ঢাকা-দিল্লি
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে: শ্রিংলা
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমনই যা পারস্পরিক অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে লালন করে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'এই সম্পর্ক শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নতুন উদ্যমে এই সম্পর্কের গতি ধরে রাখতে হবে।’
বিশ্ব রাজনীতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রতিম রঞ্জন বসুর সঙ্গে একটি পডকাস্টে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শ্রিংলা।
প্রতিম রঞ্জন বসু একজন মিডিয়া ভাষ্যকার, গবেষক ও পরামর্শদাতা। এছাড়াও সংবাদপত্রে কলাম লেখার পাশাপাশি প্রায়ই সময় জাতীয় টেলিভিশনেও দেখা যায় তাকে।
আরও পড়ুন: 'ইন্ডিয়া আউট' ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশের সঙ্গে 'দৃঢ় ও গভীর' সম্পর্কের কথা জানাল ভারত
২০২২-২৩ সালে ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির প্রধান সমন্বয়ক শ্রিংলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন; যা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। দুই দেশ একসঙ্গে সম্পর্কের নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
নতুন করে ভারতীয় ঋণের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশেরই ঋণ শোষণের ক্ষমতা রয়েছে।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং নির্ধারিত ঋণসীমাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করা খুবই জরুরি।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারতীয় ঋণের ৫০ শতাংশ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য। ‘আপনার প্রতিবেশীদের বাদ দিয়ে আপনি উন্নতি ও বিকাশের আশা করতে পারেন না।’
সাবেক এই ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালে ভ্যাকসিন আদান-প্রদান, পেঁয়াজ রপ্তানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি এবং বাণিজ্য সুবিধাগুলো থেকে সুফল আসছে।
তিনি আরও বলেন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিকাশ হবে এবং শ্রীলংকায় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক ক্যাবল ব্যবস্থা দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন: ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভারত: হাছান মাহমুদ
মালদ্বীপে 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, সম্পর্ক এতই মজবুত যে 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারে তাতে ব্যাঘাত ঘটার সুযোগ নেই।
পর্যটন, চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা খাতের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের খুব নিরাপদে বলতে পারি যে, এই দুই দেশের মানুষের মধ্যে অত্যন্ত দৃঢ় সখ্য ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’
শ্রিংলা আরও বলেন, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিস্তৃত ও দূরদর্শী নীতি।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শ্রিংলা বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নেই তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্দেশনায় দেশের জন্য কাজ করতে পেরে তিনি খুশি। ভারতের ব্যাপক রূপান্তর হয়েছে এবং সাফল্য অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারত একটি বহুমেরু বিশ্ব চায়; যার অন্যতম মেরু হবে দেশটি। মোদির অধীনে ভারত সমস্ত প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ভেতর ও বাইরে উভয় দিক থেকেই প্রতিরোধের মুখোমুখি হলেও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
ভারত-মার্কিন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘মার্কিন সংস্থাগুলো ভারতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
ইন্দো-প্যাসিফিক ও কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে সহযোগিতা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শ্রিংলা বলেন, এডেন উপসাগর ও সুয়েজ খাল দিয়ে সামুদ্রিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানে ভারতের ভূমিকা পশ্চিম ভারত মহাসাগর এবং সম্ভবত পূর্ব ভারত মহাসাগরেও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তায় আমাদের আরও জোরালো অংশগ্রহণ দেখাতে হবে। আজ আমরা আরও সক্রিয় হয়েছি। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা এর অংশ।’
শ্রিংলা আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে বৃহত্তর স্থিতিশীলতা দেখা যাবে বলে আমরা আশা করি।’
আরও পড়ুন: ‘আমাদের নামে ভারত মহাসাগরের নামকরণ, আমরা যদি ব্যবস্থা না নিই, কে নেবে’
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়ে’ আরেকটি পালক যোগ করবে: মোমেন
নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের 'সোনালী অধ্যায়ে' আরেকটি পালক যোগ করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন সংকটের বহুমাত্রিক সমাধান পেতে আমরা জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে 'জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি' শীর্ষক আলোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের শেরপা হিসেবে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জি-২০ এমপ্লয়ার অ্যাডভোকেট সেলিমা আহমেদ।
