শান্তিচুক্তি
শান্তিচুক্তির দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ, আটক ৩২
গাজায় শান্তিচুক্তি ও বন্দিমুক্তির দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট) আন্দোলনকারীরা দেশব্যাপী ধর্মঘট পালন করেছেন। এ সময় যানবাহন চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়; ৩২ জন আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দি ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের দুইটি সংগঠন ‘দ্য ডে অব স্টপেজ’ শীর্ষক এই কর্মসূচি আয়োজন করে। কয়েক সপ্তাহ আগে হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের ভিডিও প্রকাশ করেছিল। এদিকে ইসরায়েল গাজা পূর্ণ দখলে সামরিক অভিযান শুরুর পরিকল্পনা জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই এই কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা করছেন, আবার সংঘাত শুরু হলে হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন বন্দির জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে অনেকের ধারণা, বন্দিদের মধ্যে মাত্র ২০ জন বেঁচে আছেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘আমরা বন্দিদের মৃতদেহের ওপর যুদ্ধ জিতব না’ সহ নানা স্লোগান দেন।
রবিবার পুরো ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনকারীরা রাজনৈতিক নেতাবৃন্দের বাড়ির সামনে, সামরিক সদর দপ্তর ও প্রধান মহাসড়কগুলোতে সমবেত হন। তারা রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেন, এতে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বেশ কিছু হোটেল, রেস্টোরেন্ট ও সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, দেশব্যাপী এই কর্মসূচি থেকে ৩২ জন আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে। হামাসের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া আরবেল ইয়েহুদ নামের একজন আন্দোলনকারী বলেন, সামরিক চাপ বন্দিদের মুক্তি দেয় না। বরং এটি তাদের আরও মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তাদের ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় শান্তিচুক্তিতে বসা।
তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান নিকট ভবিষ্যতে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বন্দিদের দ্রুত মুক্তির দাবি করলেও তিনি বিরোধী দলগুলোর চাপের মধ্যে রয়েছেন। নিজের জোটের মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বিব্রত। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিপরিষদের অতি ডানপন্থী সদস্যরা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, তারা হামাসের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি সমর্থন করবেন না।
গাজায় আগ্রাসন শুরুর প্রস্ততি চলছে
এদিকে, ইসরায়েলে আন্দোলনকারীরা যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও গাজার শহর ও অন্যান্য জনবহুল এলাকায় আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ)।
গাজায় মানবিক সাহায্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কোগাট জানিয়েছে, অঞ্চলটিতে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ পুনরায় শুরু হবে। তবে গাজা থেকে বাসিন্দাদের ‘বাধ্যতামূলক সরানোর’ পরিকল্পনা চলছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত
২০২৩ সালে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়। এরপর থেকে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে আইডিএফ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত গাজায় ৬১ হাজার ৮৯৭ জন নিহত হয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। রবিবার গাজায় পুষ্টিহীনতার কারণে দুটি শিশু মারা গেছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ৭।
১০৯ দিন আগে
যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
সাম্প্রতিক হামলার পর আলোচনার টেবিলে ফিরতে সরাসরি ও মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েল-ইরান আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আলোচনা নিয়ে আমরা আশাবাদী। এখন ইরানিদের সঙ্গে বসে একটি সামগ্রিক শান্তিচুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।’ তবে আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।
উইটকফ জানান, যুক্তরাষ্ট্র যে লক্ষ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে। ইরানের অস্ত্র উৎপাদনের জন্য বিদ্যমান অথবা ভবিষ্যতে উৎপাদিত হতে পারে—এমন অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়ামকে বাস্তব অস্ত্রে রূপান্তরের সক্ষমতা নির্মূল এবং দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে ওয়াশিংটন।
এদিকে, ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ৬ পরাশক্তির করা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মেয়াদ শেষে হতে চলেছে চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর। এ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র: গোয়েন্দা প্রতিবেদন
বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শি বলেন, ‘ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ একাধিক পারমাণবিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা ওই চুক্তিটি অনুমোদিত ছিল। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
শি অভিযোগ করেন, ‘ইরান জাতিসংঘের প্রস্তাবনাগুলো লঙ্ঘন করে ইয়েমেনের হুথি, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ২০২২ সালে রাশিয়াকে শত শত ড্রোন সরবরাহ করেছে, যেগুলো ইউক্রেনে হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।’
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে ব্যর্থতা বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও তার বাইরেও সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করেছে এবং অস্থিরতা বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইরানের এসব চুক্তির লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার হুমকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চোখ বন্ধ করে রাখবে না বলেও সতর্ক করেন শি।
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার (২১ জুন) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েল, পুরো অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি দেশটির হুমকি হ্রাস করা। পাশাপাশি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করা।’
