ইউরোপ
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নির্দেশিকা কঠোর করল ইউরোপ
জার্মান নাগরিকসহ বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নাগরিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটকের ঘটনায় দেশটিতে ভ্রমণ নির্দেশিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভ্রমণকারী জার্মান নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
একজন মুখপাত্র সরকারি গণমাধ্যম এআরডির তাগেসচাউকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমতি পেতে শুধু ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইএসটিএ) অনুমোদন বা মার্কিন ভিসাই যথেষ্ট নয়। এসব অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে।’
আরও পড়ুন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় তিনজন জার্মান নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গ্রিন কার্ডধারীও ছিল। পরে তাদের দুইজনকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যও তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে আটক বা নির্বাসিত করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় নাগরিকদের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।’
রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর চলতি মাসের শুরুতে নিশ্চিত করেছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটক এক ব্রিটিশ নাগরিককে সহায়তা করেছে।
এছাড়াও ফিনল্যান্ডও শুক্রবার একই ধরণের ভ্রমণ নির্দেশিকায় পরিবর্তন এনে বলেছে, যথাযথ বৈধ ভ্রমণ নথি বর্তমান মার্কিন নীতির অধীনে প্রবেশের নিশ্চয়তা নাও দিতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ভিসা বা ইস্তা আবেদনকারীকে তার লিঙ্গ ও জন্মের সময়ের লিঙ্গ বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে বলেছে। এক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি পেলে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়।
এছাড়া, ফিনিশ কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে জনসমাগম এড়িয়ে চলে। কারণ, ওইসব স্থানে রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কর্তৃপক্ষ।
ফিনল্যান্ডের সম্প্রচারমাধ্যম ইয়েলের মতে, এই কঠোর নীতিমালা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ক্রমবর্ধমান রূপকে তুলে ধরে।
২ দিন আগে
‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ থাকা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডার পর এবার ইউক্রেনের সমর্থনে ইউরোপকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এ সময় ইউরোপের দেশগুলোতে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারসহ ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই উচিত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা। যার কাছে যা আছে, তা নিয়েই অবদান রাখতে হবে। সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এই বোঝা ভাগ করে নিতে হবে।’
স্থানীয় সময় রবিবার (২ মার্চ) ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে রাজধানী লন্ডনে আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্টারমার। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
সম্মেলনে ইউরোপের দেশগুলোকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে পরামর্শ দেন স্টারমার। স্টারমার বলেন, ‘ইউরোপ বর্তমানে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শুধু আলোচনা নয়; এবার সময় এসেছে পদক্ষেপ নেওয়ার।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা ও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন জেলেনস্কি
এর আগে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যে বার্ষিক প্রতিরক্ষা খরচ জিডিপির ২.৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেন কিয়ার স্টারমার। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ইউক্রেন ইস্যুতে সহাবস্থানে ছিল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে হোয়াইট ইউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে এলো নাটকীয় পরিবর্তন।
গত তিন বছর ধরে একযোগেই ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তবে সেই নীতির পরিবর্তন করে ইউক্রেন ও ইউরোপকে এক প্রকার পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসলেন ট্রাম্প প্রশাসন।
এখানেই মতানৈক্য তৈরি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর যুক্তরাষ্ট্রকে যে আর আগের মতো ইউক্রেনের পাশে পাওয়া যাবে না; তা আরও নিশ্চিত করে দিয়েছে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসের ঘটনা।
ওই ঘটনার পর আয়োজিত এই সম্মেলনকে স্টারমার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব দূর করাসহ শুক্রবারের আলোচনার আগে শান্তি আলোচনা যে অবস্থানে ছিলো সেখানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের পাশে থাকার আশ্বাস ইউরোপীয়দের
এছাড়া ইউক্রেন ইস্যুতে এবার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন স্টারমার। তিনি বলেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সম্মেলনের আলোচনায় ৪টি বিষয়ে ইউরোপীয়দের এক হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তি আলোচনায় কিয়েভকে রাখা, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করবে ইউরোপ এবং সর্বোপরি ইউক্রেনের নিরাপত্তায় জোট গঠন ও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলো একমত হয়েছেন। এ লক্ষ্যেই তারা কাজ করবে বলে জানান।
এর পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। এই অর্থে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে।
তবে ইউক্রেনের সমর্থনে নেওয়া যেকোনো পরিকল্পনায় বাধ সাধতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্টারমার বলেন, এক্ষেত্রে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সম্মেলনের আগে সংবাদ সংস্থা বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ব্যাপারে তীব্র আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: শূন্যহাতে ফিরলেও প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
পরবর্তীতে একটি আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আরও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। স্টারমার জানান, তিনি পুতিনকে বিশ্বাস করেন না কিন্তু ট্রাম্পের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনে জল, আকাশ ও স্থলপথে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেন কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। এ সমযের মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে ইউক্রেনে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চিতের বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
২২ দিন আগে
মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন, চলছে প্রস্তুতি
ফোনালাপ পর্ব শেষে এবার মুখোমুখি বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ায় তার সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন। বিশ্বের আলোচিত এই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। পুতিন-ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়; বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
