শীতের সবজি
শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
যশোরে আগাম শীতের সবজি দ্রুত বাজারে তুলতে, খাবারে বেশি স্বাদ যোগতা এবং বেশি টাকা আয় করার জন্য চাষিরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলার সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জেলার সবজি চাষের কেন্দ্রস্থল। সেখানে এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, মুলা, বোতল করলা এবং বিভিন্ন ধরনের পালং শাকের মতো শীতকালীন সবিতে মাঠ সবুজ হয়ে উঠছে।
সরকারি সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজিই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
যদিও এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের জন্য অনেক কৃষক সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারিনি, এ কারণে একটু দেরি হয়েছে। এর মধ্যেও কিছু কৃষক স্থানীয় বাজারে উৎসাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে ভালো দাম পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝিমাঝি সময়ে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হয় চলবে মার্চ মাসের মাঝিমাঝি পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে জেলায় ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মূলা, লালশাক- পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষ হয়েছে।
৩ বছর আগে
বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা শীতের সবজি
ঠান্ডা আবহাওয়া এবং দীর্ঘ রাতের শুষ্কতার দরূণ মানবদেহ অনবরত মস্তিষ্ক থেকে অধিক শক্তি-ঘন খাবারের জন্য সংকেত পেতে থাকে। মানুষের পাকস্থলি এবং মস্তিষ্কের মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র হচ্ছে এই যে, আরামদায়ক খাবার খাওয়া 'সুখী হরমোন' বা সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসরণ করে যা মানুষকে আরামপ্রদ অনুভূতি দেয়। এই সুখী হরমোন নিঃসরণের জন্য মুল ভূমিকা পালন করে সূর্যালোক এবং ব্যায়াম। শীতের মাসগুলোতে এই দুটিই হ্রাস পায়। তবে এই অভাবটা পুষিয়ে নেয়া যায় শীতের সবজির মাধ্যমে। এই ফিচারটিতে শীতের সবজিগুলো ও তাদের পুষ্টিগুণ নিয়েই আলোচনা করা হবে।
পুষ্টিগুণে ভরা কয়েকটি শীতের সবজি
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, পেশী, হাড় এবং রক্তনালীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অদ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ বাঁধাকপি মানবদেহের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়ার জ্বালানি সরবরাহ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। বাঁধাকপির অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী পিগমেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। বাঁধাকপির মতো পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়ালে তা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাঁধাকপি ভিটামিন কে-এর একটি চমৎকার উৎস যা রক্ত জমাট বাঁধার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
ফুলকপি
ফুলকপি প্রচুর পরিমাণে ফাইবারে ভরপুর। আর এই ফাইবার হজমের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহকারী ফুলকপি প্রদাহ কমাতে পারে। এটি উদ্ভিদ যৌগ সালফোরাফেন সমৃদ্ধ সবজি যা হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস সহ বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফুলকপিতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বেশি। ফলে ওজন কমাতে পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে ফুলকপি।
লাউ
লাউ সবচেয়ে কম-ক্যালরির সবজি হওয়ায় ওজন-নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাজা লাউতে অল্প পরিমাণে ফোলেট থাকে। এটি নবজাতকের নিউরাল টিউব ত্রুটির ঘটনা কমাতে সাহায্য করে। তাজা লাউ ভিটামিন সি-এর পরিমিত উৎস। লাউ হজমে এবং শরীর থেকে নির্গত না হওয়া পর্যন্ত অন্ত্রের মধ্যে খাবারের চলাচলের সুবিধা দেয়। এভাবে এটি বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এটি উদ্ভিজ্জ থিয়ামিন, নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি-৫), পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি-৬) এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজে ভরপুর।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
গাঁজর
গাঁজরে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, স্টার্চ, ফাইবার এবং সাধারণ শর্করা থাকে। এতে ফ্যাট এবং প্রোটিন অত্যন্ত কম। গাঁজর বিটা ক্যারোটিন আকারে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এছাড়া গাঁজরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিদ যৌগ, বিশেষ করে ক্যারোটিনয়েড, যেমন বিটা ক্যারোটিন এবং লুটেইন থাকে।
গাঁজর খাওয়া ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেশ উপকারি। উপরন্তু, এই সবজি কার্যকরভাবে ওজন কমানোর জন্য খাদ্যের একটি মূল্যবান উপাদান হতে পারে।
শালগম
শালগম এবং শালগম শাক দুটোতেই ভিটামিন সি রয়েছে। শালগম ফোলেট, ভিটামিন কে, এবং প্রোভিটামিন এ-এর একটি বড় উৎস। শালগমের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ বিরোধী, ক্যানসার প্রতিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী প্রভাব প্রদান করতে পারে। শালগমের একটি বড় সুবিধা হল এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাত্র এক কাপ রান্না করা শালগম শাক প্রতিদিনের ভিটামিন কে-এর চাহিদার ৬০০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হাড় ভাঙা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শালগম শাকে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
পড়ুন: বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
শেষাংশ
সুস্থ জীবন যাপনের একমাত্র উপায় হল স্বাস্থ্যের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টি রাখা। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে পুষ্টিকর খাবারকে অন্তর্ভুক্ত রাখা জরুরি। উপরোল্লিখিত শীতের সবজি দিয়ে ঠান্ডা দিনগুলোর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা গঠন করা যেতে পারে। তাছাড়া এভাবে সময়ের সাথে সুষম খাদ্যের তালিকা পরিবর্তন করা মৌসুমি সবজিগুলো খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
৩ বছর আগে
শীতের সবজিতে সয়লাব নওগাঁর হাট-বাজার
শীতের সবজিতে সয়লাব হয়ে গেছে নওগাঁর হাট-বাজারগুলো। প্রথম দিকে দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন সবজির সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও কমতে শুরু করেছে।
৩ বছর আগে
বিশ্বনাথে সবজি চাষের ধুম!
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির ঘ্রাণ। এই মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন চাষিরা। মাঠে মাঠে সবজির বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যার কাজ হচ্ছে।
৪ বছর আগে
সময়ের আগেই ডুমুরিয়ায় খেত ভর্তি শীতের সবজি
আগাম ফুলকপি চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ডুমুরিয়া উপজেলার মঠবাড়িয়ার কৃষক মো. ওবায়দুল মোড়ল। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় তিনি এ কাজে উৎসাহিত হয়েছেন। তাকে দেখে আগাম ফুলকপির চারা কিনছেন উপজেলার অনেকেই।
৫ বছর আগে