কেন্দ্রীয় ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ঋণে জর্জরিত চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার শরিয়াহ ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পদ্মা ব্যাংক অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক্সিম ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এমওইউর খসড়া চূড়ান্ত করেছি, যা আগামী ১৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপস্থিতিতে সই হবে।’
একীভূতকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আফজাল করিম ইউএনবিকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে হবে বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে একীভূত হবে।
আরও পড়ুন: প্রায় ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাত: পদ্মা ব্যাংকের চিশতিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশের মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১২টি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ এবং ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যেই রেড জোনে চলে গেছে। বাকি ৩টি ইয়েলো জোনে অবস্থিত, অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি।
ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের মিডিয়া প্রতিবেদনের পরে দুর্বল ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহক ও আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফারমার্স ব্যাংকের নতুন নামকরণ করা হয় পদ্মা ব্যাংক। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এবং ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের কারণে কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ না হলে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ না হলে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) জানিয়েছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত হতে হবে, তা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একীভূতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে এবং ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারাবে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচকের (বিএইচআই) প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, এতে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত স্বাস্থ্য নেই। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের তৈরি একটি আংশিক প্রতিবেদন যার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়।
আরও পড়ুন: বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য মার্কিন ডলার-টাকা বিনিময় চালু করল বাংলাদেশ ব্যাংক
মেজবাউল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধানের অংশ হিসেবে ত্রৈমাসিক ও অর্ধ-বার্ষিক ভিত্তিতে ব্যাংকের কার্যক্রম ও আর্থিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বিএইচআই প্রতিবেদনে হলুদ বিভাগের তালিকায় কিছু সবল ব্যাংকও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের প্রকৃত ব্যালেন্সের ভিত্তিতে কাজ করে, অনুমানের ওপর নয়।
শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে ১০টি দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের বিষয়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেন, বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে এবং আমানতকারীরা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত হবে না।
তবে, বিএইচআই (ব্যাংক স্বাস্থ্য সূচক) শিরোনামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গোপন প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় ২৯টি ব্যাংক হলুদ জোনে ছিল, যার অর্থ তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য সবল ও ভঙ্গুরের মাঝামাঝিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: হুন্ডি অভিযানে দিনে ২০০ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক: গভর্নর
প্রতিবেদনটিতে ব্যাংকগুলোকে যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক ‘ক্যামেলস’ রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।
এই রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যাংক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ ছয়টি বিষয় ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষা করে থাকে। ছয়টি রেটিং সূচক হলো- মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণমান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণ অনুসারে, ‘রেড জোনে’ যে ব্যাংকগুলো রয়েছে- এবি, ন্যাশনাল, বাংলাদেশ কমার্স, পদ্মা, বেসিক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক অব পাকিস্তান, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক।
‘লাল’ ও ‘হলুদ’ জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা: বিশ্বব্যাংক এমডি
সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের বোর্ড গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
'ব্যাংক কোম্পানি আইন' অনুযায়ী পরিচালকদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাতে গতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের সঙ্গে ঋণ নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র
প্রজ্ঞাপনটি শিগরিগরই বাস্তবায়নের জন্য সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, একটি ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন তিনজন।
তবে ২০ জনের কম পরিচালক থাকলে দুইজনের বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি সদস্য পরিচালক হতে পারবেন না বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৩০ বছর এবং ১০ বছরের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযানের পর বাজারে ডলারের সংকট
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত ও পেশাগত দিক থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত আমানতকারীদের টাকায়। এক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা অপরিহার্য। এ কারণে একটি ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে ব্যাংক-কোম্পানি আইনে সংশোধনী আনা হয়।
আরও পড়ুন: মূল সুদের হার বাড়াল শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সর্বোচ্চ ১ বছরের জন্য ডলার বুকিং নীতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য উচ্চ হারে একটি মার্কিন ডলার বুকিং নীতি চালু করেছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এক বছর পর ‘স্মার্ট’ রেট দিয়ে বর্তমান ডলারের দামের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি চার্জ নিতে পারবে ব্যাংক।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
নতুন নিয়মে এক বছর পর্যন্ত বুকিং দিয়ে ডলার রাখা যাবে। এ জন্য ক্রেতাকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। এখন যে পদ্ধতিতে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে এটা নির্ধারণ করা হবে।
বর্তমানে আমদানির জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫ পয়সা। কেউ যদি ভবিষ্যতের জন্য একটি ডলার বুক করতে চান, তাকে এক বছর পর ডলারপ্রতি ১২৩ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমেছে ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে
নতুন টাকা ছাপবেন না: বিবিকে ড. ওয়াহিদউদ্দিনের পরামর্শ
ডলারের বিনিময় হার না বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও আবারও বেড়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযানের পর বাজারে ডলারের সংকট
উচ্চ বিনিময় হার নিয়ে মুনাফার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে অভিযান চালানোর পর খোলা বাজারে ডলারের সংকট আরও বেড়েছে।
গত দুই সপ্তাহে খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ডলারপ্রতি ১১২ টাকা থেকে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে গত সপ্তাহের শেষের দিকে এবং সপ্তাহান্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউসে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব অভিযানে এক্সচেঞ্জগুলোকে আগের দরে ১১২ থেকে ১১৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু জানা গেছে, অভিযানের ফলে এই সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে মানি এক্সচেঞ্জগুলো বাজার থেকে ডলার সম্পূর্ণভাবে তুলে নিয়েছে।
চড়া দামে ডলার বিক্রির দায়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শাস্তির ভয়ে ডলার বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফলে খোলা বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতের সংশ্লিষ্টরা।
আজ ১২০ টাকায়ও এক ডলার কেনা যাচ্ছে না।
এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বলেছে, তাদের কাছে বিক্রি করার মতো কোনো ডলার নেই।
আরও পড়ুন: রপ্তানি আয়ের জন্য ডলারের বিনিময় হার বেড়ে ১০৭.৫ টাকা
খোলা বাজারে ডলারের সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, ডলার লেনদেন ঠিকই হচ্ছে, কিন্তু সবাই তা বিক্রি করছে না।
তার মতে যাদের কাছে ডলার আছে তারাই বিক্রি করছে।
মতিঝিল এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের মালিক জামান (ছদ্মনাম) রবিবার ইউএনবিকে বলেন, তারা ১১৫ টাকায়ও ডলার কিনতে পারেন না, তাহলে ১১২-১১৩ টাকায় ডলার বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব?
ডলারের সরবরাহ সংকটের কারণে রবিবার অন্যান্য অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউস এবং মার্কিন ডলারের ভাসমান ব্যবসায়ীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গিয়ে এই হতাশাজনক চিত্র যায়।
আমাদের সংবাদদাতা গুলশান, বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেটের মতো অন্যান্য এলাকায় অনুসন্ধান করেও একই চিত্র দেখেছেন।
গত ১২ বছর ধরে ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আয়নাল বলেন, ‘মানি চেঞ্জাররা একজনের কাছ থেকে কিনে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে। বর্তমান দামে ডলার বিক্রি করতে মানি চেঞ্জারদের ডলার কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকায়। কেউ যদি ১১২ টাকার নিচে ডলার বিক্রি না করে তাহলে মানি চেঞ্জাররা কিভাবে ডলার পাবে? ব্যবসায়ীরা ডলার না পেলে বিক্রি করতে পারবে না, মানি চেঞ্জাররা এ কথা বলছেন।’
গত ৬ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা থাকায় ডলার কিনতে মতিঝিলে আসেন ওমর ফারুক। খরচের জন্য ডলার কিনতে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়েও পাননি তিনি।
ওমর বলেন, ‘এখন মানি চেঞ্জারের কাছে এসেছি, এখানেও ডলার নেই। আমি গুলশানে এক পরিচিতকে ফোন করেছি ৪০০ ডলার ম্যানেজ করার জন্য। যেখানে প্রতি ডলার হয়ত ১২০ টাকা হতে পারে।’
কেন তিনি এত বেশি দামে কিনতে রাজি হবেন জানতে চাইলে ওমর বলেন, ‘দাম যাই হোক না কেন, ডলার ছাড়া আমি কীভাবে বিদেশে যাব?’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংক রেট ক্যাপসহ 'বাজারভিত্তিক' ডলারের বিনিময় হার চালু করেছে
২০২৩’ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, এ যাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
বাংলাদেশ ব্যাংক ৯% সুদের হার তুলে নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক একক অঙ্কের সুদের যে সীমা দেওয়া আছে তা তুলে নিয়ে রবিবার (১৮ জুন) একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। শনিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি কমাতে এবং অর্থনীতিতে প্রবাহিত অর্থের মাত্রা কমাতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রবিবার (১৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) নীতিগত বিবৃতি প্রকাশ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ প্রধান, ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি এবং কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক নীতি অনুমোদন করবে ১৪ জুন
নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বাশার ইউএনবিকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং একটি একক মুদ্রা বিনিময় হার প্রবর্তনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সুদের হার নিয়ে নতুন ঘোষণা আসবে। বর্তমানে ৯ শতাংশের সীমা দেওয়া আছে, সেটা তুলে নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণে বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস ১ জুলাই থেকে এই সুদের হার কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১.৩১ লাখ কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক
বাজার ভিত্তিক সুদের হার, জুলাই থেকে সমন্বিত বিনিময় হার: বাংলাদেশ ব্যাংক
মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) রবিবার মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হারের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
চাহিদার হার ও মুদ্রাস্ফীতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদের হার ০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ভোক্তাদের ঋণের হার ১২ শতাংশে উন্নীত করেছে।
নতুন মুদ্রানীতি কাঙ্খিত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) সমর্থন করার জন্য টার্ন লোনের (শিল্প ঋণ) ওপর ৯ শতাংশ সুদের হার জারি রাখে। যা অর্থনীতির উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থানের সুযোগে তহবিলের প্রয়োজনীয় প্রবাহ নিশ্চিত করে।
রবিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার নতুন 'মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)' প্রকাশ করেন। ২০২২ সালের ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।
নীতি ঘোষণা করার সময় গভর্নর বলেছিলেন যে মুদ্রা বাজার প্রবাহ এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার লক্ষ্যে মুদ্রানীতি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনপিএল (নন-পারফর্মিং লোন) কমাতে এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে।
আরও পড়ুন: জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকবে না: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেশীয় ঋণ, অর্থ সরবরাহ, দেশীয় সম্পদ, বিদেশি সম্পদ কতটা বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী সাঈদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাসের, একেএম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩-এর দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এটি ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে বাজেট ঘাটতির কারণে সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ কমেনি বরং ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এবং সেইসঙ্গে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রেপো রেট বা পলিসি রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
এর অর্থ হলো ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিলে তাদের অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে।
এছাড়া, রিভার্স রেপোও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ থেকে ৪.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।
