আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
যুক্তরাজ্যে মামলা এবং ১৯৭১-এর ইতিহাসের ভবিষ্যৎ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। সকাল থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আর ফেসবুকের আলোচনাগুলো লক্ষ্য করছি। গুরুত্বপূর্ণ মতামত আর আবেগ উঠে এসেছে সেসব আলোচনায়। অনেকে আবার এই সুযোগে শহীদ দিবসের উত্তপ্ত তাওয়ায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদিও ভেজে নিচ্ছেন একটু করে।
এতে সমস্যা নেই। এসব বিষয় অবশ্যই গুরুত্বের দাবিদার এবং আলোচনাগুলো সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু নির্দিষ্ট যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অন্তত আজকের এই দিনে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ ও সময়োপযোগী ছিল বলে মনে করছিলাম; সেটি কোথাওই আর উত্থাপিত হতে দেখলাম না। তাই এই পোস্টটি লেখার তাগিদ অনুভব করছি। ধৈর্য্য ধরে যদি পড়েন (কারণ এটি একটি দীর্ঘ পোস্ট হতে যাচ্ছে) তাহলে কৃতজ্ঞ হব।
এই যে উপরে লিখলাম ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’, কথাটা কিন্তু এতটুকু বাড়িয়ে বলিনি। এই পোস্টটি পড়লে আপনার কাছেও হয়তো সেটি স্পষ্ট হবে এবং আপনিও একমত হবেন।
আমার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়া থেকে গত ১৫ বছরে এ সংক্রান্ত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘটনাকে যদি চিহ্নিত করি আমরা, তাহলে সম্ভবত এই পোস্টে যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি সেটি হতে যাচ্ছে তার একটি।
একটু ধারণা দিই, এমনকি হয়তো শাহবাগ আন্দোলনও এই তিন প্রধান ঘটনার তালিকার মধ্যে পড়বে বলে আমার মনে হয় না!
তাহলে একটু মন দিয়ে পড়ুন।
আপনারা জানেন, ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন নামে একজনের বিচার হয়েছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি)। আসামির অবর্তমানে তার বিচারের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আইসিটি এবং তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয় ২০১৩ সালে।
আরও পড়ুন: বেদনায় ভরা দিন: শেখ হাসিনা
দণ্ডপ্রাপ্ত মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় সেই সাজা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি বা কি কি করা সম্ভব ছিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে; এখন সে কথা থাক। মুঈনউদ্দিনের পুরো ঘটনা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নতুন মোড় নিয়েছে, সেটি মনে হয় আপনাদের সবার আগে জানা থাকা দরকার।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জঙ্গীবাদ ও ইসলামিজম বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, মূলত অনলাইনে। সেখানকার একটি ‘ফুটনোটে’ চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটির একটি রায়ও রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মুঈনউদ্দিনের নিযুক্ত আইনজীবীরা দাবি করেন, রিপোর্টে তার রায়ের এই বিষয়টির এমনকি উল্লেখও নাকি তার বিরুদ্ধে মানহানির শামিল এবং এই মর্মে তারা স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে আইনি নোটিশ পাঠায়। স্বরাষ্ট্র দপ্তর এই লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফুটনোটটি সরিয়েও নেয় অনলাইন থেকে। তারপরও মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেন।
আদালতে মুঈনউদ্দিনের বক্তব্য ছিল বাংলাদেশের আদালতের রায়কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টিই তার জন্য মানহানিকর, কারণ বাংলাদেশের আইসিটির নাকি কোনো ধরনেরই গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সুতরাং, আইসিটির মাধ্যমে ১৯৭১ এর যে ধরনের ইতিহাস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রায় দেওয়া হয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন। এসবের ফলে নাকি যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মুঈনউদ্দিনের মানবাধিকার ও সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বিপরীত পক্ষ (অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আইনজীবীরা) পাল্টা অভিযোগ আনে এই বলে, অন্য একটি দেশের আদালতে ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় পুনরায় উত্থাপন করে মুঈনউদ্দিন যেটা করার চেষ্টা করছে তা হলো মূলত যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থার অপব্যবহার। সুতরাং, মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক।
