বিশেষজ্ঞ
ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি ঢাকা। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দূষণে শহরটি অনেক আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার ওপর গড়ে উঠেছে যত্রতত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এতে করে ভুগতে থাকা এই শহরটির ওপর নতুন করে চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মত, শিক্ষাকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি হয়েছে, যা সুষ্ঠু নগর-পরিকল্পনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতীতের সরকারগুলো মালিকপক্ষকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখের বেশি। আর ঢাকাকে বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী শহরের একটি বলছে ইআইইউ গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্সের ২০২৪ সালের সমীক্ষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যটতা বসবাসের অনুপযুক্ত, ঢাকার অবস্থান তারও নিচে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কোনো তথ্য যুক্ত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে বাকৃবি-মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা
২০২২ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৭টি, আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬৯টি। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মোট ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ৮৬টি। দেশের ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার ৫১৩ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৮৩ জন। অন্যদিকে, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৭১ জন।
২০২২ সালের পর গত তিন বছরে আর কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইউজিসি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। সীমিত আসন সংখ্যা এবং জাতীয় শিক্ষা বাজেটে উচ্চশিক্ষাখাতে বরাদ্দ ঘাটতি থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায়, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের আদলে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার।
ঢাকায় কেন এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণেই ঢাকায় এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এ জেলায় বর্তমানে ৫৭টি প্রাইভেট ও ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
ঢাকায় এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কিনা—জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘কথা হচ্ছে, প্রয়োজন থাকলেও যেখানে-সেখানে যেমন-তেমন লেখাপড়া করানো আর সার্টিফিকেট দেওয়া—এটা তো সার্টিফিকেট বাণিজ্য! এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এজন্য কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করাও দরকার বলে মনে করেন এই শিক্ষা অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘এটির দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের। তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৬ এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, পাঠদানের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকতে হবে।
৩ উপধারায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যূন ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে।
ঢাকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশই কিন্তু এই শর্ত পূরণ করছে না—প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘ইউজিসি কয়দিন পরপর বলে যে ক্যাম্পাস করতে হবে, কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া হয় না। কী পড়ানো হচ্ছে এবং কী প্রয়োজনে এগুলো হচ্ছে—সেটি আগে দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি করা হয়েছে। ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণ তো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাইভেট খাতের বিকাশ ঘটলে সমস্যা নেই, কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে তো তাদের আসতে হবে! কয়দিন পরপর বলেন—প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে হবে। অথচ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের একটি উপায়। এ ব্যাপারে তাই আইন কঠোর করতে হবে।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে স্বীকার করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠান বড় বড় ক্যাম্পাস করে চলে গেছে, বেশিরভাগই গেছে; কিন্তু বাকিরা গরজ করছে না, আইনের তোয়াক্কাই করছে না। এই তোয়াক্কা করানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে বেমানান
ঢাকা শহরের এত এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটা একেবারেই বেখাপ্পা। যেখানে আমরা বিক্রেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছি, সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে আরও কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।’
‘এমনকি যখন বিকেন্দ্রীকরণের কথা ওঠে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে বলা হলো, তখনও আশুলিয়াসহ ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে তারা ক্যাম্পাস স্থাপন করল। অথচ ঢাকার বাইরে এতগুলো বিভাগীয় শহর আছে, জেলা শহর আছে; সেখানে যদি এসব বিশ্ববিদ্যালয় যেত, তাহলে ঠিক হতো।’
উদহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন রংপুর থেকে একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকায় এসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেখানে হতো, তাহলে তারা সেখানে বসেই লেখাপড়া করতে পারতেন।’
আগের সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এই অধ্যাপক।
তার ভাষ্যে, ‘বিগত সময়ে যারা মন্ত্রী ও আমলা ছিলেন, তারা তাদের মতো করে পরিচিত লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের ছিল না।’
ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ইচ্ছামাফিক এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ তারা ঢাকা ছেড়ে যেতে চাননি। এর ফলে এটি নগরীতে অনেক বেশি চাপ তৈরি করেছে। এতগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শহরের জন্য কখনোই ভালো কিছু নয়। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তগুলো নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।’
ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীত
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকারগুলো তাদের মতামতের বিপরীতে গিয়ে ঢাকাকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গ তুলে নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ায় যাওয়া মানে সেটি ঢাকার বাইরে নয়। পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ঢাকার (জেলার) মধ্যেই কোথাও জমি ভরাট করে তৈরি হয়, তাহলে সেটিকে ঢাকার বাইরে যাওয়া বলে না। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে নতুন জেলা কিংবা বিভাগীয় শহর হতে হবে। সেটাকে বলে বিকেন্দ্রীকরণ।’
তার অভিযোগ, ‘ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে সরে গিয়ে যদি আশুলিয়া কিংবা বিরুলিয়ায় ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়, তাহলে সেটিকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে না। আর এ কারণে ঢাকার আয়তন বাড়ছে, গ্রেটার ঢাকা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে ঢাকা জেলা পার হতে হবে, কিন্তু তারা বলছেন ঢাকা শহর ছাড়লেই হবে। সরকার আসলে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য না করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমনটি হয়েছে।’
তার সঙ্গে একই মত পোষণ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এগুলোকে বিকেন্দ্রিকরণ করা উচিত।’
ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ শিক্ষক। বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। ঢাকার বাইরের মানুষও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারেন, সেরকম কার্যক্রম প্রণয়ন করা উচিত।’
ঢাকার সবকিছুই অপরিকল্পিত
কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ঢাকায় কোনোকিছুই পরিকল্পনামফিক করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোকে কোয়ালিটি এডুকেশনের (মানসম্পন্ন শিক্ষা) দিকে নিয়ে যেতে চাই।’
ড. আনোয়ার বলেন, ‘এই চিন্তা মাথায় রেখে মানের ঘাটতি থাকলে নতুন করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করতে আমরা সর্বাত্মক নিরুৎসাহিত করব। পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে দেশে এখন ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এত ছোট দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়! একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে দুইশ থেকে পাঁচশ বিঘা পর্যন্ত জমি লাগে এবং আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ খুবই কম।’
‘অধিকাংশ জমি জলাভূমি ও কৃষিজমি। এসব ভরাট করে আমাদের উন্নয়নের অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, হোক সেটা পাওয়ার প্ল্যান্ট কিংবা ইন্ডাস্ট্রি। এসবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যায় একটা কমপোনেন্ট, যেটা আসলে খুব অল্প জায়গা নিচ্ছে। তবে খুব সচেতনভাবে এ বিষয়টির পরিচালনা করা দরকার।’
নগর-পরিকল্পনাবিদরা তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারি পর্যায় থেকে যদি আসে, পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটাকে উৎসাহিত করব। শিক্ষার সঙ্গে সোসাইটিকে কমিউনিকেট করার জন্য যে ধরনের পলিসি ও কাঠামোগত সাপোর্ট দরকার, সেটা ডেভলপড করা অত্যন্ত জরুরি।’
পরিকল্পিত শহর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিক থেকে নগরের সিভিক ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে কোন কোন কম্পোনেন্টগুলো থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটা কতটা থাকবে, কতটা থাকলে ওভারক্রাউডেড হবে না, নগরীর বাসিন্দাদের জন্য ক্ষতিকর হবে না—সেই জিনিসগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
ধীরে ধীরে ঢাকা থেকে বেরোচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তার কথায়, ‘এখন সবগুলোই আস্তে আস্তে শহরের বাইরে যাচ্ছে। আমাদের তিন বিঘা জমি যেটা দরকার, এক একর জমি দরকার—সেটা করতে গিয়েই সবাই ঢাকার বাইরে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় তো ঢাকার বাইরেই ছিল, কিন্তু ওটা এখন শহর হয়ে গেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও ঢাকার প্রান্তে চলে গেছে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য তিন বিঘা জমির যে রিকোয়ারমেন্ট আছে, সেটা তারা কোথায় পাবে? এগুলো ঢাকার বাইরে শিফট করতে একটু সময় নিচ্ছে, তবে শিফট করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। আর শিফট না করলে তো (আমরা) সার্টিফাই করছি না!’