মোমেন বলেন, ভারতের প্রেসিডেন্সির অধীনে জি-২০ কর্তৃক বহুপক্ষীয়তার জন্য স্থিতাবস্থা আর টেকসই নয় বলে যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তা একটি বড় পরিবর্তন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ বহু-স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জি-২০ প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান ও অর্থবহ অবদান রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি জি-২০-এর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রকৃতি ও স্তর সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে জাপান ও কানাডায় জি-৭ আউটরিচ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
তিনি সম্প্রতি জোহানেসবার্গে ব্রিকস আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকার বাইরে থেকে আমন্ত্রিত নেতাদের একজন হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে মোমেনের বৈঠক ৭ সেপ্টেম্বর
ড. মোমেন বলেন, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তার আসন্ন অংশগ্রহণের অর্থ হলো, সেখানে আমন্ত্রিত নেতারা জি-২০-এর মূল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে অংশ নিতে পারবেন।
ড. মোমেন বলেন, আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের মূল্যবোধভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।
এটি ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির কৃতিত্ব যে এটি গ্লোবাল সাউথের ইস্যুগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। যেখানে তারা ইচ্ছুক অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের উপর নির্ভর করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, 'গ্লোবাল সাউথের বেশিরভাগ দেশকে নিছক প্রাপক বা ভোক্তা হিসেবে বিবেচনা করার মডেলের চেয়ে বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈচিত্র্যময় পুনঃবিশ্বায়নের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর যে আহ্বান জানিয়েছেন তা আমি স্বীকার করি।
ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সি কর্তৃক চিহ্নিত ছয়টি বিষয়ভিত্তিক অগ্রাধিকারের প্রতি বাংলাদেশ পুরোপুরি সম্পৃক্ত।
ড. মোমেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স, ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারসের মতো বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে যোগ দিয়েছি।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রেক্ষাপটে লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্টের (এলআইএফই) মতো তার উদ্ভাবনী ধারণা গ্রহণের যোগ্যতা তারা দেখছেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, স্মার্ট সরকার ও অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারতের আন্তঃচালিত ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো রফতানি থেকে শিক্ষা নেওয়া হবে। পরিবর্তে, আমরা বিশ্বাস করি যে মহিলাদের নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের বিষয়ে গ্লোবাল সাউথের বাকি অংশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে।
নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন, পরিবেশ ও সবুজ উন্নয়নের জন্য জীবনধারা এবং ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো বিষয়ে তিনটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ব্রিকস সম্মেলনে বিদেশি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন: মোমেন
ঢাকা-দিল্লির মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক সই ও প্রকল্প ঘোষণা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টনসহ সাতটি ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক সই হলো।
সাতটি চুক্তির মধ্যে কুশিয়ারা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ভারতের জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
ভারতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয় (রেলওয়ে বোর্ড), ভারত এবং বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য আইটি সিস্টেম যেমন এফওআইএস এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনে সহযোগিতার বিষয়ে দুই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ভারতে বাংলাদেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল (বিসিএসআইআর) এবং ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল (সিএসআইআর) এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এছাড়া দু’দেশ মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
ভারতের প্রসার ভারতী এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সম্প্রচারে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মুদি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর দু’দেশের প্রত্যাশিত সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এই সমঝোতা স্মারক সই প্রত্যক্ষ করেন।
মুদির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পেয়েছে।
উদ্বোধন ও ঘোষিত প্রকল্প
দুই নেতা মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এর কাজ সম্পন্নের ঘোষণা দিয়েছেন। রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা-চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ভারত ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিবে।
তারা যৌথভাবে রূপসা সেতুর উদ্বোধন করেন। ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতুটি ৬৪.৭ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা বন্দর একক ট্র্যাক ব্রডগেজ রেল প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রথমবারের মতো মোংলা বন্দরকে খুলনার সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত করেছে। মধ্য ও উত্তর বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ও গেদেকে সংযুক্ত করেছে।
সড়ক নির্মাণের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ:
