বিপিডিবি
বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে সরকারি কিছু সূত্র।
বর্তমানে এই পদক্ষেপটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন বন্ড ইস্যু করার জন্য আমাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।’
চলতি সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিপিডিবির এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, আগের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি খাতের ২৫-২৭টি ব্যাংক বন্ড ইস্যু প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে।
স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানো এবং দেশের বিদ্যুৎ খাতকে স্থিতিশীল করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, বিপিডিবি এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করতে পরামর্শ দিয়েছে।
বিপিডিবির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) হিসেবে পরিচিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা বিপিডিবির কাছ থেকে কত টাকা পাবে আমরা হিসাব করছি।’
আরও পড়ুন: ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিপিডিবির মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বেসরকারি উৎপাদনকারীদের পাওনা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
বাকি অর্থের মধ্যে গ্যাস বিল ১৭ হাজার কোটি টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকা।
আদানি গ্রুপসহ ভারতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা পাবে।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতকে স্থিতিশীল করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০ হাজার ৬২০ কোটি টাকা পেয়েছিল। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া দায় পরিশোধের লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিল সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ২৫ জানুয়ারি একটি চুক্তি সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সরকার সিটি ব্যাংককে ১৯ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা এবং পূবালী ব্যাংককে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করে।
ভর্তুকি তহবিল বিতরণে সরকারের অক্ষমতার কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে যার ফলে কেউ কেউ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেপো রেট অনুযায়ী ৮ শতাংশ কুপন হারে বিশেষ বন্ড ইস্যু চালু করা হয়। ভবিষ্যতে রেপো রেটে যে কোনো পরিবর্তন হলে সে অনুযায়ী বন্ডের সুদের হার সমন্বয় করবে।
বন্ডের মেয়াদ শেষে সরকার সুদসহ ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে বন্ডগুলো পুনরুদ্ধার করবে। সাধারণত বন্ডগুলো ১৫-২০ বছর মেয়াদি হলেও বিদ্যুৎ খাতের জরুরি চাহিদা মেটাতে এই বিশেষ বন্ডগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর।
সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, বারাকা, কুশিয়ারা, ডরিন ও অ্যাক্রন পাওয়ারসহ বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগের সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম।
অর্থ বিভাগ ব্র্যাক ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়াসহ অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে চুক্তির পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেছে।
চুক্তির গুরুত্ব নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আশাবাদী।
ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এসব বন্ড পেতে পারে, একই সঙ্গে সরকারও আর্থিক দিক দিয়ে কঠিন সময় মোকাবিলা করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিপিডিবির বকেয়া পরিশোধে নতুন বন্ড ইস্যুর কথা ভাবছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
২ মাস আগে
ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে গ্রিডসংযুক্ত ১০টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলেও দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগ বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং মোট ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে বিপিডিবিকে নির্দেশ দেয়।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০-এর অধীনে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্রের এই পদক্ষেপ।
ফলে বেসরকারি খাতের গ্রিড-সংযুক্ত প্রস্তাবিত ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর আগে দরপত্রের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) জারি করেছিল বিপিডিবি।
দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর আওতায় 'অপ্রত্যাশিত অফার' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপিডিবি এসব প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে।
এই আইনের আওতায় সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই যে কোনো বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্পের চুক্তি দিতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে এই বিশেষ আইনের সমালোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
ফলে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর অধীনে আইনটি স্থগিত এবং আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতের সব প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য বেসরকারি ক্রেতাদের বিপদে ফেলে দেয় যারা ৩৪টি সৌর প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিল। তারা এরই মধ্যে কেন্দ্র তৈরি করতে জমি সংগ্রহ করতে এবং এলওআই পেতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ফেলেছিল।
এ অবস্থায় তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রকল্প পেতে এবং উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চুক্তি পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানভিত্তিক ৫০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এরইমধ্যে জমি কিনেছেন তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া প্রকল্পটি পেতে সহায়তা করবে।’