সের্গেই রিয়াবকভ জানান, ‘এই বৈঠক দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। তবে বৈঠক আয়োজন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-ট্রুডোর ফোনালাপ
এ সময় বৈঠকের প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশ দুটির রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানান ট্রাম্প। তাদের দীর্ঘ ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় তখন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’
ওভাল অফিসের বৈঠকের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট একমত হয়েছেন, তাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক দল অবিলম্বে আলোচনা শুরু করবে এবং আলোচনার জন্য একে অপরকে নিজেদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবে।’
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদির দিরিয়াহ প্রাসাদে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
তবে সেই বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইউক্রেনের প্রসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
এছাড়াও আলোচনায় ইউরোপকে অর্ন্তভুক্ত না করায় তাদের পাশ কাটিয়ে শান্তি চুক্তির আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউরোপীয় নেতারা।
৩০ দিন আগে
ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর
ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বার্থরক্ষায় সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। এ সময় ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের ওপরও গুরুত্ব দিন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই বক্তব্য দেন মিতসোতাকিস।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) গ্রিসের থেসলানোকির একটি বাণিজ্যিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মিতসোতাকিস।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; বিতর্কিত মন্তব্যও করে যাচ্ছেন অনবরত। ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন রাশিয়ার দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্মকান্ড খোদ দেশটিরই বহুদিনের পররাষ্ট্রনীতির বড়সড় পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ইউরোপের নেতারাও।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
মঙ্গলবারে সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন বৈঠক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা তখন ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দ্বন্দ্ব ইউরোপের নেতাদের চিন্তা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে’ পড়েছেন। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
তার বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুতই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপে যে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিতে হবে তাদের।
এ সময় মিতসোতাকিস বলেন, ইউরোপের নিজস্ব একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার দাবি বেশ পুরনো। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে; তা ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠনের যে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
এর আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
মূলত, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উপরই নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলো। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমাগত ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় বেশি বিনিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প ।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই আরও বেশি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোর নতুন করে নিজেদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বৈশ্বিক কূটনৈতিকবৃন্দ।
৩৩ দিন আগে
ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দেবে ইউরোপ
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্কারোপ করেছে, সেটার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান ভন ডের লিয়ন। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘তারাও কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন।’
আগের দিন বিদেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ করারোপ করে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদেও এমনই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের।
এই শুল্কারোপের কারণে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন মার্কিন ধাতব ব্যবসায়ীরা। কারণ এতে তারা অনেক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সোমবার দেশটির ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ারের দামও বেড়ে গেছে।
ভন ডের লিয়ন বলেন, ‘ইউরোপের স্বার্থ সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যবসায় শুল্ক খারাপ, কিন্তু ভোক্তাদের জন্য সেটা আরও খারাপ। ইউরোপের ওপর অন্যায়ভাবে কর চাপিয়ে দেওয়া হলে জবাব দেওয়া হবে—অনেক কঠোর ও সমানুপাতিক পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাভ শলজ পার্লামেন্টে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের জন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা না রাখে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব দেবে।’
বাণিজ্য যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষকেই খেসারত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ইউরোপ কী ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেবে, তা স্পষ্ট করেনি। এরআগে ২০১৮ সালে ইস্পাতের ওপর শুল্কারোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত মোটরসাইকেল, বোরবন হুইস্কি, পিনাট বাটারসহ বিভিন্ন পণ্যে পাল্টা করারোপ করেছিল ইইউ।
আরও পড়ুন: চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ: জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে না হামাস
এভাবে রাজস্ব আরোপ করা হলে তাতে দুপক্ষের জন্যই হীতে বিপরীত ফল আসবে বলে মনে করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মারকোস সেফকোভিক। তিনি বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার ব্যাপক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কের কারণে যে গভীর ও সমন্বিত উৎপাদন চেইন তৈরি হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিলে এই শুল্কারোপ ভালো ফল দেবে না।
মারকোস সেফকোভিক বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক, ব্যবসা ও ভোক্তাদের আমরা রক্ষা করবো। যদিও এটা আমাদের পছন্দনীয় পথ না, আমরা গঠনমূলক আলোচনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিশীল থাকব। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কাজেই দুপক্ষের স্বার্থরক্ষা করে একটি সমাধানের পথ বের করতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাবে, দুপক্ষের বাণিজ্যের আকার হবে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের, যা বিশ্ব বাণিজ্যের ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। মারকোস সেফকোভিক বলেন, ‘এই করারোপে দুপক্ষের জন্যই ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।’
৪২ দিন আগে
