বন্ড
বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে সরকারি কিছু সূত্র।
বর্তমানে এই পদক্ষেপটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করার জন্য আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।’
চলতি সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিপিডিবির এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, আগের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি খাতের ২৫-২৭টি ব্যাংক বন্ড ইস্যু প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে।
স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানো এবং দেশের বিদ্যুৎ খাতকে স্থিতিশীল করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, বিপিডিবি এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করতে পরামর্শ দিয়েছে।
বিপিডিবির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) হিসেবে পরিচিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা বিপিডিবির কাছ থেকে কত টাকা পাবে আমরা হিসাব করছি।’
আরও পড়ুন: ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিপিডিবির মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বেসরকারি উৎপাদনকারীদের পাওনা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল ১৭ হাজার কোটি টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকা।
আদানি গ্রুপসহ ভারতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা পাবে।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতকে স্থিতিশীল করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা পেয়েছিল। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া দায় পরিশোধের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিল সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ২৫ জানুয়ারি একটি চুক্তি সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সরকার সিটি ব্যাংককে ১৯ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা এবং পূবালী ব্যাংককে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করে।
ভর্তুকি তহবিল বিতরণে সরকারের অক্ষমতার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে যার ফলে কেউ কেউ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেপো রেট অনুযায়ী ৮ শতাংশ কুপন হারে বিশেষ বন্ড ইস্যু চালু করা হয়। ভবিষ্যতে রেপো রেটে যে কোনো পরিবর্তন হলে সে অনুযায়ী বন্ডের সুদের হার সমন্বয় করবে।
বন্ডের মেয়াদ শেষে সরকার সুদসহ ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে বন্ডগুলো পুনরুদ্ধার করবে। সাধারণত বন্ডগুলো ১৫-২০ বছর মেয়াদি হলেও বিদ্যুৎ খাতের জরুরি চাহিদা মেটাতে এই বিশেষ বন্ডগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর।
সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, বারাকা, কুশিয়ারা, ডরিন ও অ্যাক্রন পাওয়ারসহ বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগের সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম।
অর্থ বিভাগ ব্র্যাক ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়াসহ অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে চুক্তির পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেছে।
চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আশাবাদী।
ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এসব বন্ড পেতে পারে, একই সঙ্গে সরকারও আর্থিক দিক দিয়ে কঠিন সময় মোকাবিলা করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিপিডিবির বকেয়া পরিশোধে নতুন বন্ড ইস্যুর কথা ভাবছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
২ মাস আগে
ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
রিয়েল এস্টেট, স্টক মার্কেট, স্টার্ট-আপ বা ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বিনিয়োগের অনুকূল দিগন্ত উন্মোচন করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। মার্কিন ডলারের হার বেড়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের বিনিময় হারে। অন্যদিকে, উচ্চ মূল্যের ডলার আয়ের সঙ্গে উন্নত হয় রেমিটেন্স ক্রয় ক্ষমতা। প্রবাসীদের এই অর্থ দেশে থাকা তাদের পরিবারের জন্য যেমন সহায়ক হয়, তেমনি সম্ভাবনা তৈরি হয় দেশের বাজারে আরও বিনিয়োগের। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ডগুলো। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা ইউএসডিআইবি।চলুন, এই বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কী
সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই এনআরবি বন্ড ইস্যু করা হয় মার্কিন ডলারে।
এটি মূলত রেমিটেন্সের বিপরীতে ফরেন কারেন্সি (এফসি) বা বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য নিবেদিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। অন্যান্য অধিকাংশ বন্ডের মতো এই বন্ডেও রয়েছে মুনাফা লাভ এবং সুদাসলের উপর কর-মুক্তির সুবিধা।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বৈশিষ্ট্য