তিনি আরও বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচারের অংশ হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
বেসরকারি উদ্যোক্তারা নিজস্ব খরচে কেন্দ্রগুলো স্থাপন করবে এবং বিপিডিবি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন,‘বিপিডিবি শিগগিরই প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বেশ কয়েকটি গ্রিড-ভিত্তিক সৌর প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে। বেশিরভাগই সেই জায়গাগুলো বেছে নেওয়া হবে যেখানে গ্রিড সাবস্টেশনগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সুবিধা পাওয়া যাবে।’
তবে কেন্দ্রগুলো কোথায় স্থাপন করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি।
বিপিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মূলত ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) সেল-১ দরপত্র দলিল প্রণয়ন ও স্থান নির্বাচনের কাজ করছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও আইপিপি সেল-১ এর পরিচালক শামসুজ্জোহা কবির কোনো সাড়া দেননি।
২ মাস আগে
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় থেকে উৎপন্ন রাজস্বের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সঠিক বিকল্প বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দ্বিধায় রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো উচিত নাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও বন্ড ইস্যু করা উচিত তা নিয়ে শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বিভক্ত।’
তিনি বলেন, সরকার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায়, তাহলে হয় রমজানের আগে করতে হবে বা রমজানের পরে- এই প্রশ্নগুলো প্রায় প্রতিদিনই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে।
বিপিডিবির ক্রমবর্ধমান লোকসানের বোঝা কমাতে তারা আরও বন্ড ইস্যু করার প্রভাবও বিশ্লেষণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা, যেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে।
বিপিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, এর অর্থ সরকারকে প্রতি ইউনিটে ৫ দশমিক ৩ টাকার অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
বিপিডিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক ক্রেতা হিসেবে বিপিডিবি এই অর্থবছরে মোট ৯৮ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
এর প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করতে খরচ হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা, লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে পাইকারি শুল্ক ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। সেটি কার্যকর হয় একই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে।
এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যার ফলে লোকসান হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এই বিশাল লোকসানে সরকার চরম বিপাকে পড়েছে কারণ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। একই সময় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) থেকে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা, রেন্টাল কেন্দ্রে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
সরকার বেসরকারি খাত ও ভারত থেকে ডলারে বিদ্যুৎ কেনে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের জমা হওয়া বকেয়া বিল এখন প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা) এবং বাকি ১ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি খাতে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সংকটের ভয়াবহতার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে সংকটটা স্থানীয় মুদ্রার নয়। যেভাবেই হোক আমরা ম্যানেজ করতে পারব। তবে মূল সংকট ডলার নিয়ে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।
এমন পরিস্থিতিতে বিপিডিবির কিছু পাওনা পরিশোধের সুবিধার্থে সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বন্ড চালু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছেড়েছি এবং এটি বেড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য সরকারকে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়াতে হবে বা আরও বন্ড চালু করতে হবে। যদি আরও বন্ড দেওয়া হয় তবে এটি ব্যাংকিং খাত থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করতে পারে।’
তবে তারা কী করবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানির প্রস্তাব আদানি গ্রুপের: সূত্র
১০ মাস আগে
চলতি মাসে আরও ২০০ মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করবে সরকার
চলতি মাসে আরও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেলচালিত ব্যয়বহুল বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করবে সরকার। এর মধ্যদিয়ে এই বছরে মোট ১ হাজার মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ করার জন্য চলতি বছর চারটি বেসরকারি কোম্পানির ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম তালিকা করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- বাংলা ট্র্যাকের ৩০০ মেগাওয়াট (যশোর ১০০ মেগাওয়াট ও দাউদকান্দি ২০০ মেগাওয়াট), এগ্রেকোর ২০০ মেগাওয়াট (আওড়াহাটি ১০০ মেগাওয়াট ও ব্রাহ্মণগাঁও ১০০ মেগাওয়াট), এপিআর এনার্জির পানগাঁও ৩০০ মেগাওয়াট এবং প্যারামাউন্টের বাঘাবাড়ির ২০০ মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে এবং বাকি ২০০ মেগাওয়াট আগস্টে বন্ধ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, এসব প্ল্যান্ট বন্ধ হলে বছরে সরকারের প্রায় ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আরও পড়ুন: চলতি বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করবে
বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুযায়ী, দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। যার মধ্যে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট, যা মোট সক্ষমতার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিপিডিবি’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেলের মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ছিল ১৫৪ দশমিক ১১ টাকা। যেখানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর খরচ ছিল ৩ দশমিক ৪৬ টাকা। অন্যদিকে, কয়লাচালিত প্ল্যান্টের জন্য এটি ছিল ৯ দশমিক ১৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক প্ল্যান্টের জন্য খরচ ছিল ১১ দশমিক ১০ টাকা।
বিপিডিবির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্কিন ডলার ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায়, উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে।’
তিনি জানান, সব বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) মার্কিন ডলারের দামের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তির অধীনে ডলারে অর্থ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে: চীনা কর্মকর্তা
বিপিডিবি’র ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তাই যদি মার্কিন ডলারের বর্তমান দাম এবং ডিজেলের বর্তমান দাম তুলনা করা হয়, তবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ২০২১-২২ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে অনেক বেশি হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিজেলচালিত প্ল্যান্টের ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের শুল্ক ১৭২ দশমিক ৫ টাকার বেশি। কারণ বর্তমান ডলারের দাম ১০৯ টাকা। অথচ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তা ছিল ৮৫ টাকা।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা, ২০২১ সালের নভেম্বরে তা হয় ৮০ টাকা এবং গত বছরের আগস্টে তা বেড়ে হয় ১১৪ টাকা।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ব্যয়বহুল এই ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকদের ১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার বা ১১ হাজার ২৮১ দশমিক ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেছেন, ব্যয়বহুল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি খুবই ইতিবাচক।
তিনি ইউএনবিকে বলেছেন, ‘ব্যয়বহুল ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে চালু রাখা অর্থহীন... সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাকি সব ডিজেলচালিত প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া।’
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলের ৩ বিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে
১ বছর আগে
লোডশেডিং: বিপিডিবি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, বিদ্যুৎ খাতে চলমান লোডশেডিং ও 'দুর্নীতির' প্রতিবাদে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে বিএনপির ঢাকা জেলা শাখা।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন এলাকার চায়না মার্কেটের সামনে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা বিপিডিবির মতিঝিল কার্যালয়ের দিকে মিছিল বের করে আরামবাগ ক্রসিংয়ে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়।
পরে সেখানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে দলটি।
রিজভী বলেন, জ্বালানির অভাবে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সারা দেশে মারাত্মক লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি বলেছেন, রাস্তার হকাররা বিদ্যুৎ বিক্রি করবে, কিন্তু সেই বিদ্যুৎ এখন কোথায়?’
বর্তমান সরকার বাকস্বাধীনতাসহ জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন: পাবনায় বিএনপির মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১০
তিনি আরও বলেন, এই সরকার গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সকল গণতান্ত্রিক শক্তি এখন ঐক্যবদ্ধ।’
পরে ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়সহ কয়েকজন নেতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।
এক পৃষ্ঠার স্মারকলিপিতে দলটি লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের মানুষ যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে ফেরার জন্য বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে সরকার
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, সারা দেশে ‘ভয়ানক’ লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ‘তাই আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি
জমা দিয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা অবিলম্বে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছি।’
লোডশেডিং বন্ধে সরকারকে চাপ দিতে সব জেলায় একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।
এর আগে মঙ্গলবার বিদ্যুতের চলমান লোডশেডিং ও এ খাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্যুৎ বিভাগের সব জেলা কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং আজ (বৃহস্পতিবার) স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি।
আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন: ফখরুল
১ বছর আগে
শুধু ঢাকাতেই দিনের বেলায় ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
রাতের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকা সত্বেও দিনের বেলায় শুধুমাত্র ঢাকাতেই ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকদিনের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
ফলে সারাদেশের গ্রাহকরা দিনের বিভিন্ন সময়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হবে।’
তিনি বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য গ্যাস সংকটকে দায়ী করেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসলে আমরা কম গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছি, তাই আমরা সারাদেশে অন্তত ২৫টি জেনারেশন ইউনিট বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি।’
তবে তিনি বলেন, বিপিডিবি যদি গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ পায় তাহলে তাদের গ্যাসচালিত প্ল্যান্ট থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা ৪ হাজার ৬৬৭ মেগাওয়াট উৎপাদন করছি এবং গ্যাসের ঘাটতির জন্য প্রায় ১ হাজার ৮৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।’
অন্যদিকে, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী জানান, সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় দিনে ৩০৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ডেসকো ১ হাজার ১১১ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট পাচ্ছে।’
ঢাকা শহরের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব অংশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব ডেসকোকে দেওয়া হয়েছে এবং ঢাকা শহরের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় প্রায় ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে, যা সন্ধ্যার পর বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ডিপিডিসি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে, তাই ৩৪০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, তারা আরও অনেক বেশি লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে।
কিছু এলাকায় মানুষ প্রতিঘন্টায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছে।
রাজধানীর নিকেতন এলাকার বাসিন্দা আবদুস সেলিম বলেন, ‘ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যায় এবং আমরা প্রতিঘন্টায় লোডশেডিং হতে দেখছি।’
একই অভিজ্ঞতা জানালেন মগবাজার এলাকার নাজিম উদ্দিন।
রবিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে দুই দিন সময় লাগবে।
তিনি মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহে বর্তমান বিঘ্নের উন্নতি হবে, কারণ দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি দু'দিনের মধ্যে সরবরাহ পুনরায় শুরু করবে।’
তিনি বলেন, দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর একটি টার্মিনাল নিরাপদ স্থানে এবং অন্যটি নিজস্ব অবস্থানে অবস্থান করছে।
এই স্থগিতাদেশের ফলে গ্যাস সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়, যা সারাদেশে বর্তমান লোডশেডিং-এর সূচনা করে।
তিনি বলেন, তবে আমি আশা করি যে দুইদিনের মধ্যে একটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে, যা ৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করবে। অন্য এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।
১ বছর আগে
দেশে শনিবার ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে
দেশে আজ শনিবার (১৩ মে) দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। কারণ গ্যাসের ঘাটতির কারণে কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (বিপিডিবি) দুপুর ১২টায় প্রায় ২ হাজার ৫১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে; যখন ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার ধারণা, এদিন দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।
বিপিডিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি না বলে এমনটা ঘটেছে। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
এর আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানিয়েছিল, সুপার সাইক্লোন মোখার প্রভাবে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়লেও দেশে তীব্র লোডশেডিং
ফলে শনিবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিগগিরই সরবরাহ শুরু হবে।
এর ফলে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ থাকবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জি. মো. কাউসার আমীর আলী জানান, ঢাকা মহানগরীর তার আওতাধীন এলাকায় ১ হাজার ১৫৭ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে শনিবার বেলা ১১টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ৮১৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, প্রায় ৩৪৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, তার কোম্পানির আওতাধীন এলাকায় দিনে ৩৫০ থেকে ৩৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়।
শনিবার সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি ইউএনবিকে জানান।
আরও পড়ুন: রেকর্ড তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন, তবুও বাড়ছে লোডশেডিং
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান: দেশব্যাপী ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
১ বছর আগে
১০০ মেগাওয়াট পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ প্লান্টের সঙ্গে ২ বছরের জন্য পিপিএ নবায়ন করেছে বিপিডিবি
পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের সঙ্গে আগামী দুই বছরের জন্য কেরানীগঞ্জে তার ১০০ মেগাওয়াট ভাড়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) নবায়ন করেছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)।
বুধবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে বিপিডিবির বোর্ডরুমে এই চুক্তি সই অনুষ্ঠান হয়।
বিপিডিবি সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা এবং পাওয়ারপ্যাক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তিটির শিরোনাম ‘দুই বছরের জন্য ভাড়া ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তির দ্বিতীয় সংশোধনী’।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপিডিবি সদস্য মোহাম্মদ শামসুল হক, প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবিএম জিয়াউল হক, সিকদার গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সৈয়দ কামরুল ইসলাম (মোহন) এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রন হক সিকদার বলেন, তার কোম্পানি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করবে।
পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিটি সফলভাবে আয়োজনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি বিপিডিবি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: বিপিডিবি’র আর্থিক ক্ষতি দুই-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা
বিপিডিবি সদস্য মোহাম্মদ শামসুল হক শিগগিরই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করার জন্য পাওয়ারপ্যাক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, চুক্তিতে উল্লেখ আছে যে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সইয়ের দিন থেকেই এটি কার্যকর হবে। সুতরাং, এখন চুক্তি সই হওয়ায় আশা করা হচ্ছে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবিলম্বে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে, যা সরকারের পাশাপাশি পাওয়ারপ্যাক উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে।
বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী এবিএম জিয়াউল হক বলেন, পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের অবস্থান রাজধানীর খুব কাছাকাছি। যেটি একটি বড় প্লাস পয়েন্ট এবং এ কারণেই এখানে যত তাড়াতাড়ি উৎপাদন শুরু হয় তা পাওয়ারপ্যাক এবং বিপিডিবি উভয়ের জন্যই মঙ্গল।
আরও পড়ুন: সৌদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিপিডিবি’র ১০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি
১ বছর আগে
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ভর্তুকি হিসাবে ৫৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে।
বৃহস্পতিবার সিপিডি অফিসে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি চাওয়ার সময় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায়।
তিনি বলেন, মোট প্রস্তাবিত অর্থের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ১৯ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছে এলএনজি আমদানির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই: সিপিডি
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাবে আমরা একমত নই’।
তিনি আরও বলেন, বরং সরকারের উচিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে বেশি ভাড়া এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করতে একটি পরিকল্পনা নেয়া উচিত।
সিপিডি গবেষণা পরিচালক বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপিসি এখন জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরে পেট্রোলিয়াম ব্যবসায় লোকসানের পরিবর্তে প্রচুর মুনাফা করছে, কারণ বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, বিপিসি এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করে ৩০ টাকার ওপরে লাভ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতে পারে মূল্যস্ফীতির কারণে মন্ত্রণালয় এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি চেয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি)গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এর কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে।
তিনি বলেন,‘কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা এই পদক্ষেপের প্রশংসা করি, কারণ এটি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে আগের তুলনায় তারা (সরকার) অনেক বেশি মনোযোগ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, তবে সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিবৃতিতে একটি বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। কারণ তারা এখন লক্ষ্যমাত্রা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’র পরিবর্তে, ‘ক্লিন এনার্জি’ ‘৪০শতাংশ পর্যন্ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।’
তিনি আরও বলেছেন, সরকার ‘কার্বন ক্যাপচার টেকনোলজি’ চালু করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ফেজ আউট পরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব এখন এই প্রযুক্তি থেকে সরে আসছে। কারণ এই পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব নয়। কারণ এই ধরনের প্রযুক্তি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ক্যাপচার করতে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন:বিপিসির দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির দরকার হতো না: সিপিডি
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির খরচ কমছে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ বা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। কেননা অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি দিন দিন সস্তা হচ্ছে। সরকারের উচিত অপ্রমাণিত প্রযুক্তির পরিবর্তে এই বিষয়ে প্রমাণিত প্রযুক্তির দিকে যাওয়া।’
তিনি আরও লক্ষ্য করেছেন যে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির উৎসাহিত করতে চায়, অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যথাযথ মনোযোগ পায়না।
তিনি বলেন,‘প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাদ দেয়া হয়নি, তবে এটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের আস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন: সিপিডি আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা
২ বছর আগে