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।
খুলনা দর্শনা রেললাইন সংযোগ প্রকল্প:
প্রকল্পটি বর্তমান (ব্রডগেজ দ্বিগুণ) অবকাঠামোর একটি আপগ্রেড যা গেদে-দর্শনা থেকে খুলনার বর্তমান ক্রস বর্ডার রেল সংযোগকে সংযুক্ত করেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে ঢাকা এবং ভবিষ্যতে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে । এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১২ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার।
পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইন: বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইন প্রকল্পে রূপান্তরের জন্য আনুমানিক ১২০ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রকল্পটি বিরল (বাংলাদেশ)-রাধিকাপুর (পশ্চিমবঙ্গ) এ বিদ্যমান ক্রস বর্ডার রেলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে এবং দ্বিপক্ষীয় রেল সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
আরও পড়ুন: তিস্তা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আবারও আশ্বাস দিয়েছে ভারত: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
যৌথভাবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট ১- এর কাজ সম্পন্নের ঘোষণা হাসিনা-মোদির
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির যৌথভাবে ১ম ইউনিট সম্পন্নের ঘোষণা
ঢাকা-দিল্লি ৭ সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও ভারত মঙ্গলবার পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদর্শনে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রহিমপুর হয়ে সিলেটের উচ্চ সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার।
বৈজ্ঞানিক সহযোগিতায় ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভারতের ভোপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
ভারতীয় রেলওয়ের ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং বাংলাদেশে আইটি সমাধানে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রক্রিয়া রাতেই চূড়ান্ত হবে: পররাষ্ট্র সচিব
প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উভয়পক্ষ মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
দুই দেশ বর্ধিত সহযোগিতা চাওয়ায় দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই: প্রতিমন্ত্রী
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর: ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে ৪ চুক্তি-সমঝোতা সই
সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা-দিল্লির ৫ সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও ভারত শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন এবং প্রশমন, বাণিজ্য, তথ্য-যোগাযোগ এবং ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
সেগুলো হলো- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন এবং প্রশমন সম্পর্কিত এমওইউ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়া (আইএনসিসি) মধ্যে সমঝোতা চুক্তি, বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা।
আরও পড়ুন: যৌথভাবে ৫ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদি
এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিজিএসটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সমঝোতা স্মারক এবং রাজশাহী কলেজ মাঠ এবং আশপাশের এলাকায় খেলাধুলার সুবিধা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার কার্যালয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারকে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দুরাইস্বামী এবং বাংলাদেশের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন সই করেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়া (আইএনসিসি) মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে জাতীয় ক্যাডেট কোর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাহিদুল ইসলাম খান এবং ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দুরাইস্বামী সই করেন।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঐক্যের আহ্বান মোদির
মেগা উদযাপনে যোগ দিতে ঢাকায় নরেন্দ্র মোদি
বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দুরাইস্বামী এবং বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন সই করেন।
বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিডিএসইটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং ভারতের পক্ষে হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দুরাইস্বামী সই করেন।
এছাড়া রাজশাহী কলেজ মাঠ এবং আশপাশের এলাকায় খেলাধুলার সুবিধা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে ভারতের পক্ষে দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দুরাইস্বামী এবং বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সই করেন।
করোনার টিকা: বাংলাদেশে ৩য় পর্যায়ের ট্রায়ালে ঢাকা-দিল্লি ‘নীতিগতভাবে’ সম্মত
ভারতে পরীক্ষার পর বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে ঢাকা ও দিল্লি ‘নীতিগতভাবে সম্মত’ হয়েছে।
ঢাকা-দিল্লির ভার্চুয়াল আলোচনা বিকালে শুরু
পানি বণ্টন, ভারতের আওতাধীন এলওসি প্রকল্প, যোগাযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রেখে বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৬ষ্ঠ যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক মঙ্গলবার বিকালে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।