- এই বিনিয়োগ সুবিধাটি অনিবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য
- বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে তাদের এফসি অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়
- বন্ডের মূল্য রেমিটেন্সের উপর মার্কিন ডলারে যে কোনো মূল্যের হয়ে থাকে
- বন্ডের মেয়াদ ৩ বছর
- বর্তমানে সাধারণত ৫০০, ১ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার, এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের ইউএসডিআইবি ইস্যু করা হয়
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কেনার উপায়
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি (বাংলাদেশে অবস্থান করলে দেশে আগমন ও প্রস্থানের সিলসহ পৃষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে)
- সম্প্রতি তোলা আবেদনকারি এবং নমিনি উভয়ের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি
- ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার অনুলিপি
- তহবিলের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র (চাকরির পরিচয়পত্র বা বেতন প্রাপ্তির স্লিপ)
- অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পাসপোর্টের অনুলিপি এবং আয় সংক্রান্ত নথি
- সম্পূর্ণ পূরণকৃত এবং স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র
বন্ড ক্রয় পদ্ধতি
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে বন্ড ক্রয়ের আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা যায়।
এছাড়া দেশে বা বিদেশে এই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনামূল্যেই এই ফর্ম বিতরণ করে থাকে।
ফর্ম পূরনের পর ফর্ম সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি যে কোনো ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানে ইমেল করতে হবে। উপরোক্ত নথিপত্র ছাড়াও বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরতি ইমেলে এনআরবি গ্রাহককে অবহিত করবেন।
এরপর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মসহ যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তারপর আবেদনকারির বন্ডের মূল্য পরিশোধের সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বন্ড ইস্যু করবেন। পরিশেষে ক্রয়কৃত বন্ডের পরিচিতি স্বরূপ একটি অ্যাডভাইস কপি গ্রাহককে প্রেরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো হলো:
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- দেশের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখা
- প্রতিনিধি অফিস, ফরেন করেসপন্ডেন্ট
- শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউস
বন্ড ক্রয়ের জন্য আবেদন পদ্ধতি
নিম্নের লিঙ্ক থেকে বন্ডে বিনিয়োগের আবেদন ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। https://ird.gov.bd/sites/default/files/files/ird.portal.gov.bd/forms/6ef7c349_b2ef_4608_bd1d_3c7b80b2f3f6/Editable_Purchase_US_Dollar_Investment_Bond_converted.pdf
ফর্ম পূরণে যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়, তা হলো:
- আবেদনকারী বা বন্ড ক্রেতা এবং তার নমিনির নাম ও ঠিকানা
- নমিনির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক
- বন্ড ক্রেতার পাসপোর্ট নম্বর
- বন্ডের মূল্য
- এফসি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং যেই ব্যাংকের যে শাখাতে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, তার নাম ও ঠিকানা
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান, এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ
- বন্ড ক্রেতার চাকরির পদবি, কোম্পানির নাম
- বন্ড ক্রেতার বাংলাদেশ ও বিদেশের ঠিকানা
- সবশেষে আবেদনকারীর সই
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
৬ মাস আগে
বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
প্রথাগত সঞ্চয় হিসাবের তুলনায় অধিক লাভ পাওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে সম্পদের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বার্ধক্যকালীন আর্থিক নিরাপত্তার মতো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়; উপযুক্ত বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায়ও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এমনি একটি আর্থিক উপকরণ হচ্ছে বন্ড, যেখানে বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থির আয় পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তিতে বেশ ভালো পরিমাণের রিটার্ন আসায় বিগত বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের এই মাধ্যমটি। তবে বাজারজুড়ে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকায়, সঠিক বন্ডটি কেনার আগে তার যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। চলুন, চূড়ান্তভাবে বন্ডে বিনিয়োগের পূর্বে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি, তা জেনে নেওয়া যাক।
