সংবিধান
ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইলে গণভোট লাগবে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৪তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সহসভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো মতভেদ নেই বলে এর পরিবর্তনে গণভোটের কথা বলা হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে বলে উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হবে৷ তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ—যেমন: প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চ্যালেঞ্জে সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা বিএনপির
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এ মত প্রকাশ করেছে। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়; অন্যদিকে আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, সেহেতু দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মধ্যে এবং পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে পৌঁছার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
১৪২ দিন আগে
পিএসসিতে আরও ৭ সদস্য নিয়োগ
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাত জন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৩৮(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি তাদের এই নিয়োগ দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাব্বির আহমদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মুনির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ সরকার, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এ টি এম ফরিদ উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শরীফ হোসেন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনোয়ারুল ইসলাম পিএসসির নতুন সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন।
সংবিধানের ১৩৯(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে তারা দায়িত্বভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর বা তাদের ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যা আগে ঘটে; সেই কাল পর্যন্ত তারা সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য পদে বহাল থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল
নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে এ টি এম ফরিদ উদ্দীন অন্য যেকোন পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে এ নিয়োগ পেয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, মুনির হোসেন, অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকারসহ মোট ছয় জন পিএসসির সদস্য নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সুবিধাভোগী হিসেবে বিতর্ক উঠে। তাই তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। আপত্তি জানায় পিএসসির কর্মকর্তারাও। পরে ১৩ জানুয়ারি ছয় জনেরই নিয়োগ বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম
এখন পিএসসির সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ১৫ জন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম।
২৮৯ দিন আগে
১৯৭২ সালের সংবিধান অবৈধ, নতুন সংবিধান হতে হবে: ডা. তাহের
১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা অবৈধ সংবিধান বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘যারা এ সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, তারা পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্য। পাকিস্তানের সংবিধানের আওতায় নির্বাচিত গণপরিষদের সদস্যরা যে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন, তা বৈধ হতে পারে না। যাত্রাই শুরু করেছি আমরা অবৈধভাবে।’
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শরীয়তপুর পৌরসভা মাঠে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর রব হাশেমীর সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, ৭২-এর সংবিধান চলবে না, নতুন সংবিধান হতে হবে। দেশের মানুষের চিন্তা চেতনা ও ১৯৭১-এর যে চিন্তা থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চিন্তার আলোকে সংবিধান হবে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ সংবিধান প্রণয়ন করা নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করতে হবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে—এমন কিছু মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেখানে কখনোই স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হয়নি। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হয়নি, ১৯৭১-এ সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু দেখা গেল সেই স্বাধীনতাও পূর্ণতা অর্জন করেনি; ২০২৪ সালে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। এর কারণ, আমরা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অযোগ্য নেতৃত্ব পেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু ভুল নেতৃত্বের কারণে আমরা দেখলাম, গণতন্ত্র হত্যা করে তারা বাকশাল কায়েম করল। বাকশালের পরিণতি ভিন্ন হয়েছিল, আপনারা দেখেছিলেন। শেখ মুজিবকে হত্যা, জিয়াউর রহমানকে হত্যা, আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন। বিগত ১৫ বছরে আমরা জুলুমের স্বীকার হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ যদি আস্থা রাখে, তবে জামায়াত ক্ষমতায় যাবে, মিরাকল হবে। কেননা, বাকশাল শেষ, ৬ দফা শেষ, ১৮ দফা পারে নাই, ১৯ দফা পারে নাই। সোনার বাংলা, সবুজ বাংলার স্লোগান বাংলার মানুষের কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই। এবারের দফা এক দফা। সেই দফা হলো— একবার জামায়াতে ইসলামীকে দেখব।’
আরও পড়ুন: অনির্বাচিত সরকার কখনো নিরাপদ সরকার না: তাহের
ডা. তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাইয়েরা ৫৪ বছর ধরে নির্যাতিত হয়েছেন, ঠকেছেন। আমাদের একবার সুযোগ দেন। যদি খুব খারাপ হয়, তবে আরেকবার ঠকবেন। তাতে না হয়, ৫৪-এর সঙ্গে আরও ৫ যোগ হবে, এই তো!’
‘দেখুন, যদি জামায়তে ইসলামী নৈতিকতা ও কল্যাণের ভিত্তিতে আদর্শ রাষ্ট্র করে নারীর অধিকার, পুরুষের অধিকার, শ্রমিক, মেহনতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে আপনারই তো লাভ!’