বিপিডিবি’র আর্থিক ক্ষতি দুই-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক ক্ষতি এক বছরে ১৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বাড়তে পারে। এতে মোট ক্ষতি ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
বিপিডিবি’র সর্বশেষ নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, আর্থিক ক্ষতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে, যা শতকরা হিসাবে ৬৭ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্র থেকে জানা যায় যে নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিপিডিবির অর্থ বিভাগ এই হিসাব তৈরি করেছে।
বিপিডিবির অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র সাত মাসের জন্য কিছু অতিরিক্ত রাজস্ব পেয়েছি। কারণ নতুন পাইকারি মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।’ প্রতিটি অর্থবছর ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব করা হয়।
পিডিবি বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫ দশমিক ২১ টাকা ধার্য করেছে, যা ইউনিট প্রতি ১ দশমিক ০৩ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
হিসাব অনুযায়ী, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অত্যধিক বেড়েছে মূলত দুটি কারণে—প্রাথমিক জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘এই দুই কারণের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
তিনি জানান, শুধুমাত্র মার্কিন ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বিপিডিবি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে যাচ্ছে।
সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে যে বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেটরদের অর্থ পরিশোধ ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যাংকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা প্রত্যয়পত্র খোলার ক্ষেত্রে বর্তমানে ১০৭ টাকায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার গণনা করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়াতে বিপিডিবি’র রিভিউ আপিল
উক্ত কর্মকর্তা জানান যে কিছুদিন আগেও বিপিডিবি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৮৫ টাকায় হিসাব করেছে। এখন ১০৭ টাকার বিনিময় হার মানে প্রতি ডলার দিতে ২২ টাকা অতিরিক্ত।
বিপিডিবির বিপুল সংখ্যক বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ কেনার জন্য বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) রয়েছে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি এবং ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বেসরকারি খাতে স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি), ভাড়া ও দ্রুত ভাড়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।
ভারত থেকে বিদ্যুতের আমদানিও বেসরকারি খাতের উৎপাদন হিসেবে গণনা করা হয়।
বেসরকারি খাতের অপারেটররা মূলত ফার্নেস অয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও ডিজেল ব্যবহার করে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করে চার হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) অনুসারে, মোট ২৫ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের প্ল্যান্ট রয়েছে এক হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট (৬ দশমিক ৯১ শতাংশ) কয়লাভিত্তিক, ১১ হাজার ৩৩০ মেগাওয়াট (৪৪ দশমিক ২৮ শতাংশ) গ্যাসভিত্তিক, ছয় হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট (২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ) ফার্নেস অয়েলভিত্তিক, এক হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট (৫ দশমিক ২৪ শতাংশ) ডিজেলভিত্তিক, আমদানি এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট (৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ), নবায়নযোগ্য ৯৪৮ দশমিক ১২ মেগাওয়াট (৩ দশমিক ৭১ শতাংশ) ও ক্যাপটিভ দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট (১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ)।
বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটিকে ২০২১-২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল জ্বালানি আমদানির জন্য ৩১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়, প্রধানত ফার্নেস অয়েল।
চলতি অর্থবছরে, বিপিডিবি ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করবে বলে নির্ধারণ করেছে, যা এক দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কম, কারণ অত্যধিক দামের কারণে সরকার ইতোমধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
বিপিডিবির কর্মকর্তা বলেন, কম পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে সরকারকে ২০২২-২০২৩ সালের চলতি অর্থবছরে ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
যদিও ফার্নেস অয়েলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে এক দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কমে যাচ্ছে, বিপিডিবিকে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি দামে তরল জ্বালানি আমদানি করতে হবে বলে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।
আগের অর্থবছরে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা। দাম নির্ধারণের কাজে জড়িত বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরে এর দাম বেড়েছে হয়েছে ৮৫ টাকা প্রতি লিটারে।
তিনি বলেন, ফার্নেস অয়েলের দাম ২০ টাকা বাড়লে শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা তৈরি হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার উচ্চমূল্য ও বিদ্যুতের আমদানিও বিপিডিবির সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন: প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুৎ ৯.০৩ টাকা করার প্রস্তাব বিপিডিবি’র
চার বিতরণ অঞ্চলে ডিজিটাল কল সেন্টার স্থাপন করবে বিপিডিবি
২ বছর আগে