অবশেষে ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ড্র অনুষ্ঠিত
বেশ আগে থেকে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের খেলা শুরু হয়ে গেলেও ইউরোপ অঞ্চলের খেলা তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না। অবেশেষে এই অঞ্চলের বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাই পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০২৬ সালে প্রথমবার আয়োজন করা হবে ৪৮ দলের বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে মোট ১৬টি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে। এই ১৬টি স্পটের জন্য ১২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়বে ৫৩টি দেশ।
১২টি গ্রুপের সব গ্রুপে অবশ্য সমান প্রতিপক্ষ নেই। ছয়টি গ্রুপ সাজানো হয়েছে চারটি করে দল নিয়ে। অন্য ছয়টি গ্রুপে রাখা হয়েছে পাঁচটি করে দল। গ্রুপের প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে একটি করে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপের শীর্ষ ১২টি দল সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পাবে।
আরও পড়ুন: ২০২৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যুতেই হবে ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনাল
বাকি চার দল বাছাই করতে গ্রুপগুলোর দ্বিতীয় সেরা ১২ দলের সঙ্গে যুক্ত হবে উয়েফা নেশন্স লিগ খেলা চার দল। নেশন্স লিগের গ্রুপ বিজয়ীদের মধ্যে সেরা, কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে- এমন চারটি দলসহ মোট ১৬ দলের প্লে-অফ অনুষ্ঠিত হবে।
এই ১৬টি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে নকআউট পদ্ধতিতে প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মাধ্যমে বিশ্বকাপের জন্য একেকটি দল নির্বাচিত করা হবে।
বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ২১-২৫ মার্চ, ৬-১০ জুন, ৪-৯ সেপ্টেম্বর, ৯-১৪ অক্টোবর এবং ১৩-১৮ নভেম্বর। ২০২৬ সালের ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্লে-অফ পর্বের ম্যাচগুলো আয়োজন করা হবে। এরপর ওই বছরের ১১ জুন শুরু হবে বিশ্বকাপের মূল আসর।
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলের এই সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আসরের পর্দা নামবে।
আরও পড়ুন: ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনে ১ বিলিয়ন ইউরো ঋণ নেবে মরক্কো
এক নজরে ইউরোপ অঞ্চলের গ্রুপগুলো
গ্রুপ এ: জার্মানি/ইতালি (নেশন্স লিগের ম্যাচ জয়ী), স্লোভাকিয়া, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ।
গ্রুপ বি: সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্লোভেনিয়া ও কসোভো।
গ্রুপ সি: পর্তুগাল/ডেনমার্ক (পরাজিত), গ্রিস, স্কটল্যান্ড ও বেলারুশ।
গ্রুপ ডি: ফ্রান্স/ক্রোয়েশিয়া (জয়ী), ইউক্রেন, আইসল্যান্ড ও আজারবাইজান।
গ্রুপ ই: স্পেন/নেদারল্যান্ডস (জয়ী), তুরস্ক, জর্জিয়া ও বুলগেরিয়া।
গ্রুপ এফ: পর্তুগাল/ডেনমার্ক (জয়ী), হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড ও আর্মেনিয়া।
গ্রুপ জি: স্পেন/নেদারল্যান্ডস (পরাজিত), পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও মাল্টা।
গ্রুপ এইচ: অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সাইপ্রাস এবং সান মারিনো।
গ্রুপ আই: জার্মানি/ইতালি (পরাজিত), নরওয়ে, ইসরায়েল, এস্তোনিয়া ও মলদোভা।
গ্রুপ জে: বেলজিয়াম, ওয়েলস, নর্থ মেসিডোনিয়া, কাজাখস্তান ও লিখটেনস্টেইন।
গ্রুপ কে: ইংল্যান্ড, সার্বিয়া, আলবেনিয়া, লাটভিয়া ও অ্যান্ডোরা।
গ্রুপ এল: ফ্রান্স/ক্রোয়েশিয়া (পরাজিত), চেক প্রজাতন্ত্র, মন্টিনিগ্রো, ফারাও আইল্যান্ড ও জিব্রাল্টার।
১০২ দিন আগে
ইউরোপের দেশ না হয়েও ইসরায়েল কেন উয়েফার প্রতিযোগিতায়
দক্ষিণ ইসরায়েলে গাজার শাসক দল হামাসের গত বছরের অক্টোবরের হামলার জেরে উপত্যকাটিতে অব্যাহত অগ্রাসনের কারণে বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারায় ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।
গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা শঙ্কায় নেশন্স লিগে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনে অস্বীকৃতি জানায় বেলজিয়াম। পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরির একটি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৬ নভেম্বর রাতে প্যারিসের পার্ক দে প্রান্স স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজি-আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচের আগে গ্যালারি থেকে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিশাল ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পরের দিন রাতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ইউরোপা লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচের পর ইসরায়েলি ক্লাব মাকাবি তেল আবিবের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।
একই ঘটনা দেখা গেছে ফ্রান্সে নেশন্স লিগের ম্যাচ আয়োজনের আগেও। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো প্যারিস শহর।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল প্যারিস
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ইউরোপের প্রতিযোগিতায় খেলে ইসরায়েল ও তার ক্লাবগুলো।
এর উত্তর পেতে আমাদের ঢুঁ মারতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৪৮ সালে দেশটির জাতীয় ফুটবল দল গঠন হয়। এর আগে ১৯২৯ সাল থেকেই ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) ব্যানারে ফিফার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছিলেন ইহুদি খেলোয়াড়রা। সে সময় আরব, ইহুদি, এমনকি ব্রিটিশ শাসনামলে ওই অঞ্চলে কর্মরত ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাদের ক্লাবগুলোও পিএফএর অধীনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিত।
জাতীয় দল গঠনের পর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসির একেবারে শুরুর দিকে আয়োজিত কয়েকটি এশিয়ান কাপেও অংশ নেয় ইসরায়েল। ১৯৫৬ সালে এশিয়ান কাপের প্রথম আসরসহ ১৯৬০, ১৯৬৪ ও ১৯৬৮ সালের আসরে অংশ নেয় ইসরায়েল জাতীয় ফুটবল দল। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে এশিয়ান কাপের শিরোপা জেতে দেশটি।
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মিসর ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের ইয়ম কিপুর যুদ্ধের অবসানের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থেকে। আরব দেশগুলোর সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ফুটবলের ময়দানেও ছাপ ফেলে। সে সময় প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে কুয়েতের তদবিরে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে এএফসি থেকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দিলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি।
আরব লিগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দেশের ফুটবল বাঁচাতে বিকল্প খুঁজতে থাকে ইসরায়েল। এশিয়া থেকে বের হয়ে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য ওশেনিক ফুটবল ফেডারেশনে (ওএফসি) যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে দেশটি।
পরে সদস্য দেশ না হয়েও উয়েফার বিশেষ অনুগ্রহে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায় ইসরায়েল। ১৯৮২ সালে উয়েফা এবং তার পরের দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওএফসির অধীনে খেলে তারা।