কর্মী সম্মেলনে শরীয়তপুর জেলা শুরা সদস্য ও ডামুড্যা পৌরসভা আমির আতিকুর রহমান কবীর ও জেলা শুরা সদস্য মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন, ফরিদপুর টিম সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও শামসুল ইসলাম আল বরাটি।
অন্যান্যদের মধ্যে ফরিদপুর টিম সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা খলিলুর রহমান, গোপালগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক রেজাউল করিম, মাদারীপুর জেলা আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কে এম মকবুল হোসাইন, শরীয়তপুর জেলা সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মাসুদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
২৯৯ দিন আগে
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু: পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রায় আজ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে আজ মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হবে।
গত ৪ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা দুটি রিটের শুনানি শেষ করেন আদালত।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন এই আবেদনের সঙ্গে জড়িত। তাদের বেশিরভাগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে।
২০১১ সালের ৩০ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান বাতিল করে।
সংশোধনীতে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
সংশোধনীতে সংসদ নির্বাচনের সময়সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে সংসদীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।
এর আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল।
পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানে ছোট ও বড় মিলে মোট ৫৫টি পরিবর্তন আনা হয়।
৩৫৩ দিন আগে
সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চান অ্যাটর্নি জেনারেল
সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’, ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র মতো কিছু বিষয় বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান বহালের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানিতে অংশ নিয়ে বুধবার (১৩ নভেম্বর) এই দাবি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ’২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি চলছে। বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আরও পড়ুন: সাহস থাকলে ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি হোন: হাসিনাকে অ্যাটর্নি জেনারেল
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই রুলকে সাপোর্ট করি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধংস করা, ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করা, সংবিধানের সুপ্রিমেসি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটা সংবিধানের ওপর প্রতারণার শামিল।’
সংবিধানে ‘জাতির পিতা’ যুক্ত করার ব্যাপারে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। কিন্তু জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে; এ বিষয়ে জাতি বিভক্ত।’
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উনার অবদান অনস্বীকারর্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবেও উনি অনেক উপরের মানুষ। কিন্তু একজন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন– এটা আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়।’
তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে ‘জাতির পিতা’ টার্মটি ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে; জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এমনভাবে করা হয়েছে যে, তার (শেখ মুজিব) বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। অথচ তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী।”
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বলেছি, সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে উই দ্য পিপল অব বাংলাদেশ। আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি। এই কথা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে। ‘উইনেস’ থেকে সরে এসে আমরা ‘আইনেস’ এবং বায়োপিক থিউরিতে গিয়েছি। রাজনৈতিকভাবে এটি আমাদের যেখানে নিয়ে যাচ্ছে, সেটি কাঙ্ক্ষিত নয়। এটি আমাদের দেশ-রাষ্ট্র-সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না।’
সংবিধানের ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী। এছাড়া সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র; সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ দিতে চাচ্ছি।’
অনুচ্ছেদ ৮-এর বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। (সংবিধানে) আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ (ক)-তেই বলা আছে, রাষ্ট্র সকল ধর্ম পালনে সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর কথা বলা হয়েছে। এটিও সাংঘর্ষিক।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। রায়ের জন্যও অপেক্ষা করা হয়নি। এটা সংবিধানের, মানুষের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য বহাল রেখে আবার নির্বাচন করা অবৈধ; এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করে।’
আরও পড়ুন: ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারক এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে: অ্যাটর্নি জেনারেল
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা গণভোটের এই বিধানটির পুনর্বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটেই এই বিধান বাতিল হয়।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? এটা সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০–এর গণ–অভ্যুত্থান ও ’২৪–এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা নয় যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলায় আসামি করা হবে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই, এ রকম মানুষকেও আসামি করে বলা হয়েছে তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়। এরপর ওই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এ বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম প্রমুখ।
সেগুলোর ওপর আগামী ১৭ নভেম্বর শুনানির তারিখ রয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি চলছে হাইকোর্টে।
এদিকে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না- মর্মে জারি করা রুলে দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলতে ইন্টারভেনার হিসেবে হাইকোর্টে নিজেদের পক্ষভুক্ত করেছেন চার আইনজীবী। তারা হলেন- ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী, নাফিউল আলম সুপ্ত ও সাইয়েদ আবদুল্লাহ। এখন তারাও এ রিটের ওপর বক্তব্য রাখবেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
৩৮৬ দিন আগে
সংবিধান সংশোধন ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ ৫ দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
একাত্তরের সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচটি জরুরি দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকালে 'ছাত্র ও জনগণের পাঁচ দফা দাবি' শিরোনামে এক ফেসবুক পোস্টে এ দাবি জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আরও পড়ুন: সংবিধান সংস্কার কমিশনের নতুন প্রধান হলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ
পাঁচ দফা দাবি:
১. ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল – দলটি জোর দিয়ে বলছে যে বর্তমান সংবিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে এবং জনগণের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি নতুন সংবিধান দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ – ফ্যাসিবাদী সংবিধানের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে।
৪. প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা- জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে দলটি এই সপ্তাহে একটি 'প্রজাতন্ত্রের ঘোষণাপত্র' ঘোষণার দাবি জানিয়েছে, যাতে বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।
