পেট্রোবাংলা
এলএনজি টার্মিনালের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পেট্রোবাংলা
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাতিল করা বেসরকারি খাতের দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়- তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প দুটির জন্য দরপত্র আহ্বান করার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ অনুসরণ করে হবে, নাকি বাস্তবায়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অফিসে পরামর্শ করা হবে সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট নন।
বাতিল হওয়া প্রকল্প দুটির মধ্যে একটি টার্মিনালের জন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে সামিট গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছিল। আর আরেকটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছিল।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পর পেট্রোবাংলাকে প্রকল্প দুটি বাতিলের নির্দেশ দেন।
২০১০ সালের দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি কোম্পানিকে এ চুক্তি দেওয়া হয়।
বাতিল হওয়া এই প্রকল্পগুলো মহেশখালীতে অবস্থিত। ২০১০ সালের একই বিশেষ বিধান আইনে বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত দুটি বিদ্যমান ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ), যা সাধারণত এলএনজি টার্মিনাল নামে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট ২০১৮ সালে মহেশখালীতে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করে।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ ২০১৯ সালে মহেশখালীতে ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করে।
এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে পেট্রোবাংলা বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘটফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ করছে।
প্রায় ৪ হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে আমদানি করা ১ হাজার ১০০ এমএমসিএফডি এলএনজিসহ বর্তমানে বাংলাদেশের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ১০০ এমএমসিএফডি।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি কোম্পানি, এক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট গ্রুপের মাধ্যমে একই ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করে তাদেরকে চুক্তি দিয়েছিল।
এসব চুক্তির আওতায় এক্সিলারেট ও সামিট গ্রুপ এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন সেবা দিতে বার্ষিক শত শত কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল।
তবে, আরও স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের পুনরায় চুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে আগের সরকারের পতনের পরে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন প্রকল্পগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে দুটি এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য নতুন করে দরপত্র প্রক্রিয়া চালুর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয় পেট্রোবাংলা।
বিষয়টি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ অনুসরণ করবে, নাকি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পি) ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করবে- তা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ইউএনবিকে বলেন, ‘ আইনগুলোর কোনটি অনুসরণ করা হবে, তা নির্ধারণ করতে আমরা এখনও উভয় আইনি কাঠামো মূল্যায়ন করছি।’
তিনি বলেন, ‘একজন বিশিষ্ট প্রকিউরমেন্ট এক্সপার্টও এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেলে পেট্রোবাংলা এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।
চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, বেসরকারি খাতে এর আগে কোনো প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পেট্রোবাংলাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
১ মাস আগে
২৬টি কূপ খননে সরকারের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব
দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ২৬টি কূপ খননের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এই উদ্যোগ আরও এক মাস বিলম্বিত হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
মূলত দরপত্র সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি নিয়েই এই বিলম্ব সৃষ্টি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস করপোরেশনের অধীনে তিনটি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী কোম্পানি (সাধারণত পেট্রোবাংলা নামে পরিচিত) সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: তিতাস স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে অগ্রগতি সামান্য
কিন্তু সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য দরপত্রের নথিপত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় কোম্পানিগুলো দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ঘোষণা দেন, প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সবুজ সংকেত পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে আশা করছেন তারা।
একই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার শিগগিরই বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ২৬টি কূপ খননের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে বলে আশ্বাস দেন।
সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে চুক্তি বা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অযাচিত চুক্তি করা থেকে বিরত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করা ব্যয়বহুল এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমানো।
