নদীগর্ভে বিলীন
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বিলীন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঝুঁকিতে অনেক স্থাপনা
পদ্মা-যুমনার পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২৮ আগস্ট (শনিবার) রাত ১১টার দিকে হেলে পরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ীসহ চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
জানা যায়, গত চার দিন আগে পদ্মার ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে হেলে পরেছিল আজিমনগর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দোতলা ভবন। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি চালু করা হয়। কিন্ত গতকাল (শনিবার) রাতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বর্তমান নদীর তীরবর্তীতে অবস্থিত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিঘাটা আশ্রয়ণ কেন্দ্র, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম, ৫৭ নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদরাসা, হাতিঘাটা বাজারসহ পাকা আধাপাকা একাধিক রাস্তা।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে নদী ভাঙনের কবলে পরে সুতালড়ী ইউনিয়নের ৩৭ নং রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটির একাংশ ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন: মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত
জানা যায়, চরাঞ্চলে আজিমনগরের হাতিঘাটায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠত হয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময় বিদ্যালয়টি এডিবি'র অর্থায়নে টিনসেডের ১৫টি রুম তৈরির মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চারতলা ফাউন্ডেশনে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই একতলার ওপরেই আরও তিনতলা ভবনের অনুমোদন দেয়। নতুন অনুমোদিত ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে আচমকাই নদী ভাঙন শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পরে যায়। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর তীর হতে ১৩০ মিটার দূরে রয়েছে।
আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে চাঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর অতি কাছে। তাই দ্রুত ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না করলে অথবা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনে আমরা সরেজমিনে যাই এবং ভাঙনের অবস্থা দেখে আমরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসক বরাবর বিদ্যালয়টি রক্ষায় নদী ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি।
আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, একে একে সকল স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত রাতে আজিমনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীতে চলে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। এখন তারা কি ব্যবস্থা নেন এটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভাঙন, দিশেহারা ৩ গ্রামের মানুষ
তিস্তার ভাঙন: কুড়িগ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। এছাড়াও গত সপ্তাহে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্ত ভাঙনরোধে তীব্র স্রোতের কারণে ওখানে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কিছু করার চেষ্টা করলেও থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন উপায় হলো যে সকল স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে অথবা নিলামে দিতে হবে। তাছাড়া চরাঞ্চল নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করার কোনো নির্দেশনা নেই।’
৩ বছর আগে
ছাগলের সাথে বসবাস আম্পানে বিধ্বস্ত খাদিজার
এক সময় খাদিজাদের ঘর ছিল, ছিল জমিও। ৪৫ বছর আগে আবুল হোসেন শেখের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন তার স্বামীর অনেক জায়গা জমি ছিল। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে একটু একটু করে নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে তাদের জমি ও বাড়ি।
নদী ভাঙনের সাথে সাথে তারাও দূরে সরে এসে নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকে। এক সময়ে শুধু বসতভিটা ছাড়া সব জমিই কপোতাক্ষ নদীর বুকে চলে যায়। কোন রকমে নদীতে মাছ ধরে টানাপোড়নের সংসার চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান গদখালীর ফুল চাষিরা
এদিকে, তার স্বামী আবুল হোসেন শেখ এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে ২০০৮ সালে অন্য একজনকে বিয়ে করে পাড়ি জমায় ভারতে। শুরু হয় খাদিজার একলা চলার জীবন সংগ্রাম।
এরপর নদীতে জাল টেনে কোন দিন ১০০ কোন দিন ১৫০ টাকা আয় করে চলতে থাকে মা, মেয়ে ও ছেলের সংসার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় তার শেষ সম্বল বসত ভিটাও নদী গর্ভে চলে যায়। রাস্তার স্লোভে পুনরায় ঘর বেধে জীবনযুদ্ধে লড়াই চলতে থাকে অভাবের সংসার।
তিনি নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি সেখানে ছাগলও পালতে থাকেন।
আরও পড়ুন: আম্পান: সাতক্ষীরায় ৬ মাসেও দুর্গত এলাকার মানুষ বাড়ি ফিরতে পারেনি
এদিকে ছেলেও বড় হয়ে অভাবের সংসার ফেলে অন্য জায়গায় চলে যায়।
গেল বছরের আম্পানে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই ঝুঁপড়িও পানিতে ভেসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আসবাবপত্র ও ঘর, নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সেখানে ঘর বাধার জায়গা না পেয়ে সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা খালের গোড়ায় রাস্তার স্লোভে ছোট ঝুঁপড়ি বেধে কোন রকমে বসবাস করছেন। সেখানে চৌকির উপরে থাকেন তিনি আর চৌকির নিচে থাকে তার পালিত ৮ থেকে ১০টি ছাগল।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা গোড়ায় ঝুপড়িতে বসবাসকারী খাদিজার সাথে স্বাক্ষাতকালে এসব কথা জানালেন তিনি।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, আমি তাকে চিনি। তারা খুবই অসহায়। কোন জায়গা জমি নেই। আম্পানের পরে তাদেরকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সহায়তা তাকে করা হয়নি। তবে এনজিও থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের যে ঘর দিচ্ছেন সেই তালিকায় তার নাম রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনিও পাবেন। আমার ওয়ার্ডের ৪২ জনের নাম পাঠানো আছে। এর মধ্যে লটারির মাধ্যমে সাত জনকে ঘর দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য লটারি করায় তার চেয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর পাচ্ছেন।’
৩ বছর আগে
সিরাজগঞ্জে কোটি টাকা ব্যয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না যমুনার ভাঙন
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যমুনার তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।
৪ বছর আগে
মধুমতি নদীগর্ভে রাতারাতি বিলীন ১৫ একর ফসলি জমি
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি বৃহস্পতিবার রাতে মধুমতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
৪ বছর আগে