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
এ সময় ইরানকে শান্তি ও সমৃদ্ধির এই সুযোগ গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে উৎসাহিত করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ফ্রান্সের হুঁশিয়ারি
এদিকে, যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দিতে আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়—ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ অন্যত্র সরানো হয়নি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) পুনরায় পূর্ণ সহযোগিতা শুরু করার জন্য ওই বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে ফরাসি দূত জেরোম বোনাফঁট।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়ে তেহরানকে একটি জবাবদিহিমূলক ‘দৃঢ়, যাচাইযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সমাধানে’ ফের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালের ইরান চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ও স্থানান্তরের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ চলতি বছরের ১৮ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে যদি গ্রীষ্মের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে ইতালি, ব্রিটেন ও জার্মানি ২০১৫ সালের প্রস্তাবের সেই ধারা ব্যবহার করতে প্রস্তুত, যার মাধ্যমে জাতিসংঘের পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল’ করা সম্ভব।
জেরোম বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি হতে হবে।’
আলোচনায় ফেরার আহ্বান ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানে ফিরে যাওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত স্তাভরোস লামব্রিনিদিস।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে: নেতানিয়াহু
নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ইরানের পারমাণু কর্মসূচি নিয়ে কেবল তখনই সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে যথাযথভাবে জড়িত থাকবে।’
ইরান যাতে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন বা উন্নয়ন না করতে পারে, তা নিশ্চিত করাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বলে জোর দেন তিনি।
একমাত্র নিরপেক্ষ ও স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে আইএইএয়ের ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুদ্ধবিরতি বিপর্যয়কর উত্তেজনা এড়ানোর সুযোগ: জাতিসংঘ
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে ‘বিপর্যয়কর মাত্রার সংঘাত এড়ানোর একটি সুযোগ’ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির রাজনৈতিক ও শান্তি বিষয়ক উপপ্রধান রোজমেরি ডিকার্লো সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি আরও বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে সাহায্য করতে পারে—যা গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাব ফেলত।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করার আহ্বান ট্রাম্পের
তিনি বলেন, ‘কূটনীতি, সংলাপ ও যাচাই—এগুলোই ইরানের পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার এবং ইরানি জনগণের জন্য প্রকৃত অর্থনৈতিক সুফল আনার সর্বোত্তম পথ।’
কূটনৈতিক সমাধানে যেতে রাজি ইসরায়েলও
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর ‘খুব শিগগিরই কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হবে’ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এখন কথা বলতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেন ১২ দিন আগের পরিস্থিতিতে আর ফিরে না যাই, যেখানে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পূর্ণ প্রভাব এখনও নির্ণয় করা হয়নি, তবে আমরা জানি যে আমরা তাদের কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিতে পেরেছি, তাৎক্ষণিক হুমকিটিও সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’
এ সময় গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির আহ্বানের বিষয়ে ড্যানন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চায় ইসরায়েল।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান প্রায় একই সঙ্গে এসে বলেছিল, শান্তি: দাবি ট্রাম্পের
তিনি আরও দাবি করেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরায়েল যে (সামরিক) সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, তা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে নতুন সুযোগ এনে দেবে।
এ সময় ট্রাম্পের প্রশংসা করে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।’
১৬২ দিন আগে
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে দুই বছর লাগতে পারে: বীর বাহাদুর উশৈ সিং
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি স্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এতে আরও ‘এক থেকে দুই বছর’ সময় লাগতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উশৈ সিং বলেন, ‘কেউ বা অনেকে বলেন যে শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। আমি মনে করি, পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি এটি সত্যি। আবার শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছ এটাও সত্য। বাকি ধারাগুলো পর্যবেক্ষণের শক্তিশালী জাতীয় কমিটি আছে। যেটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।’ এই কমিটিকে সহযোগিতা করে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর: সরকার চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে বলে আশাবাদী পাহাড়ি নেতারা
তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিটি মূলত দেখছে কোথায় ধীরগতি, বাধা রয়েছে। এসব সমাধান করে এগিয়ে যাচ্ছে কমিটি। যতটুকু বাকি আছে আমরা সবাই আন্তরিক হলে সমাধান করতে পারব।’
তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার কারণে দুই পক্ষ মিলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। বিষয়টিকে মন্ত্রী বিশ্বে প্রথম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট থেকেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়। যারা আন্দোলন করছিলেন তাদের যত সমস্যা সেগুলো শোনার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার কারণে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকটি বৈঠক হয়েছে জাতীয় কমিটির। এই দীর্ঘ সমস্যার সমাধানে আমরা একটি জায়গায় পৌঁছে সক্ষম হয়েছি।’