আরও পড়ুন: ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণিসম্পদ ডিজিকে বাকৃবির সংবর্ধনা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করার নিয়ম রয়েছে, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমরা মনিটর করছি। যারা ঢাকার মধ্যে আছে, সেগুলোকে আমরা সনদের জন্য এন্টারটেইন (বিবেচনা) করছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, তারা কনভোকেশন করতে পারছে না, কিছুই করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগোতে চাই। খবরদারি কিংবা জুলুমে আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের একটা মেকানিজম আছে, সেটা পূর্ণ না করলে তারা কনভোকেশন কিংবা অন্যকিছু করতে পারে না। ফলে ওরা নিজেদের স্বার্থেই ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে।’
৩৩ দিন আগে
সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধনের আহ্বান: টিআরএনবির সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সাইবার নিরাপত্তা আইনটিতে কিছু বিতর্কিত বিষয় থাকলেও, এটি দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো রক্ষা, অনলাইন লেনদেনের নিরাপত্তা এবং সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তারা।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) ও আনোয়ার টেকনোলজিসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন: নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভারসাম্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
এ গোলটেবিল আলোচনায় নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ জরুরি সংশোধনের আহ্বান জানান আইন বিশেষজ্ঞ, আইসিটি প্রতিনিধি ও মিডিয়া পেশাজীবীরা।
বক্তারা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বর্তমান ডিজিটাল যুগে অপরিহার্য, যা হ্যাকিং, পরিচয় চুরি ও সাইবার প্রতারণার মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রদান করে। এটি আর্থিক ও জ্বালানি খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে, নিরাপদ ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ বাড়ে এবং অনলাইন সেবার প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় করে।
বক্তারা আরও বলেন, সাইবার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে সাইবার আইন একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করে এবং ই-কমার্স ও প্রযুক্তির উন্নয়নে উৎসাহ দেয়। এটি নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে নাগরিক, ব্যবসা ও দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
তারা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা যেমন ডিজিটাল বিষয়বস্তু ব্লক করা এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার উদ্বেগ তৈরি করছে। এই আইনটি ভিন্নমত দমন এবং বাক স্বাধীনতা সীমিত করার জন্য ব্যবহার হতে পারে। 'অপপ্রচার ছড়ানো' বা 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা' এর মতো অস্পষ্ট শব্দগুলো সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এতে আইনটি নাগরিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং বৈধ অনলাইন অভিব্যক্তিকে দমন করতে পারে। এ কারণে তারা বিতর্কিত ধারা সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এসময় সাইবার সুরক্ষা আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে জানিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ‘সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত: আসিফ নজরুল
তিনি বলেন, সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বড় ইস্যু। আইনের ভাষায় নেতিবাচক কিছু আছে কি না সেটা দেখতে হবে। আইন নিবর্তনমূলক হওয়া যাবে না।
সাইবার সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সচিব বলেন, ৩৬ আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। একে অর্থবহ করতে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমার দপ্তর থেকে মাত্র তিন-চার জন ব্যক্তি দিয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এনসিএসএ) চলছে। অথচ একে আরও শক্তিশালী করা দরকার। একইসঙ্গে নাগরিকদের নিয়ে বেশি বেশি নাগরিক সংলাপ করতে চাই। সব পক্ষের মত নিয়েই এই আইন সংশোধন করা হবে।
অপর মুখ্য আলোচক বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, ডেটা সুরক্ষা ও তথ্য শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা সহজ নয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ভেদের দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ বাক-স্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষা। সংস্কৃতি, জাতীয়তার সীমার মধ্যে যদি আমরা দূরত্ব কমাতে পারি তাহলে সমাধান সহজ হবে। এই সমাধানটা নিজেদের মতো করে ‘সেলাই’ করতে হবে। ডিজিটাল অপরাধ সনাক্তের জন্য আইন করতে হবে। কোন প্রযুক্তি আমরা কীভাবে ব্যবহার করব সে জন্য আগাম চিন্তা করে আগামীতে কোন মূল্যবোধ নিয়ে চলব, কতটুকু যন্ত্রের ওপর নির্ভর করব তা নির্ধারণ করতে পারব।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, অপরাধকে অপরাধের গুরুত্ব ও প্রভাবের মাত্রা অনুযায়ী বিচার হওয়া দরকার। আসলে নতুন মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণের সক্ষমতা আমাদের দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে তথ্যের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আইন করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। প্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
রবির কোম্পানি সচিব ব্যারিস্টার সাহেদ আলম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬০টি ধারারর মধ্যে ৩৭টি ধারাই ছিল অপরাধ চিহ্নিত করার জন্য। এতে ১৮টি অপরাধ গণ্য করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সাইবার অপরাধের দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে আছে। তবে ই-গভর্নেন্সে আমরা পিছিয়ে আছি। তাই আমাদের কিসের জন্য কোন আইন দরকার তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। আমার মনে হয়, বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করার কিছু নেই। তাই এটি পুরোপুরি বাতিল করে নতুন করে করা উচিত। ডিজিটাল ইকোনমি যুক্ত করে টেলিকম আইনটিও হালনাগাদ বা নতুন করে করা দরকার।
বেসিস সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বাকস্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য স্কুল থেকেই গঠনমূলক সমালোচনা করার সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। এভাবেই সেলফ সেন্সরশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি ডিজিটাল ফরেনসিক কীভাবে ও কতটুকু পর্যন্ত আদালতে গ্রহণযোগ্য সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে ডেটা প্রাইভেসি না থাকায় আমাদের ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়বে। তাই সবার আগে সেন্সেটিভিটির ওপর ভিত্তি করে ডেটা ক্যাটাগারাইজেশন করা দরকার। একইসঙ্গে আমরা নাগরিককে কতটা সার্ভিলেন্সে আনতে পারি, লিগ্যাল ইন্টারসেপশন করতে পারি সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই আইন করতে হবে। তা না হলে মানুষ আইন ভাঙতে চেষ্টা করবে। তাই আইন তৈরির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার নতুন আইন করার ক্ষেত্রে অপরাধকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে উপধারাগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ রাখতে হবে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। অপরাধ শনাক্তকরণে বিচারকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
বিডি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাত খুবই ঝুঁকিপ্রবণ। প্রতিদিন দেশের আর্থিক খাতে ৬৩০টি সাইবার আক্রমণ হয়। তাই সাইবার অপরাধ কীভাবে ঘটে তা নির্ধারণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। ডেটাসুরক্ষা আইন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকরভাবে সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার তথা ছক বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ম্যানেজড ছক গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে দেশে কোন তথ্য রাখা বাধ্য করতে হবে তা নির্ধারণ করা দরকার।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নাবিল বি আরিফ বলেন, সাইবার নিরাপত্তার আইনে শাস্তি নয় সুরক্ষাকেই গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সাম্প্রতিক সময়ের দুর্ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সামালোচনার জন্য যে ধরনের কাণ্ড ঘটেছে তা দুঃখজনক। এটা আইনের কাজ নয়। তাই আমাদের আইনের ভাষা পরিচ্ছন্ন ও বোধগম্য হতে হবে। মানুষের নিরাপত্তাকেই সবার ওপরে গুরুত্ব দিতে হবে যেন তারা ভীত না হন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, অপরাধের ধরন অনুযায়ী অপরাধের ক্ষত তৈরি হয়। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদারকি থাকা দরকার। ফেসবুক পোস্ট কন্টেন্ট সংশ্লিষ্ট অপরাধ। এটাই সব নয়। তাই বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ সাইবার সুরক্ষা আইনে প্রাধান্য পাওয়া উচিত নয়। এজন্য আমাদের ছাত্র-শিক্ষক-ব্যাবসায়ী-জনতার অংশগ্রহণে এই আইন করা দরকার। তা না হলে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রযুক্তি বিভাগ আনোয়ার টেকনোলজিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়ায়েজ আর হোসেন বলেন, সাইবার ক্রাইমের মধ্যে বাক-স্বাধীনতা, অনলাইন হ্যারাজমেন্ট, সাইবার বুলিং ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণদের পাশাপাশি, নাগরিক ও ব্যবসাকেও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
১৫৫ দিন আগে
বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে বিইআরসির ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও স্টেকহোল্ডাররা।
তারা বলেন, এ ধরনের কর্তৃত্ব জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ফেরত গেলে কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘন ঘন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রবণতা বন্ধ হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এর আগে গণশুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয়ের সুযোগ রেখে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন-২০০৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছে।
অধ্যাদেশ জারির আগে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের আইনি ক্ষমতা ছিল বিইআরসির। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গণশুনানি করতো বিইআরসি।
বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘এ ধরনের গণশুনানি যে কোনো মূল্য বাড়ানোর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্য ও অগণতান্ত্রিক চর্চার অবসান ঘটানোর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাই সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের কর্তৃত্ব বিইআরসির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
অধ্যাদেশ জারির পর থেকে গণশুনানি ছাড়াই নিয়ম করে বিরতি দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে সরকার।
এই অধ্যাদেশ জারির আগ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বা গ্যাসের দাম নির্ধারণের আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের স্ব স্ব প্রস্তাব জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জমা দিতে হতো। এরপর তাদের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার জন্য গণশুনানি করতে হতো।
আরও পড়ুন:বিপিডিবির বকেয়া বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা
গণশুনানিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই ও দীর্ঘ বিতর্কের পর বিইআরসি সিদ্ধান্ত নিত।
গণশুনানিতে স্টেকহোল্ডার ও ভোক্তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান ও মুনাফার হালনাগাদ তথ্য এবং দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে জানতে পারেন।
অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, গণশুনানি প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসিকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘এর ফলে ভোক্তাদের প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে এবং দাম বাড়ানোর যে কোনও পদক্ষেপের আগে পক্ষে ও বিপক্ষে যৌক্তিকতা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন: নগদ অর্থ সংকটের মধ্যেই আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনার আহ্বান
২১০ দিন আগে
বাংলাদেশের চতুর্থ বৈদেশিক ঋণদাতা চীন; ঋণ পরিশোধের সময়কাল নিয়ে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের
চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ও চতুর্থ বৃহত্তম ঋণদাতা। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দেওয়া ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতির পর বেড়েছে চীনা ঋণ, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঋণ ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ১৫ শতাংশের মধ্যে সুদের হার ধরা হয়। যা পরিশোধের সময় মাত্র ১০-১৫ বছর। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো ঐতিহ্যবাহী ঋণদাতারা ৩০ থেকে ৪০ বছর সময় দেয়।
ঋণ পরিশোধের এই সময়কাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থার ওপর চাপ পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: জলের যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে পরাজিত সাঁতারু তাহেরা
এছাড়াও এসব ঋণের সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পে সীমিত ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও ব্যয়-কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধের ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যেতে পারে, যার ফলে বড় ধরনের ঋণের বোঝা দেখা দিতে পারে।
গত চার অর্থবছরে চীন প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেওয়া তাদের মোট ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশ। ঋণের এই প্রবাহ সত্ত্বেও, এখনও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের থেকে এগিয়ে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বার্ষিক ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ চীন থেকে আসে, গত দুই বছরে বছরপ্রতি অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর চীনা ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি শ্রীলংকার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বড় ঋণ নেওয়ার ফলে ঋণ পরিশোধের মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়।
ড. মনসুর বলেন, চীনা ঋণ ডলারে পরিশোধ করা হয়, যা ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার নিম্নমানের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ায়।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা জাপান থেকে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়, যা চীনা ঋণকে কম জনপ্রিয় করে রাখে।
এই উদ্বেগ সত্ত্বেও, ড. মনসুর চীনা ঋণের একটি ইতিবাচক দিকের কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবর্তে বাণিজ্য কৌশলের ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চীন ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়, পরের বছর তা ২৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে পরের বছর ১.১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে তৈরি পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি যাচ্ছে ইউরোপে
চীন গত চার অর্থবছরে বাংলাদেশকে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যার মধ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ছিল বিশ্বব্যাংক- ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় স্থানে জাপান- ১.৯ বিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় স্থানে এডিবি- ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। আর ১.১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে বিভিন্ন ঋণদাতার কাছ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৯.২৬ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চীনের মতো সাশ্রয়ী শর্তে অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ পাওয়া চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হয়, যেখানে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানের মতো শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক ঋণদাতারা প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করতে পারে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের মতিঝিল-কমলাপুর রুটের ৪০ শতাংশের বেশি নির্মাণকাজ সম্পন্ন
২৫৫ দিন আগে
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ তৈরিতে আগ্রহী মাইক্রোসফট
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ ও ডেভেলপার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মাইক্রোসফট। এছাড়াও দেশীয় স্টার্টআপগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সক্ষমতা তৈরি এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুপ ফারুক।
আরও পড়ুন: দক্ষিণখান-উত্তরখানের ৮১ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে: ডিএনসিসি মেয়র
সাক্ষাৎকালে তারা স্টার্ট আপ অন মাইক্রোসফট ফাউন্ডার প্রোগ্রাম,সাইবার নিরাপত্তা, পরিপূর্ণ ডাটা ও এআইয়ের জন্য একক প্লাটফর্ম তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
এ সময় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পৃথিবী আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনের এই যাত্রায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংকিং, টেলিকম, আইসিটিসহ সব খাতে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট এবং প্রযুক্তির নতুন টুল তৈরিতে মাইক্রোসফট অবদান রাখতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজব্যবস্থা, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকারব্যবস্থা গড়তে চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এড়িয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: ‘সুস্থ সমাজ গঠনে খেলাধুলা করতে হবে: ডিএনসিসি মেয়র
ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকান বন্ধ করা হবে: ডিএনসিসি মেয়র
২৭৪ দিন আগে
সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বৈশ্বিক সমর্থনের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহিংসতা ও ভুল তথ্যকে দু’টি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা।
তারা সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বিশ্ব বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে তারা অভিমত দেন, টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ওয়েবিনারের প্যানেলিস্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরের ধারাবাহিকতার পূর্ণ কৃতিত্ব দেন।
'ভায়োলেন্স অ্যান্ড মিসইনফরমেশন: ব্যারিয়ারস টু ইকোনমিক প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যানেলিস্টরা হলেন- অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের জন্য ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল যদি এই সময়ের মধ্যে 'নৈরাজ্য ও সহিংসতা' না করে, তাহলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্যানেলিস্টরা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল যেদিন উদ্বোধন করেন, সেদিন তারা রাজধানীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন ও হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করেন।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে বক্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দলগুলো কেন অসাংবিধানিক কিছু দাবি করছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নিরসন করা উচিত: নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদগণ
তারা সংবিধানের কথা উল্লেখ করে মনে করিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের পরবর্তী শীর্ষ ১০টি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং যা ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দেশটির অসাধারণ অগ্রগতি।
তবে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মতো বর্তমান বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমান সব অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ শতাংশ অনুমোদনের রেটিং রয়েছে।
ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন 'অনলাইনে একচেটিয়া ভুল তথ্য' বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত প্রভাব ফেলে। তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারদেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করছে এবং বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও গুজব ছড়ানো চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত সৃষ্টি করেছিল এবং একই শক্তি এখনো সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জামায়াতের নির্দেশনায় সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
অধ্যাপক এবিএম নাসির ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করতে এবং প্রগতিশীল গণতন্ত্রের উদাহরণ ও একটি মডেল মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ধারাবাহিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের ৫ বছরের দুঃশাসন ছিল দেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা ২০১৩-২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল ব্লগারদের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে একই ধরনের সহিংসতা পুনরায় দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক নাসির যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে। অন্যথায় এটি আফগানিস্তানের মতো বিপর্যয়ে পরিণত হবে।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করে বলেন, সহিংস চরমপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে নিযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য বেশ সক্রিয়। এই ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে: ওয়েবিনারে বক্তা
৪৯০ দিন আগে
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে’
কোভিড-১৯ মহামারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দরিদ্রদের অনিশ্চয়তা, অপর্যাপ্ত সাহায্যপ্রাপ্তি ও এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের উপর আয়োজিত একটি কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, এই ধরনের সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং পরিবারগুলোকে অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করতে সামাজিক সুরক্ষা অত্যাবশ্যক। শহর অঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিসর বাড়ানো, শহরের নিম্ন আয়ের এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সহায়তার মর্যাদাপূর্ণ বিতরণ নিশ্চিত করা ও সমন্বিত নীতির উদ্যোগ নেওয়ার মতো সুপারিশও উঠে আসে আলোচনায়।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ক্ষমতাবাজী বন্ধ এবং বৈষম্যের অবসান করতে হবে: ইনু
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, উচ্চ মাত্রার দারিদ্র্যের যে স্থায়িত্ব, তা শুধু কোভিড-১৯-এর কারণে নয়। মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপের কারণেও দারিদ্র্য বিদ্যমান।
“পোভার্টি ট্রানজিশানস অ্যান্ড সোশ্যাল প্রটেকশন: এক্সপেরিয়েন্স অব অ্যান্ড অ্যাটিটিউডস টুওয়ার্ডস আরবান পোভার্টি” শিরোনামে কর্মশালাটির আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।
কর্মশালায় যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের কোভিড-১৯ লার্নিং, এভিডেন্স অ্যান্ড রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় করা একটি গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়।
কোভিড-১৯ চলাকালীন বিআইজিডি-পিপিআরসি যে গবেষণা করেছিল, গবেষণাটিতে সেখানকার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। পরে এই গবেষণার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকার কল্যাণপুর ও চট্টগ্রামের শান্তিনগর থেকে গবেষকরা আরও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। নিম্ন-আয়ের এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের উচ্চ মাত্রার অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব, বৈষম্যের অভিজ্ঞতা এবং অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা সহায়তার মতো বিষয়গুলো এ গবেষণায় তুলে ধরা হয়।
প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ড. কিটি রোয়েলিন কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন- বিআইজিডির উপদেষ্টা এনএম জিয়াউল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের যুগ্ম প্রধান ড. মুনিরা বেগম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৫০৩ দিন আগে
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালেং মোফোকেং মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত সহিংস বাস্তুচ্যুতি ও হামলার হুমকি একটি বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
এই অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধির পর থেকে কমপক্ষে ১২জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত এবং ২৪ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে তিনি এসব কথা বলেন।
মোফোকেং বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ এবং তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবশ্যই দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় মানবিক পরিষেবাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাজার চিকিৎসা অবকাঠামোগুলোর অপূরণীয়ভাবে ক্ষতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবাকারীরা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ একটি ভয়ানক পরিস্থিতিতে কাজ করছে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘মানবতাবাদী কর্মী, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকরা এই অঞ্চলে বোমাবর্ষণের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে ১১১ টিরও বেশি হামলার নথিভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ৪৮টি হামলা করা হয়েছে, এর ফলে কমপক্ষে ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
মোফোকেং বলেছেন, গাজায় খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।
তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশটির স্বাস্থ্যখাত সহনসীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
মোফোকেং মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার দাবি করে সংঘাতের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং সকলের স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, জ্বালানি, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক আগ্রাসন বৃদ্ধিকে অবশ্যই উপক্ষো করা উচিত নয়। দখলদারিত্বের পর থেকে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান স্থূল কাঠামোগত, পদ্ধতিগত ও দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার একটি নিষ্পেষণ মুহূর্তকে প্রতিনিধিত্ব করে এটি।’
মোফোকেং বলেন, ‘আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সদস্য দেশগুলোকে যুদ্ধের দামামা বাজানো বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ৫৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক দখলে রয়েছে। এই দখলদারিত্বের ফলে জবাবদিহিতার অভাব, চলমান স্থানচ্যুতি ও ধ্বংস, চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং পদ্ধতিগত জাতিগত বৈষম্য প্রভৃতি ঘটেছে।’
এই বিশেষজ্ঞ স্মরণ করেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০০৯ থেকে ২০২৮ সালকে ‘শান্তির দশক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সব দেশের সার্বভৌম সমতা এবং তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ঘোষণাটি সংঘাত প্রতিরোধ করে এবং এর মূল কারণগুলোকে সমাধান করে শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করাকে সমর্থন করে।
মোফোকেং বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের পদক্ষেপ তাদের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। আপনারা মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে নিভিয়ে দিতে পারবেন না।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে: আইএমএফ প্রধান
সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
৫১২ দিন আগে
প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
প্রতিবছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। যার মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইসেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য।
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই বর্জ্য বাড়ছে ৩০ শতাংশ হারে।
হিসাব বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট স্মার্ট উৎপাদন হবে। কম্পিউটার পিসিবিভিত্তিক ধাতু রূপান্তর ব্যবসায় সম্প্রসারিত হবে।
হিসাব আরও বলছে, যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক সংকট। সংকট নিয়ন্ত্রণে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সঙ্গে দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা রিফার্বিশ ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ আইসিটি জর্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) উদ্যোগে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
আরও পড়ুন: ই-বর্জ্য: পুনর্ব্যবহারের পরিবর্তে ফেলে দেয়া হবে ৫৩০ কোটি মুঠোফোন
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, ই-বর্জ্যের কোনো গাইডলাইন নাই। অভিভাবকহীন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা তৈরি করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে আমরা বিআইজেএফ এর পতাকা তলে সবাইকে নিয়ে দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের ই-বর্জ্য সচেতনতা দিবস পালন করবো।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হ্যাকাথন করতে চাই।
বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার জানান, স্বাগত বক্তব্যে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় বিআইজেএফ এর নেওয়া এ উদ্যোগ আগামীতে আরও জোরদার করা হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক।
এ জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এটা বাস্তবায়নে বিআইজেএফ প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
সার্ক সিসিআই (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাব-এর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব সাঈদ আলী, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
সভায় ই-বর্জ্য ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে কাল-বিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
বক্তাদের পরামর্শ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে এনে বিআইজেএফ আগামীতে স্মার্ট সাংবাদিকতায় ভূমিকা পালন করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোল টেবিল আলোচনায় উপস্থিত সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, আজকের ইলেকট্রনিক্স পণ্যেই আগামী দিনের ই-বর্জ্য। ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চেয়ে কি-বোর্ড, মাউস থেকে ই-বর্জ্য বেশি হচ্ছে। তাই এগুলো কোথায় ফেলতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা অনুযায়ী, এসব পণ্য যারা উৎপাদন করবেন তাদেরই ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
ডিএনসিআরপি উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে দেশে ভয়াবহমাত্রায় সিসা ছড়াচ্ছে। তাই সবার আগে উৎপাদকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের চাপের মুখে রাখতে বিআইজেএফ সমাজের আয়না হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ বলেন, আমরা বুয়েট থেকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে ই-বর্জ্য আইন ২০০১ এর একটি খসড়া করা হয়েছে। রি-ইউজ মনেই ই-বর্জ্য নয়। তাই আমি একে ই-রিসোর্স হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, এজন্য এটি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাটা এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান রিসাইকেল ই-বর্জ্য দিয়ে গোল্ড মেডেল তৈরি করতে চায়। হাইটেক পার্কে যদি রিসাইকেল প্ল্যান্ট করা হয় তবেই এটি সম্পদ হিসেবে উপযোগ সৃষ্টি করবে।
র্যাব-এর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন খন্দকার আল মঈন বলেন, সব স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ই-বর্জ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশে ব্যাগেজ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একই ব্যক্তিকে চার বারও আটক করার পর তিনি একই ব্যবসা করছেন। আপনারা তথ্য দিলেই তদন্ত করে এ অভিযান অব্যাহত রাখবেন।
স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ই-বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-রিসোর্স এ রূপান্তর ব্যবসায়িক ভায়াবল না। আমাদের ইন্টারনাল ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবছি। তখন বাইরের দেশ থেকে ই-বর্জ্য বাংলাদেশে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ কাজ করছে। প্রতি মাসে ১৫-১২ হাজার রিফারবিশ ল্যাপটপ বাজারে ঢুকছে। এতে সরকার ৩০-৩১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেতো।
আরও পড়ুন: খুলনা সিটি করপোরেশনে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে: মন্ত্রী
৬৪৭ দিন আগে
বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে: জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ
জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে প্রত্যাশিত স্তরে উন্নীত হওয়ার পর একটি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে দরিদ্রতার মধ্যে রেখে একটি দেশ তার আপেক্ষিক সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের মতো একটি রপ্তানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।’
সোমবার বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে অলিভিয়ার ডি শ্যুটার এসব কথা বলেন।
ডি শ্যুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা থেকে আসন্ন উন্নীতকরনের সুযোগকে ব্যবহার করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর তার নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান, কারণ এই শিল্প ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বর্তমান রপ্তানি আয়ে শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যতো উন্নীতকরনের পথে এগুচ্ছে, ততো এটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স-প্রণোদনা প্রদান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।’
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মীদের শিক্ষিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষার উন্নতিতে সরকারকে আরও বেশি সময় এবং সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। তিনি জানান, ‘এ জাতীয় উদ্যোগ শুধু সুনামের চিন্তা করে এমন বিনিয়োগকারীদেরই আকৃষ্ট করবে না এটি বাংলাদেশে উন্নয়নের একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করবে, যা বৈষম্যমূলক রপ্তানি সুযোগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বারা চালিত হবে।’
বিশেষ প্রতিবেদক স্বাধীনভাবে কাজে বিশ্বাসী সুশীল সমাজের ওপর সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানাবিধ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে।
ডি শ্যুটার বলেন, ‘এই বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে কেবল তাদেরই শঙ্কিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারবেন না।’
তার সফরকালে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘দেশ সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও, এখনও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে এবং বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা মামলা: সদস্য দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছেন ওআইসি মহাসচিব
বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, ‘সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অসম হয়েছে; আদিবাসী, দলিত, বেদে, হিজরা এবং ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু যেমন- বিহারীদের সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের নামে অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে উচ্ছেদ চালিয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রদান না করে বাসস্থানের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
ডি শ্যুটার সরকারকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও যৌক্তিক করার জন্য আহ্বান জানান, যেটিকে তিনি ‘এডহক বা সাময়িক ভিত্তিতে ১১৯টি স্কিমের একটি সমন্বিত কর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এগুলো দুর্বলভাবে সমন্বিত, যা বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত আয়ের নিরাপত্তা প্রদান করে না।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে কর থেকে প্রাপ্ত জিডিপি-এর অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়েছে (প্রায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরনে অর্থায়নের জন্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি রাজস্ব আসে পরোক্ষ কর থেকে, অথচ আয়ের ওপর প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
তিনি বলেন, ‘চিত্রটি উল্টো হওয়া উচিত। উচ্চ-আয় উপার্জনকারী মানুষ এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জনসাধারণের পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে অবদান রাখতে হবে, গ্রাহকদের নয়।’
বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নতুন এবং উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি থেকে জনসংখ্যাকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি তৈরি করা উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র ২০২২ সালে, ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন বাংলাদেশি নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের কারণে বা জলের লবণাক্তকরণের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে ও তাদের জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়।
আরও পড়ুন: বিআরআই’র আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও চীন
বিশেষ প্রতিবেদকের মিশনের অংশ হিসেবে কক্সবাজার সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল, ডি শ্যুটার সেই শরণার্থী শিবিরসমূহ পরিদর্শন করেন যেখানে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে তাদের মাতৃভূমির গণহত্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসেছে। প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে জনাকীর্ণ দেশ বাংলাদেশের সরকারকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি আশ্রয় শিবিরের বসবাস-অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বিশেষ প্রতিবেদক জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতোই কম অবদান রেখেছে যে চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। মার্চ ২০২৩ সাল থেকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে, এবং এটি আগামী জুনে আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হবে।
ডি শ্যুটার সতর্ক করেন, অপুষ্টি এবং যথেষ্ট পুষ্টির অভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। তার ভাষায়, ‘পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকার যদি রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তাদেরকে আয়-উপার্জনের সুযোগ করে দেয়, তবে অন্তত তাদের কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে।’
২০২৪ সালের জুনে বিশেষ প্রতিবেদক তার বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করবেন।
৬৫৩ দিন আগে