অনাস্থা
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী রাজনৈতিকদের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে অধিবেশন শুরু হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই অধিবেশনে বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির বাম থেকে ডানপন্থী দলগুলো ইমরানের অপসারণের বিষয়ে এক হয়েছে। বিরোধীদের দাবি পাকিস্তানের ৩৪২ আসনের সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের ১৭২টি ভোট রয়েছে।
এর আগে ইমরান খান দেশের জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে রবিবার তার সমর্থকদের প্রতিবাদ করার জন্য সড়কে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর ফলে বোঝা যায় তিনিও মনে করছেন যে অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে যাবেন।
কারণ সম্ভবত তার ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং একটি ছোট কিন্তু প্রধান জোট অংশীদারও খানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ, তার ক্ষমতাসীন সংসদ ভেঙে দেয়া এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনকে অবৈধ ঘোষণা করে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ফের অনাস্থা ভোট আয়োজনের পথ পরিষ্কার হয়।
আরও পড়ুন: ফের অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি ইমরান খান
ইমরান খান তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
খান বলেন, রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের বিরোধিতা করেছিল ওয়াশিংটন।
অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’
জালিনা পোর্টার আরও বলেন, অবশ্যই আমরা এই বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখি এবং পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। কিন্তু এই অভিযোগগুলো একেবারেই সত্য নয়।
তারপরও খান তার সমর্থকদের; বিশেষ করে তরুণদের রাস্তায় নামতে আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ ২০১৮ সালে সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই তরুণ সমর্থকেরাই তার সমর্থনের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষ
ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তরুণদের প্রতিবাদ করতে হবে। এই প্রতিবাদ আমেরিকার বিরুদ্ধে, কারণ দেশটি পাকিস্তানকে শাসন করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাদেরই আপনাদের গণতন্ত্র, আপনাদের সার্বভৌমত্ব এবং আপনাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে ... এটি আপনাদের কর্তব্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাপিয়ে দেয়া সরকার মেনে নেব না।’
শনিবার যদি অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ে তাহলে ইমরান খান সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার উপায় হিসেবে দেশে বিক্ষোভ বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
আর অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পরাজয় তার বিরোধী অংশীদারদের পাকিস্তানের ক্ষমতায় আনবে।
তাদের মধ্যে জামিয়াত-ই-উলেমা-ইসলাম (জেইউআই) নামে একটি উগ্র ধর্মীয় দল রয়েছে, যারা বেশ কয়েকটি ধর্মীয় স্কুল বা মাদ্রাসা চালায়। জেইউআই তাদের পরিচলিত এসব স্কুলে ইসলামের রক্ষণশীলতার চর্চা শেখায়। আফগানিস্তানের তালেবান ও পাকিস্তানের নিজস্ব স্বদেশী সহিংস তালেবান সদস্যদের অনেকেই জেইউআই স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছেন।
বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হলো নিহত বেনজির ভুট্টোর ছেলের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ। দল দুটো পূর্বে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তথাকথিত পানামা পেপারসে নাম আসার পরে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাকে পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছিল।
যদি বিরোধী দল অনাস্থা ভোটে জয়ী হয় তাহলে নতুন সরকারপ্রধান বেছে নেয়ার বিষয়টি সংসদের ওপর নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে সামনের সারিতে আছেন নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরিফ। আর সংসদ সদস্যরা নতুন সরকারপ্রধান মনোনয়নে ব্যর্থ হলে আগাম নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতে আগাম নির্বাচন নিয়ে শুনানি
২ বছর আগে
অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখান করা নিয়ে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির রায় প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট টানা চারদিনের শুনানি শেষ করেছে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মুলতবি করার আগে ইমরান খানের আইনজীবী, তার বিরোধী দল এবং দেশটির রাষ্ট্রপতির যুক্তি শুনেছেন। এদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আদালতের রায় ঘোষণা করা হবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্বকারী সাংবিধানিক আইনজীবী আলি জাফর বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে যে ডেপুটি স্পিকার, কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার অধিকার রাখেন কিনা।
সোমবার পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত ডেপুটি স্পিকার সুরির অনাস্থা ভোট বাতিল করার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছিল কিনা এনিয়ে শুনানি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতে আগাম নির্বাচন নিয়ে শুনানি
এর অর্থ প্রকারান্তরে তারা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার মিত্রদের সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনের আইনি অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে শুনানি করছেন। কারণ ইমরান খানের বিরোধীরা দাবি করেছেন যে ক্ষমতায় থাকার জন্য এটি ইমরান খানের একটি চক্রান্ত। এর আগে রবিবার ইমরান খানের মিত্র এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটের দাবি খারিজ করে আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, অনাস্থা ভোট বাতিলের সাংবিধানিক ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের নেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আদালতের রায়ে জানা যায় ডেপুটি স্পিকার তার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে রায় দিয়েছেন, তাহলে পুনরায় সংসদ আহ্বান করা হবে এবং ইমরান খানের ওপর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি আদালত ডেপুটি স্পিকারের সর্বশেষ রায় বহাল রাখে,তাহলে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিরোধী দল দাবি করে যে তাদের কাছে সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পর্যাপ্ত ভোট ছিল। তারা জানায়, ৩৪২ আসনের বিধানসভায় তাদের ১৭২ ভোট রয়েছে। কারণ ইমরান খানের নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা জাস্টিস পার্টির কিছু সদস্য এবং তার সরকারের জোটের অংশীদার মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট ইতোমধ্যে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা
পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে শাসন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে। বাকি সময়েও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে চালিত করেছে সেনাবাহিনী।
বর্তমানের সংকটের বিষয়ে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রবিবার মার্কিন সমর্থিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান- চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায়। কারণ তারা পাকিস্তানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
রবিবার সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পরে অধিবেশনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শাসক পরিবর্তন করার জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ করেন।
ইমরান খানও তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণের জন্য করা ষড়যন্ত্রে ওয়াশিংটন তার বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস পাকিস্তান এবং ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক নীতির শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে সমর্থন করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সমর্থন করি না; আমরা বৃহত্তর নীতি, আইনের শাসনের নীতি, ন্যায়বিচারকে সমর্থন করি।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ
২ বছর আগে
অনাস্থা ভোটের আগেই ইমরানের পক্ষ ছাড়ছে মিত্ররা
পাকিস্তানে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিব্য অনাস্থা ভোটের আগেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারের জোটের একটি দল বিরোধীদের পক্ষে যোগ দিয়েছে। বুধবার মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) নামের দলটি বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়েছে।
বুধবার ভোরে এমকিউএম দলের নেত্রী নাসরিন জলিল সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আরও পড়ুন: নারী অধিকারের সুরক্ষা, প্রচারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল পাকিস্তান
এমকিউএমের মাত্র পাঁচটি আসন থাকলেও এই দলটি ক্ষমতাসীন জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা ইমরানের পক্ষ ত্যাগ করায় সংসদে বিরোধীদের সংখ্যা ১৭২টির বেশি হয়ে গেছে।
আগে থেকেই ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা ইমরানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং প্রকাশ্যে আসন্ন অনাস্থা ভোটে তার বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান ২০১৮ সালে ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদের ১৭৬ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক তারারের মৃত্যু
পাকিস্তানে শিয়া মসজিদে বোমা হামলায় নিহত বেড়ে ৬৩
২ বছর আগে
আবরার হত্যা মামলা: বিচারকের প্রতি আসামিপক্ষের অনাস্থা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিচারকের প্রতি অনাস্থা দিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
৪ বছর আগে