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
উশৈ সিং ইউএনবিকে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তার আন্তরিকতা, মমত্ববোধের কারণেই পার্বত্য এলাকা বর্তমান অবস্থায় এসেছে।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে দুই বছরও লাগতে পারে, আবার এক বছরও। আমরা চাচ্ছি কম সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে। এটিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন কোন কোন বিষয়ে হয়নি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে ভূমির বিষয়টি রয়েছে। এছাড়াও টুকিটাকি কিছু বিষয় আছে। তবে ভূমিই প্রধান। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, আমাদের আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বসেছিল। আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। আর কিছুটা বাকি আছে, আলোচনা করলে হয়তো বা এগিয়ে যেতে পারব, এই সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থানীয় কিছু সমস্যা সম্প্রতি হচ্ছে, ‘এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো অশান্তি চাই না। কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটছে, কিছু গ্রুপ আছে, চাঁদাবাজি আছে- এসব বিষয়ে মানুষের কোনো জানমালের ক্ষতি না হয় এ বিষয়ে আমরা খুবই সজাগ আছি। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের সমস্যা আমরা চাই না। সকল মানুষকে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী থাক আমরা তাই চাই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৩২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ
১০৯৭ দিন আগে
ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি: বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন প্রত্যাশা অপূর্ণ রয়ে গেছে
প্রত্যাশা এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে উল্লেখ করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সকল প্রতিশ্রুতি পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে সই করেন। এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর। কিন্তু এখনও এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি। এখনও মধ্যে অশান্ত পার্বত্য অঞ্চল। প্রতিনিয়ত ঘটছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি।
চুক্তি সইয়ের ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ।
তাদের অভিযোগ, চুক্তির মূল ধারাগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। হয়নি ভূমি সমস্যার সমাধান। পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। রয়েছে নানা হতাশা ও বঞ্চনা।
আর পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৎকালীন শান্তি বাহিনীর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর পক্ষে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ
রাঙামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে শান্তিচুক্তির পক্ষের নিরীহ মানুষদের খুন, অপহরণ করে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা অনূকুল পরিবেশ এবং এখানকার মানুষের ভিতরে একটা সমঝোতার আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।
দীপংকর তালুকদার বলেন, শান্তিচুক্তির স্বপক্ষের সকল শক্তি সম্মেলিতভাবে কাজ করার একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো প্রধান শর্ত। কিন্তু আমরা কি দেখছি, শান্তিচুক্তির একটা পক্ষ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তিন পার্বত্য জেলায় উঠে পড়ে লেগেছে। আজ পর্যন্ত এই শান্তিচুক্তির ২৫ বছরে অবৈধ অস্ত্রধারীদের হাতে যারা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে আসছে, তাদের হাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া অন্যকোন রাজনৈতিক দলের কোন কর্মী নিহত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে আওয়ামী লীগকে যদি নিশ্চিহ্ন করতে চায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যদি হত্যা করে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে এটা তো আমরা মনে করছি বোকার সঙ্গে বসবাস।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি সই করে দুই পক্ষের ভেতরে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে; এটা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে পক্ষে বড় অন্তরায়। আমরা হতাশ না হয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবো, অস্ত্র হাতে নিবো এই ধরনের স্লোগান না দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা চাই যে সমস্ত অবাস্তবায়িত শর্ত ও ধারাগুলো আছে এগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
তিনি আরও বলেন, এখনো দেখছি তাদের নৈরাজ্যমূলক আচরণ, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা, শান্তিচুক্তির পক্ষের শক্তিকে দুর্বল করা, গুলি করে মানুষ হত্যা করা; এইভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব নয়। শান্তিচুক্তি যারা সই করেছে, শান্তিচুক্তি যারা মানে; তাদের পক্ষে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যারা শান্তিচুক্তি মানে না, শান্তিচুক্তি বিরোধিতা করে, তাদের পক্ষে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই আস্থা ও বিশ্বাস রেখে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের সমস্যা কোনও দিনও সমাধান হবেনা।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য সমস্যা, কিন্তু প্রধান অন্তরায় নয়। প্রধান অন্তরায় হলো আমাদের মধ্যে আর সরকারের মধ্যে একটা বুঝাবুঝির অভাব। তাই এটার কারণে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের কি ভাবনা সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার। সরকার যে ভাবে যাচ্ছেন সেভাবে যাবেন, নাকি যথাযথ রাস্তায় আসবেন। ঠিক ট্র্যাকে আসবেন, না ভুল ট্র্যাকে যাবেন। ভুল ট্র্যাকে গেলে তো সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, সরকার যত সময়ক্ষেপণ করবে, ততই দলবাজি হবে, নানা অস্ত্রবাজি হবে, নানান চাঁদাবাজি হবে, আরও দল গজিয়ে উঠবে। তখন শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন আরও জটিল আকার ধারণ করবে। তাই আমরা চাই সরকার শান্তি চুক্তি যেসব ধারা অবাস্তবায়িত হয়ে আছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনুক।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য মিজ নিরূপা দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা তো প্রত্যেক বছরই বলছি। কিন্তু আমাদের প্রাপ্তির প্রত্যাশা যতটুকু ছিল, সেটা প্রায়ই পূরণ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, যে কোন দেশের সংবিধানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার ও মত প্রকাশের অধিকার থাকে। কিন্তু আমাদের পার্বত্য এলাকার মানুষেরা এখানে তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছে না।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজি মজিবুব রহমান বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছরে এসেও পাহাড়ে জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ (কেএনএফ) একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে। চলছে অস্ত্রের মহড়া, মহোৎসবে চলছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুম, খুন ও অপহরণ। তাদের হাতে পাহাড়ি-বাঙালি সকলে জিম্মি।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির শর্তানুযায়ী পাহাড় থেকে একটি ব্রিগেডসহ ২৩৮টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ ও বান্দরবান জেলা পরিষদে ২৮টি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তি করার সময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে তাদের অ-উপজাতি আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধায় উপজাতীয়দের নানা অগ্রাধিকার শর্তযুক্ত করে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধা নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বাংলাদেশের চেতনা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও উন্নয়ন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা দেশি-বিদেশি ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ যে শান্তির আশা করেছিল, মানুষের সে আশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হলে চুক্তি সইকারী দু’পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পাহাড়ের বিরাজমান সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ও জনসংহতি সমিতি দু’পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষের।
এদিকে, শান্তিচুক্তি ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া শান্তি চুক্তি সইকারী অন্যতম সংগঠন জনসংহতি সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১০৯৯ দিন আগে
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ
তিন পার্বত্য জেলায় আজ বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি পালিত হচ্ছে।
এ উপলক্ষে সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। পাহাড়ে বসবাসরত ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা বর্ণিল সাজে সজ্জিতে র্যালিতে অংশগ্রহণ করে।
পরে স্থানীয় রাজার মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ৬৯ পদাতিক বিগ্রেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক।
আরও পড়ুন: বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ
এদিকে, শান্তিচুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শান্তি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান জাতিগত হানাহানির অবসান ঘটিয়েছে। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন চুক্তিটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং সম্ভাবনার জায়গা।
তিনি বলেন, শান্তি চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন: মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন বাংলাদেশের ১৪০ পুলিশ
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্পাদিত একটি শান্তি চুক্তি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের প্রতিনিধি জনসংহতি সমিতির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা।
১৪৬৩ দিন আগে
সৈন্য প্রত্যাহারের পর প্রথম তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক
আফগানিস্তানে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে ধরে রাখা এবং বিদেশি নাগরিক ও আফগানদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তালেবান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও মার্কিন প্রতিনিধিরা শনিবার ও রবিবার আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে উভয়পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আগস্টের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর সেখানে এই ধরনের বৈঠক এই প্রথম। কাতারের রাজধানী দোহায় এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কাবুলে আইএসের আস্তানায় তালেবানের অভিযান
শনিবার এপিকে দোহায় অবস্থানরত তালেবান মুখপাত্র সুহেল শাহীন জানান, আলোচনায় ২০২০ সালে ওয়াশিংটনের সাথে তালেবান স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির পুনর্বিবেচনা হবে।চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পথ সুগম করেছে।
শাহীন বলেন, ‘হ্যাঁ একটা বৈঠক আছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক,দোহা চুক্তির বাস্তবায়ন ও সামগ্রিক বিষয়ে।’
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইবে আমেরিকান ও অন্যান্য বিদেশি নাগরিক সেইসাথে সেসব আফগান যারা একসময় মার্কিন সামরিক বাহিনী বা সরকার এবং অন্যান্য আফগান মিত্রদের জন্য কাজ করেছিল সেসব নাগরিকদের আফগানিস্তান ত্যাগের অনুমতি দিতে তালেবান নেতাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে।
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে লাশ ঝোলাল তালেবান: অতীতে ফিরে যাওয়ার সংকেত
এছাড়া মার্কিন কর্মকর্তারা তালেবানদের ক্ষমতা দখল এবং মার্কিন প্রস্থানের পর দেশটিতে অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যে মানবিক সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় এলাকায় বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার দিতে তালেবানে নেতাদের উৎসাহিত করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে, এই অধিবেশনটি কোনোভাবেই তালেবানদের বৈধ সরকার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়াকে নির্দেশ করে না।
আরও পড়ুন: তালেবানের ওপর হামলার দায় স্বীকার করল ‘আইএস’
১৫১৭ দিন আগে
আরব আমিরাত-ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি টেলিফোন পরিষেবা চালু
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উদ্যোগে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি টেলিফোন পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
১৯৩৫ দিন আগে