আরও পড়ুন: নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা
পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি কৌশলগত সমাধানের অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে ইসরায়েলি ক্লাবগুলোকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দেয় উয়েফা। এরপর ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তার পর থেকে স্থায়ীভাবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) ও নেশন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতায় ইসরায়েল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করে চলেছে দেশটির ক্লাবগুলো।
ইউরোপের এলিট ফুটবলে খেললেও গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিভিন্ন ক্লাব ও সমর্থকদের প্রতি ক্ষোভ থেকে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিষয়টি কেবল ক্রীড়া ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষা রাজনীতিসহ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঙ্গনে।
অবশ্য ফুটবলকে কেন্দ্র করে ইহুদিদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে প্রায়ই। সবশেষ গত রাতে অনুষ্ঠিত ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগেও এমন ঘটনার কথা জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ম্যাচের আগে প্যারিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসরায়েলের সমর্থনকারী ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ইহুদিরা। ফ্রান্সে বসবাসকারী ইহুদিদের সংগঠিত করতে মূলত ‘ইসরায়েল ইজ ফরেভার’ নামের একটি ইসরায়েলপন্থি সংগঠন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য তহবিল সংগ্রহও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ছিল বলে খবর পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ফুটবলে ১৯৬৪ সালের এশিয়ান কাপ জয়ই ইসরায়েলের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় অর্জন। উয়েফার কোনো প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেনি তারা।
উয়েফায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ২০০৮ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ১৫তম অবস্থানে উঠেছিল ইসরায়েল। এ র্যাঙ্কিংয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান ৮১তম।
১৩০ দিন আগে
লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানাবিধ সুবিধা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পড়াশোনার উদ্দেশ্যে এই দীর্ঘ যাত্রায় সঞ্চিত হয় অমূল্য অভিজ্ঞতা, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর সার্বিকভাবেই উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষত নতুন শিক্ষাব্যবস্থা এবং বহুজাতি সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা এক বিরাট অর্জন। সেই সঙ্গে স্থানীয় নীতিমালা ও আর্থিক দিকগুলো ভারসাম্য দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্বনির্ভরতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়। এই সমুদয় প্রচেষ্টাকে আরও সহজ করে তোলে সেই অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশটির সাশ্রয়ী অবস্থান। এই বিবেচনায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অনেকটা এগিয়ে লিথুয়ানিয়া। জীবনধারণ ও শিক্ষাসেবা খরচ কম হলেও তাতে মানের কোনো ঘাটতি নেই। চলুন, লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের প্রয়োজনীয় খরচ, ভর্তি, ভিসা, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ নানা দিকগুলো সম্বন্ধে ধারণা নেওয়া যাক।
লিথুয়ানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
শিক্ষাক্ষেত্রে ইইউয়ের (ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন) সদস্য রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ার মূল আকর্ষণ হলো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্বমানের শিক্ষাসেবা। এগুলোতে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা প্রোগ্রামের সংখ্যা ৩৫০ টিরও বেশি, যার সবগুলোই ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে স্বীকৃত।
সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিল্নিয়াস ইউনিভার্সিটি, কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ যার অবস্থান ৪৭৩। এডি সায়েন্টিফিক ইন্ডেক্স বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গোটা ইউরোপে ৪৮৪ এবং বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ২১৭-তম অবস্থানে রেখেছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে লিথুয়ানিয়া গমনের হার ৭১ দশমিক ৯১ শতাংশ। পরিসংখ্যানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিকট লিথুয়ানিয়ার ক্রমশ গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উপরন্তু, দেশটির সমৃদ্ধ চাকরির বাজারের একটি বিরাট অংশ হচ্ছে তরুণ এবং সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী। এরা শিক্ষা, ক্যাটারিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক পরিষেবার মতো সেক্টরগুলোতে সৃজনশীল ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে দেশটি শুধুমাত্র অধ্যয়নের জন্যই নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মজীবন গড়ার জন্যও আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
লিথুয়ানিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রিয় কোর্সগুলো
ইউরোপ জুড়ে স্বনামধন্য লিথুয়ানিয়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
• ভিলনিয়স ইউনিভার্সিটি
• কওনাস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
• ভিল্নিয়স গ্যাডিমিনাস টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
• ভিতওতাস ম্যাগ্নাস ইউনিভার্সিটি
• মিকলাস রমেরিস ইউনিভার্সিটি
• লিথুয়ানিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সায়েন্সেস
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়:
• মেডিসিন
• অ্যাকাউন্টিং এবং অডিট
• ফ্যাশন ইঞ্জিনিয়ারিং
• স্থাপত্য
• ব্যবসা এবং জনপ্রশাসন
• আইন
• পারফর্মিং আর্টস
• প্রকৌশল বিজ্ঞান
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন পদ্ধতি
বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত দুটি ইন্টেকে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন করতে পারে। প্রথম ও অ্যাডমিশন পিক টাইম হলো সেপ্টেম্বর মাস যেটি অটাম ইন্টেক হিসেবে পরিচিত। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মৌসুমে ভর্তি কম হলেও অনেক শিক্ষার্থীদের জন্যই সময়টি অটামের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে কাজ করে। আবেদনের সময়সীমা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদনগুলো যাচাই করে, যা সম্পন্ন করতে এক মাস বা তার বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• ইউনির্ভাসিটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে পূরণকৃত আবেদন
• শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মার্কশীট সহ): লিথুয়ানিয়ান সেন্টার ফর কোয়ালিটি অ্যাসেস্মেন্ট ইন হায়ার এডুকেশন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে
• কারিকুলাম ভিটা
• উচ্চশিক্ষার জন্য লিথুয়ানিয়াকে বেছে নেওয়ার কারণ উল্লেখপূর্বক কয়েক কপি মোটিভেশনাল লেটার
