ইউরোপ
ইউরোপের দেশ না হয়েও ইসরায়েল কেন উয়েফার প্রতিযোগিতায়
দক্ষিণ ইসরায়েলে গাজার শাসক দল হামাসের গত বছরের অক্টোবরের হামলার জেরে উপত্যকাটিতে অব্যাহত অগ্রাসনের কারণে বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারায় ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।
গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা শঙ্কায় নেশন্স লিগে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনে অস্বীকৃতি জানায় বেলজিয়াম। পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরির একটি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৬ নভেম্বর রাতে প্যারিসের পার্ক দে প্রান্স স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজি-আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচের আগে গ্যালারি থেকে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিশাল ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পরের দিন রাতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ইউরোপা লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচের পর ইসরায়েলি ক্লাব মাকাবি তেল আবিবের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।
একই ঘটনা দেখা গেছে ফ্রান্সে নেশন্স লিগের ম্যাচ আয়োজনের আগেও। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো প্যারিস শহর।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল প্যারিস
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ইউরোপের প্রতিযোগিতায় খেলে ইসরায়েল ও তার ক্লাবগুলো।
এর উত্তর পেতে আমাদের ঢুঁ মারতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৪৮ সালে দেশটির জাতীয় ফুটবল দল গঠন হয়। এর আগে ১৯২৯ সাল থেকেই ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) ব্যানারে ফিফার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছিলেন ইহুদি খেলোয়াড়রা। সে সময় আরব, ইহুদি, এমনকি ব্রিটিশ শাসনামলে ওই অঞ্চলে কর্মরত ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাদের ক্লাবগুলোও পিএফএর অধীনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিত।
জাতীয় দল গঠনের পর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসির একেবারে শুরুর দিকে আয়োজিত কয়েকটি এশিয়ান কাপেও অংশ নেয় ইসরায়েল। ১৯৫৬ সালে এশিয়ান কাপের প্রথম আসরসহ ১৯৬০, ১৯৬৪ ও ১৯৬৮ সালের আসরে অংশ নেয় ইসরায়েল জাতীয় ফুটবল দল। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে এশিয়ান কাপের শিরোপা জেতে দেশটি।
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মিসর ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের ইয়ম কিপুর যুদ্ধের অবসানের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থেকে। আরব দেশগুলোর সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ফুটবলের ময়দানেও ছাপ ফেলে। সে সময় প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে কুয়েতের তদবিরে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে এএফসি থেকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দিলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি।
আরব লিগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দেশের ফুটবল বাঁচাতে বিকল্প খুঁজতে থাকে ইসরায়েল। এশিয়া থেকে বের হয়ে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য ওশেনিক ফুটবল ফেডারেশনে (ওএফসি) যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে দেশটি।
পরে সদস্য দেশ না হয়েও উয়েফার বিশেষ অনুগ্রহে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায় ইসরায়েল। ১৯৮২ সালে উয়েফা এবং তার পরের দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওএফসির অধীনে খেলে তারা।
আরও পড়ুন: নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা
পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি কৌশলগত সমাধানের অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে ইসরায়েলি ক্লাবগুলোকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দেয় উয়েফা। এরপর ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তার পর থেকে স্থায়ীভাবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) ও নেশন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতায় ইসরায়েল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করে চলেছে দেশটির ক্লাবগুলো।
ইউরোপের এলিট ফুটবলে খেললেও গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিভিন্ন ক্লাব ও সমর্থকদের প্রতি ক্ষোভ থেকে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিষয়টি কেবল ক্রীড়া ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষা রাজনীতিসহ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঙ্গনে।
অবশ্য ফুটবলকে কেন্দ্র করে ইহুদিদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে প্রায়ই। সবশেষ গত রাতে অনুষ্ঠিত ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগেও এমন ঘটনার কথা জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ম্যাচের আগে প্যারিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসরায়েলের সমর্থনকারী ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ইহুদিরা। ফ্রান্সে বসবাসকারী ইহুদিদের সংগঠিত করতে মূলত ‘ইসরায়েল ইজ ফরেভার’ নামের একটি ইসরায়েলপন্থি সংগঠন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য তহবিল সংগ্রহও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ছিল বলে খবর পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ফুটবলে ১৯৬৪ সালের এশিয়ান কাপ জয়ই ইসরায়েলের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় অর্জন। উয়েফার কোনো প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেনি তারা।
উয়েফায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ২০০৮ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ১৫তম অবস্থানে উঠেছিল ইসরায়েল। এ র্যাঙ্কিংয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান ৮১তম।
১ সপ্তাহ আগে
লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানাবিধ সুবিধা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পড়াশোনার উদ্দেশ্যে এই দীর্ঘ যাত্রায় সঞ্চিত হয় অমূল্য অভিজ্ঞতা, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর সার্বিকভাবেই উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষত নতুন শিক্ষাব্যবস্থা এবং বহুজাতি সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা এক বিরাট অর্জন। সেই সঙ্গে স্থানীয় নীতিমালা ও আর্থিক দিকগুলো ভারসাম্য দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্বনির্ভরতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়। এই সমুদয় প্রচেষ্টাকে আরও সহজ করে তোলে সেই অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশটির সাশ্রয়ী অবস্থান। এই বিবেচনায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অনেকটা এগিয়ে লিথুয়ানিয়া। জীবনধারণ ও শিক্ষাসেবা খরচ কম হলেও তাতে মানের কোনো ঘাটতি নেই। চলুন, লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের প্রয়োজনীয় খরচ, ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানা দিকগুলো সম্বন্ধে ধারণা নেওয়া যাক।
লিথুয়ানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
শিক্ষাক্ষেত্রে ইইউয়ের (ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন) সদস্য রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ার মূল আকর্ষণ হলো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্বমানের শিক্ষাসেবা। এগুলোতে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা প্রোগ্রামের সংখ্যা ৩৫০ টিরও বেশি, যার সবগুলোই ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে স্বীকৃত।
সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিল্নিয়াস ইউনিভার্সিটি, কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ যার অবস্থান ৪৭৩। এডি সায়েন্টিফিক ইন্ডেক্স বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গোটা ইউরোপে ৪৮৪ এবং বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ২১৭-তম অবস্থানে রেখেছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে লিথুয়ানিয়া গমনের হার ৭১ দশমিক ৯১ শতাংশ। পরিসংখ্যানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিকট লিথুয়ানিয়ার ক্রমশ গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উপরন্তু, দেশটির সমৃদ্ধ চাকরির বাজারের একটি বিরাট অংশ হচ্ছে তরুণ এবং সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী। এরা শিক্ষা, ক্যাটারিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক পরিষেবার মতো সেক্টরগুলোতে সৃজনশীল ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে দেশটি শুধুমাত্র অধ্যয়নের জন্যই নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মজীবন গড়ার জন্যও আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