দরপত্র আহ্বানে বিলম্বের বিষয়ে ফাওজুল কবির ইউএনবিকে বলেন, দরপত্র তৈরিতে তার মন্ত্রণালয় একজন দরপত্র ক্রয় বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিচ্ছে এজন্য কিছুটা বেশি সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর আওতায় একই ধরনের চুক্তির দলিল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হলে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ মেনে চলতে হবে তাই বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র জারি করতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের পুরো মাস লাগতে পারে।
গত ৩ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি উপদেষ্টা ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের সরকারি পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
এর মধ্যে ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ এবং বাকি ৩১টি কূপ হবে ওয়ার্ক-ওভার ওয়েল।
বাপেক্স ৬৯টি অনুসন্ধান কূপের মধ্যে ৪৩টি এবং বাকি ২৬টি কূপ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের মাধ্যমে খনন করবে।
বাপেক্স নিজস্ব রিগ ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ৩৩টি কূপ খনন করবে এবং ভাড়া করা রিগ ব্যবহার করে আরও ১০টি কূপ খনন করা হবে।
উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য বাপেক্সের সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো।’
আরও পড়ুন: ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
২ মাস আগে
শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ২৬০ মিলিয়ন ডলার
গত পাঁচ মাসে বিবিয়ানা ও অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্র থেকে কেনা গ্যাসের দাম বাবদ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে ২৬০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে শেভরন বাংলাদেশের।
চলতি সপ্তাহে একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিটির বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক গ্যাস কিনে পেট্রোবাংলা। নগদ অর্থ সংকটের কারণে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শেভরন বর্তমানে দৈনিক প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ করে; যা দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের প্রায় ৫০ শতাংশ। দেশে ২৬১২ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়।
এর মধ্যে দেশের বৃহত্তম ক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে ১০১৭ এমএমসিএফডি গ্যাস, জালালাবাদ ১৫৩.৪ এমএমসিএফডি এবং মৌলভীবাজারে ১৬.৪ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবনতির কারণে এই প্রথম বিদেশি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে চাপের মুখে পড়েছে দেশ।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারাও একই মত পোষণ করেন।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নতুন জায়গায় গ্যাসের সন্ধান
তারা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। তবে ২০২৩ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসার পর পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ও এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে চাপ পড়েছে।
এর ফলে গত বছর কিছু সময়ের জন্য সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধও কমাতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শেভরনের বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টে উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তির উদ্বোধন করলেন নসরুল হামিদ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'এ কারণে শেভরনসহ অন্যান্য কোম্পানির পাওনা রয়েছে।’
বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেভরন বুধবার (২১ আগস্ট) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, 'দীর্ঘদিনের কোম্পানির নীতি হিসেবে আমরা বাণিজ্যিক কারণে আমাদের বকেয়া পাওনার হিসাব দিই না।’
এতে আরও বলা হয়, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে শেভরন বাংলাদেশ। প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে শেভরন।
এতে আরও বলা হয়, ‘দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এটি তার জনগণের জন্য যে সুবিধা দিতে পারে তা নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।’
এদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ও গ্যাস আমদানি ও ক্রয় অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়িয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরও বৈদেশিক মুদ্রা সহায়তা পাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
মঙ্গলবার জ্বালানি সচিব নুরুল আলম বলেছেন, ‘আগে আমরা বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম বিল পরিশোধ করার জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার পেতাম। এখন আমরা এর চেয়ে বেশি পাচ্ছি।’
সম্প্রতি বিদেশি গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে সরকারের বকেয়া বিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সচিব এই মন্তব্য করেন।
শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি সংস্থাগুলোর বকেয়া পাওনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।
অন্যথায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তাদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।
তারা বলেন, দেশের সমুদ্রসীমায় হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক অফশোর দরপত্র আহ্বানের আগে অর্থপ্রদান পরিস্থিতির উন্নতি করা প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই খাতসংশ্লিষ্ট একজন বলেন, 'পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে বিদেশি কোম্পানিগুলো নিলামে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।’
আরও পড়ুন: গ্যাসোলিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বছরের শেষ পর্যন্ত বাড়াল রাশিয়া
৪ মাস আগে
