তিস্তা চুক্তি
শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গতিশীল করবে: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
ঈদুল আজহার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় ভারত সফরের মধ্য দিয়ে নতুন মেয়াদে দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের নতুন সূচনা হবে এবং আরও গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ এবং এই সম্পর্কের সৌন্দর্য হলো ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলা করা।
ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশ ভারতের নতুন সরকার: সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের নতুন সূচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ছিলেন- সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব আনাম খান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব, বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান এবং ভারত থেকে অনলাইনে যুক্ত হন প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী, টেলিগ্রাফের হেড অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স দেবদীপ পুরোহিত।
শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে রাজধানীতে ভোরের কাগজের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। দুই দেশের এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্বে দৃষ্টান্ত। দুই দেশের এই সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় এগিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ১৫ বছরের অর্জন তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, 'এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা খুবই আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়কার ৩৩ দফা যৌথ বিবৃতি ছিল, যেখানে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ), জ্বালানি সহযোগিতা, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ, বিস্তৃত সংযোগ এবং অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: তিস্তা নদীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে জানান শাহরিয়ার আলম।
যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পরবর্তী বৈঠক শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২২ সালের আগস্টে নয়াদিল্লিতে জেআরসির ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে পানি সম্পদ খাতে সহযোগিতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত জেআরসি অভিন্ন নদী ব্যবস্থা থেকে সর্বাধিক সুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকর যৌথ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে যোগাযোগ বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। জেআরসির নেতৃত্বে রয়েছেন দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২১-২২ জুন অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক, চুক্তি সই রয়েছে হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সহযোগিতার কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়ে ঘোষণাও আসতে পারে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সঞ্চালক শ্যামল দত্ত বলেন, সম্পর্ককে আরও গভীর করতে দুই দেশের নতুন নির্বাচিত নেতৃত্বের ইচ্ছা রয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী ভারত সরকারের নতুন মেয়াদে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি দেখার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি আমাদের ন্যায্য হিস্যা পাব।’
এর আগে ২০২২ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা।
বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিবেশী এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে শমসের বলেন, ‘১৯৭১ সালে যদি আমরা রক্ত ভাগাভাগি করতে পারি, আমার বিশ্বাস আমরা পানি ভাগাভাগি করতে পারব।’
বৈঠকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই উপনিবেশমুক্ত হওয়ার ফলে উপকৃত হচ্ছে এবং দুই দেশকে এগিয়ে যেতে থাকা এই সম্পর্কে নতুন মাত্রা আনতে হবে।
আরও পড়ুন: গঙ্গা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করতে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির আহ্বান
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কিছু আনতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা ইস্যুতে কথা বলে আসছি।’
জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মনের বিকাশের প্রয়োজন।
এ সময় 'তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট' প্রকল্পের কথা বলেন তিনি। এ প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ধারণার বিষয়ে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে।
একই প্রকল্পে ভারতের আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, সংঘাতের ভূ-রাজনীতিকে সহযোগিতার ভূ-রাজনীতিতে রূপান্তর সম্ভব। কারণ, বাণিজ্যসহ অনেক ক্ষেত্রেই চীনের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার ইচ্ছা আছে ভারতের। এটি দেশটির জন্য সবাইকে একত্রিত করে নেতৃত্ব গ্রহণের একটি সুযোগ।
তিনি বলেন, ‘তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি নাও থাকতে পারে, কিন্তু ব্যবহারের জন্য যা পাওয়া যায় তা ভাগ করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান খুঁজতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী ভারত: হাছান মাহমুদ
তিস্তা প্রকল্প প্রসঙ্গে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি চীনের নিজস্ব প্রস্তাব নয়, তবে বাংলাদেশের অনুরোধে তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক সাহাব বলেন, বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে বিশাল লাইন অব ক্রেডিটস (এলওসি) পাচ্ছে তবে এর বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে।
তিনি বলেন, 'বিশাল এলওসি আসছে, যা খুবই আকর্ষণীয়। টাকা তো আছেই। রাজনৈতিক অঙ্গীকারও তো আছে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমি মনে করি দুটি দেশকে আরও বাস্তববাদী হতে হবে।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, চীনের প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি খুবই দ্রুত, এমনকি এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও খুব দ্রুত গতির। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ এবং চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, দুই দেশ বহু বছর পর স্থলসীমানা সমস্যার সমাধান করেছে এবং তিস্তা বিষয়ে সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিইপিএ নিয়ে আলোচনায় অগ্রসর হওয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয়। আমাদের দ্রুত এগোতে হবে।’