লিথুয়ানিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রিয় কোর্সগুলো
ইউরোপ জুড়ে স্বনামধন্য লিথুয়ানিয়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
• ভিলনিয়স ইউনিভার্সিটি
• কওনাস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
• ভিল্নিয়স গ্যাডিমিনাস টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
• ভিতওতাস ম্যাগ্নাস ইউনিভার্সিটি
• মিকলাস রমেরিস ইউনিভার্সিটি
• লিথুয়ানিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সায়েন্সেস
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়:
• মেডিসিন
• অ্যাকাউন্টিং এবং অডিট
• ফ্যাশন ইঞ্জিনিয়ারিং
• স্থাপত্য
• ব্যবসা এবং জনপ্রশাসন
• আইন
• পারফর্মিং আর্টস
• প্রকৌশল বিজ্ঞান
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন পদ্ধতি
বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত দুটি ইন্টেকে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন করতে পারে। প্রথম ও অ্যাডমিশন পিক টাইম হলো সেপ্টেম্বর মাস যেটি অটাম ইন্টেক হিসেবে পরিচিত। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মৌসুমে ভর্তি কম হলেও অনেক শিক্ষার্থীদের জন্যই সময়টি অটামের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করে। আবেদনের সময়সীমা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদনগুলো যাচাই করে, যা সম্পন্ন করতে এক মাস বা তার বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• ইউনির্ভাসিটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে পূরণকৃত আবেদন
• শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মার্কশীট সহ): লিথুয়ানিয়ান সেন্টার ফর কোয়ালিটি অ্যাসেস্মেন্ট ইন হায়ার এডুকেশন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে
• কারিকুলাম ভিটা
• উচ্চশিক্ষার জন্য লিথুয়ানিয়াকে বেছে নেওয়ার কারণ উল্লেখপূর্বক কয়েক কপি মোটিভেশনাল লেটার
• বৈধ পাসপোর্ট
• সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• আবেদন ও অধ্যয়ন ফি পরিশোধের রশিদ
• জীবনযাত্রার খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণ স্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট
• ইংরেজি দক্ষতার শংসাপত্র: ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ বা টোফেল স্কোর ৮১
আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
পড়াশোনার জন্য এই ইউরোপীয়ান দেশটিতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল ডি-টাইপ ভিসার আবেদন করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিনের মধ্যে জারি করা এই ভিসায় কমপক্ষে ৯১ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত লিথুয়ানিয়ায় থাকার অনুমতি পাওয়া যায়। এর জন্য লিথুয়ানিয়ান মাইগ্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইজিআরআইএস) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
১ বছরেরও দীর্ঘ সময় অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দেশটিতে পৌঁছে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। এই পারমিট দেশটির মাইগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা হয়।
ন্যাশনাল ভিসা ফি ১৪০ ইউরো, যা প্রায় ১৮ হাজার ৪০ টাকার (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ৮৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান।
বাংলাদেশের লিথুয়ানিয়া কনস্যুলেটে সাধারণত কোনো ধরণের ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। এর জন্য প্রার্থীদের সাধারণত ভারতে যেতে হয়। এছাড়াও বিকল্পভাবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকেও লিথুয়ানিয়ার ভিসা করা যায়।
আরো পড়ুন: জাপানে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ সপ্তাহ আগে
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
বাস্তবধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এবং সুরক্ষিত আর্থ-সামাজিক অবস্থা সামগ্রিকভাবে একটি দেশে বজায় রাখে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ। এর ধারাবাহিকতায় উন্নত হয় সাধারণ জনজীবন; আর এই উন্নত জীবন ব্যবস্থা দেশটিকে অভিবাসনের উপযুক্ত গন্তব্যে পরিণত করে। বিগত কয়েক দশক জুড়ে এমন কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছে ইউরোপের দেশগুলো। অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশগুলোতে ক্যারিয়ার গঠন করছে উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্ব সেরা বিদ্যাপিঠ এবং বহুজাতি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ। চলুন, ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার আবেদন, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন ফিনল্যান্ড উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সদস্য রাষ্ট্র পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২৬ দশমিক ২ গ্লোবাল ক্রাইম ইন্ডেক্স নিয়ে শীর্ষ সুরক্ষিত দেশগুলোর তালিকায় এর অবস্থান ২৩ নম্বরে। এছাড়া বিশ্বের ১৩তম এই শান্তিপূর্ণ দেশটির গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্স ১ দশমিক ৪৭৪।
নিরাপদ পরিবেশের পাশাপাশি ফিনল্যান্ডের বিদ্যাপিঠগুলোর খ্যাতি শুধু ইউরোপেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত। কিউএস র্যাংকিং-এ ১০৯তম অবস্থানে থাকা ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম অ্যাল্টো ইউনিভার্সিটি। ১১৫তম র্যাংকটি ধরে রেখেছে ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি। ইউনিভার্সিটি অব অউলুর অবস্থান ৩১৩ এবং ইউনিভার্সিটি অব তুর্কুর অবস্থান ৩১৫ নম্বরে। ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে ৩৫১তম র্যাংকে।
আরো পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত
সেঙ্গেনভুক্ত এই দেশের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, হাই-স্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজন হবে স্নাতক ডিগ্রি। প্রাসঙ্গিক একাডেমিক বিষয়ে সম্পন্ন ক্রেডিট পয়েন্ট ইসিটিএসেরে (ইউরোপিয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জিম্যাট বা জিআরই স্কোর চাইতে পারে। ইউএএস (ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্সের জন্য আলাদাভাবে দরকার হবে ২ বছরের প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা। ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলোর জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি গবেষণা প্রস্তাব বা প্রকাশনা থাকতে হবে।
এছাড়া কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে প্রবেশিকা পরীক্ষা, এসএটি পরীক্ষা বা অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়া হতে পারে।
ফিনল্যান্ডের সাধারণ ভাষা ফিনিশ ও সুইডিশ হলেও এখানে ব্যাপক হারে ইংরেজিতে যোগাযোগের প্রচলন আছে। অধিকাংশ ফিনিশরাই বিশেষ করে তরুণরা খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করে স্থানীয় ভাষা জানার দরকার পড়ে না। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য সাধারণত আইইএলটিএস বা টিওইএফএল-এর ফলাফলকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়।
আরো পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
ফিনল্যান্ডসহ গোটা ইউরোপে বহুল সমাদৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
* আল্টো ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি* ইউনিভার্সিটি অব অউলু* ইউনিভার্সিটি অব তুর্কু* ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি* লুট ইউনিভার্সিটি* ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব জিভাস্কিলা* ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড* অ্যাবো একাডেমি ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব ভাসা
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
ফিনিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো:
