জি২০
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পৌঁছেছেন জি২০ প্রতিনিধিরা
চীন ও পাকিস্তানের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে ভারত আয়োজিত একটি পর্যটন সভায় অংশ নিতে ২০টি দেশের প্রতিনিধি সোমবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পৌঁছেছেন।
২০১৯ সালে নয়াদিল্লি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির আধা-স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পর থেকে সোমবারের এই বৈঠকটি কাশ্মীরের প্রথম উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক ঘটনা।
সভায় প্রতিনিধিরা সবুজ পর্যটন এবং ভ্রমণ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
সোমবার এই অঞ্চলের প্রধান শহর শ্রীনগরের রাস্তাগুলোকে পরিস্কার করা হয়েছে, বেশিরভাগ নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট অপসারণ করা হয়েছে বা জি২০ সাইনবোর্ড দিয়ে তৈরি কিউবিকলের মতো নিরাপত্তা পোস্ট দিয়ে ছদ্মবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার পিছনে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে আছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য শত শত কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যেটিকে তারা ‘অদৃশ্য পুলিশিং’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিভিন্ন বাণিজ্য প্রতিনিধি এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকের পরে শহরের কেন্দ্রস্থলের দোকানগুলোও স্বাভাবিকের চেয়ে আগে খোলা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সম্মেলন কেন্দ্রের প্রধান রাস্তা দিয়ে বেসামরিক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এবং শহরের অনেক স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সোমবারের এসব চিত্র শ্রীনগরের সাধারণ দিনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পার্শ্ব বৈঠক করবেন মোমেন
দেখা যায় পানিতে রাবার বোটে টহলরত অভিজাত নৌ কমান্ডোদের সঙ্গে শ্রীনগরের ডাল লেকের তীরে অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে একটি বিশাল নিরাপত্তা কর্ডন স্থাপন করা হয়েছে।
শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি যেন জেগে উঠেছে, লেকসাইড কনভেনশন সেন্টারের দিকে যাওয়ার রাস্তা ও বিদ্যুতের খুঁটিগুলো ভারতের জাতীয় পতাকার রঙে আলোকিত করা হয়েছে।
জি২০-এর জন্য ভারতের প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি অনন্য বৈঠকের আয়োজন করেছি।’
তিনি বলেন, এই বছরের শুরুর দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাট রাজ্যে অনুষ্ঠিত আগের পর্যটন সভাগুলোর তুলনায় এই অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ বিদেশি প্রতিনিধি থাকবে।
গত সপ্তাহে ভারতের কাশ্মীরে জি২০ সম্মেলন আয়োজন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফার্নান্ড ডি ভারেনেস বলেছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরে যা চলছে, তার আন্তর্জাতিক অনুমোদনের জন্যই ভারত সেখানে জি-২০ সম্মেলন করতে চাইছে।
তিনি বলেন, এই সভার প্রতিনিধিরা ‘স্বাভাবিকতার মুখোশ’ পড়ে থাকবেন, অন্যদিকে এই অঞ্চলে ‘ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন’ অব্যাহত থাকবে।
জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের মিশন এই বিবৃতিটিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অযৌক্তিক অভিযোগ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভারতের পর্যটন সচিব অরবিন্দ সিং শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকটি ‘শুধু পর্যটনের জন্য তাদের (কাশ্মীরের) সম্ভাবনা প্রদর্শনের জন্য নয়, এছাড়া বিশ্ববাসীকে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার সম্পর্কে জানানোও এর লক্ষ্য।’
এই অঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে সংঘাতময় সামরিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করে ১৯৮৯ সালে এই অঞ্চলে একটি সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। ভারত নৃশংসভাবে এই বিদ্রোহের জবাব দিয়েছে এবং সংঘর্ষে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক, সেনা ও বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: জি২০ অর্থমন্ত্রীদের 'সবচেয়ে নাজুক মানুষদের' দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান মোদির
২০১৯ সালে নয়াদিল্লি সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে ভারতের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়।
তারপর থেকে এই অঞ্চলের জনগণ এবং এর গণমাধ্যম অনেকাংশে চুপ হয়ে গেছে। কঠোর সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করেছে।
সরকার বলেছে, একটি ‘সন্ত্রাস ইকোসিস্টেম’ বন্ধ করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এছাড়া, কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন আইনও প্রণয়ন করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি নিয়ে গঠিত জি২০-এর একটি রোলিং প্রেসিডেন্সি রয়েছে এবং প্রতিবছর বিভিন্ন সদস্য তাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। ভারত ২০২৩ সালে গ্রুপ পরিচালনা করছে।
ভারত ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তের পর থেকে শান্তির প্রতীক হিসেবে কাশ্মীরে পর্যটনের প্রসার করছে। তবে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি কয়েক দশক ধরে শুধুমাত্র একটি প্রধান অভ্যন্তরীণ পর্যটন গন্তব্য। লাখ লাখ দর্শনার্থী প্রতিবছর কাশ্মীরে আসেন এবং সর্বব্যাপী নিরাপত্তা চৌকি, সাঁজোয়া যান এবং টহলরত সৈন্যদের দ্বারা আবৃত এক অদ্ভুত শান্তি উপভোগ করেন!
কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এখনও কৃষি, এই অঞ্চলের জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অবদান মাত্র ৭ শতাংশ।
প্রতিবেশি চীন এই অনুষ্ঠানটি বয়কট করেছে এবং পাকিস্তান কাশ্মীরের শ্রীনগরে এই বৈঠক আয়োজনের জন্য নয়াদিল্লির নিন্দা করেছে।
উভয়ের যুক্তি, বিতর্কিত অঞ্চলে এই জাতীয় বৈঠক করা উচিত না।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে ভারত বলেছে, তারা (পাকিস্তান) জি২০ এর সদস্য পর্যন্ত নয়, তাই তাদের এ ধরনের নিন্দা অবান্তর।
দিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পার্শ্ব বৈঠক করবেন মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ১ ও ২ মার্চ নয়াদিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ সহ একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোমেন বলেন, তিনি এই মুহূর্তে সবার নাম বলতে পারছেন না তবে ফ্রান্স, সুইডেন ও ভারত ছাড়াও আরও দুই থেকে তিনটি দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বৈঠক রয়েছে।
জি২০-এর ফাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কোনো পরিকল্পিত বৈঠক আছে কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, মার্কিন পক্ষের আমন্ত্রণে তিনি এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন যেখানে তিনি বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ১ মার্চ নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে ১ মার্চ নয়াদিল্লি যাবেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ২ মার্চ জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ইউকে'র আয়োজনে ইলফোর্ডে মাতৃভাষা পথ-উৎসব
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ১ থেকে ২ মার্চ নয়াদিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে তিনদিনের ভারত সফর করবেন।
জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বহুপক্ষীয়তা জোরদার করা এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, মাদকবিরোধী, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগে ত্রাণ এবং লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করার ওপর জোর দেয়া হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের সভাপতিত্বে জি২০-এর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (এইইউ) তার সভা এবং শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ভারত তার সভাপতিত্বে এ বছর সারা দেশে ২০০টিরও বেশি জি২০ বৈঠকের আয়োজন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা খুবই সম্মানিত বোধ করছি।
আরও পড়ুন: দূতাবাস চালু হলে আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে: সফররত মন্ত্রীর আশা
জি-টোয়েন্টি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বিষয়ে মোমেন বলেন, যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করা এবং এসডিজির যথাযথ বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশ তাদের মতামত ও পরামর্শ দেবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতামত এবং পরামর্শ উপস্থাপন করব। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উন্নয়ন চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লিতে চলতি বছরের ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৮তম জি-২০ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার ভারতীয় সমকক্ষ নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন।
জি২০ নেতারা ছাড়াও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সাইদ হুসেইন খলিল এল-সিসি, মৌরিতানিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জুগনাউথ, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটো, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, ওমানের রাষ্ট্রপ্রধান সুলতান হাইথাম বিন তারিক, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কৌশলগত’ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবে ঢাকা-জাপান
জি২০ অর্থমন্ত্রীদের 'সবচেয়ে নাজুক মানুষদের' দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান মোদির
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, প্রধান প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর কৌশলগত বহুপক্ষীয় সংগঠনের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের উচিত বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের সাহায্য করার ব্যাপারে মনোনিবেশ করা।
শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জি-২০ দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের প্রতি এ আহ্বান জানান মোদি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা এমন একটি সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থ ও অর্থনীতির নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যখন বিশ্ব গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে।’
মোদি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা, আস্থা এবং প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনাটা অনেকটাই আপনাদের ওপর নির্ভর করে, কারণ আপনারা নেতৃস্থানীয় অর্থনীতি এবং বাজার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ক।’