হয়তো বুঝতে পারছেন, পরোক্ষভাবে এই মামলাটির অন্যতম বিচার্য বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালতে আইসিটি আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্ট মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মুঈনউদ্দিন আপিল করেন যুক্তরাজ্যের উচ্চতর আপিল আদালতে।আপিল আদালতের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে একমত হন, কিন্তু একজন বিচারক মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ মামলা খারিজের বিপক্ষে) রায় দেন। এই এক বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মুঈনউদ্দিন আবার আপিল করেন, এবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে। এটাই যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১ ও ২ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে মামলার বিষয়টির চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারকের সামনে সেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মুঈনউদ্দিন ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান দু'টি ল'ফার্মের আইনজীবীরা সেখানে পাল্টাপাল্টি অংশ নেন।
গত চার বছর ধরে এবং বিশেষ করে গত ন'মাস ধরে আমি এই মামলার পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি। সরাসরি মামলার পক্ষ না হতে পারার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, নিজের সীমিত সাধ্য আর সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করে গেছি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এই মামলায় ১৯৭১ এর ভিকটিমদের ও আইসিটির মূল দিকগুলো সামনে নিয়ে আসার।
উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের মামলার আইনজীবীদের দু’পক্ষের সাবমিশনে যে মৌলিক বিষয়গুলো একেবারেই উঠে আসেনি সেগুলোর পাশাপাশি তাদের এবং যুক্তরাজ্যের বিচারকদের করা জ্বলজ্যান্ত ভুলগুলো তুলে ধরা।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
চূড়ান্ত বিচারে কতটুকু সফল হয়েছি তা এখনি বলা মুশকিল, কারণ যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন। তবে এটুকু উল্লেখ না করলেই না।
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দু'পক্ষের শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার অন্তত যা মনে হয়েছে, তা হলো পুরো মামলাটির শুনানি আইসিটির জন্য ইতিবাচক হয়েছে তা বলা যাবে না। যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গী হয়তো (ধরে নিচ্ছি যদিও) অনেকাংশেই নির্ভর করেছে মুঈনউদ্দিন ও যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দুই পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা এ পর্যন্ত যা শুনেছেন বা যা শুনেননি শুধু তার উপরই।
যে কোনো দিনই রায় হতে পারে। জানি না যুক্তরাজ্যের বিচারকরা কি রায় দেবেন শেষ পর্যন্ত, এবং তা কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত ও (অপ)ব্যবহৃত হতে পারে ১৯৭১, বিচার, আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে!
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টি কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটি জানিয়ে রাখাটা প্রয়োজন মনে করছি, যে কারণে মূলত এই লেখাটি লেখা।
চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের এই মানহানি মামলাটিকে যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট যদি সর্বতোভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দেন তাহলে তো কিছুই বলার নেই। সেই সম্ভাবনা এখনও আছে। তেমনটি হলে এই মামলাটি হয়তো ইতিহাসের বা আইনের বইয়ের কোনো একটি ছোট ফুটনোট হয়ে থেকে যাবে।
কিন্তু রায়ে যদি এর বিপরীতটি ঘটে, অর্থাৎ, মুঈনউদ্দিনের মানহানির দাবি যদি টিকে যায়, তাহলে নিচের আশঙ্কাগুলো বাস্তব হয়ে উঠার এক ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হবে আমাদের সবার জন্য। অনেকগুলো সম্ভাব্য ফলাফল আর আশঙ্কার মধ্যে শুধু চারটি উল্লেখ করছি নিচে:
প্রথমত:
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ আইসিটির প্রক্রিয়ার বিপক্ষে) রায় দিলে সেই রায়টি দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধী আসামিপক্ষ উদ্ধৃত করবে আইসিটির পুরো প্রক্রিয়া এবং এর প্রতিটি বিচারের রায়কে চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধভাবে করার কাজে। অবশ্যই, আইনি বিচারে যুক্তরাজ্যের রায় বাংলাদেশের আইসিটির রায়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, তবে প্রচার/অপ-প্রচারের বিভ্রান্তিকর রাজনীতিতে এবং ১৯৭১ এর ইতিহাসকে ঘোলা করার কাজে যুক্তরাজ্যের আদালতের রায় শক্তিশালী এক হাতিয়ার হয়ে উঠবে ১৯৭১ বিরোধীপক্ষের হাতে। এই যে প্রথম সম্ভাবনার কথাটি লিখলাম, তা হলো আমার লেখা চারটি সম্ভাবনার মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর, কারণ বাকিগুলো আরও সুদূরপ্রসারী!