* কম্পিউটার সায়েন্স ও আইটি* ব্যবসায় প্রশাসন* সাস্টেইনেবল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি* রিনিউয়েবল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং* আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন অ্যান্ড কেয়ার* ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট* ডিজাইন ও মিডিয়া
আরো পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ইউরোপের এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত দুটি মৌসুমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়। অটাম সেমিস্টার যেটি শুরু হয় আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে এবং স্প্রিং সেমিস্টার যার শুরু হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। উভয় ক্ষেত্রে ভর্তির সময়সীমা সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত থাকে।
এখানে মূলত তিনটি উপায়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন আবেদন করতে পারে।
* ইউএএসগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে* অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে* স্টাডিইনফোর ওয়েবসাইটে (https://opintopolku.fi/konfo/en/)
ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউএএসগুলোর রয়েছে নিজস্ব পদ্ধতি, মানদণ্ড ও নথির তালিকা। তবে ইউনিভার্সিটিগুলো সাধারণত দুটি উপায়ে আবেদন গ্রহণ করে।
*যৌথ আবেদন
* পৃথক আবেদন। যৌথ আবেদনে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৬টি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। আর পৃথক আবেদনটি হচ্ছে চিরাচরিত পদ্ধতি, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে শুধু একটি প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ থাকে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে থেকে জার্মান ভাষার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট পাওয়ার উপায়
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণত যে নথিগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়, সেগুলো হলো:
* সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করা আবেদনপত্র* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও ডিপ্লোমার প্রত্যয়িত কপি* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টিওইএফএল)* পাসপোর্টের কপি
ইউএএস-এ আবেদনের ক্ষেত্রে
*কর্মসংস্থানের প্রমাণপত্র*প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আবেদন*মাস্টার্স বা ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য
*সিভি* মোটিভেশন লেটার বা পার্সনাল স্টেটমেন্ট* রেফারেন্স লেটার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)* প্রকাশনা (ডক্টরেটের ক্ষেত্রে)* ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ ও পাসপোর্ট ছাড়া বাকি সমস্ত নথি যদি বাংলায় হয়, তাহলে সেগুলোর অফিসিয়াল অনূদিত সংস্করণ সংযুক্ত করতে হবে।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথমে ৯০ দিনের অধিক সময় ফিনল্যান্ডে থাকার জন্য প্রদান করা আবাসিক অনুমোদনের আবেদন করতে হয়। এতে অধ্যয়নের পুরোটা সময়ে দেশটিতে থাকাসহ খণ্ডকালীন চাকরির অনুমতি পাওয়া যায়।
স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য ফিনল্যান্ডে আসতে হলে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য আবাসিক অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রে ২ বছর পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
আবাসিক অনুমোদন পাওয়ার সাপেক্ষে ডি টাইপ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এই ভিসা শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আবাসিক অনুমতি মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভিসার আবেদন শুরু করা উচিত। এতে করে পার্মিট ইস্যূ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ফিনল্যান্ড প্রবেশ করে সেখান থেকে বসবাসের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা যায়। অবশ্য ডি ভিসাসহ বসবাসের অনুমতি নিয়ে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ দিন মেয়াদ থাকে।
আবাসিক অনুমোদনের জন্য সরাসরি এন্টার ফিনল্যান্ডের ওয়েবসাইটে (https://enterfinland.fi/eServices/account/emailregistration) অ্যাকাউন্ট তৈরির মাধ্যমে অনলাইন আবেদন করা যাবে। অনলাইনে জমা দেওয়ার পর পূরণ করা ফর্ম ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে হাতে স্বাক্ষর করতে হবে। অতঃপর ভিসার অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে একত্রিত করে দূতাবাসে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: যে ১০টি দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়তে পারবেন
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণসহ দূতাবাসে জমা দিতে যে সমস্ত নথি প্রস্তুত করা প্রয়োজন, সেগুলো হলো:
* ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার* বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা এবং ফিনল্যান্ডে পৌঁছার দিন থেকে অতিরিক্ত ৬ মাস পর্যন্ত মেয়াদ সম্পন্ন)* আয়ের প্রমাণপত্র (চাকরির সনদ)* আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ। শিক্ষাবর্ষের প্রথম বছরের আর্থিক সঙ্কুলানের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫৬০ ইউরো বা প্রায় ৭১ হাজার ৮৬০ টাকা (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)। অর্থাৎ বার্ষিক ৬ হাজার ৭২০ ইউরোর (প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার ৩১১ টাকা) ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করতে হবে।* স্কলারশিপ বা স্পন্সর পেয়ে থাকলে তার প্রমাণপত্র* স্বাস্থ্য বিমার শংসাপত্র: অধ্যয়নের সময়সীমা ২ বছরের বেশি হলে ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো (১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৫ টাকা)। আর ২ বছরের কম হলে ৪০ হাজার ইউরো (৫১ লাখ ৩২ হাজার ৮০২ টাকা)।* এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে অতিরিক্ত সংযুক্তি চাওয়া হতে পারে।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন
দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
এন্টার ফিনল্যান্ড-এ আবেদন সম্পন্ন করার পর প্রথম কাজ হচ্ছে ভারতে অবস্থিত ফিনল্যান্ড দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া। এর জন্য https://services.vfsglobal.com/ind/en/frp/register লিংকে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইন বুকিং সম্পন্ন করতে হবে। বুকিং দেওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখ এবং সময়ে সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষমাণা তালিকা প্রকাশ করা হয়। অতঃপর দিনক্ষণ অনুযায়ী ভিসার আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র মূল কপিসহ দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়।
দূতাবাসের ঠিকানা: ই-৩, ন্যায়া মার্গ, চাণক্যপুরী, নয়া দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত।
দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলাসহ প্রার্থীর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়। সাক্ষাৎকার শেষে আবেদন ফিনিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন: নরওয়েতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের উপায়
আবাসিক অনুমোদন প্রাপ্তি
ফিনিশ অভিবাসন সার্ভিসে আবেদন যাচাইয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খামে (ডিসিশন এনভেলপ) করে দূতাবাসে পাঠানো হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রার্থী ই-মেইল এবং এন্টার ফিনল্যান্ডে তার অ্যাকাউন্ট থেকেও দেখতে পারেন। আর খামটি সংগ্রহের জন্য সশরীরে দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়।
সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক হওয়া মানেই এবার শিগগিরই ডি ভিসার জন্য আবেদন করার পালা। সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ভিসা প্রাপ্তির পর ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করে আবাসিক অনুমোদন কার্ড সংগ্রহ করা যেতে পারে। মূলত এই অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ৬ মাস থেকে শুরু করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ৯ মাসও লেগে যেতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত খাম প্রাপ্তির পর কার্ড তৈরি হতে সময় লাগে ২ সপ্তাহ। এই কার্ড সংগ্রহের সময় বৈধ পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ
অনলাইনে রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন ফি বা পার্মিটের প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩৫০ ইউরো বা প্রায় ৪৪ হাজার ৯১২ টাকা। ডি-টাইপ ভিসার ফি ৯৫ ইউরো (প্রায় ১২ হাজার ১৯১ টাকা)। দূতাবাসের তথা ভিএফএস সার্ভিস চার্জ ৭০ ইউরো (প্রায় ৮ হাজার ৯৮৩ টাকা)।
প্রতিটা ফি অনলাইনে ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে অথবা দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের সময়ে পরিশোধ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে, অবলাইনে বা কাগুজে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি এবং প্রক্রিয়াকরণ সময় উভয়ই তুলনামূলকভাবে বেশি।
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
স্নাতক অধ্যয়নে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৪ থেকে ১২ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৮১ থেকে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪১ টাকার সমান। আর মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য খরচ হতে পারে ৮ থেকে ১৮ হাজার ইউরো (প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ থেকে ২৩ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ টাকা)।
পিএইচডির ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্পন্সর করা হয়, তাই দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফ্রি থাকে। এখানে গবেষণার পাশাপাশি আবাসনের ব্যয়ভারও বহন করা হয়।
ফিনল্যান্ডে বাড়ি ভাড়া বাবদ গড়ে খরচ হতে পারে মাসে ৩ থেকে ৭০০ ইউরো (প্রায় ৩৮ হাজার ৪৯৬ থেকে ৮৯ হাজার ৮২৪ টাকা)। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নকালে বিভিন্ন শহরের ছাত্রাবাসগুলোতে বসবাস করে। ডর্ম নামের এই আবাসনগুলোর মাসিক ভাড়া প্রায় ২৪০ থেকে ৪২০ ইউরো ( প্রায় ৩০ হাজার ৭৯৭ থেকে ৫৩ হাজার ৮৯৫ টাকা) পর্যন্ত।
নিত্য দিনের খাবারের জন্য ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত প্রতি মাসে ১৮০ থেকে ২৪০ ইউরো (প্রায় ২৩ হাজার ৯৮ থেকে ৩০ হাজার ৭৯৭ টাকা) খরচ করে থাকে। প্রতি মাসে যাতায়াত বাবদ খরচ হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭৮ ইউরো (প্রায় ৭ হাজার ৭০০ থেকে ১০ হাজার ৯ টাকা)। বিদ্যুৎ ও পানিসহ নানা ইউটিলিটির জন্য মাসিক চার্জ ৮৪ থেকে ১২০ ইউরো (প্রায় ১০ হাজার ৭৭৯ থেকে ১৫ হাজার ৩৯৯ টাকা)।
আরো পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দেয়। তারমধ্যে ফিনল্যান্ড স্কলারশিপগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ এবং ৫ হাজার ইউরোর (প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি। উপরন্তু, শিক্ষার্থীর একাডেমিক যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ থেকে শতভাগ অধ্যয়ন ফি মওকুফ করা হয়।
ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি স্কলারশিপ মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আংশিক থেকে সম্পূর্ণ টিউশন মওকুফ করে থাকে। গ্লোবাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন ফ্রি সহ ৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৪১ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি পাওয়া যায়।
ডক্টরাল অধ্যয়নে অধ্যয়নের সম্পূর্ণ খরচ বহনসহ মাসিক উপবৃত্তি দেয় ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড ডক্টরাল স্কলারশিপ। আল্টো ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপের আওতায় একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ।
ইরাস্মাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স ডিগ্রি স্কলারশিপ যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রামে টিউশন, জীবনযাত্রার খরচ এবং ভ্রমণের খরচ বহন করে।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
ফিনল্যান্ডে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পায়। এছাড়া গ্রীষ্মের ছুটির সময় কর্মঘণ্টার উপর কোনো সীমারেখা থাকে না।
কাজের প্রকৃতি এবং সেক্টর অনুসারে এই খণ্ডকালীন চাকরি থেকে আয় হয়ে থাকে ঘণ্টা প্রতি ৯ থেকে ১৩ ইউরো (প্রায় ১ হাজার ১৫৫ থেকে ১ হাজার ৬৬৯ টাকা)। রবিবার বা যেকোনো দিন সন্ধ্যার পরবর্তী শিফ্টে কাজ করলে আরও বেশি আয় হয়। তথ্য প্রযুক্তি এবং সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো সেক্টরগুলো থেকে তুলনামূলক ভালো উপার্জন আসে।
তাছাড়া বছরে দুটি পিক সিজন থাকে, যখন নিয়োগকর্তারা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি নতুন কর্মী নিয়ে থাকেন। একটি হচ্ছে ডিসেম্বরে শীতের বিরতির ঠিক আগে, আর আরেকটি হচ্ছে গ্রীষ্মের বিরতির আগ মুহূর্তে।
সব মিলিয়ে এসব আয় সেমিস্টার চলাকালে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়।
আরো পড়ুন: রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
অধ্যয়ন শেষে চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
স্নাতক শেষ হওয়ার পর চাকরি খোঁজা বা ব্যবসা শুরুর জন্য অতিরিক্ত ২ বছরের ওয়ার্ক পার্মিটের আবেদন করা যায়। মূলত ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অধ্যয়নের সময়কালসহ দেশটিতে কমপক্ষে একটানা ৪ বছর থাকতে হয়। এর মাঝে কখনও সর্বোচ্চ ৩ মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকা যাবে না।
ইউরোপীয় দেশটির উচ্চ মানের জীবনযাত্রার জন্য সেখানে কাজের সুযোগটি কেবল আকর্ষণীয়ই নয়। বরং পর্যাপ্ত ভ্যাকেন্সি থাকায় মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য তা বেশ সহজসাধ্যও বটে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই কাজের সুযোগ করে নিতে পারে। এছাড়া ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব ও সাবলীলতা থাকায় আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাকরি পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করে তোলে।
ফিনল্যান্ডের চাকরির বাজারে আধিপত্য বিস্তার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি তৈরি, কাগজ ও কাঠের পণ্য, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও যানবাহন পরিষেবা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিনল্যান্ড তথ্য-প্রযুক্তিতে গোটা ইউরোপের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তাই আইটিতে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য দেশটিতে রয়েছে ক্যারিয়ারের অপার সম্ভাবনা।
পরিশিষ্ট
ইংরেজি ভাষায় অভ্যস্ত জাতি, পড়াশোনার বাজেট, স্কলারশিপ ও চাকরি; এই সব সুযোগের বিচারে ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য হতে পারে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়াগুলোতে সুষ্ঠ কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি। অফার লেটারের পরেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং চিকিৎসা বিমার জন্য তহবিলের ব্যবস্থাপনা। এছাড়া ফিনল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে আবাসিক অনুমোদন এবং ডি-ভিসার আবেদনের মধ্যকার সময়সীমার প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উপরন্ত, এই প্রক্রিয়াগুলো পরবর্তীতে ফিনল্যান্ডে ডিগ্রি পরবর্তী ওয়ার্ক-পার্মিট লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
৩ মাস আগে
রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে উন্নত ক্যারিয়ার ও জীবনধারণের সমূহ সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে গন্তব্যটি এমন হতে হয় যেখানে সন্নিবেশ ঘটবে নিরাপদ পরিবেশ, মেধাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ততা। সেই সঙ্গে সামগ্রিক খরচটাও হতে হবে সাধ্যের মধ্যে। ঠিক এমনি সুযোগের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন অধিকাংশ ইউরোপীয়ান দেশগুলোর মতো নিমেষেই চলে আসে রোমানিয়ার কথা। বিশ্বমানের সব বিদ্যাপীঠ নিয়ে শেনজেনভুক্ত দেশটি প্রতি বছর সাদরে আমন্ত্রণ জানায় হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। চলুন, রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
রোমানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
বিগত দশক জুড়ে ব্যবসায়িক, শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে রোমানিয়া। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের এই সদস্য দেশটি বর্তমানে ৩২ দশমিক ৩ ক্রাইম ইনডেক্স নিয়ে শীর্ষ নিরাপদ দেশগুলোর তালিকায় ৩৫ নম্বরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া ১ দশমিক ৭৫৫ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৩৬ নম্বরে রয়েছে।