পেট্রোবাংলা ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আরও ৩টি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চায়
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা আমদানি করা গ্যাস পুনরায় গ্যাসীকরণের জন্য বর্তমানে চালু থাকা দুটির পাশাপাশি আরও তিনটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জেনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, প্রস্তাবিত তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল পায়রা, মহেশখালী এবং মাতারবাড়িতে স্থাপন করা হবে যার মোট রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা হবে দুই হাজার থেকে তিন হাজার এমএমসিএফ/ডি।
জেনেন্দ্র জানান যে তিনটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে, তার মধ্যে দুটি ভাসমান হবে- যা ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) নামে পরিচিত, আর একটি হবে ভূমিভিত্তিক টার্মিনাল।
আরও পড়ুন: এলএনজি আমদানিতে জিডিএফ থেকে ২০০০ কোটি টাকা পাবে পেট্রোবাংলা
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, তিনটি এলএনজি টার্মিনালই দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত অযাচিত অফারগুলোর ভিত্তিতে স্থাপন করা হবে।
দু’টি ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট ২০১৮ সাল থেকে চালু রয়েছে। যার মধ্যে একটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে ইউএসএ এর এক্সেলরেট এনার্জি প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং একই এলাকায় একই ক্ষমতার আরেকটি সামিট গ্রুপ স্থাপন করেছিল।
স্থাপিত তিনটি টার্মিনালের মধ্যে এক্সেলরেট এনার্জি পায়রা অঞ্চলের জন্য একটি অফার দিয়েছে এবং সামিট গ্রুপ মহেশখালীর জন্য একটি অফার দিয়েছে। পেট্রোবাংলা মাতারবাড়ি এলাকার জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাবদ্ধ করেছে।
পায়রা এবং মহেশখালীর প্রতিটি এফএসআরইউর ৫০০ থেকে এক হাজার এমএমসিএফ/ডি গ্যাস পুনরায় গ্যাসীকরণ করার ক্ষমতা থাকবে।
সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আলোচনা দ্রুত এগিয়ে চলছে... আমরা পায়রা এবং মহেশখালী টার্মিনালের জন্য মেয়াদী চুক্তিপত্র প্রস্তুত করেছি এবং অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে বাণিজ্যিকভাবে এলএনজি সরবরাহে সহায়তার আশ্বাস সৌদি আরবের
পেট্রোবাংলা মাতারবাড়ি ভূমিভিত্তিক টার্মিনালের জন্য জমির আসল মালিক বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে একটি অনাপত্তি সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
জেনেন্দ্র বলেন, ‘আমরা একবার এনওসি পেয়ে গেলে আমাদের দল এবং পরামর্শদাতা মাতারবাড়ি টার্মিনালের জন্য ফার্ম নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’ মাতারবাড়ি ভূমি-ভিত্তিক টার্মিনালের প্রাথমিক ক্ষমতা থেকে সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প থাকবে।
তিনি অবশ্য বলেন, সরকার যদি এখন টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন দেয়, তাহলে এগুলো স্থাপন ও অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য পেট্রোবাংলার পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিয়ে বলেছেন যে দেশে গ্যাস সরবরাহের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় হাজার ৫০০ এমএমসিএফ/ডি-তে পৌঁছাবে যা বর্তমান চাহিদা ৪০০০ এমএমসিএফ/ডি সরবরাহের বিপরীতে ৩০০০ এমএমসিএফ/ডি।
এই পদক্ষেপ না নিলে দেশে গ্যাস সরবরাহে আরও ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: এলএনজি আমদানি স্থগিত সত্ত্বেও সরবরাহকারী সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের
১ বছর আগে
দেশব্যাপী গ্যাস সংকট চললেও থেমে নেই সিলেটে নতুন অনুসন্ধানের কাজ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন গ্যাসের উৎস অনুসন্ধানে সরকার যথেষ্ট কাজ করেনি এমন সমালোচনার মধ্যেও পেট্রোবাংলা সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের অধীনে বিয়ানীবাজার এবং এর পার্শ্ববর্তী বড়লেখা ও কানাইঘাট উপজেলায় অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, নতুন গ্যাসের উৎস অনুসন্ধানের আশায় নতুন কূপ খননের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকায় অনুসন্ধান কাজের অংশ হিসেবে ভূকম্পন (সিসমিক) জরিপ চলছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আরও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে আমরা বুঝতে পারব নতুন এলাকায় গ্যাসের মজুদ আছে কি না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের দিকে যাব।’
তিনি বলেন, তিনটি উপজেলার ১৯১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনার জন্য চায়না পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ইজিপি ইন্টারন্যাশনালকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পের ২৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট গ্যাসফিল্ডের ১০ নম্বর কূপে খনন করবে চীনের ‘সিনোপেক’
ঢাকায় পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেন, নতুন কূপ খননের উদ্যোগটি ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল সময়কালে মোট ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও কূপ খনন করার কাজ সরকারের পরিকল্পনার অংশ, যা গ্যাস সংকটের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎস থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে পারে।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান দেখায় যে দেশে বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন বলছে, সারাদেশে তাদের কারখানায় গ্যাস সরবরাহ না হওয়ায় তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরেকটি উন্নয়নে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের একটি পরিত্যক্ত কূপের (কূপ-১) পুনরায় খনন কাজ শুরু করেছে।