বন্ড কী
ঋণের বিনিময়ে একটি নিরাপত্তা চুক্তিপত্রের নাম বন্ড, যে চুক্তি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বন্ড ইস্যুকরা প্রতিষ্ঠান এবং ঋণদাতার মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে ঋণদাতা বা বিনিয়োগকারীকে বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত ঋণের উপর নির্দিষ্ট হারে বিভিন্ন কিস্তিতে সুদ প্রদান করে থাকে। এভাবে পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ পার হওয়ার পর ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করা হয়। বন্ডের অর্থের উপর নির্দিষ্ট মেয়াদে ধার্যকৃত সুদের হারকে কুপন রেটও বলা হয়। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ও কুপন রেটসহ মূল অর্থ প্রদানের নানা মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে বন্ডগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
বাংলাদেশে বন্ডের প্রকারভেদ
বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বন্ড ৩ প্রকার।
সরকারি বন্ড
এই বন্ডগুলোর আরেক নাম ট্রেজারি বন্ড, যেগুলোর মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের হয়ে থাকে। এখানে সুদের হার অন্যান্য বন্ডের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশি থাকে।
করপোরেট বন্ড
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যে ধরনের বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো করপোরেট বন্ড। এই বন্ড কোম্পানিগুলোর ব্যাংক ছাড়া টাকা উত্তোলনের একটি সেরা মাধ্যমে। এখানে কুপন রেট কম থাকলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে।
এজেন্সি বন্ড
সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টস লিমিটেড এবং বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
সুদ প্রদানের পদ্ধতির ভিত্তিতে বন্ডের শ্রেণীবিন্যাস নিম্নরূপ:
জিরো কুপন বন্ড
এই বন্ডগুলোতে কোনো সুদ বা কুপন দেওয়া হয় না তবে মেয়াদপূর্তিতে বন্ডের ফেস ভ্যালুতে মূল টাকা পরিশোধ করা হয়। প্রথমেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মেয়াদ শেষে প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ বা বন্ডের ফেস ভ্যালু ঠিক হয়। আর বন্ড ইস্যুর সময় এই ফেস ভ্যালুর থেকে কম মূল্যে বন্ড ছাড়া হয়। আর এই ডিস্কাউন্ট রেটটাই বিনিয়োগকারীদের লাভ।
কনভার্টিবল বা রূপান্তরযোগ্য বন্ড
এই করপোরেট বন্ডগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হতে পারেন। তুলনামূলক কম সুদ প্রদান করতে হয় বিধায় কোম্পানি কনভার্টিবল বন্ড ইস্যু করে। এমনকি এখানে বন্ড হোল্ডাররা শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় পর তাদের মূলধন ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কোম্পানির থাকে না।
কল-এবল বন্ড
যে বন্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বেই তার ইস্যুকারী নতুন করে সুদের হার ধার্য করতে পারে, তাকে কল-এবল বন্ড বলে। মেয়াদ চলাকালেই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কোয়ালিটি বৃদ্ধি পেতে পারে কিংবা বাজারে সুদের হার কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আগের থেকে কম কুপন রেট দিয়ে পুনরায় বন্ডটি ইস্যু করতে পারে। এতে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের লাভ হয় এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়।
পুট-এবল বন্ড
এখানে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বন্ড হোল্ডাররা বন্ড ইস্যুকারীকে বন্ড বিক্রি করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। এতে করে বাজারে বন্ডের দর কমে যাওয়া অথবা সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পূর্বেই বিনিয়োগকারীরা বন্ড বিক্রির সুযোগ পায়। এই সুবিধা থাকার জন্য পুট-এবল বন্ড বাজারে অন্যান্য বন্ড থেকে একটু বেশি মূল্যে বিক্রি হয়।
ইনকাম বন্ড
এটি অনেকটা জিরো কুপন বন্ডের মতো, তবে এখানে সুদ দিতে হয়। এই সুদ তখনই প্রদান করা হয় যখন প্রতিষ্ঠানের কাছে কুপন দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ আয় থাকে।
পারপিচুইটি বন্ড
এই বন্ডগুলোতে মূলত কোনো মেয়াদ নেই। বন্ডের মূলধন শোধ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধরে বন্ড হোল্ডাররা নিয়মিতভাবে কুপন বা সুদ পেয়ে যাবেন।
জামানতযুক্ত বা সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা স্বরূপ একটি স্থায়ী সম্পদের দলিল বন্ধক রাখা হয়। জামানতযুক্ত বন্ডের ইস্যুকারী কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে ঐ বন্ধককৃত সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের মূলধন সুদসহ ফেরত দেওয়া হয়।
জামানতবিহীন বা আন-সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় কোনো কিছু বন্ধক রাখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বন্ড ক্রয়ের জন্য ক্রেতাকে কোম্পানির আয়, সুনাম এবং ঋণ প্রদানের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয়।
এখানে প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে বন্ড হোল্ডারদের স্বাভাবিকভাবেই সম্পূর্ণ মূলধন হারানোর ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
৭ মাস আগে
বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
সঠিক বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা। অর্থের বিচক্ষণ ব্যবহারে অর্জিত হয় সম্পদের বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা। এই অর্জনগুলোর নেপথ্যে থাকে গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত, যা ঝুঁকি হ্রাস এবং সর্বোচ্চ আয় বাড়ানোর মোক্ষম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে যেমন বাজারের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক বুঝ পাওয়া যায়, তেমনি মূল্যায়ন করা যায় নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা। এই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী তার আর্থিক উদ্দেশ্য হাসিলের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। স্টক, বন্ড এবং সঞ্চয়পত্রের মতো আর্থিক উপকরণগুলো সময়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা মূলধনের বিপরীতে রিটার্নকে প্রভাবিত করে। চলুন, এগুলোর মধ্যে স্থায়ী আয়ের নিরাপত্তা থাকা বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি জেনে মতো যাক।
সরকারি বা ট্রেজারি বন্ড কী
দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী সুদের হারের এই বন্ডটির নাম বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বা বিজিটিবি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করে এই বন্ড। তাই এটি দেশের প্রধান গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিস বা জি-সেক এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকিমুক্ত বন্ড।
এই বন্ডের সুবিধাগুলো
- এটি ২, ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছরের জন্য; তথা দীর্ঘ মেয়াদে জারি করা হয়
- বিনিয়োগকৃত মুলধনের সুদ বা কুপন বছরে ২ বার প্রদান করা হয় এবং মেয়াদপূর্তিতে মূলধন পরিশোধ করা হয়
- নির্দিষ্ট মেয়াদে স্থায়ী সুদের হার বা কুপন রেট নিলাম কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়
- সেকেন্ডারি মার্কেটেও তথা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেনাবেচা করা যায়
- বন্ডের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়
- এই বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ট্যাক্স রিবেট সুবিধা পান, অর্থাৎ তার আয়করের পরিমাণ কমে আসে।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
কারা এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন
বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেমন-
- ব্যক্তি
- ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- বিমা কোম্পানি
- করপোরেট সংস্থা
- প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন ফান্ড
বাংলাদেশে অনিবাসী ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টধারী কোনো প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: স্মার্ট এনআইডি কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করার উপায়
ট্রেজারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পার্থক্য
সঞ্চয়পত্র কমপক্ষে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য কেনা যায়। কিন্তু ট্রেজারি বা টি-বন্ড জারি করা হয় দীর্ঘ মেয়াদের জন্য, যা কমপক্ষে ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের হয়ে থাকে।
টি-বন্ডে বিনিয়োগের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ টাকা রাখতে হয়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের ন্যূনতম বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই। ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১০ টাকা থেকে শুরু করা যায়।
সঞ্চয়পত্র ১ বছরের আগে যে কোনো সময় নগদায়ন করা বা ভেঙে ফেলা হলে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না বরং অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। কিন্তু টি-বন্ড মেয়াদপূর্তির পূর্বে যে কোনো সময় বিক্রিতে কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই।
সব ধরনের মেয়াদের টি-বন্ডের মুনাফা বছরে ২ বার দেওয়া হয়। আর বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বিতরণের সময় ভিন্ন ভিন্ন এবং খুব কম সময়ে পাওয়া যায়। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হয় প্রতি মাসেই। এরপর রয়েছে প্রতি ৩ মাসে এবং ৫ বছরে মুনাফা পাওয়ার সুযোগ।
আরও পড়ুন: ১৫০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ছাড়বে বেক্সিমকো
ট্রেজারি বন্ড কেনার উপায়
সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি ২টি। একটি নিলামের মাধ্যমে এবং অন্যটি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে।
প্রতি মাসেই টি-বন্ডের প্রাইমারি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক নিলাম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই নিলামে অংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা টি-বন্ড কিনতে পারেন। এর জন্য তাদেরকে প্রাথমিক ডিলারদের (পিডি) মাধ্যমে নিলামে অংশ নিতে হয়। কারণ নিলামে শুধুমাত্র পিডিদেরই নিলামে বিড জমা দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এই পিডি সাধারণত ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মতো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সাধারণ পণ্য কেনাবেচার মতো যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি টি-বন্ড ক্রয় করতে পারেন। তবে সব ব্যাংকেই সরকারি বন্ড বিক্রির অনুমতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোই শুধু এই বন্ড বিক্রি করতে পারে।
চলুন, টি-বন্ড কেনার এই উপায় দুটি এবার বিস্তারিত দেখে মতো যাক।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের পাওনা পরিশোধে ৫৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুতে সম্মত ২৪ ব্যাংক
প্রাথমিক নিলাম থেকে ট্রেজারি বন্ড ক্রয়
প্রাথমিক নিলামের মাধ্যমে টি-বন্ডে বিনিয়োগ করতে হলে বিনিয়োগকারীদের নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
- প্রথমেই বিনিয়োগকারী তার হয়ে প্রাথমিক নিলামে অংশগ্রহণের জন্য পিডিকে অনুমোদন দেন। এর জন্য বন্ডের টাকার পরিমাণ, মেয়াদ, সুদের হার এবং নিলামের তারিখ উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীকে পিডি বরাবর একটি লিখিত নির্দেশনা পাঠাতে হয়। সাধারণত প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এই নিলাম হয়ে থাকে। বার্ষিক নিলাম ক্যালেন্ডারের লিংক- https://www.bb.org.bd/en/index.php/monetaryactivity/auc_calendar
লিখিত অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর পক্ষ হয়ে পিডি প্রাথমিক নিলামে বিড করতে পারে। এই নির্দেশনা নিলামের একদিন আগে পিডির কাছে পাঠাতে হয়।
- পরবর্তী বিভিন্ন লেনদেন নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিনিয়োগকারীকে পিডি-এর অধীনে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি পিডি অ্যাকাউন্ট নামে গণ্য হয়। আর শেয়ার মার্কেটের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজের অধীনে খোলা অ্যাকাউন্টকে বেনেফিশারি ওনার বা বিও অ্যাকাউন্ট বলা হয়।
- বন্ডের টাকা নিলামের আগের দিন দুপুর ১২টার আগে পিডির কাছে জমা করতে হয়। বন্ডের অর্থ যে মাধ্যমেই পাঠানো হোক না কেন তা অবশ্যই উক্ত সময়ে পিডির কাছে থাকতে হয়।
- নিলামের তারিখের দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিড ফলাফল প্রকাশ করে। অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদেরকে পিডি সেই বন্ডের জন্য একটি বরাদ্দপত্র প্রদান করে।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ট্রেজারি বন্ড ক্রয়
এ পদ্ধতিতে বন্ড কেনার জন্য বিনিয়োগকারীকে যে পদক্ষেপগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তা হলো:
- প্রথমে বিনিয়োগকারী নিজের জন্য উপযুক্ত সুদের হার ও মেয়াদ সম্পন্ন টি-বন্ড নির্বাচন করে তা পিডিকে জানাবে। অতঃপর পিডি ও বিনিয়োগকারী উভয় পার্টি বন্ডের মূল্য, মেয়াদ এবং পরিমাণের বিষয়ে সম্মতো হবেন।
- পিডি বন্ডের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীর কাছে একটি চুক্তি নিশ্চিতকরণ পাঠাবে।
- বিনিয়োগকারী বন্ড ক্রয়ের মূল্যের সমপরিমাণ তহবিল পিডির অ্যাকাউন্টে জমা করবেন।
- তহবিল নিশ্চিতকরণের পর পিডি বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে বন্ড স্থানান্তর করবে।
আরও পড়ুন: অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যম: বৈধভাবে টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন?
সরকারি ট্রেজারি বন্ডের লাভ-ক্ষতি হিসাব পদ্ধতি
সুদ বা কুপন অথবা মূলধনী লাভ বা ক্ষতি- এই দুই পদ্ধতিতে বন্ডের লাভ-ক্ষতি হিসাব হয়।
টি-বন্ডে সুদের হার বা কুপন রেট নির্দিষ্ট মেয়াদকালের মধ্যে ঐ বন্ডের জন্য আর পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ ১০ শতাংশ কুপন রেটে ১ লক্ষ টাকা ১০ বছর ধরে রাখা হলে প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা করে ১০ বছরে মোট ১ লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
মূলধনী লাভ বা ক্ষতি মুলত বন্ডটি কত দিন ধরে রাখা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। বন্ডটি কেনার পর থেকে যদি মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত ধরে রাখা হয়, তাহলে এতে কোনো লাভ বা ক্ষতি নেই। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই বন্ড বিক্রি করলে লাভ কিংবা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খুব সহজ হিসাব- যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায় তাহলে মূলধনী লাভ। আর বন্ড কেনার সময়ের দাম থেকে বিক্রির সময় কম দাম পেলে ক্ষতি।
এই মূলধনী লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে মোট সুদের পরিমাণ একত্রিত করে বন্ডের মোট লাভ বা ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১০ শতাংশ কুপন রেটের বন্ডে ১ লক্ষ টাকা ১০ বছরের জন্য বিনিয়োয়োগ করেছেন এবং ৩ বছরে ৩০ হাজার টাকা সুদ পেয়েছেন। ৩ বছর মেয়াদপূর্তির পর আপনি বন্ডটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলেছেন যার হলে আপনার ১০ হাজার টাকা মূলধনী লাভ হয়েছে। এখন ৩ বছরে এই বন্ড থেকে আপনার মোট লাভের পরিমান দাঁড়ালো (৩০ হাজার + ১০ হাজার) টাকা অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা।
অন্যথায়, ৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বন্ডটি ৯৬ হাজার টাকায় ছেড়ে দিলে মূলধনী ক্ষতির পরিমাণ দাড়াচ্ছে ৪ হাজার টাকা। তখন বন্ড থেকে মোট লাভ হচ্ছে (৩০ হাজার - ৪ হাজার) টাকা তথা ২৬ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর সেরা কয়েকটি মাধ্যম: বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবেন যেভাবে
বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ড কেনার সময় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ
বাজারের বন্ডের সুদের হার
সরকারি বন্ডের কুপন হারের সঙ্গে বাজারের প্রচলিত অন্যান্য বন্ডে সুদের হার তুলনা করা জরুরি। যদি বাজারের হার বাড়তে থাকে, তাহলে নিশ্চিন্তে দীর্ঘমেয়াদি টি-বন্ড বেছে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু হার যদি কমার দিকে থাকে, তাহলে নিরাপদ অবস্থায় থাকার জন্য স্বল্পমেয়াদী টি-বন্ড বেছে মতোই উত্তম।
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা
বিনিয়োগকারীকে সর্বপ্রথম ঠিক করতে হবে আসলে তিনি কি উদ্দেশ্যে বিনিয়োগটি করতে চাচ্ছেন। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে যে, ঠিক কত দ্রুত বন্ডটির নগদায়ন তার দরকার। এভাবে বন্ডের তারল্য বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত মেয়াদের বন্ড বাছাই করা উচিৎ। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি বন্ডগুলো থেকে দ্রুত অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে।
আর দীর্ঘ মেয়াদে পাওয়া যায় বেশি রিটার্ন। তাই এখানে উদ্দেশ্যটা নির্ধারণ করা জরুরি। যেমন অনেকে সন্তানের শিক্ষার জন্য ১০ বছরের বন্ড কিনে থাকেন। এ থেকে ১০ বছর পরে তাদের সন্তানের শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোন কার্যক্রমের জন্য বিরাট অঙ্কের সাহায্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
মুদ্রাস্ফীতির হার
বন্ডের সুদের হার নির্বাচন করার সময় মুদ্রাস্ফীতির হিসেব করাটা আবশ্যক। যদিও টি-বন্ডের কুপন রেট অন্যান্য বন্ড থেকে বেশি, কিন্তু অযাচিত মুদ্রাস্ফীতি এই বন্ডের সুবিধাকেও পেছনে ফেলতে পারে।
যেমন মুদ্রাস্ফীতি যদি ৯ শতাংশ হয়, তাহলে ৪ বছর আগের ৮ শতাংশ বন্ড থেকে এখন আর লাভজনক রিটার্ন পাওয়া যাবে না। সুদের হার কমপক্ষে ১০ শতাংশ হলে এই বিনিয়োগটি উপযুক্ত হবে।
শেষাংশ
সরকারের কর্তৃত্ব থাকায় আর্থিক নিরাপত্তা পণ্যের বাজারে অন্যান্য বন্ড থেকে ট্রেজারি বন্ডে ঝুঁকি কম। সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত কুপন রেট এবং ট্যাক্স রিবেট সুবিধা বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য পছন্দে পরিণত করেছে এই সরকারি বন্ডকে। ক্রমান্বয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংযোগ এবং পদ্ধতিগত উন্নতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজতর করেছে এই বিনিয়োগের মাধ্যমকে।
এরপরেও উপযুক্ত সুদের হার ও মেয়াদ নির্বাচনে তুলনামুলক গবেষণা প্রয়োজন। কেননা বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা একেক ব্যক্তির মাঝে একেক রকম। তাছাড়া বাজারের আকস্মিক পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে মুলধন থেকে প্রাপ্ত লাভের উপর। তাই একটি নিরবচ্ছিন্ন আয় পাওয়ার স্বার্থে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও অবগত থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
৭ মাস আগে
বন্ড, ঋণ মার্কেট বিকাশে আইএফসিকে সহযোগিতার আহ্বান
আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ও অন্যান্য ঋণ মার্কেট বিকাশে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
৪ বছর আগে
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি বন্ড
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাকে বন্ড হিসেবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলএসই) উঠাতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে এটি ‘বাংলা বন্ড’ নামে তালিকাভুক্ত হবে।
৫ বছর আগে