জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
করোনার ৪র্থ ঢেউ: সতর্কতার আহ্বান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
প্রায় চার মাস পর গত বুধবার দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত আবার এক হাজার ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে।
তারা অমিক্রনের দুটি সাব-ভেরিয়েন্ট-বিএ.৪-৫ কে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে মনে করছেন। তাদের আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহগুলোতে করোনা শনাক্ত আরও বাড়তে পারে, শুরু হতে পারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।
তবে নতুন ঢেউ আগেরগুলোর মতো মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খুব বেশি সংখ্যক লোক সংক্রমণ বা টিকা দেয়ার মাধ্যমে কিছু ধরণের অ্যান্টিবডি অর্জন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক ইউএনবির সাথে আলাপকালে এসব পর্যবেক্ষণের কথা জানান।
তারা কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেন। যার মধ্যে রয়েছে সবাইকে মাস্কের ব্যবহার এবং সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংক্রমণ কমাতে কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের কভারেজের আওতায় আনার জন্য ভ্যাকসিনেশন বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশে বুধবার ১ হাজার ১৩৫ এবং বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৩১৯ জন নতুন করে করোনায় শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে দেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ দৈনিক ১ হাজারের বেশি (১ হাজার ৪০৯ জন) করোনা শনাক্ত হয়েছিল, যেখানে ১১ জন মারা গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ২১৪ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১১ কোটি ৮৬ লাখের বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছে এবং ১২ কোটি ৮৯ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে।
এছাড়া দেশে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের কোভিড এর টিকা দিয়েছে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.৪-৫ বিশ্বব্যাপী অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি এই দুটি সাব-ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ আমাদের দেশে কোভিড শনাক্ত বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে। আমরা এটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিন সিকোয়েন্সিং রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ভাইরাসে আক্রান্তে বৃদ্ধি আরও অন্তত তিন সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এই ঢেউ মারাত্মক নাও হতে পারে। যেহেতু ক্রমবর্ধমান শনাক্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এখনও খুব কম, আমরা ধরে নিতে পারি যে এই ঢেউ গুরুতর নাও হতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন বিভিন্ন ভাইরাসের ক্লাস্টার সংক্রমণ প্রত্যক্ষ করছে। লোকজন মাস্ক না পরে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি বজায় না রেখে এখানে এবং সেখানে ঘোরাফেরা করার কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ছাড়াল
তিনি আরও বলেন, এখনও কোভিড সংক্রমণের আসল চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে এমন অনেক লোক কোভিড পরীক্ষা করছে না।
রোবেদ বলেন, কোভিড পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। প্রায় ২ হাজার হাসপাতালের বেড কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত।
তিনি জনগণকে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ডা. রোবেদ বলেন, এখনও অনেকে তৃতীয় ডোজ পাননি। টিকা দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ বন্ধ নাও হতে পারে, তবে এটি তীব্রতা কমাতে পারে। সুতরাং, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের সহবাসজনিত রোগ আছে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম কঠোরভাবে বজায় রাখার পাশাপাশি তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করা উচিত।
২ বছর আগে
দেশে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রেখে যেতে পারে ওমিক্রন: প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের
করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ চলতি মাসের শেষের দিকেই হ্রাস পেতে পারে। একই সঙ্গে এটি দেশে অতি উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রেখে যেতে পারে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তার বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। এমনকি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ অবশেষে করোনা মহামারির প্রায় দুই বছর ধরে বহুল আলোচিত হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিজন কুমার শীল, ডা. বে-নজির আহমেদ ও ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের মাধ্যমে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভবিষ্যতে করোনার একই ধরনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে এই হার্ড ইমিউনিটি কতটা টেকসই হবে বা ভবিষ্যতে করোনার অন্য কোনো ধরনের বিরুদ্ধে কতটা ভাল কাজ করবে, তা তারা নিশ্চিত নন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
ছদ্মবেশে আশীর্বাদ
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডা. বিজন কুমার শীল বলেন, ওমিক্রনের ফলে অর্জিত অ্যান্টিবডি করোনার ডেল্টা বা অন্য সব ধরনকে টেক্কা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি ওমিক্রনকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। তাই ওমিক্রন খুব শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। তাই বলা যায়, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে, এই ইমিউনিটি ভবিষ্যতে ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করতে পারবে।’
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের প্রায় সব দেশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের কারণে প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে যাচ্ছে।
ডা. বিজন বলেন, ওমিক্রনের উদ্ভবের আগে সারা বিশ্বে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম অ্যান্টিবডি ছিল। ‘যেহেতু ওমিক্রন সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, তাই খুব কম মানুষই এই ঢেউয়ের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডির বাইরে থাকবে। সুতরাং, ভবিষ্যতে আসা নতুন ধরনের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।’
‘আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে এবং বাকিরাও আগামী দিনে এটিতে সংক্রমিত হবে। তাই আমরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটির দিকে পৌঁছে যাচ্ছি।
তিনি ওমিক্রনকে ছদ্মবেশে আসা আশীর্বাদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন এই ভ্যারিয়েন্টটি যে হার্ড ইমিউনিটি রেখে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, যে ভাইরাস যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তা তত দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ‘ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও এটি হচ্ছে। কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটলে এই মাসের মধ্যে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ হয়ে যাবে। এর মানে আমরা এই সময়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করব।’
তিনি বলেন, একবার হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হলে যদি ভবিষ্যতে একই রকমের ভ্যারিয়েন্ট আসেও, তবুও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না। ‘কিন্তু এই অ্যান্টিবডি কতদিন কাজ করবে তা বলা কঠিন। এটাও বলা মুশকিল যে নতুন এমন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসবে না, যা আগের ভ্যারিয়েন্ট বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অর্জিত অ্যান্টিবডিকে কাবু করে ফেলতে পারে।’
পড়ুন: ওমিক্রনের নতুন উপধরন আরও বেশি সংক্রামক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রাকৃতিক টিকা
সারা বিশ্বে টিকার বৈষম্য রয়েছে জানিয়ে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘অনেক দেশ এখনও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই ওমিক্রন এই বৈষম্য দূর করতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ব্যাপক সংক্রমণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা মূল্যবান। ‘এটি ভবিষ্যতে আসতে পারে এমন যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একটি খুব শক্তিশালী অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করবে। এটি টিকার মতো কাজ করবে এবং অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে আনবে। এটি টিকার মতো সংক্রমণ বন্ধ নাও করতে পারে, তবে এটি অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে মানুষকে রক্ষা করবে।’
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যদিও ওমিক্রন তুলনামূলকভাবে একটি ক্ষণস্থায়ী ধরন, তবুও এটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি করছে যা টিকার মতো কাজ করে।
তিনি অবশ্য বলেন, করোনার বিরুদ্ধে খুব শক্তিশালী প্রতিরোধ তৈরি করতে এখনও টিকার প্রয়োজন আছে। ‘যাদের প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি আছে তাদের যদি ভ্যাকসিন দেয়া হয়, তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যাতে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে।’
পড়ুন: করোনা রোগীদের ৭০-৮০ ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে
টিকা পাওয়াসহ বাংলাদেশের এখন আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে: ডা. ফ্রিডম্যান
বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ টিকা কবে পাবে তা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, এমন সময়ে মার্কিন এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, টিকা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশার চেয়ে আরও কিছু বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
৪ বছর আগে
রেস্তোরাঁ বন্ধ করুন, স্কুল খুলে দিন: মার্কিন বিশেষজ্ঞ
‘স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং উন্নতির ওপর সুস্পষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে’ উল্লেখ করে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বাংলাদেশের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
৪ বছর আগে