প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবেরই একটা অংশ হচ্ছে ফানুস উড়ানো। ফানুসের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিল কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের কারু কাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এই দিন সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টানসহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এই সময়ে উৎসবটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর ভাসলো। ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে নদীর এপার থেকে ওপারে পাঁচটি কল্প জাহাজে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে নাচ চলে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এ উৎসব মূলত সার্বজনীনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ জাহাজ ভাসা উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন। এটাই হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সহযোগী। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আসল বাংলাদেশের চিত্র।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। যে যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে আঘাত করবে না, এটাই হোক আমাদের শিক্ষা।’
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বক্ষ্রা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।