প্রবারণা পূর্ণিমা
রাঙ্গামাটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত
দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাঙ্গামাটির বৌদ্ধ বিহার ও শাখা বন বিহারগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।
বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষুরা তিন মাসের বর্ষাবাসের শেষ দিনটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে উদযাপন করে।
প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। এরপর থেকে দীর্ঘ একমাস ধরে আয়োজন চলে প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উৎসবের।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে রাঙ্গামাটির বৃহত্তর রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রবারণা পুর্ণিমায় রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে পূর্ণার্থীর ঢল নামে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভোরে রাঙ্গামাটির রাজ বন বিহার প্রাঙ্গণে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের পিণ্ডদান ও প্রাতঃরাশ, মঙ্গল সূত্র পাঠ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশিল প্রার্থনা, মহাসংঘ দান, প্রদীপ পূজা, হাজার বাতি দান, ফানুস দানসহ বিভিন্ন দান অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রবারণা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমায় রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত রাখার দাবি বৌদ্ধ সমাজের
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বধর্ম প্রাণ দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ও শ্রদ্ধেয় ভন্তের প্রধান শিষ্য প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
এ সময় হাজার হাজার পূর্ণার্থী সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমাসহ অন্য নেতারা।
সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্যদিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা শেষ হবে।
উল্লেখ্য, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিনটি পালন করে আসছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
১ বছর আগে
২৮ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমায় রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত রাখার দাবি বৌদ্ধ সমাজের
আগামী ২৮ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমা, তাই এদিন সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ। সোমবার (২৩ অক্টোবর) সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৌদ্ধ সমাজের নেতারা এ দাবি জানান।
এদিকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতা-কর্মীরা যাতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে না পারেন সেজন্য মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগও।
আরও পড়ুন: আজ মধু পূর্ণিমা: খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে উৎসব পালন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সুমন কান্তি বড়ুয়া।
তিনি বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হবে। তিথি বা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রবারণা অনুষ্ঠিত হয় বিধায় এক বছর আগে থেকে এই উৎসবের দিন-তারিখ সরকারি-বেসরকারি পঞ্জিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
তিনি আরও বলেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বিবেচনায় পূর্ণিমা তিথি রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত থাকবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ও অসাবধানতাবশত প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ঘোষিত একাধিক কর্মসূচি ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে।
নির্বিঘ্নে প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের সুযোগ করে দিতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সুমন কান্তি বড়ুয়া বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলাম, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ জাতি-গোষ্ঠীকেও আকর্ষণ করে। ঐতিহ্যবাহী 'ফানুস উত্তোলন উৎস' হিসেবে পরিচিত সর্বজনীন উৎসবে অংশগ্রহণে তারা অধীর অপেক্ষায় আছেন।
তিনি বলেন, তাই প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশেষ মানবিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি দিব্যেন্দু বিকাশ বড়ুয়া বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশে হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি করতে পারে।
ফলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অসংখ্য নারী- পুরুষ ধর্ম পালনে বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই প্রবারণা পূর্ণিমায় রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত রাখার অনুরোধ করছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মমিত্র মহাথের, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বুদ্ধানন্দ মহাথের, সাবেক সভাপতি নেত্রসেন বড়ুয়া, ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু শ্রদ্ধানন্দ থের, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহ-সভাপতি রনজিৎ বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার অনুপম বড়ুয়া, বৌদ্ধ সমিতি ঢাকার সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী, যুবনেতা রাহুল বড়ুয়া, কল্লোল বড়ুয়া দোলন বড়ুয়া, শীলব্রত বড়ুয়া, প্রদীপ বড়ুয়া, প্রকৌশলী মিহির বড়ুয়া, সাংবাদিক নিপু বড়ুয়া, অমল বড়ুয়া ও নারী নেত্রী মধুমিতা বড়ুয়া চৌধুরী প্রমুখ।
আরও পড়ুন: বাইডেনের কাছে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি: অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশন
রাঙামাটিতে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দানোৎসব
১ বছর আগে
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবেরই একটা অংশ হচ্ছে ফানুস উড়ানো। ফানুসের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিল কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের কারু কাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এই দিন সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টানসহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এই সময়ে উৎসবটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর ভাসলো। ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে নদীর এপার থেকে ওপারে পাঁচটি কল্প জাহাজে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে নাচ চলে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এ উৎসব মূলত সার্বজনীনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ জাহাজ ভাসা উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন। এটাই হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সহযোগী। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আসল বাংলাদেশের চিত্র।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। যে যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে আঘাত করবে না, এটাই হোক আমাদের শিক্ষা।’
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বক্ষ্রা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।
৩ বছর আগে
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ১ কোটি টাকা অনুদান দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা যথাযথভাবে উদযাপন করতে তাদেরকে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪ বছর আগে