প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহিংসতা ও ভুল তথ্যকে দু’টি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা।
তারা সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বিশ্ব বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে তারা অভিমত দেন, টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ওয়েবিনারের প্যানেলিস্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরের ধারাবাহিকতার পূর্ণ কৃতিত্ব দেন।
'ভায়োলেন্স অ্যান্ড মিসইনফরমেশন: ব্যারিয়ারস টু ইকোনমিক প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যানেলিস্টরা হলেন- অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের জন্য ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল যদি এই সময়ের মধ্যে 'নৈরাজ্য ও সহিংসতা' না করে, তাহলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্যানেলিস্টরা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল যেদিন উদ্বোধন করেন, সেদিন তারা রাজধানীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন ও হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করেন।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে বক্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দলগুলো কেন অসাংবিধানিক কিছু দাবি করছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নিরসন করা উচিত: নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদগণ
তারা সংবিধানের কথা উল্লেখ করে মনে করিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের পরবর্তী শীর্ষ ১০টি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং যা ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দেশটির অসাধারণ অগ্রগতি।
তবে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মতো বর্তমান বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমান সব অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ শতাংশ অনুমোদনের রেটিং রয়েছে।
ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন 'অনলাইনে একচেটিয়া ভুল তথ্য' বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত প্রভাব ফেলে। তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারদেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করছে এবং বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও গুজব ছড়ানো চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত সৃষ্টি করেছিল এবং একই শক্তি এখনো সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জামায়াতের নির্দেশনায় সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
অধ্যাপক এবিএম নাসির ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করতে এবং প্রগতিশীল গণতন্ত্রের উদাহরণ ও একটি মডেল মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ধারাবাহিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের ৫ বছরের দুঃশাসন ছিল দেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা ২০১৩-২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল ব্লগারদের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে একই ধরনের সহিংসতা পুনরায় দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক নাসির যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে। অন্যথায় এটি আফগানিস্তানের মতো বিপর্যয়ে পরিণত হবে।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করে বলেন, সহিংস চরমপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে নিযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য বেশ সক্রিয়। এই ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে: ওয়েবিনারে বক্তা