• বৈধ পাসপোর্ট
• সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• আবেদন ও অধ্যয়ন ফি পরিশোধের রশিদ
• জীবনযাত্রার খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণ স্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট
• ইংরেজি দক্ষতার শংসাপত্র: ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ বা টোফেল স্কোর ৮১
আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
লিথুয়ানিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
পড়াশোনার জন্য এই ইউরোপীয়ান দেশটিতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল ডি-টাইপ ভিসার আবেদন করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিনের মধ্যে জারি করা এই ভিসায় কমপক্ষে ৯১ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত লিথুয়ানিয়ায় থাকার অনুমতি পাওয়া যায়। এর জন্য লিথুয়ানিয়ান মাইগ্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইজিআরআইএস) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
১ বছরেরও দীর্ঘ সময় অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দেশটিতে পৌঁছে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। এই পারমিট দেশটির মাইগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা হয়।
ন্যাশনাল ভিসা ফি ১৪০ ইউরো, যা প্রায় ১৮ হাজার ৪০ টাকার (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ৮৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান।
বাংলাদেশের লিথুয়ানিয়া কনস্যুলেটে সাধারণত কোনো ধরণের ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। এর জন্য প্রার্থীদের সাধারণত ভারতে যেতে হয়। এছাড়াও বিকল্পভাবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকেও লিথুয়ানিয়ার ভিসা করা যায়।
আরো পড়ুন: জাপানে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
১৩৫ দিন আগে
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
বাস্তবধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এবং সুরক্ষিত আর্থ-সামাজিক অবস্থা সামগ্রিকভাবে একটি দেশে বজায় রাখে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ। এর ধারাবাহিকতায় উন্নত হয় সাধারণ জনজীবন; আর এই উন্নত জীবন ব্যবস্থা দেশটিকে অভিবাসনের উপযুক্ত গন্তব্যে পরিণত করে। বিগত কয়েক দশক জুড়ে এমন কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছে ইউরোপের দেশগুলো। অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশগুলোতে ক্যারিয়ার গঠন করছে উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্ব সেরা বিদ্যাপিঠ এবং বহুজাতি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ। চলুন, ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার আবেদন, অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন ফিনল্যান্ড উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সদস্য রাষ্ট্র পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২৬ দশমিক ২ গ্লোবাল ক্রাইম ইন্ডেক্স নিয়ে শীর্ষ সুরক্ষিত দেশগুলোর তালিকায় এর অবস্থান ২৩ নম্বরে। এছাড়া বিশ্বের ১৩তম এই শান্তিপূর্ণ দেশটির গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্স ১ দশমিক ৪৭৪।
নিরাপদ পরিবেশের পাশাপাশি ফিনল্যান্ডের বিদ্যাপিঠগুলোর খ্যাতি শুধু ইউরোপেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত। কিউএস র্যাংকিং-এ ১০৯তম অবস্থানে থাকা ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম অ্যাল্টো ইউনিভার্সিটি। ১১৫তম র্যাংকটি ধরে রেখেছে ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি। ইউনিভার্সিটি অব অউলুর অবস্থান ৩১৩ এবং ইউনিভার্সিটি অব তুর্কুর অবস্থান ৩১৫ নম্বরে। ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে ৩৫১তম র্যাংকে।
আরো পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত
সেঙ্গেনভুক্ত এই দেশের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, হাই-স্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজন হবে স্নাতক ডিগ্রি। প্রাসঙ্গিক একাডেমিক বিষয়ে সম্পন্ন ক্রেডিট পয়েন্ট ইসিটিএসেরে (ইউরোপিয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জিম্যাট বা জিআরই স্কোর চাইতে পারে। ইউএএস (ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্সের জন্য আলাদাভাবে দরকার হবে ২ বছরের প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা। ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলোর জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি গবেষণা প্রস্তাব বা প্রকাশনা থাকতে হবে।
এছাড়া কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে প্রবেশিকা পরীক্ষা, এসএটি পরীক্ষা বা অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়া হতে পারে।
ফিনল্যান্ডের সাধারণ ভাষা ফিনিশ ও সুইডিশ হলেও এখানে ব্যাপক হারে ইংরেজিতে যোগাযোগের প্রচলন আছে। অধিকাংশ ফিনিশরাই বিশেষ করে তরুণরা খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করে স্থানীয় ভাষা জানার দরকার পড়ে না। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য সাধারণত আইইএলটিএস বা টিওইএফএল-এর ফলাফলকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়।
আরো পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
ফিনল্যান্ডসহ গোটা ইউরোপে বহুল সমাদৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
* আল্টো ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি* ইউনিভার্সিটি অব অউলু* ইউনিভার্সিটি অব তুর্কু* ল্যাপেনরান্ত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি* লুট ইউনিভার্সিটি* ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব জিভাস্কিলা* ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড* অ্যাবো একাডেমি ইউনিভার্সিটি* ইউনিভার্সিটি অব ভাসা
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
ফিনিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো:
* কম্পিউটার সায়েন্স ও আইটি* ব্যবসায় প্রশাসন* সাস্টেইনেবল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি* রিনিউয়েবল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং* আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন অ্যান্ড কেয়ার* ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট* ডিজাইন ও মিডিয়া
আরো পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ইউরোপের এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত দুটি মৌসুমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়। অটাম সেমিস্টার যেটি শুরু হয় আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে এবং স্প্রিং সেমিস্টার যার শুরু হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। উভয় ক্ষেত্রে ভর্তির সময়সীমা সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত থাকে।
এখানে মূলত তিনটি উপায়ে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন আবেদন করতে পারে।
* ইউএএসগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে* অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে* স্টাডিইনফোর ওয়েবসাইটে (https://opintopolku.fi/konfo/en/)
ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউএএসগুলোর রয়েছে নিজস্ব পদ্ধতি, মানদণ্ড ও নথির তালিকা। তবে ইউনিভার্সিটিগুলো সাধারণত দুটি উপায়ে আবেদন গ্রহণ করে।
*যৌথ আবেদন
* পৃথক আবেদন। যৌথ আবেদনে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৬টি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। আর পৃথক আবেদনটি হচ্ছে চিরাচরিত পদ্ধতি, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে শুধু একটি প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ থাকে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে থেকে জার্মান ভাষার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট পাওয়ার উপায়
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণত যে নথিগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়, সেগুলো হলো:
* সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করা আবেদনপত্র* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও ডিপ্লোমার প্রত্যয়িত কপি* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টিওইএফএল)* পাসপোর্টের কপি
ইউএএস-এ আবেদনের ক্ষেত্রে
*কর্মসংস্থানের প্রমাণপত্র*প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আবেদন*মাস্টার্স বা ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য
*সিভি* মোটিভেশন লেটার বা পার্সনাল স্টেটমেন্ট* রেফারেন্স লেটার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)* প্রকাশনা (ডক্টরেটের ক্ষেত্রে)* ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ ও পাসপোর্ট ছাড়া বাকি সমস্ত নথি যদি বাংলায় হয়, তাহলে সেগুলোর অফিসিয়াল অনূদিত সংস্করণ সংযুক্ত করতে হবে।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথমে ৯০ দিনের অধিক সময় ফিনল্যান্ডে থাকার জন্য প্রদান করা আবাসিক অনুমোদনের আবেদন করতে হয়। এতে অধ্যয়নের পুরোটা সময়ে দেশটিতে থাকাসহ খণ্ডকালীন চাকরির অনুমতি পাওয়া যায়।
স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য ফিনল্যান্ডে আসতে হলে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য আবাসিক অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রে ২ বছর পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
আবাসিক অনুমোদন পাওয়ার সাপেক্ষে ডি টাইপ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এই ভিসা শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আবাসিক অনুমতি মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভিসার আবেদন শুরু করা উচিত। এতে করে পার্মিট ইস্যূ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ফিনল্যান্ড প্রবেশ করে সেখান থেকে বসবাসের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা যায়। অবশ্য ডি ভিসাসহ বসবাসের অনুমতি নিয়ে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ দিন মেয়াদ থাকে।
আবাসিক অনুমোদনের জন্য সরাসরি এন্টার ফিনল্যান্ডের ওয়েবসাইটে (https://enterfinland.fi/eServices/account/emailregistration) অ্যাকাউন্ট তৈরির মাধ্যমে অনলাইন আবেদন করা যাবে। অনলাইনে জমা দেওয়ার পর পূরণ করা ফর্ম ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে হাতে স্বাক্ষর করতে হবে। অতঃপর ভিসার অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে একত্রিত করে দূতাবাসে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: যে ১০টি দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়তে পারবেন
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণসহ দূতাবাসে জমা দিতে যে সমস্ত নথি প্রস্তুত করা প্রয়োজন, সেগুলো হলো:
* ফিনিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার* বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা এবং ফিনল্যান্ডে পৌঁছার দিন থেকে অতিরিক্ত ৬ মাস পর্যন্ত মেয়াদ সম্পন্ন)* আয়ের প্রমাণপত্র (চাকরির সনদ)* আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ। শিক্ষাবর্ষের প্রথম বছরের আর্থিক সঙ্কুলানের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫৬০ ইউরো বা প্রায় ৭১ হাজার ৮৬০ টাকা (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)। অর্থাৎ বার্ষিক ৬ হাজার ৭২০ ইউরোর (প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার ৩১১ টাকা) ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করতে হবে।* স্কলারশিপ বা স্পন্সর পেয়ে থাকলে তার প্রমাণপত্র* স্বাস্থ্য বিমার শংসাপত্র: অধ্যয়নের সময়সীমা ২ বছরের বেশি হলে ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো (১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৫ টাকা)। আর ২ বছরের কম হলে ৪০ হাজার ইউরো (৫১ লাখ ৩২ হাজার ৮০২ টাকা)।* এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে অতিরিক্ত সংযুক্তি চাওয়া হতে পারে।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন
দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
এন্টার ফিনল্যান্ড-এ আবেদন সম্পন্ন করার পর প্রথম কাজ হচ্ছে ভারতে অবস্থিত ফিনল্যান্ড দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া। এর জন্য https://services.vfsglobal.com/ind/en/frp/register লিংকে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইন বুকিং সম্পন্ন করতে হবে। বুকিং দেওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখ এবং সময়ে সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষমাণা তালিকা প্রকাশ করা হয়। অতঃপর দিনক্ষণ অনুযায়ী ভিসার আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র মূল কপিসহ দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়।
দূতাবাসের ঠিকানা: ই-৩, ন্যায়া মার্গ, চাণক্যপুরী, নয়া দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত।
দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলাসহ প্রার্থীর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়। সাক্ষাৎকার শেষে আবেদন ফিনিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন: নরওয়েতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের উপায়
আবাসিক অনুমোদন প্রাপ্তি
ফিনিশ অভিবাসন সার্ভিসে আবেদন যাচাইয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খামে (ডিসিশন এনভেলপ) করে দূতাবাসে পাঠানো হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রার্থী ই-মেইল এবং এন্টার ফিনল্যান্ডে তার অ্যাকাউন্ট থেকেও দেখতে পারেন। আর খামটি সংগ্রহের জন্য সশরীরে দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়।
সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক হওয়া মানেই এবার শিগগিরই ডি ভিসার জন্য আবেদন করার পালা। সাধারণত ২ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ভিসা প্রাপ্তির পর ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করে আবাসিক অনুমোদন কার্ড সংগ্রহ করা যেতে পারে। মূলত এই অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ৬ মাস থেকে শুরু করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ৯ মাসও লেগে যেতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত খাম প্রাপ্তির পর কার্ড তৈরি হতে সময় লাগে ২ সপ্তাহ। এই কার্ড সংগ্রহের সময় বৈধ পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ
অনলাইনে রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন ফি বা পার্মিটের প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩৫০ ইউরো বা প্রায় ৪৪ হাজার ৯১২ টাকা। ডি-টাইপ ভিসার ফি ৯৫ ইউরো (প্রায় ১২ হাজার ১৯১ টাকা)। দূতাবাসের তথা ভিএফএস সার্ভিস চার্জ ৭০ ইউরো (প্রায় ৮ হাজার ৯৮৩ টাকা)।
প্রতিটা ফি অনলাইনে ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে অথবা দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের সময়ে পরিশোধ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে, অবলাইনে বা কাগুজে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি এবং প্রক্রিয়াকরণ সময় উভয়ই তুলনামূলকভাবে বেশি।
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
স্নাতক অধ্যয়নে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৪ থেকে ১২ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৮১ থেকে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪১ টাকার সমান। আর মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য খরচ হতে পারে ৮ থেকে ১৮ হাজার ইউরো (প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ থেকে ২৩ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ টাকা)।
পিএইচডির ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্পন্সর করা হয়, তাই দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফ্রি থাকে। এখানে গবেষণার পাশাপাশি আবাসনের ব্যয়ভারও বহন করা হয়।
ফিনল্যান্ডে বাড়ি ভাড়া বাবদ গড়ে খরচ হতে পারে মাসে ৩ থেকে ৭০০ ইউরো (প্রায় ৩৮ হাজার ৪৯৬ থেকে ৮৯ হাজার ৮২৪ টাকা)। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নকালে বিভিন্ন শহরের ছাত্রাবাসগুলোতে বসবাস করে। ডর্ম নামের এই আবাসনগুলোর মাসিক ভাড়া প্রায় ২৪০ থেকে ৪২০ ইউরো ( প্রায় ৩০ হাজার ৭৯৭ থেকে ৫৩ হাজার ৮৯৫ টাকা) পর্যন্ত।
নিত্য দিনের খাবারের জন্য ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত প্রতি মাসে ১৮০ থেকে ২৪০ ইউরো (প্রায় ২৩ হাজার ৯৮ থেকে ৩০ হাজার ৭৯৭ টাকা) খরচ করে থাকে। প্রতি মাসে যাতায়াত বাবদ খরচ হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭৮ ইউরো (প্রায় ৭ হাজার ৭০০ থেকে ১০ হাজার ৯ টাকা)। বিদ্যুৎ ও পানিসহ নানা ইউটিলিটির জন্য মাসিক চার্জ ৮৪ থেকে ১২০ ইউরো (প্রায় ১০ হাজার ৭৭৯ থেকে ১৫ হাজার ৩৯৯ টাকা)।
আরো পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি দেয়। তারমধ্যে ফিনল্যান্ড স্কলারশিপগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ এবং ৫ হাজার ইউরোর (প্রায় ৬ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি। উপরন্তু, শিক্ষার্থীর একাডেমিক যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ থেকে শতভাগ অধ্যয়ন ফি মওকুফ করা হয়।
ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি স্কলারশিপ মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আংশিক থেকে সম্পূর্ণ টিউশন মওকুফ করে থাকে। গ্লোবাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন ফ্রি সহ ৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৮ লাখ ৯৮ হাজার ২৪১ টাকা) বার্ষিক উপবৃত্তি পাওয়া যায়।
ডক্টরাল অধ্যয়নে অধ্যয়নের সম্পূর্ণ খরচ বহনসহ মাসিক উপবৃত্তি দেয় ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড ডক্টরাল স্কলারশিপ। আল্টো ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপের আওতায় একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ।
ইরাস্মাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স ডিগ্রি স্কলারশিপ যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রামে টিউশন, জীবনযাত্রার খরচ এবং ভ্রমণের খরচ বহন করে।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
ফিনল্যান্ডে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পায়। এছাড়া গ্রীষ্মের ছুটির সময় কর্মঘণ্টার উপর কোনো সীমারেখা থাকে না।
কাজের প্রকৃতি এবং সেক্টর অনুসারে এই খণ্ডকালীন চাকরি থেকে আয় হয়ে থাকে ঘণ্টা প্রতি ৯ থেকে ১৩ ইউরো (প্রায় ১ হাজার ১৫৫ থেকে ১ হাজার ৬৬৯ টাকা)। রবিবার বা যেকোনো দিন সন্ধ্যার পরবর্তী শিফ্টে কাজ করলে আরও বেশি আয় হয়। তথ্য প্রযুক্তি এবং সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো সেক্টরগুলো থেকে তুলনামূলক ভালো উপার্জন আসে।
তাছাড়া বছরে দুটি পিক সিজন থাকে, যখন নিয়োগকর্তারা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি নতুন কর্মী নিয়ে থাকেন। একটি হচ্ছে ডিসেম্বরে শীতের বিরতির ঠিক আগে, আর আরেকটি হচ্ছে গ্রীষ্মের বিরতির আগ মুহূর্তে।
সব মিলিয়ে এসব আয় সেমিস্টার চলাকালে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়।
আরো পড়ুন: রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
অধ্যয়ন শেষে চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
স্নাতক শেষ হওয়ার পর চাকরি খোঁজা বা ব্যবসা শুরুর জন্য অতিরিক্ত ২ বছরের ওয়ার্ক পার্মিটের আবেদন করা যায়। মূলত ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অধ্যয়নের সময়কালসহ দেশটিতে কমপক্ষে একটানা ৪ বছর থাকতে হয়। এর মাঝে কখনও সর্বোচ্চ ৩ মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকা যাবে না।
ইউরোপীয় দেশটির উচ্চ মানের জীবনযাত্রার জন্য সেখানে কাজের সুযোগটি কেবল আকর্ষণীয়ই নয়। বরং পর্যাপ্ত ভ্যাকেন্সি থাকায় মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য তা বেশ সহজসাধ্যও বটে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই কাজের সুযোগ করে নিতে পারে। এছাড়া ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব ও সাবলীলতা থাকায় আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাকরি পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করে তোলে।
ফিনল্যান্ডের চাকরির বাজারে আধিপত্য বিস্তার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি তৈরি, কাগজ ও কাঠের পণ্য, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও যানবাহন পরিষেবা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিনল্যান্ড তথ্য-প্রযুক্তিতে গোটা ইউরোপের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তাই আইটিতে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য দেশটিতে রয়েছে ক্যারিয়ারের অপার সম্ভাবনা।
পরিশিষ্ট
ইংরেজি ভাষায় অভ্যস্ত জাতি, পড়াশোনার বাজেট, স্কলারশিপ ও চাকরি; এই সব সুযোগের বিচারে ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য হতে পারে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়াগুলোতে সুষ্ঠ কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি। অফার লেটারের পরেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং চিকিৎসা বিমার জন্য তহবিলের ব্যবস্থাপনা। এছাড়া ফিনল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে আবাসিক অনুমোদন এবং ডি-ভিসার আবেদনের মধ্যকার সময়সীমার প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উপরন্ত, এই প্রক্রিয়াগুলো পরবর্তীতে ফিনল্যান্ডে ডিগ্রি পরবর্তী ওয়ার্ক-পার্মিট লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
২২৫ দিন আগে
রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে উন্নত ক্যারিয়ার ও জীবনধারণের সমূহ সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে গন্তব্যটি এমন হতে হয় যেখানে সন্নিবেশ ঘটবে নিরাপদ পরিবেশ, মেধাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ততা। সেই সঙ্গে সামগ্রিক খরচটাও হতে হবে সাধ্যের মধ্যে। ঠিক এমনি সুযোগের প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন অধিকাংশ ইউরোপীয়ান দেশগুলোর মতো নিমেষেই চলে আসে রোমানিয়ার কথা। বিশ্বমানের সব বিদ্যাপীঠ নিয়ে শেনজেনভুক্ত দেশটি প্রতি বছর সাদরে আমন্ত্রণ জানায় হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। চলুন, রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
রোমানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন
বিগত দশক জুড়ে ব্যবসায়িক, শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে রোমানিয়া। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের এই সদস্য দেশটি বর্তমানে ৩২ দশমিক ৩ ক্রাইম ইনডেক্স নিয়ে শীর্ষ নিরাপদ দেশগুলোর তালিকায় ৩৫ নম্বরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া ১ দশমিক ৭৫৫ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স নিয়ে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৩৬ নম্বরে রয়েছে।
রোমানিয়ায় পড়াশোনার ও জীবনযাত্রার খরচ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ মানের দিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা একদমই আপোসহীন। শুধু তাই নয়, ইউরোপের অন্যান্য সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর সঙ্গে এক সারিতে রয়েছে দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাংকিংয়ে শীর্ষ রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, যেটি রয়েছে ৮০১ নম্বরে। এ ছাড়া বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটির র্যাংকিং ৮৫১।
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি সুবিধা হলো এখানে অর্জন করা ক্রেডিটগুলো সহজেই অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা যায়। এই পরিবর্তনে অধ্যয়নের গুণমানের কোনো ঘাটতি হয় না। এমনকি অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কোনো শর্ত পূরণ করতে হয় না।
আরও পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
এই স্থানান্তরকে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
· ইউরোপীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম
· ডিপ্লোমা সাপ্লিমেন্ট
· ইউরোপিয়ান কোয়ালিটি চার্টার ফর মোবিলিটি
· ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক ফর লাইফ লং লার্নিং
· ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইনফরমেশন সেন্টার্স অন একাডেমিক রিকগনিশন অ্যান্ড মোবিলিটি
· ন্যাশনাল একাডেমিক রিকগনিশন ইনফরমেশন সেন্টার্স
আরও পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়াতে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের পূর্বশর্ত
আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের রোমানিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে হলে ন্যূনতম ১২ বছরের শিক্ষাগত জীবন অতিবাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা তার সমতুল্য একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।
মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। পিএইচডির জন্য প্রধান শর্ত হলো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হওয়া।
পড়াশোনা ও চাকরিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার অগ্রাধিকার থাকায় রোমানিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ এর কিংবা টিওইএফএল-এ ৮০ থেকে ৯০ থাকতে হবে।
রোমানিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
যে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রোমানিয়াসহ গোটা ইউরোপে বহুল সমাদৃত, সেগুলো হলো-
· বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি
· বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি
· আলেকজান্দ্রু ইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
· টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ক্লুজ-নাপোকা
· গিওর্গে আসাকি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
· ট্রান্সিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসভ
· ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিকা অব বুখারেস্ট
· ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসোয়ারা
· বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ
· গ্রিগোরে টি. পোপা ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন অ্যান্ড ফার্মেসি, ইয়াসি
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম সারির কোর্সগুলো-
· জেনারেল মেডিসিন
· ডেন্টিস্ট্রি
· ফার্মেসি
· মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
· ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
· সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
· আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
· সাইবার সিকিউরিটি
· ফাইন্যান্স
· মার্কেটিং
· হিউম্যান রিসোর্স
আরও পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
রোমানিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ফল এবং স্প্রিং; এই দুই সেমিস্টারে সাধারণত রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলের সময়সীমা থাকে পরের বছরের জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত। আর স্প্রিং শেষ হয় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে।
ভর্তির জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় সরবরাহ করা তথ্যের সাপেক্ষে আপলোডের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে।
অনলাইন আবেদনের যাবতীয় কাজ শেষে পূরণ করা ফর্মটি ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বহস্তে সাইন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সহকারে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· নির্ভুলভাবে পূরণ করা ভর্তির আবেদনপত্র
· উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, স্নাতক ডিপ্লোমা বা সমমানের সনদের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকের জন্য)
· স্নাতক শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকোত্তরের জন্য)
· জন্ম শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি
· মেডিকেল সার্টিফিকেট
· পাসপোর্টের প্রত্যয়িত কপি
· ভাষা দক্ষতা শংসাপত্র (আইইএলটিএস বা টিওইএফএল স্কোর)
· দুটি সাম্প্রতিক ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
· গবেষণার প্রস্তাবনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রকাশনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· সিভি বা পোর্টফোলিও (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির ক্ষেত্রে)
· লেটার অব রিকমেন্ডেশন
· আবেদনের ফি পরিশোধের রশিদ: ৫০ থেকে ১০০ ইউরো বা ৬ হাজার ৩৫৬ থেকে ১২ হাজার ৭১২ টাকা (১ ইউরো = ১২৭ দশমিক ১১ বাংলাদেশি টাকা)
মাস্টার্সের বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জিআরই, জিম্যাট বা এলস্যাটের মতো অতিরিক্ত পরীক্ষার স্কোর প্রদর্শন করতে হতে পারে। তাছাড়া এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। প্রতিটি নথি রোমানিয়ান, ইংরেজি ও ফরাসি যেকোনো একটি ভাষায় অনূদিত হতে হবে।
আরও পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
২৩১ দিন আগে