দ্বিতীয়ত:
যদি যুক্তরাজ্যের আদালতে বাংলাদেশের আইসিটির বিরুদ্ধে করা সমালোচনাগুলো ধোপে টিকে যায়, তাহলে এর প্রভাব হবে মুঈদনউদ্দিনের মামলা ছাড়িয়েও আরও বিস্তৃত। কারণ, তখন সমালোচনাগুলো পশ্চিমের এক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বদৌলতে এক ধরনের আইনি বৈধতার সিল পেয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে তখন আইসিটির বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই ব্যবহার করতে পারবে এ জাতীয় কৌশলগত মানহানি মামলায়। তাদের উদ্দেশ্য হবে ১৯৭১ ইস্যুতে নিজেদের কৃতকর্মের ইতিহাস চাপা দেওয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থা ও আদালত এমনিতেই এ জাতীয় মানহানি মামলার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ফোরাম হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বের অন্য সব ব্যবস্থার তুলনায়। এই সুযোগটি ঢালাওভাবে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে তখন যুদ্ধাপরাধী পক্ষের দিক থেকে। এভাবে ১৯৭১ এর প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস একটু একটু করে বিকৃত হতে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-৩
তৃতীয়ত:
আইসিটির রায়ের পরও যদি দণ্ডিত একজন অপরাধী এই রায়কে মানহানিকর বলে যুক্তরাজ্যের আদালতে উতরে যেতে পারে, তাহলে ১৯৭১ এ সংঘটিত অপরাধগুলো (যেমন: গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ) নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ধরনের গবেষণা আর লেখালিখির কাজ আর উদ্যোগগুলো এক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। লেখক ও গবেষকদের তখন তাদের কাজগুলো করতে হবে প্রতি পদে মানহানি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে। আইন বিষয়ে যাদের কিছুমাত্র ধারণা আছে তারা জানবেন কাউকে হয়রানি করতে বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করতে মানহানি মামলার কোনো জুড়ি নেই।
চতুর্থত:
বাংলাদেশের গণহত্যার বৈশ্বিক সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জনের যে প্রজন্মব্যাপী আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে, তার পুরোটাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হবে।
আশা করি এই লেখাটি পরিস্থিতির সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে নেত্রকোণার খলিলুরের মৃত্যুদণ্ড
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে নেত্রকোণার খলিলুর রহমানকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। এর আগে ১৮ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখার আদেশ দিয়েছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর ছিলেন রানা দাশগুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, এ মামলার চার আসামির মধ্যে বিচার চলাকালেই তিনজনের মৃত্যু হয়। একজন আসামি বেঁচে আছেন। তিনিও পলাতক। আজ তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ: গফরগাঁওয়ের ৩ জনের আমৃত্যু, ৫ জনের ২০ বছর করে দণ্ড
২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মামলার আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
শুরুর দিকে এ মামলায় পাঁচ আসামি ছিল। এর মধ্যে এক আসামি রমজান আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাকি চারজন হলেন-নেত্রকোণার দুর্গাপূর থানার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের মৃত নবী হোসেনের ছেলে মো. খলিলুর রহমান, তার ভাই মো. আজিজুর রহমান, একই থানার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তোরাব আলীর ছেলে আশক আলী ও জানিরগাঁও ইউনিয়নের মৃত কদর আলীর ছেলে মো. শাহনেওয়াজ। তবে বিচার চলাকালে বাকি তিন আসামিও বিভিন্ন সময়ে মারা যান।
আরও পড়ুন: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ: মোহাম্মদপুরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে দুর্গাপূর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্রে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দু’জনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪/১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্র থেকে আরও জানা যায়, আসামিদের মধ্যে খলিলুর রহমান ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নে আল বদর বাহিনীর কমান্ডার হন। পরবর্তীতে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হন।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ: রাজধানী থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
যুদ্ধাপরাধ: মৌলভীবাজারের ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজারের আবদুল আজিজসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুজন হলেন আবদুল মান্নান ওরফে মোনাই ও আবদুল মতিন (পলাতক)।
বৃহস্পতিবার শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও অপহরণসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফেরত দিতে যুক্তরাজ্যের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বান
আদালতে আসামিপক্ষে এম সারোয়ার হোসেন ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মুকলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
প্রসিকিউশন অনুসারে, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্ত শেষ হয়। ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
একই বছরের ১ মার্চ আবদুল মান্নান ও আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদের দুজনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: যশোরে ৬ যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার, ঢাকায় স্থানান্তর
খুলনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা
সিনিয়র প্রসিকিউটর জেয়াদ মালুম আর নেই
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সিনিয়র প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অ্যাডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম শনিবার রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।শনিবার রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয় বলে জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র পরামর্শদাতা মেহেদী মাসুম।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত বাংলাদেশ
গত ২৫ মে, ৬৭ বছর বয়সী সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী স্ট্রোকের পরে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন।মুক্তিযোদ্ধা জেয়াদ-আল-মালুমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জুন মাসে তাকে সিএমএইচে স্থানান্তরিত করা হয়।২০১০ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে জেয়াদ আল মালুম নিয়োগ পান।তিনি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে করা যুদ্ধাপরাধের মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি, ফিলিস্তিনি মিশন বন্ধের আদেশ
জেয়াদ-আল-মালুম ১৯৫৪ সালে টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধ: গফরগাঁওয়ের ৩ জনের আমৃত্যু, ৫ জনের ২০ বছর করে দণ্ড
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নয়জনের মধ্যে আটজনকে দণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাকি একজন খালাস পেয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন: তীব্র প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বলেছে, এটা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে ফাটল ধরানোর পদক্ষেপ।
আবদুল হাননান খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাননান খানের মৃত্যুতে রবিবার শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ওয়াহিদুল হকের বিচার শুরু
ঢাকা, ১৬ অক্টোবর (ইউএনবি)- মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের (৬৯) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।