রোমানিয়ায় পড়াশোনার ও জীবনযাত্রার খরচ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ মানের দিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা একদমই আপোসহীন। শুধু তাই নয়, ইউরোপের অন্যান্য সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর সঙ্গে এক সারিতে রয়েছে দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাংকিংয়ে শীর্ষ রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, যেটি রয়েছে ৮০১ নম্বরে। এ ছাড়া বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটির র্যাংকিং ৮৫১।
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি সুবিধা হলো এখানে অর্জন করা ক্রেডিটগুলো সহজেই অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা যায়। এই পরিবর্তনে অধ্যয়নের গুণমানের কোনো ঘাটতি হয় না। এমনকি অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কোনো শর্ত পূরণ করতে হয় না।
আরও পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
এই স্থানান্তরকে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
· ইউরোপীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম
· ডিপ্লোমা সাপ্লিমেন্ট
· ইউরোপিয়ান কোয়ালিটি চার্টার ফর মোবিলিটি
· ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক ফর লাইফ লং লার্নিং
· ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইনফরমেশন সেন্টার্স অন একাডেমিক রিকগনিশন অ্যান্ড মোবিলিটি
· ন্যাশনাল একাডেমিক রিকগনিশন ইনফরমেশন সেন্টার্স
আরও পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়াতে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত
আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের রোমানিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে হলে ন্যূনতম ১২ বছরের শিক্ষাগত জীবন অতিবাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা তার সমতুল্য একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।
মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। পিএইচডির জন্য প্রধান শর্ত হলো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হওয়া।
পড়াশোনা ও চাকরিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার অগ্রাধিকার থাকায় রোমানিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ এর কিংবা টিওইএফএল-এ ৮০ থেকে ৯০ থাকতে হবে।
রোমানিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
যে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রোমানিয়াসহ গোটা ইউরোপে বহুল সমাদৃত, সেগুলো হলো-
· বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি
· বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি
· আলেকজান্দ্রু ইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
· টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ক্লুজ-নাপোকা
· গিওর্গে আসাকি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
· ট্রান্সিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসভ
· ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিকা অব বুখারেস্ট
· ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসোয়ারা
· বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ
· গ্রিগোরে টি. পোপা ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন অ্যান্ড ফার্মেসি, ইয়াসি
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম সারির কোর্সগুলো-
· জেনারেল মেডিসিন
· ডেন্টিস্ট্রি
· ফার্মেসি
· মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
· ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
· আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
· সাইবার সিকিউরিটি
· ফাইন্যান্স
· মার্কেটিং
· হিউম্যান রিসোর্স
আরও পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ফল এবং স্প্রিং; এই দুই সেমিস্টারে সাধারণত রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলের সময়সীমা থাকে পরের বছরের জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত। আর স্প্রিং শেষ হয় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে।
ভর্তির জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় সরবরাহ করা তথ্যের সাপেক্ষে আপলোডের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে।
অনলাইন আবেদনের যাবতীয় কাজ শেষে পূরণ করা ফর্মটি ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বহস্তে সাইন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সহকারে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· নির্ভুলভাবে পূরণ করা ভর্তির আবেদনপত্র
· উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, স্নাতক ডিপ্লোমা বা সমমানের সনদের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকের জন্য)
· স্নাতক শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকোত্তরের জন্য)
· জন্ম শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি
· মেডিকেল সার্টিফিকেট
· পাসপোর্টের প্রত্যয়িত কপি
· ভাষা দক্ষতা শংসাপত্র (আইইএলটিএস বা টিওইএফএল স্কোর)
· দুটি সাম্প্রতিক ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
· গবেষণার প্রস্তাবনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রকাশনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· সিভি বা পোর্টফোলিও (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· লেটার অব রিকমেন্ডেশন
· আবেদনের ফি পরিশোধের রশিদ: ৫০ থেকে ১০০ ইউরো বা ৬ হাজার ৩৫৬ থেকে ১২ হাজার ৭১২ টাকা (১ ইউরো = ১২৭ দশমিক ১১ বাংলাদেশি টাকা)
মাস্টার্সের বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জিআরই, জিম্যাট বা এলস্যাটের মতো অতিরিক্ত পরীক্ষার স্কোর প্রদর্শন করতে হতে পারে। তাছাড়া এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। প্রতিটি নথি রোমানিয়ান, ইংরেজি ও ফরাসি যেকোনো একটি ভাষায় অনূদিত হতে হবে।
আরও পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
৩ মাস আগে
আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ক্যারিয়ার গঠনে সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যুগপৎভাবে কাজ করে চাকরি বা ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলের সামঞ্জস্যপূর্ণতা। সেখানে মেধা বিকাশের সাথে সম্মেলন ঘটে জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থায়িত্বের। এই সমন্বয়ের মাঝে নিহিত থাকে শিক্ষা ও পেশাগত দিক থেকে বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ। আর এই পরিবেশ পেতেই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ব্রত নিয়ে পাড়ি জমান উন্নত দেশগুলোতে। কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের পাশাপাশি উন্নত জীবনধারণের প্রস্তাবনা নিয়ে এই গন্তব্যগুলোর সঙ্গে একই সারিতে রয়েছে ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড। বৈচিত্র্যপূর্ণ কোর্সে বিশ্ব মানের পাঠদানের অভিজ্ঞতা নিতে দেশটি প্রতি বছর স্বাগত জানায় হাজার হাজার বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের। চলুন, আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া, পড়াশোনা ও জীবনধারণের আর্থিক ব্যবস্থাপনার নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আয়ারল্যান্ড কেন উচ্চশিক্ষার অন্যতম গন্তব্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সদস্য রাষ্ট্রটির ক্রাইম ইনডেক্স ৪৬ দশমিক ৮। অন্যদিকে ১ দশমিক ৩০৩ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় দেশটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
এই সূচকগুলোর পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাংকিং-এও আছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন, যার র্যাংক ৮১। ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন রয়েছে ১৭১-এ, গালওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ২৮৯-এ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক-এর অবস্থান ২৯২-এ। স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লিমেরিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি রয়েছে যথাক্রমে ৪২৬ ও ৪৩৬-এ।
আইরিশ শিক্ষার প্রসিদ্ধির কারণে এটি অভাবনীয় সাড়া ফেলেছে বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি আয়ারল্যান্ডে তাদের ইউরোপীয় সদর দপ্তর স্থাপনের মাধ্যমে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তার পরিবেশ গড়ে তুলেছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা ইন্টার্নশিপ, কো-অপারেশন প্রোগ্রাম এবং নেটওয়ার্কিং ইভেন্টগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সান্নিধ্যে যেতে পারে।
সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয়টি হচ্ছে দেশটির ইংরেজি ভাষাভাষী যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র এই একটি ভাষা দক্ষতা নিয়ে আয়ারল্যান্ড পড়াশোনা, স্কলারশিপ ও চাকরির সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। এই সুবিধার প্রভাব শ্রেণীকক্ষের বাইরেও বিস্তৃত। যেমন আবাসনের ক্ষেত্রে আইরিশ পরিবারগুলোর সঙ্গে শেয়ার করে থাকলে ভাড়া অনেকটাই বাঁচানো যায়।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়াতে ইংরেজিকে পুঁজি করে এই আয়ারল্যান্ড থেকেই বৈশ্বিক নেটওয়ার্কগুলোতে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভ্রমণের সুযোগও সৃষ্টি হয়, যা ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করার এক অভাবনীয় প্রয়াস।
আরও পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য যে যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার
আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামগুলোর জন্য ক্লাস ১২ তথা উচ্চ মাধ্যমিক সনদ পরীক্ষায় সাধারণত কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে সাধারণ শর্ত হচ্ছে একই বিষয়ে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ বা তার বেশি স্কোরের স্নাতক ডিগ্রি। মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্যও একই বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। পিএইচডির জন্য প্রকাশনা এবং এমবিএর ক্ষেত্রে পেশাগত অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে।
ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস, টিওইএফএল বা পিটিই-এর মতো ভাষা যাচাই পরীক্ষার স্কোরগুলো দেখা হয়।
আয়ারল্যান্ডের সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদাসম্পন্ন কোর্স
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আয়ারল্যান্ডের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-
· আমেরিকান কলেজ ডাবলিন
· ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন
· ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন
· ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি
· লিমেরিক বিশ্ববিদ্যালয়
· ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক
· মায়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়
· কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট
· আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গালওয়ে
· গালওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
৩ মাস আগে
চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
উন্নত মানের শিক্ষার ভিত্তিতে যুগ যুগ ধরে মেধার সুষ্ঠু বিকাশের মঞ্চ হয়ে আসছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলো। বছরের পর বছর ধরে দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এই মহান মঞ্চগুলোরই রূপকল্পের ফসল। শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সগর্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। প্রতিটির মতো ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রতি বছর পরিণত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বজোড়া শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়। তেমনই একটি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র, যেটি ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার এবং মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরিণত হয়েছে শিক্ষার স্বর্গভূমিতে। চলুন, চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
উচ্চশিক্ষায় চেক প্রজাতন্ত্রের জনপ্রিয়তার কারণ
বিগত দশকে বিশ্বজুড়ে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান মধ্য ইউরোপের দেশটিকে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্পে পরিণত করেছে। সব থেকে মোক্ষম কারণটি হচ্ছে দেশটির নিরাপদ পরিবেশ। বিশ্বব্যাপী ১৬৩টি দেশের মধ্যে ১ দশমিক ৪৫৯ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স স্কোর নিয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে ৬ষ্ঠ তম এই দেশটির ক্রাইম ইনডেক্স স্কোর ২৬ দশমিক ৮।
শেনজেনভুক্ত রাষ্ট্র হওয়ায় অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণের আকর্ষণে অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীর গন্তব্য থাকে এই দেশটি।
এখানে পড়াশোনার জন্য স্থানীয় ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি চাকরি ক্ষেত্রে অধিকাংশ চাহিদাসম্পন্ন কোর্সগুলো ইংরেজিতেই পড়ানো হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের পূর্বশর্তটিও শিথিল করা হয়। সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী একাডেমিক ডিগ্রি ইংরেজি মাধ্যমে করা হয়েছে কিনা তার জন্য এমওআই ( মিডিয়াম অব ইন্স্ট্রাক্শন ) চাওয়া হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে ভর্তি হওয়ার জন্য ভাষার জন্য সিইএফআর বা কমন ইউরোপীয় ফ্রেমওয়ার্ক অব রেফারেন্স পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের এই দেশ নির্বাচনের আরও একটি কারণ হচ্ছে চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া। এখানে প্রবেশিকা পরীক্ষা বা ইন্টারভিউয়ের যথেষ্ট বিকল্প রয়েছে, যেখানে শুধু সঠিক কাগজপত্র এবং ফি প্রদানের মাধ্যমেই ভর্তির কাজ সম্পন্ন করা যায়।
চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে যেমন প্রাচীন, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বনন্দিত এবং নানা শিল্পের সর্বোচ্চ পর্যায়গুলোতে সমাদৃত।
কিউএস র্যাংকিং-এ ২৪৮ নম্বরে রয়েছে সুপরিচিত চেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪০০ নম্বরে, চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৪৫৪, এবং কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাগ ৫৫৬-তে। ব্রনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে ৬১১, প্যালাস্কি ইউনিভার্সিটি অলোমৌচ ৬৩১-এ এবং চেক ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাগ ৭০১ নম্বরে।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
উচ্চশিক্ষার জন্য চেক প্রজাতন্ত্র গমনের পূর্বশর্ত
এখানকার কোর্সগুলোতে পড়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত হলো পূর্ববর্তী প্রাসঙ্গিক একাডেমিক ডিগ্রিগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়া। যেমন আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক, ডিপ্লোমা বা সমমানের একাডেমিক পরীক্ষার সনদ থাকা প্রয়োজন। মাস্টার্সের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল স্টাডি প্রোগ্রামের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দরকার হয়।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেক ভাষায় পড়ানো কোর্সগুলোতে কোনো খরচ নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চেক ভাষায় পড়ার জন্য এক বছরের একটি ফাউন্ডেশন কোর্স করায়। অতঃপর প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে ভর্তি নেওয়া হয়। এখানে ভাষা টেস্ট পরীক্ষায় ন্যূনতম স্কোর বি-২, কিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সি-১ থাকতে হয়।
আর ইংরেজিতে পড়ানো কোর্সের ক্ষেত্রে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাষা দক্ষতা সনদ চায়, তারা সচরাচর আইইএলটিস বা টিওইএফএল স্কোরকে গুরুত্ব দেয়।
আরো পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে যেতে প্রস্তুতির ধাপগুলো জেনে নিন
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চেক প্রজাতন্ত্র সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সগুলো
বিগত বছরগুলোতে দেশটির যে বিশ্ব মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বাধিক বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল, সেগুলো হলো-
· চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়
· মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয়
· চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
· ইউনিভার্সিটি অব কেমিস্ট্রি এ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাগ
· ব্রনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
· প্যালাস্কি ইউনিভার্সিটি অলোমৌচ
· চেক ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাগ
· মেন্ডেল বিশ্ববিদ্যালয় ইন ব্রনো
· অস্ট্রাভা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