পানি ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন এবং বন্যা এড়াতে যৌথভাবে তিস্তায় ড্রেজিংয়ের চেষ্টা করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন গৌতম।
তিনি বলেন, ভারত বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ এমন কিছু করবে না যা ভারতের স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে এবং বাংলাদেশের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার লক্ষ্য পূরণে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন গৌতম।
ভারতের টেলিগ্রাফের হেড অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স দেবদীপ পুরোহিত বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে দেখে। এরই মধ্যে ভারতের কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন ৩৬০ ডিগ্রিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগির বিষয়ে দেবদীপ বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে তিস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন তিস্তার জল ভাগাভাগির কথা ওঠে, তখন প্রশ্ন আসে, সেচের লক্ষ্য কীভাবে পূরণ হবে। কারণ, শুকনা মৌসুমে তো নদীতে জল থাকে না। তিস্তায় পর্যাপ্ত জল না থাকায় দুই দেশ কীভাবে তিস্তাকে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে নতুন ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে তিস্তাকে বাঁচাতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাবও আছে। চায়নাও প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ কার সঙ্গে যাবে এটা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে দেবদীপ পুরোহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে এসে বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী, রাজীব গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সে সাক্ষাতের ছবি রাহুল গান্ধী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। সেই ছবি ভীষণ ভাইরাল হয়েছে। এতেই বুঝা যায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যরকম সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক পরের ধাপে নিতে আমাদের দৃঢ় বাস্তববাদী মনোভাব দরকার।
আরও পড়ুন: তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মোদি
৬ মাস আগে
গঙ্গা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করতে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির আহ্বান
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তা চুক্তি সই করার জন্য ঢাকা ও দিল্লির প্রতি গ্যারান্টি ও সালিশি ধারাসহ একটি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি।
শনিবার(৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক যৌথ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি কেবল অববাহিকাভিত্তিক চুক্তির ভিত্তিতেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
আরও পড়ুন: ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় নাটোরে পানি ক্রমশ বাড়ছে
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আইএফসির আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার, লেখক ও গবেষক সিরাজুদ্দীন সাথী, তমিজউদ্দীন আহমদ, আইএফসি বাংলাদেশের সহসভাপতি ড. নাজমা আহমদ এবং সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম আজাদ।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সই করা পানি চুক্তিতে নিশ্চয়তা ও আরবিট্রেশন ক্লজ রয়েছে।
ফলে সিন্ধু ও মহাকালী পানিচুক্তি পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সই করা গঙ্গার পানি চুক্তিতে শর্ত পূরণ করা হয়নি।
এই ত্রুটির কারণে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আশানুরূপ গড়ে ওঠেনি।আরও পড়ুন: বিহারে বন্যা সামাল দিতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত
১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৪১ দিন পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে পরামর্শ করে গঙ্গার ওপর ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে বাংলাদেশে একতরফা পানি প্রত্যাহার অব্যাহত থাকে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়।
পরে ১৯৭৭ সালে ৮০ শতাংশ পানির প্রাপ্যতার গ্যারান্টি ক্লজ দিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি পানি চুক্তি সই হয়। কিন্তু এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের পরিবর্তে ১৯৮২ সালে গ্যারান্টি ক্লজ বাদ দিয়ে ৫ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এরপর ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টনের জন্য আবারও ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়। ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে এসে এই চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানি চুক্তি সইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই গঙ্গা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায়নি। চুক্তিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ না থাকায় এটি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। চুক্তির এই দুর্বলতা নবায়নের সময় দূর করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফারাক্কার প্রভাবে ভাঙছে নবগঙ্গা-মধুমতি
২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তা আজও করা হয়নি।
শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর কোনো পানি বাংলাদেশে ছাড়া হয় না। পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে সামান্য পরিমাণ পানি বাংলাদেশে আসে।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তীব্র বন্যা ও তীর ভাঙনের কারণে ব্যাপক ফসল নষ্ট হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কাছে এই নদীর উৎপত্তিস্থল। তাই নদীর প্রবাহের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। এ পর্যন্ত তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার বেড়েছে।
এতে বলা হয়, স্বল্পমেয়াদি সুবিধার জন্য অদূরদর্শী বাঁধ দিয়ে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে এই প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করুন, দুর্যোগ এড়ান: ফারাক্কা কমিটি
৯ মাস আগে
তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ‘লজ্জাজনক’: মোমেন
ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এটা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘লজ্জাজনক’ যে চুক্তিটি ১১ বছর ধরে ঝুলে আছে।
সোমবার আসামের গুয়াহাটিতে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা ১১ বছর ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে পারিনি। এটা লজ্জারও, আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তারাও প্রস্তুত ছিল, তবুও চুক্তিটি হয়নি। ভবিষ্যতে পানির জন্য একটি বড় হাহাকার তৈরি হবে এবং আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
২৮-২৯ মে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত নদী সম্মেলনের ফাঁকে এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলার সময় মোমেন বলেন, দুটি দেশের ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। এই দুই পক্ষই অভিন্ন নদী সমূহের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ভারতের অংশীদার হতে এবং একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ‘অববাহিকা এলাকার মানুষের কল্যাণের জন্য দুই পক্ষের মানুষেরই যৌথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তিস্তা নদী তিস্তা কংশ হিমবাহে উৎপন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে তিস্তার ক্যাচমেন্ট এলাকাগুলো ভারতকে বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে এটি নিয়ে সংঘাত তৈরি হয়। ২০১১ সালে ভারত তিস্তার পানির ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার করতে সম্মত হয়েছিল এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখেছিল। তবে,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কঠোর বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব আশাবাদী যে ভারত চুক্তির ব্যাপারে এগিয়ে আসতে রাজি হবে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গও সম্মত হবে। এবং আমরা এটি অর্জন করতে পারব।’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা আসামের মুখ্যমন্ত্রীর
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছর আসাম ও বাংলাদেশে একই সময়ে বন্যা হয়। আমাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যৌথভাবে বন্যার আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং নদীগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনা উভয় দেশের জন্যই উইন-উইন।’
বেশকিছু গণমাধ্যমের গুঞ্জন উঠেছে, তিস্তা নদীর ওপর ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য নদী অববাহিকা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট মোকাবিলা করা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও তিস্তা নিয়ে চীনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। চীন প্রাথমিকভাবে যেটি প্রস্তাব করছিল সেটি ছিল একটি ফরাসি প্রকল্প। ১৯৮৯ সালে ফরাসি প্রকৌশলীরা এটি ডিজাইন করেছিলেন। এটি ব্যয়বহুল ছিল, তাই তখন আমরা তহবিল সংগ্রহ করতে পারিনি। এখন চীনারা এর একটি অংশ হিসেবে তিস্তা প্রকল্পকে বাছাই করেছে। কিন্তু আমি মিডিয়া রিপোর্ট থেকে এটি জানতে পেরেছি। তারা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠায়নি। আমাদের এখন এটি কেমন হবে তা দেখতেই হবে। কারণ ভারত এখনও তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে আসলে তেমন কিছু করছে না। তাই তারা (চীন) একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, এটি (আমাদের জন্য) একটি লাভজনক প্রস্তাবও।’
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সুবিধার জন্য তিস্তাকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি প্রযুক্তিগত সমীক্ষা চালানোর জন্য পাওয়ারচিনা বা চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে, তিস্তা একটি অমীমাংসিত ইস্যু। তাই আমাদের জনগণ স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে নতুন কোনো প্রস্তাব (সমাধান) ভেবে দেখার জন্য চাপ দেবে। এই কারণেই হতে পারে তিস্তার ওপর চীনা প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে এত আলোচনা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: গুয়াহাটিতে শনিবার নদী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন মোমেন ও জয়শঙ্কর
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে ইউএনএইচসিআরের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
২ বছর আগে
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন হতে পারে: পানিসম্পদ সচিব
পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের নির্বাচনের পর তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নসহ একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
৩ বছর আগে
তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা নেই: তথ্যমন্ত্রী
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোন ব্যর্থতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
৩ বছর আগে
তিস্তা চুক্তি, কোভিড টিকা সরবরাহ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি পুনরাবৃত্তি
তিস্তা নদীর অভিন্ন পানিবণ্টন চুক্তির জন্য দিল্লির প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-ভারত ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে পুনরাবৃত্তি করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
৪ বছর আগে
তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো ‘ম্যাজিক’ থাকবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী হলেও ডিসেম্বরে তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতের সাথে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে কোনো ‘ম্যাজিক’ থাকবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
৪ বছর আগে
তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ভারতের সাথে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রবিবার বলেছেন, ২০১১ সাল থেকেই এটি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
৪ বছর আগে
সরকারের এ মেয়াদেই দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তিস্তা চুক্তি: পানি সম্পদ উপমন্ত্রী
পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বৃহস্পতিবার বলেছেন, আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্ব রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে যা করার দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই করছেন।
৪ বছর আগে