মোদি বলেন, বিশ্বের দেশগুলো মহামারির পরে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্বল্পমেয়াদী ঋণ, যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হ্রাস।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের প্রতি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি২০ সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
ডিজিটাল মুদ্রা ও অর্থপ্রদান, বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিসহ বিস্তৃত বিষয়গুলোতে আলোচনার জন্য বেঙ্গালুরুতে বৈঠকগুলো করা হয়।
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের ফ্রান্স ও ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও নির্ধারিত ছিল।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিস্তৃত বিষয় সকল আলোচনাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার, ইউএস ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য এবং মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আরও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দেবেন।
জি২০ বৈঠকগুলো নেতাদের তাদের নীতিগুলিকে কীভাবে সমন্বয় করতে হয় তা বিবেচনা করার একটি সুযোগ দেয়।
যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে কয়েক দশক ধরে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভসহ অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্রুত বাড়িয়ে চলেছে।
করোনা মহামারির পর ভ্রমণ, পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে।
অন্যদিকে, খাদ্য, বাসস্থান, জ্বালানি ও সারের জন্য ক্রমবর্ধমান খরচের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ জনগণের ওপর। বিশেষ করে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জাতীয় ও পারিবারিক উভয় স্তরেই ঋণের বোঝা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের জি২০ এজেন্ডা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাভিলাষী, কর্মমুখী ও সিদ্ধান্তমূলক: নরেন্দ্র মোদি
উল্লেখ্য, ভারত ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি২০-এর প্রেসিডেন্সি ধরে রেখেছে।
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে আমন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য বড় সম্মানের বিষয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ এই বছর ভারতের প্রেসিডেন্সির অধীনে গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়াটাকে দেশের জন্য একটি ‘বড় সম্মান’ হিসেবে মনে করছে।
সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সেখানে (জি২০ সম্মেলনে) আমাদের বিষয়গুলো তুলে ধরব। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। আমাদের দূরদর্শী হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশ।
ভারত ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি২০-এর প্রেসিডেন্সি ধরে রেখেছে।
আরও পড়ুন: আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে আরও চীনা বিনিয়োগের আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৮তম জি২০ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা এই বছরের ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।
মোমেন জানান, সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) তার বৈঠক ও শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।
জি২০ নেতারা ছাড়াও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সাইদ হুসেইন খলিল এল-সিসি, মরিশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জুগনাউথ, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, ওমানের রাষ্ট্রপ্রধান সুলতান হাইথাম বিন তারিক, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে, মোমেন ১-২ মার্চ নয়াদিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা তার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন।
গত বছরের ১ মে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কোয়াত্রা।
জি২০ ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্সির অধীনে দুই দিনের প্রথম জি২০ ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল আর্কিটেকচার ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ৩০ জানুয়ারি চণ্ডীগড়ে শুরু হয়েছিল।
গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) ১৯টি দেশ যথা-আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুর্কিয়ে, ইউনাইটেড কিংডম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিয়ে গঠিত।
জি২০ সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ ও বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ঢাকায় আসবেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মেসিকে সঙ্গে আনতে বলেছি: মোমেন
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
করোনা রোধে জি২০ দেশগুলোকে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের
মহামারির কারণে নজিরবিহীন লকডাউন, ভ্রমণ বাতিল ও আন্তদেশীয় চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেস কোভিড-১৯ রোধ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম রূপে ফিরতে গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) সদস্য দেশগুলোকে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।