫০ টিরও বেশি, যার সবগুলোই ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে স্বীকৃত।
সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিল্নিয়াস ইউনিভার্সিটি, কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ যার অবস্থান ৪৭৩। এডি সায়েন্টিফিক ইন্ডেক্স বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গোটা ইউরোপে ৪৮৪ এবং বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ২১৭-তম অবস্থানে রেখেছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে লিথুয়ানিয়া গমনের হার ৭১ দশমিক ৯১ শতাংশ। পরিসংখ্যানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিকট লিথুয়ানিয়ার ক্রমশ গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উপরন্তু, দেশটির সমৃদ্ধ চাকরির বাজারের একটি বিরাট অংশ হচ্ছে তরুণ এবং সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী। এরা শিক্ষা, ক্যাটারিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক পরিষেবার মতো সেক্টরগুলোতে সৃজনশীল ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে দেশটি শুধুমাত্র অধ্যয়নের জন্যই নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মজীবন গড়ার জন্যও আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
লিথুয়ানিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রিয় কোর্সগুলো
ইউরোপ জুড়ে স্বনামধন্য লিথুয়ানিয়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
• ভিলনিয়স ইউনিভার্সিটি
• কওনাস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
• ভিল্নিয়স গ্যাডিমিনাস টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
• ভিতওতাস ম্যাগ্নাস ইউনিভার্সিটি
• মিকলাস রমেরিস ইউনিভার্সিটি
• লিথুয়ানিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সায়েন্সেস
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়:
• মেডিসিন
• অ্যাকাউন্টিং এবং অডিট
• ফ্যাশন ইঞ্জিনিয়ারিং
• স্থাপত্য
• ব্যবসা এবং জনপ্রশাসন
• আইন
• পারফর্মিং আর্টস
• প্রকৌশল বিজ্ঞান
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন পদ্ধতি
বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত দুটি ইন্টেকে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন করতে পারে। প্রথম ও অ্যাডমিশন পিক টাইম হলো সেপ্টেম্বর মাস যেটি অটাম ইন্টেক হিসেবে পরিচিত। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মৌসুমে ভর্তি কম হলেও অনেক শিক্ষার্থীদের জন্যই সময়টি অটামের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করে। আবেদনের সময়সীমা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদনগুলো যাচাই করে, যা সম্পন্ন করতে এক মাস বা তার বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• ইউনির্ভাসিটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে পূরণকৃত আবেদন
• শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মার্কশীট সহ): লিথুয়ানিয়ান সেন্টার ফর কোয়ালিটি অ্যাসেস্মেন্ট ইন হায়ার এডুকেশন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে
• কারিকুলাম ভিটা
• উচ্চশিক্ষার জন্য লিথুয়ানিয়াকে বেছে নেওয়ার কারণ উল্লেখপূর্বক কয়েক কপি মোটিভেশনাল লেটার
• বৈধ পাসপোর্ট
• সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• আবেদন ও অধ্যয়ন ফি পরিশোধের রশিদ
• জীবনযাত্রার খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণ স্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট
• ইংরেজি দক্ষতার শংসাপত্র: ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ বা টোফেল স্কোর ৮১
আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
পড়াশোনার জন্য এই ইউরোপীয়ান দেশটিতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল ডি-টাইপ ভিসার আবেদন করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিনের মধ্যে জারি করা এই ভিসায় কমপক্ষে ৯১ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত লিথুয়ানিয়ায় থাকার অনুমতি পাওয়া যায়। এর জন্য লিথুয়ানিয়ান মাইগ্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইজিআরআইএস) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
১ বছরেরও দীর্ঘ সময় অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দেশটিতে পৌঁছে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। এই পারমিট দেশটির মাইগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা হয়।
ন্যাশনাল ভিসা ফি ১৪০ ইউরো, যা প্রায় ১৮ হাজার ৪০ টাকার (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ৮৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান।
বাংলাদেশের লিথুয়ানিয়া কনস্যুলেটে সাধারণত কোনো ধরণের ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। এর জন্য প্রার্থীদের সাধারণত ভারতে যেতে হয়। এছাড়াও বিকল্পভাবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকেও লিথুয়ানিয়ার ভিসা করা যায়।
আরো পড়ুন: জাপানে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
৩৮৯ দিন আগে