· সাউথ বোহেমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইন চেক বুডিজোভিচ
আরো পড়ুন: দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে যে অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা জরুরি
বিশ্ববিদ্যালয় এবং একাডেমি ডিগ্রির স্তর নির্বিশেষে সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো হলো-
· মেডিসিন ও হেল্থকেয়ার
· ব্যবসা ও অর্থনীতি
· মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান
· তথ্য প্রযুক্তি
· প্রকৌশলী
চেক প্রজাতন্ত্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ভর্তির জন্য আবেদনের মৌসুম শুরু হয় সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। অনলাইনে ভর্তির আবেদনের জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব পোর্টাল। সেখানে কাঙ্ক্ষিত কোর্স খুঁজে বের করার জন্য রয়েছে যাবতীয় তথ্য।
অনলাইনে আবেদন সম্পন্নের সময় কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হতে পারে। ইলেক্ট্রনিক আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তা প্রিন্ট করতে হবে। অতঃপর তা সই করে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
ভর্তির আবেদনের সঙ্গে যে কাগজপত্রগুলো সংযুক্তি হিসেবে দিতে হয়, তা হলঃ
· ডিপ্লোমা বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণের সত্যায়িত অনুলিপি
· সনদপত্র এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় হলে সেগুলো চেক বা ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিতে হবে
· প্রশাসনিক ফি প্রদানের প্রমাণ: ৩ হাজার চেক কোরুনা বা ১৪ হাজার ৯৯১ টাকা ( ১ চেক কোরুনা = ৫ বাংলাদেশি টাকা )
· ভর্তি প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদানের প্রমাণ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে এর পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০ ইউরো থেকে শুরু হয়ে ৫০ ইউরোর অধিক হতে পারে। বাংলাদেশি টাকায় এটি ২ হাজার ৫৪১ টাকা ( ১ ইউরো = ১২৭ দশমিক ০৩ বাংলাদেশি টাকা ) থেকে ৬ হাজার ৩৫২ টাকার সমান।
· মোটিভেশন লেটার
· ২ থেকে ৩টি রেফারেন্স লেটার
· সিভি বা পোর্টফোলিও
· বৃত্তি পেলে বা অন্য কেউ পড়াশোনার খরচ বহন করলে তার প্রমাণ
· ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা ( সাধারণত পিটিই একাডেমিক, টিওইএফএল ও আইইএলটিএস স্কোর দেখা হয়)|
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
আবেদন পরবর্তী প্রক্রিয়া
পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালের মাধ্যমে এবং চিঠি বা ইমেলের মাধ্যমে জানানো হয়। এখানে প্রার্থীর আবেদন ও কাগজপত্রগুলো যাচাইকরণে ৩০ সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আবেদনের প্রাথমিক ধাপে উতড়ে গেলে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জুম বা স্কাইপের মাধ্যমে মৌখিক সাক্ষাৎকার নিতে পারে। যাবতীয় যাচাই-বাছাই শেষে সাধারণত জুনের শেষের দিকে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়।
ফলাফল ইতিবাচক হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারের জন্য টিউশন ফি দিতে বলা হয়। আর এই ফি প্রাপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীকে তার কাঙ্ক্ষিত অফার লেটারটি পাঠানো হয়। এটি পরবর্তীতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে।
চেক প্রজাতন্ত্রের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
অফার লেটার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিসার কাজ শুরু করে দিতে হবে। চেক প্রজাতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী ডি-টাইপ ক্যাটাগরিই হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, যেখানে ৯০ দিনেরও বেশি সময় থাকার অনুমতি দেয়া হয়। ভিসার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত; এরপর ভিসা আবার রিনিউ করতে হয়।
আবেদনের জন্য https://frs.gov.cz/en/forms-and-documents/-এই লিঙ্কে যেয়ে অনলাইন আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া ফর্ম ডাউনলোড করে কম্পিউটারের মাধ্যমে অথবা প্রিন্ট করে হাতে লিখেও পূরণ করা যেতে পারে। ফর্মের সব তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদানের পর সব শেষে সই করতে হবে। ইলেক্ট্রনিকভাবে এই আবেদনের সময় ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সঙ্গে থাকা দরকার।
আরো পড়ুন: যে ১০টি দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়তে পারবেন
দরকারি কাগজপত্র
চেক প্রজাতন্ত্রের স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করার জন্য যে নথিগুলো প্রস্তুত রাখতে হয়, সেগুলো হলো-
· চেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ভর্তির অফার লেটার
· দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা সহ একটি বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ থাকতে হবে চেক প্রজাতন্ত্রে উপস্থিত হওয়ার দিন থেকে ন্যূনতম ৩ মাস পর্যন্ত।
· সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
· দেশটিতে থাকার জন্য আর্থিক তহবিলের প্রমাণপত্র ( কমপক্ষে ৭৮ হাজার ২৫০ কোরুনা বা প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৭ টাকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট )
· মেডিকেল রিপোর্ট
· আবাসন নিশ্চিতকরণের প্রমাণ
· পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ( অফিসিয়াল রাবার স্ট্যাম্পসহ চেক ভাষায় অনুবাদ করা হতে হবে )
· চেক প্রজাতন্ত্রে পৌছার দিন থেকে কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য ভ্রমণ চিকিৎসা বীমার প্রমাণপত্র
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পাসপোর্ট ছাড়া আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত নথি চেক ভাষায় হতে হবে। পাসপোর্ট ও ছবি ছাড়া ব্যতিত কোনো নথি ১৮০ দিনের বেশি পুরনো হতে পারবে না।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
৩ মাস আগে
বাগেরহাটে তৈরি কাঠের সাইকেল যাচ্ছে ইউরোপে
বাগেরহাটে বিভিন্ন কাঠ দিয়ে জনপ্রিয় সাইকেল তৈরি করা হচ্ছে। চাকা থেকে শুরু করে সাইকেল তৈরিতে ব্যবহৃত সব সরঞ্জামে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশের বাজারে পরিবেশ বান্ধব ‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই সাইকেল। বেবি ব্যালেন্স বাইকার নামে এসব সাইকেল ইউরোপের বাজার দখল করে নিয়েছে।
এরইমধ্যে গ্রিসে ২০ হাজার পিচ বেবি ব্যালেন্স বাইকার রপ্তানি করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে নতুন বাজার সৃষ্টি করেছে কাঠের এই সাইকেল। সাইকেল বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে দেশে। বিদেশের মাটিতে হাটতে শিখা ছোট শিশুরা এই সাইকেল ব্যবহার করছে।
বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে ন্যাচরাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হচ্ছে নজরকাড়া কাঠের এই সাইকেল। কাঠের সাইকেলের পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে কাঠ দিয়ে হোটেল বেড,সান বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে এসব কাঠের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিজেদের হাতে তৈরি কাঠের সাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পেরে উদ্যাক্তা এবং শ্রমিকরা বেজায় খুঁশি। সরকারি প্রণোদনা পেলে কাঠের এই সাইকেলে বিশ্ববাজার জয় করবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্ত মোস্তাফিজ আহম্মেদ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে ন্যাচরাল ফাইবার নামে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ম্যাট্রেস, কয়ার ফেল্ট,কোকা পিট, ডিসপোজেবল স্লিপারসহ ছোবড়ার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। ছোবড়ার ওই সব পণ্য দেশে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর ২০২৩ সাল থেকে কাঠের সাইকেল এবং কাঠের বিভিন্ন পণ্য তৈরি শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানে। বাগেরহাটে তৈরি কাঠের সাইকেলসহ কাঠের বিভিন্ন পণ্য বিশ্ববাজারে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। বিদেশের বাজারে চাহিদা থাকায় এই প্রতিষ্ঠানে‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ এর পাশাপাশি বড়দের জন্যও তৈরি করা হবে কাঠের সাইকেল।
আরও পড়ুন: দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর
৮ মাস আগে