৫. জাতীয় নির্বাচন বাতিল- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ এসব দাবির গুরুত্ব তুলে ধরে তার পোস্টে লিখেছেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ইতোমধ্যে আগামীকাল আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ধারণ করেছে। আমরা আশা করব, ছাত্র ও জনগণের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের বিষয়ে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হবে।’
আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে সংবিধান সংশোধনে মত দিলেন বিশেষজ্ঞরা
সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া রাজনীতিকরণ থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব: ড. আলী রীয়াজ
৪০৮ দিন আগে
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সাংঘর্ষিক নয়, হাইকোর্টের রুল
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন (২০১১) কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহমেদ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিটটি করেন। আবেদনকার িঅন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় এ সংশোধনীর মাধ্যমে।
আদেশের পর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে- একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাস করা সংবিধান পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন পরবর্তী দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। যে কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থী।
৪৭২ দিন আগে
রেলওয়ের ৪০% পোষ্য কোটা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়: হাইকোর্ট
বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্যাডারবহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত বিধিমালায় সরাসরি নিয়োগে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) মোট শূন্য পদের ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখার বিধান কেন অবৈধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ রুল দেন। রেলসচিব, আইনসচিবসহ বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ২ শিক্ষার্থীর আবেদন
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্যাডারবহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা–২০২০–এর ৩(৩) উপবিধিতে রেলওয়েতে যারা চাকরি করছেন, তাদের সন্তানদের জন্য ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখা হয়েছে। এই উপবিধি সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যে কারণে রিটটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত ওই রুল দেন।’
এর আগে গত ২৬ মে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাডারবহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার ৩(৩) উপবিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়।
রিটকারী আইনজীবী জানান, ৪০ শতাংশ কোটার সংরক্ষিত থাকার ফলে সমাজের নিম্ন শ্রেণির তথা দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষকের সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী সন্তানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী রোকনুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেই কারণে একজন সচেতন নাগরিক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে আমি সংক্ষুব্ধ। কারণ, এভাবে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি আইনি প্রতিকার চাওয়ার জন্য রিট করেছি।’
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ে ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা
৫০৮ দিন আগে
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে: শাহরিয়ার আলম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘কে আয়োজন করছে’ তা ব্যাপার না, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এটি সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যেই বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ: রিজভী
সোমবার (১৩ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু'র পক্ষ থেকে প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে জানতে পারবেন।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং শিগগিরই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিরোধী দল বিএনপির দাবি ‘সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অবৈধ।’
বাংলাদেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
আরও পড়ুন: বঙ্গমাতার নামে পাঠাগার স্থাপন অনেক আত্মতৃপ্তির: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
শৈশবেই শেখ রাসেল ছিলেন মানবিক: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
৭৫২ দিন আগে
যা কিছু হবে সংবিধান ও আইনের মধ্যেই হতে হবে: আইনমন্ত্রী
আগামীতে নির্বাচন ও সরকার গঠন সবই সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, এর ব্যত্যয় হলে দেশ আবারও পিছিয়ে পড়বে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) ‘জাতীয় সংবিধান দিবস ২০২৩’উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর রেডিসন হোটেলে বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দেওয়া সংবিধানে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক বানিয়েছেন। এই সংবিধানের ২৬-৪৭ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। সেখানে সব নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা: আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, সংসদ কীভাবে গঠিত হবে, সরকার কীভাবে গঠিত হবে, নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে সবই সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামীতে যা কিছু হবে, সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশ আবারও পিছিয়ে পড়বে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিগত অর্ধশত বছরের অভিজ্ঞতা বলে, যখনই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত সাংবিধানিক শাসন থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়েছে। দেশে অরাজক ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং মৌলিক মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মাথায় একটি গণমুখী ও বিশ্বমানের সংবিধান পেলেও এর পেছনের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত। একটি গণমুখী সংবিধান পাওয়ার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সামরিক ও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন ও অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি নিজেকে কখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেননি। তিনি তার প্রগাঢ় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে ধাপে ধাপে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিকে মজবুত করেছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির জন্য তিনি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারি করা বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশের আওতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান হতে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করেছিলেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের খসড়া তৈরির জন্য তিনি গণপরিষদের ৩৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। এ কমিটির মাধ্যমে প্রণীত খসড়া সংবিধান দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আজকের দিনে গণপরিষদে গৃহীত হয়েছিল। তাই আজকের দিনটি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সেমিনারে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
স্বাগত বক্তব্য দেন- লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের মো. মইনুল কবির এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ।
আরও পড়ুন: ২৩ বছরে জাতিসংঘ মিশন থেকে সশস্ত্র বাহিনীর আয় ২৭,৯৪১ কোটি টাকা: আইনমন্ত্রী
পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার দ্রুত গতিতে করা হবে: আইনমন্ত্রী
৭৬১ দিন আগে