এ কূপ থেকে প্রতিদিন ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই কেন্দ্রে দুইটি কূপ রয়েছে। ১৯৯৯ সালে কূপ-১ এর গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে তা বন্ধ করা হয়। ২০১৬ সালের শুরুতে আবার সেই কূপ থেকে উৎপাদন শুরু হয় এবং সেই বছরের শেষের দিকে আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: খালি হাতে ফিরিনি, তেল-গ্যাসের নিশ্চয়তা বড় অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
মিজানুর রহমান জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে আরও তিনটি কূপ খনন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২৫ সালের মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন যে ২০১৫ সাল থেকে স্থানীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে এবং নতুন অনুসন্ধানের কাজ না করা হলে ভবিষ্যতে এই হ্রাস অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: প্রিপেইড গ্যাস মিটারের আওতায় আসছে সিলেট
২ বছর আগে
এলএনজি আমদানিতে জিডিএফ থেকে ২০০০ কোটি টাকা পাবে পেট্রোবাংলা
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে পেট্রোবাংলাকে ২০০০ কোটি টাকা দিতে অনুমতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
ইউএনবির পাওয়া একটি অফিসিয়াল আদেশের অনুলিপি থেকে জানা যায়, জ্বালানি বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলাকে ঋণ হিসেবে এই তহবিল সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রোবাংলার তীব্র তহবিল সংকটের প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয় এই অনুমোদন দিয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এলএনজির দাম ১০ মার্কিন ডলার এর কম থেকে বেড়ে ৩৯ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, এ থেকে বোঝা যায় যে সরকার জ্বালানি খাত নিয়ন্ত্রণে গুরুতর সংকটে রয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে পেট্রোলিয়াম জ্বালানির পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে: জ্বালানি বিভাগ
দাম বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে কোনো এলএনজি আমদানি না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
তাই গ্যাস-চালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করতে হবে, যার কারণে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো পরিকল্পিত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা এখনও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অধীনে ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি অব্যাহত রেখেছে। সেখানে মূল্য নির্ধারিত রয়েছে, তবে বিভিন্ন শর্তে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
এখন পেট্রোবাংলা আবার নতুন তহবিল ব্যবহার করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা শুরু করবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে গ্যাস আমদানিতে এই তহবিল ব্যবহার করবে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আদেশে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) তৈরি করা হয়েছিল। এটির মাধ্যমে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে এ তহবিল তৈরির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাস বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অনুমতি পায় পেট্রোবাংলা।
এই ধরনের তহবিলের সব টাকা জ্বালানি বিভাগের খরচ করার কথা। কিন্তু পেট্রোবাংলা কয়েকটি ভিন্ন খাতে এই তহবিল ব্যবহার করে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশে সরকারি কোষাগারে বেশ কিছু টাকা জমা রাখে।
বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী জ্বালানি বিভাগ বা পেট্রোবাংলা কোনো কাজে তহবিল ব্যবহার করতে চাইলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
তবে বিইআরসি জ্বালানি বিভাগের এই ধরনের তহবিল পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকগুলোকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ কমানোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
বিইআরসি জুন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলাকে তার দুটি মূল তহবিলে- জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল (ইএসএফ) এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) মোট ১২ হাজার ২২৭ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়।
জ্বালানি নিয়ন্ত্রকের সর্বশেষ নির্দেশিকায় এ নির্দেশ দেয়া হয়। যা বিইআরসি অর্ডার নং-২০২২/৭ নামে ২৭ জুন বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয় এবং একই দিনে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এটি আপলোড করা হয়।
বিইআরসির রায় অনুসারে, পেট্রোবাংলাকে ইএসএফ তহবিলে ৯ হাজার ২২৭ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা এবং জিডিএফ তহবিলে তিন হাজার কোটি টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে। কারণ ইতোপূর্বে এই পরিমাণ অর্থ সংস্থাটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছিল।
তবে পেট্রোবাংলাকে কখন টাকা ফেরত দিতে হবে সে বিষয়ে রায়ে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে গত ২১ মার্চ গ্যাসের দামের ওপর গণশুনানির ফলোআপ হিসেবে এই আদেশ দেয়া হয়। যেখানে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ বিভিন্ন ভোক্তা অধিকার গ্রুপ ইএসএফ এবং জিডিএফ তহবিলকে ভোক্তাদের অর্থ বলে অভিহিত করেছে। কারণ ভোক্তারা তাদের বিলের অতিরিক্ত এ টাকা গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকে।
ক্যাব এবং অন্যান্য অধিকার গোষ্ঠীগুলো মূল তহবিলে অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য এবং ভোক্তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা একটি স্বচ্ছ উপায়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও গ্যাস সেক্টরের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিইআরসি’র কাছে অনুরোধ করেছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে
কারখানায় মঙ্গলবার থেকে দিনে ৪ ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ থাকবে