এছাড়া অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখতে হবে। কিন্তু গত নভেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেবে সরকার। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এক দশমিক ৬ লাখ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে আইএমএফ দল
প্রবাসীরা ১০ হাজার ডলারের বেশি কাছে রাখতে পারবেন না: বাংলাদেশ ব্যাংক
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক ঋণ সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আই্মেএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ সন্তোষজনক ছিল।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার বৈঠকে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে তারা খুবই আশাবাদী।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আজকের বৈঠক সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনা খুবই সন্তোষজনক ছিল। উভয় পক্ষই একে অপরকে সহযোগিতা করেছে এবং আইএমএফ দল এখন পরিস্থিতি জানে।’
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বাস্তব পরিস্থিতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা বুঝতে চায়।
আরও পড়ুন: মূল সুদের হার বাড়াল শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমান ও আহমেদ জামাল, প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিউর রহমান।
আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্যসহ আইএমএফ দলের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আইএমএফ দল রিজার্ভের বিষয়েও স্পষ্ট তথ্য চেয়েছিল। কারণ বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ গণনা করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান রিজার্ভ প্রায় ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি রিজার্ভ গণনার জন্য আইএমএফের মান অনুসরণ করে, তবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
আইএমএফ দল বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) জন্য ব্যয় করা ৭-৮ বিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ বাদ দিতে বলেছে।
যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অবস্থান ম্যানুয়াল অনুযায়ী গণনা করা হয়; বাংলাদেশ নেট ও মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা করে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে প্রদত্ত তহবিলগুলো নেট গণনা থেকে বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নেট বা মোট হিসাব প্রকাশ করে।
বৃহস্পতিবারের আলোচনা ছয়টি অধিবেশনে বিভক্ত ছিল। যার মধ্যে তিনটি অধিবেশনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, ব্যাংকিং খাতের কর্মক্ষমতা, বিনিময় হার, আন্তঃব্যাংক ঋণ, রপ্তানি পরিস্থিতি, আমদানি সীমাবদ্ধতা এবং এফডিআই প্রক্ষেপণ এবং দীর্ঘমেয়াদি খেলাপি ঋণ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: গুলিবিদ্ধ শিনজো আবে মারা গেছেন
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি রোধের পদক্ষেপ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রা বৈচিত্র্যকরণ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত সোমবার ছিল ৩৭ দশমিক শুন্য ৮ বিলিয়ন ডলার।
এই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) এর জুলাই-আগস্টের বকেয়া এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৩৭ দশমিক শুন্য ৬ বিলিয়ন হয়ে গিয়েছিল। গত বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১১ দশকিম ৫ বিলিয়ন ডলার ।
এলসি কেনার জন্য মার্কিন ডলার বিক্রির চাপ, ভ্রমণ, চিকিৎসার খরচ এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মেটাতে ব্যক্তিগত চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এটি হচ্ছে।
পড়ুন: আমদানিতে কড়াকড়ি সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক শুন্য ৫ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে 'স্থিতিশীলতা' আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এবং চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩-এ রিজার্ভ থেকে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, রেমিটেন্স বাড়লেও ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে গেলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ, এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
পড়ুন: ২ বছরের মধ্যে প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো রিজার্ভ
বৈদেশিক মুদ্রার হার বাজারভিত্তিক করা হবে: অর্থমন্ত্রী
খেলাপি ঋণ রেকর্ড এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা: বিবি
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড এক লাখ ২৫ কোটি টাকা।
বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে কিস্তি শিথিল করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মধ্যেও খেলাপি ঋণের পরিমাণে এই রেকর্ড হলো।
বিবির অস্থায়ী তথ্য অনুসারে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা এবং শ্রেণিবদ্ধ ঋণের পরিমাণ মোট এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ ৮.৯৬ শতাংশ ঋণ শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে যা দেশে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৯০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘খেলাপিদের জন্য বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, খেলাপিরা এখন ভাবছে ঋণ না দিলে ভবিষ্যতে আরও ছাড় পাব। এই কারণে, যতদিন অব্যাহতি থাকবে, এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।’
মির্জা আজিজ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমানোর একমাত্র উপায় সুবিধা বন্ধ করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, ‘বাস্তবে, এটি এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার অনেক বেশি। কারণ কিছু তথ্য যোগ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন: ব্যাংকে ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফ’র উদ্বেগ