চীনকে হারাতে চাইলে টাকার ঝুড়ি ও সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়ে আসুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শনিবার (২৮ অক্টোবর) বলেছেন, চীনকে পরাজিত করতে চাইলে অন্যান্য দেশের ভয় দেখানো ও উপদেশ দেওয়ার পরিবর্তে টাকার ঝুড়ি ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রস্তাব নিয়ে আসা উচিত।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি চীনকে হারাতে চান, তাহলে আপনাদেরও চীনাদের মতো টাকার ঝুড়ি ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রস্তাব নিয়ে আসা উচিত। শুধু উপদেশই আমাদের সন্তুষ্ট করে না।’
তিনি সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয় সফরে এই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘নেভিগেটিং চ্যালেঞ্জস: বাংলাদেশ’স রেসপন্স টু দ্য কারেন্ট গ্লোবাল সিচুয়েশন’- শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
কূটনৈতিক ম্যাগাজিন ডিপ্লোম্যাটস ওয়ার্ল্ড সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইউরোপ সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের কথা শুনেছে এবং তারা এখন তহবিল নিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতারা বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সব ধর্মের নাগরিকের অধিকার সমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোমেন বলেন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের নামে চাপ সৃষ্টি করে অনেক দেশ তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়।
তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় বাংলাদেশ এখন সামরিক সরঞ্জাম কিনতে চায় না।
২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তারা ৩০০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য, নির্ভরশীলতার পরিবর্তে অপরিহার্য সংযোগ স্থাপন করা এবং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের ঘাটতি বন্ধ করা তাদের লক্ষ্য।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইইউ ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনার সূচনা করেন।
এই উপলক্ষে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই সবুজ পরিবর্তনে অবদান রাখার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের চুক্তি সই করেছে ইইউ, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ও বাংলাদেশ। এটি দেশের জলবায়ু প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেরও লক্ষ্য।
৭০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের শিক্ষা সহায়তা, ভালো কাজ, সবুজ নির্মাণ, ই-গভর্নেন্স ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এই পাঁচটি অতিরিক্ত সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড চালু করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন বলেন, ‘ইইউ ও বাংলাদেশ ৫০ বছর ধরে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত অংশীদার। এখন আমরা গ্লোবাল গেটওয়ের অধীনে সবুজ পরিবর্তনের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে, এই অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইউরোপীয় কমিশন, ইআইবি ও বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সমর্থন করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বাহিনীতে যোগ দেবে। এই ৪০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ বাংলাদেশের জনগণ এবং এর অর্থনীতির জন্য একটি পরিবর্তন সৃষ্টি করবে।’
আরও পড়ুন: আমরা এগুলোকে গুরুত্ব দিই না: বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফর বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১ বছর আগে
ফিলিস্তিনের বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে ইউরোপীয় দেশগুলো : ড. হাছান মাহমুদ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার(১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কমলাপুরের শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত 'কনসার্ট ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস'-এর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, 'আমি বিস্মিত হই যখন আমি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখি যে ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কোনো ধরনের সভা, মিছিল বা বক্তব্য নিষিদ্ধ করেছে।
মন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা সবসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে, তাদের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার পর এ বিষয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার আছে কি না?
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহীদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশিদের ভালোবাসা ও সমর্থন দেখে অভিভূত: রাষ্ট্রদূত
১ বছর আগে
চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২৫০০ অভিবাসনপ্রতাশী নিহত বা নিখোঁজ
চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করার সময় ২৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। এ সময় প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করেছেন।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) অফিসের পরিচালক রুভেন মেনিকদিওয়েলা তার রিপোর্টে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষের মধ্যে ৮৩ শতাংশ, যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ইতালিতে অনুপ্রবেশ করেছে।
তিনি বলেছেন, এ ছাড়া গ্রিস, স্পেন, সাইপ্রাস ও মাল্টাসহ আরও কিছু দেশেও লোকেরা অনুপ্রবেশ করেছে।
রুভেন মেনিকদিওয়েলা তার রিপোর্টে নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, বিপজ্জনক সমুদ্র পারাপারে মারা যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া ২৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মৃত বা নিখোঁজ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।’
২০২২ সালের একই সময়ে মারা যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৮০ জন।
মেনিকদিওয়েলা আরও বলেছেন, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অভিবাসপ্রত্যাশী মানুষদের সমুদ্রে বা স্থল পথে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকে সমান বিপজ্জনক বলে মনে করে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি কাউন্সিলকে ব্যাখ্যা করেন যে কীভাবে ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার জন্য অভিবাসনপ্রতাশীরা সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশগুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তিউনিসিয়ান ও লিবিয়ান উপকূলে পৌঁছান।
এই স্থল যাত্রাকে তিনি ‘বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক’ যাত্রা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরলেন ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার ৩০ বাংলাদেশি
তিনি আরও বলেন, স্থলপথে জনশূন্য প্রান্তরেও বহু মানুষ প্রাণ হারায়।
ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তার মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশী ও উদ্বাস্তুরা ‘প্রতি পদে মৃত্যু এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে রয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছর ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ তিউনিসিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা গত বছরের তুলনায় ২৬০ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।
এ ছাড়া ইউএনএইচসিআর-এর উত্থাপিত পরিসংখ্যানগুলো আন্তর্জাতিক অভিবাসন অফিসের (আইওএম) পরিচালক পার লিলজার্টের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
লিলজার্ট নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, আইওএম এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে এ সময়ের মধ্যে আইওএম ২ হাজার ৭৭৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। যার মধ্যে ২ হাজার ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় পথে।
তিনি বলেন, এত বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও ২০২৩ সালে এই রুট ধরে গ্রিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের সংখ্যা ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে, স্পেনে এ সংখ্যা স্থির রয়েছে।
আইওএম জানায়, ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন বেড়েছে।
২০২৩ সালে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ ইতালিতে এসেছে। যেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেছেন ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ১৩ বাংলাদেশি
বাংলাদেশিসহ ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৪৩
১ বছর আগে