শিল্প-কারখানায় মঙ্গলবার থেকে ১৫ দিনের জন্য প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা এই নির্দেশনা জারি করে বলেছে, পবিত্র রমজান মাসে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এ আদেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে পুনরায় পূর্ণ উৎপাদন শুরু
সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভিজিল্যান্স টিম বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।
এর আগে আবাসিক এলাকার গ্রাহক ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের সুবিধার্থে পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।
২ বছর আগে
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রসেস ট্রেনের একটিতে উৎপাদন পুনরায় শুরু
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে দুটি ক্ষতিগ্রস্ত প্রসেস ট্রেনের একটিতে উৎপাদন পুনরায় শুরু হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং শেভরন বাংলাদেশ উভয়ই গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহের মাত্রার উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেভরন গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস উৎপাদন প্রতিদিন এক হাজার ১০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি)বৃদ্ধি পেয়েছে যা প্রক্রিয়াকালীন অবস্থায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ৮০০ এমএমসিএফডির কম ছিল।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদনের প্রকৃত ক্ষমতা এক হাজার ২০০ এর বিপরীতে এক হাজার ১০০ তে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে আমরা ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে জরুরি মেরামতের কাজের কারণে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে।
এই সংকটকালীন সময়ে ধৈর্যের জন্য মন্ত্রণালয় তাদের গ্যাস গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, শেভরন বাংলাদেশ একটি পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টকে পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে। প্ল্যান্টে ক্ষতিগ্রস্ত প্রসেস ট্রেনের একটিতে উৎপাদন এবং মাঠের চারটি কূপে ইতোমধ্যেই পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহে এখনও ঘাটতি থাকায় পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটি চিহ্নিত হওয়ার পর ৩ এপ্রিল (রবিবার) থেকে গ্যাস সরবারহ কমে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষ উদ্বিগ্ন
২ বছর আগে
রমজানে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বন্ধ
সারাদেশে রমজান মাসে সিএনজি স্টেশন প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।
বুধবার (৩০ মার্চ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রমজানের শুরু থেকে দেশের সব সিএনজি ফিলিং স্টেশন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টার পরিবর্তে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: রমজানে অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র রমাজন মাসে সিএনজি স্টেশন বন্ধের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর পেট্রোবাংলার সর্বশেষ এ সিদ্ধান্ত এসেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে, সাময়িক এ অসুবিধার জন্য পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে ‘আন্তরিক দুঃখ’ প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রমজানে সশরীরে ক্লাস চলবে স্কুল-কলেজে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
২ বছর আগে
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব: গণশুনানিতে তোপের মুখে পেট্রোবাংলা
গ্রাহক পর্যায়ের গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার দেয়া প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করেছেন ভোক্তা, নাগরিক, ব্যবসা ও পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্বকারী পক্ষগুলো।
সোমবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে শুরু হওয়া গণশুনানিতে তারা এ বিরোধিতা করেন। পেট্রোবাংলাসহ আট প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর দেয়া প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এ গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানি চলবে বুধবার পর্যন্ত।
ভোক্তা অধিকার পক্ষগুলো বলছে, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায্য হবে। কেননা করোনার মহামারি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষ লড়াই করছে।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ৩ দিনের গণশুনানি শুরু সোমবার
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে তথ্য একে-অপরের সঙ্গে মিলছে না।
তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ব্যবস্থা থাকতে হবে যেখান থেকে গ্যাস খাতের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
পেট্রোবাংলার দেয়া তথ্য জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম আরও বাড়লে জনগণের জন্য বড় চাপ হবে: জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা
শুনানির প্রথম দিনে পেট্রোবাংলা ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা সকালে ও দুপুরে পৃথকভাবে দুটি অধিবেশনে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি এবং অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সংস্থাটির বার্ষিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজার ২২৫ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা। ফলে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমান ১২ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করতে হবে।
বিইআরসির কারিগরি দল পেট্রোবাংলার দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থাটির ব্যয় মেটানোর পরেও উদ্বৃত্ত হিসেবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার অব্যবহৃত তহবিল রয়েছে।
২ বছর আগে